সব নবি কেন এক এলাকার? এটা অনেকের কঠিনতম প্রশ্ন, যার মাধ্যমে তারা ধর্মের উপর সন্দেহ প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু এক এলাকার নবিদেরকে যদি সেই এলাকার লোকেরা সারা বিশ্বে পরিচিত করে তোলে তাহলে তাতে আল্লাহর কি আসে যায়? আল্লাহ বলেছেন তিনি সব এলাকায় নবি পাঠিয়েছেন। অনেকে তাদের নবিদেরকে হত্যা করেছে। যাদের প্রতি আল্লাহ নবি পাঠিয়েছেন তাদের অসহযোগীতার কারণে যদি তাদের নবির নাম-কাম সব ডুবে যায় তাহলে তাদের নবির নাম-কাম ভাসানোর জন্য আল্লাহ কি করতে পারেন? এখন প্রশ্ন হতে পারে এক এলাকার নবিদের নাম কেন কোরআনে? কোরআনে তাদের কথা বলা হয়েছে যাদের নাম-কাম অন্তত কিছু লোক জানে। যাদের নাম-কাম কেউ জানে না, আল্লাহ তাদের কথা বললে যদি লোকে বলে এ আবার কে? তখনতো কোরআন প্রচারকদের বিব্রত হতে হবে। কোরআন সেই সব নবির নাম করেছে যাদের জীবন ঘটনা বহুল হওয়ার কারণে তারা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পেরেছেন। ঘটনা চক্রে তারা সব কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা।এখন অন্য এলাকার নবিগণ গুরুত্বপূর্ণ হতে না পারলেও কি তাদেরকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে? বিষয়টা যোগ্যতা ও অযোগ্যতার। যোগ্যতার কারণেই কারো নাম কোরআনে স্থান পেয়েছে আর কারো নাম কোরআনে স্থান পায়নি। প্রয়োজন মনে করলে এবং গুরুত্বপূর্ণ হলে অন্য এলাকার নবিদের নামও কোরআনে যুক্ত হতো। কিন্তু প্রয়োজন পড়েনি বলেই তেমনটা হয়নি। এখন অন্য এলাকার লোকেরা রাগ হয়ে যদি বলে আমাদের এলাকার নবির নাম কেন কোরআনে নেই কাজেই আমরা কোরআন মানি না, আমরা জান্নাতে যেতে চাই না, আমরা জাহান্নামে যেতে চাই তবে আর তাদের জন্য কি আর করার থাকবে? নবি এলাকার লোকেরা হয়ত তখন বলবে আমরা দুঃখিত তোমাদের নবির নাম কোরআনে না থাকার কারণে তোমরা জাহান্নামে যেতে চাইলে আমাদের কিছুই করার নেই।
আল্লাহ বলেছেন তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত প্রদান করেন। কাজেই যার মধ্যে হেদায়েত পাওয়ার উপযুক্ততা তৈরী হবে আল্লাহ নিজেই তার হেদায়েতের ব্যবস্থা করবেন। নবিও পাঠানো হয়েছে হেদায়েতের জন্য। কাজেই হেদায়েত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি কোনভাবেই হেদায়েত বঞ্চিত হবে না। যে হেদায়েতের যোগ্য নয় সে নবি দিয়ে কি করবে? তার কাছে নবি আসা আর না আসাতো এক কথাই, নবির সাথেতো তার লাভ ক্ষতির যোগ নেই।
সর্বশেষ নবি পাঠানো হয়েছে মক্কায়, এখন তাঁর অনুসারী রয়েছে বিশ্বের সকল স্থানে।যে স্থানে শেষ নবি পাঠালে সবচেয়ে ভাল হতো শেষ নবি সেখানেই পাঠানো হয়েছে। কোন কিছুর ভাল-মন্দ আল্লাহর চেয়ে কারো ভাল বুঝার কথা নয়। কারো এটা মনে করার কারণ নেই যে, নবি পাঠানো সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে কেউ কেউ হেদায়েত বঞ্চিত হয়েছে, বরং যারা পথভ্রষ্ট তাদেরকে নবি বেটে খাওয়ালেও তারা পথে আসতো না। আল্লাহ সবার ভিতর বাহির সব জানেন। কাজেই আল্লাহর কাজের ভুল ধরা বোকামী। নবি নিজে আসেন না বরং আল্লাহ পাঠান। কাজেই নবি সংক্রান্ত অমূলক প্রশ্নতুলে আল্লাহর কাজকে প্রশ্ন বিঁদ্ধ করা অর্থহীন।
যে এলাকার নবিগণ বেশী প্রচার পেয়েছেন সে এলাকার লোকেরা নিজেরাই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে তাদের নবির আদর্শ প্রচার করেছেন। পরবর্তীতে তাদের অনুসারীরা তাঁদের আদর্শ ব্যাপক ছড়িয়ে দিয়েছেন। যীশুর আদর্শ বিস্তার কি যীশু করেছেন? নাকি যীশুর অনুসারীরা তাঁর আদর্শ ছড়িয়েছেন? মদীনাতেও কোরআন নাজিল হয়েছে, সেখানে আগে থেকেই ইহুদী ও খ্রিস্টান ছিল। সংগত কারণে তাদের নবির আলোচনা কোরআনে এসেছে। আর এভাবেই সেই সব নবিগণের সংশ্লিষ্ট নবিদের কথাও কোরআনে এসেছে। দেখাগেছে যাদের কথা কোরআনে এসেছে তাঁদের ঘটনা অন্যদের ক্ষেত্রে মিল রয়েছে সে জন্য অন্যদের আলোচনা যোগ করে কোরআনকে আরো বড় করা হয়নি। কারণ কোরআন আল্লাহ মুখস্তের ব্যবস্থা করেছেন।
