কোরআনে ভুল নেই।দেড় হাজার বছরেও কোরআনে কোন ভুল সনাক্ত করা যায়নি।তবে কোরআনে ভুল সনাক্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে।পরে দেখা গেছে সেগুলো ছিল কোরআনের ভুল ধরতে ভুল করা।কোরআনে ভুল না থাকা এর আল্লাহর বাণী হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ।
সসীমের ভুল থাকে। কারণ সসীমে তথ্যগত ঘাটতি আছে। যে ক্ষেত্রে সসীমে ঘাটতি আছে সে সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান হলে সসীম থেকে তথ্য প্রাপ্তি ঘটবে না।তথাপি সসীম অজানা তথ্য প্রদান করলে উহা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তথ্য হবে অনুমান ভিত্তিক। আর অনুমান সব সময় সঠিক হয়না।সে জন্য সসীম নিজেকে নির্ভুল দাবী করে অপদস্ত হওয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করে না।যেহেতু কোরআন একমাত্র গ্রন্থ যার শুরুতে দাবী করা হয়েছে,‘যালিকাল কিতাবু লা-রাইবা ফিহি – ইহা এমন গ্রন্থ যাতে কোন ভুল নেই’ সূরাঃ ২, বাকারা, ২নং আয়াত।সেহেতু দাবীকারীর সাহস থেকে বুঝা যায় দাবীকারী সসীম কেউ নয়।দাবীকারী সসীম না হলে দাবীকারী অবশ্যই অসীম। অসীম একাধিক হতে পারে না। কারণ একাধিক করতে অসীমে সীমা দিতে হয়, আর সীমা দিলে অসীম সসীম হয়ে যায়। কাজেই অসীমের একাধিক হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।তারমানে অসীম শুধুই একজন। সেই অসীম একজনের নাম আল্লাহ। যেহেতু কোরআনে ভুল নেই। যেহেতু শুধুমাত্র অসীমে ভুল নেই। যেহেতু অসীম শুধুই একজন। যেহেতু সেই একজন অসীমের নাম আল্লাহ সেহেতু কোরআন আল্লাহর বাণী।কোরআন আল্লাহর বাণী এটা অস্বীকার করতে হলে সবার আগে এতে ভুল সনাক্ত করতে হবে।
কোরআন আল্লাহর বাণী বলে যারা স্বীকার করে না তারা কোরআনে ভুল সনাক্ত করার চেষ্টা করেছে।যেমন কেউ কেউ বলছে কোরআনের সূরা নেছার ১১ ও ১২ আয়াতে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারের যে অংশ বন্টনের কথা বলা হয়েছে এর যোগফলের লবের চেয়ে হর ছোট।তারা এটাকে কোরআনের ভুল বলে দাবী করতে চেষ্টা করেছে।কিন্তু আল্লাহ কখনো বলেননি যে এ অংশ সমূহের যোগফলের হর লবের চেয়ে ছোট হবে না। তাহলে কোরআনের ভুলটা কোথায় বুঝাগেল না। হয়ত কেউ বলতে পারে হর লবের চেয়ে ছোট হওয়ায় প্রাপকের যে অংশের কথা বলা হয়েছে সে অংশ দেওয়া যায় না। যেমন স্ত্রীর আটের এক অংশ দেওয়া যায় না। তো স্ত্রীর আটের এক অংশ দেওয়া না গেলে আটের এ অংশ দিতেই হবে সেটা আল্লাহ বলেছেন কি? আর এখানে সব অবস্থায় স্ত্রীর আটের এক অংশ দেওয়া যায় না ঘটনা এমন নয়। মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা না থাকলে স্ত্রীর আটের এক অংশ অবশ্যই দেওয়া যায়।যে ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালন করা যায় না সেক্ষেত্রে আল্লাহ বিকল্প অনুমোদন করেন। যেমন দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার হুকুম পালন না করা গেলে, বসে নামাজ পড়া আল্লাহ অনুমোদন করেন।অনুরূপ স্ত্রীর আটের এক অংশ দেওয়া না গেলে যে অংশ দেওয়া যায় সে অংশ দেওয়া আল্লাহ অনুমোদন করেন।এ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে নয়ের এক অংশ দেওয়া যায়্ যা আল্লাহ অনুমোদন করেন।সূরা বাকারার ২৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘লা-ইউকাল্লিফুল্লাহু ইল্লা উসয়াহা – আল্লাহ কাউকে সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেন না। কাজেই যে অংশ যোগে হর ছোট ও লব বড় হয় সে ক্ষেত্রে যে অংশ দেওয়া অসম্ভব সে ক্ষেত্রে যে অংশ দেওয়া যায় সে অংশ প্রদান করাই আল্লাহর আর এ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে হরকে লবের সমান করে। যাতে করে আল্লাহ যে অংশ বলেছেন তা’ ঠিক থাকেনি বরং নতুন অংশ সনাক্ত হয়েছে। আর এটাই আল্লাহর বিধান।তাহলে আল্লাহর কোন বিধানে কে কি ভুল ধরলো বুঝাগেল না।
কোরআন নাজিল হওয়ার পর হর ছোট লব বড় হওয়ার ঘটনা পরিদৃষ্ট হয়েছে।তখনই হরকে লবের সমান করে প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।তখনকার কোরআন বিরোধীরা এটাকে ভুল সাব্যস্ত করেনি। কারণ এটা যে ভুল নয় সেটা তারা বুঝতে পেরেছিল। এখন যারা এটাকে ভুল বলছে তারা এটাকে ভুল বলতে ভুল করছে। কন্যাদেরকে তিনের দুই অংশ সম্পদ দিতে বলা হয়েছে।যদি সেটা দেওয়া যায় তবে দিতেই হবে। আর যদি দেওয়া না যায় তবে যতটুকু দেওয়া যায় ততটুকু দিতে হবে। যেমন কন্যাদের মা না থাকলে তাদেরকে তিনের দুই অংশই দেওয়া যায়। কিন্তু মা থাকলে তাদের অংশ খানিকটা কম হয় এখানে এটাই বিধান। একটা বিধান দেওয়া হয়েছে, সেটা বাস্তবায়িত করতে না পারলে এর বিকল্প বিধান দেওয়া হয়েছে যা বাস্তবায়ন করা যায়। এখন বিকল্পের দিকে না তাকিয়ে যে বিধান কোন কোন ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা না যায় সে বিধানকে ভুল বলা নিতান্তই কাঁচা কথা। কাজেই এ আলোচনা থেকে কোরআনে কোন ভুল সাব্যস্ত হয় না বরং যারা এ ক্ষেত্রে কোরআনের ভুল ধরে তাদের নির্বুদ্ধিতা সাব্যস্ত হয়।যার বিধান তাঁর কথা তাঁর বিধান এরকম না হলে সেরকম হবে।আর বোকা মানুষ সেরকমের দিকে না তাকিয়ে বলে এ রকমটা সঠিক নয়।
কোরআন কিভাবে আমাদের নিকট পৌঁছাল সেটা কোন আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ আপনার নিকট যে কোরআন রয়েছে সেটা নিজেই নিজের সঠিকতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যদি কেউ এর সঠিকতা গ্রহণ করতে রাজি থাকে তবে তার নিকট এর সঠিকতা সহজেই স্পষ্ট হয়ে উঠে।। আর কেউ যদি কোরআনের সঠিকতা গ্রহণ করতে রাজিই না থাকে তবে এর সঠিকতার প্রমাণ তার নিকট মূল্যহীন।
কারো চোখের সামনে আলো আছে, কিন্তু সে চোখ বন্ধ করে কোন আলো নেই বলে চিৎকার করলে তাকে আর কি বলা যাবে? আলো দেখতে হলে তাকে আগে চোখ খোলার শর্ত পূরণ করতে হবে। আর একান্তই যদি সে চোখ খুলতে রাজি না হয় তবে তার অনুভবে আঁধারই থেকে যাবে।
কারো কোরআন বুঝা কোরআনের গরজ নয়। কেউ যদি মনে করে এটা কোরআনের গরজ তবে তার আর কোন দিন কোরআন বুঝা হবে না।কোরআন সে বুঝবে যে কোরআন বুঝাকে তার নিজের গরজ মনে করবে।ঠিক এ কারণেই অধিকাংশ মানুষ কোরআন বুঝে না, বরং কম সংখ্যক মানুষ কোরআন বুঝে। এমন কি কোন মানুষই যদি কোরআন বুঝা গরজ মনে না করে তবে কেউ কোরআন বুঝবে না। অনুরূপ সব মানুষ যদি কোরআন বুঝা গরজ মনে করে তাহলে সব মানুষ কোরআন বুঝবে। অনেকের কোরআন না বুঝা ও না মানার এটাই কারণ।
যারা আল্লাহর প্রতি মনোযোগী নয় তিনি তাদেরকে তাঁর কথা জানাতে আগ্রহী নন। তাঁর আগ্রহ শুধু তাদের প্রতি যারা তাঁর প্রতি মনোযোগী। কাজেই আল্লাহর সাথে পরিচিত হতে হলে আগে তাঁর প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং তাঁর প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে, সেই সাথে ভাল মানুষ হতে হবে। তাহলে এমন লোকের প্রতি আল্লাহ স্নেহশীল হবেন। আর তখন তাদের সত্য বোধগম্য হবে। যাদের প্রতি আল্লাহর আগ্রহ থাকবে না তাদের মাথায় কুড়াল ভাঙলেও তারা সত্য বুঝবে না। তাদের এ না বুঝার ক্ষতি একান্তই তাদের। তারা এটা না বুঝলে কিছুই করার নেই।
কোরআন অনেকের নিকট পরিস্কার সত্য। আর অনেকের নিকট এটা অবোধগম্য ঝাঁপসা বিষয়। এর কারণ কি? কারণ প্রত্যেকে নিজেই। কারণ আল্লাহর জগতে বিনা কারণে কিছুই হয় না।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
প্রাথমিক কথা
ভিন্ন চিন্তা
নাস্তিক্যবাদ
আস্তিক্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২৫