কোরআনে ইসরাইলী নবি গণের কথা বেশী এসেছে, কোরআনের নবিও সে বংশের ভিন্ন শাখার। ইসরাইলী নবিরা ইব্রহিমের (আঃ)বংশধর। মোহাম্মদও (সা.) ইব্রহিমের বংশধর।আর ইসরাইলীরা এখনো বিশ্বকে ভেজে খায়।তাদের পণ্য চলে সারা বিশ্বে। তারা ও তাদের আত্মিয়দের ধর্মও এখন সারা বিশ্বে। ইহুদী খ্রিস্টান ও মুসলিম সবাই আত্মিয়তা সূত্রে আবদ্ধ।তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে এটা তাদের অভ্যাস।
ভারতে ভগবানের ছড়াছড়ি। এখানে আল্লাহ নবি পাঠালেও যদি সে নবি এখন ভগবান হয়ে বসে থাকেন তবে আল্লাহ তাঁর আলোচনা কেমন করে করেন? ওরা ওদের নবির আদর্শ যেখানে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে সেখানে এরা এদের ভগবানের আদর্শ নিয়ে একস্থানে ঠান্ডা শীতল হয়ে বসে আছে। আর এদের ভগবানের আদর্শ সহজে গ্রহণও করা যায় না। আর এদের নিজেদের জাতিভেদে এরা অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়েছে। এ জন্য এদের ভগবানের আদর্শ বিশ্বজুড়ে গ্রহণযেগ্যতা পায়নি। সেজন্য হয়ত কোরআনে এদের ভগবানের স্থান হয়নি।
হিব্রু ও আরবী ভাষাভাষী নবিদের বিস্তার ঘটিয়েছে তাদের অনুসারী। অন্য ভাষার লোকেরা তাদের লোকদের প্রচার করেনি।কোরআনে স্থান পাওয়ার বড় কারণ হতে পারে প্রসিদ্ধিলাভ। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন তিনি কোরআনে আলোচনা না করলেও তিনি সব জাতির নিকট নবি পাঠিয়েছেন। কাজেই নবি শুধু এক এলাকায় এসেছে এ কথা সঠিক নয়। সঠিক হলো এক এলাকার নবির আলোচনা কোরআনে এসেছে আর অনেক এলাকার নবির আলোচনা কোরআনে আসেনি।তো ফুটবল খেলে সারা বিশ্ব, কিন্তু আলোচনায় থাকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। যারা কিনা এক এলাকার অর্থাৎ ল্যাটিন আমেরিকার। অথচ ক্রিকেটে তাদের নাম গন্ধও নেই। আবার ক্রিকেটে ভারত ও পাকিস্তান খুব আলোচনায় থাকে যদিও ফুটবলে তাদের নাম গন্ধও নেই।এটা কেন? একমাত্র কারণ যোগ্যদতা ও অযোগ্যতা।সংগত কারণে যোগ্যতার উচ্চতায় এক এলাকার নবিগণ কোরআনের আলোচনায় আর অন্য এলাকার নবিগণের নাম গন্ধও কোরআনে নেই। যোগ্যতার মূল্যায়নে মানুষের বিবেচনায় থাকলে আল্লাহর বিবেচনায় কেন থাকবে না?
যেখানে আল্লাহ অকাট্য প্রমাণে প্রমাণিত। সেখানে নবি সব এক এলাকার বলে কেউ কি বুঝাতে চায়? নবি এক এলাকার বলে আল্লাহ নাই হয়ে যাবেন নাকি? যদি অন্য এলাকায় নবি না এসে থাকেন তাহলে এটাওতো হতে পারে যে, তারা নবি পাওয়ার যোগ্য ছিল না। নবি পেয়েও হয়ত তারা হেদায়েত গ্রহণ করত না।অথবা তাদের এলাকাতেও নবি এসেছেন কিন্তু প্রয়োজন না থাকায় আলোচনায় আসেনি।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায় যারা হেদায়েত পাওয়ার যোগ্য নয় তারা হেদায়েতের পথে না চলে তৃপ্তি লাভের জন্য কোন না কোন অযুহাত খুঁজে নেয়। আর সে অযুহাতের আলোকে তারা বুঝতে চায় তারা সঠিক মতে রয়েছে। কি আর করা, আল্লাহ সবার আত্মার তৃপ্তি দান করুন।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
প্রাথমিক কথা
ভিন্ন চিন্তা
নাস্তিক্যবাদ
আস্তিক্যবাদ
কোরআন অবশ্যই আল্লাহর বাণী
হজরত মোহাম্মদ (সা.) অবশ্যই আল্লাহর নবি
মুসলমান কেন কষ্টে থাকে?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫১