যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় তারা নাস্তিক। তারা বলে সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছুই নেই। এ সংক্রান্ত মতবাদ হলো নাস্তিক্যবাদ।এটি পৃথিবীর দূর্বলতম মতবাদ সমূহের একটি।যদিও এ মতের অনুসারী তালিকায় অনেক জ্ঞানী গুণী ও বিজ্ঞানী রয়েছে। যদিও ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা সংক্রান্ত বিজ্ঞানে এসব জ্ঞানী গুণী ও বিজ্ঞানীকে নিচক দুগ্ধপোষ্য শিশু বলে মনে হয়।অথচ এ বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও গুণ অবশ্য স্বীকার্য।আপনি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে (সার্জন)জুতা সেলাই করতে দিলে তিনি অদক্ষতার পরিচয় দিবেন, যদি তাঁর জুতা সেলাই সংক্রান্ত জ্ঞান না থাকে।অথচ একজন দক্ষ মুচি কত অনায়াসে কত সুন্দর করে দক্ষতার সাথে জুতা সেলাই করেন।অনুরূপ একজন অশিক্ষিত আস্তিক কত সহজে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে পারেন, যা একজন নাস্তিক বিজ্ঞানীর বোধগম্য নয়।সে জন্য বলেছি সৃষ্টিকর্তা সংক্রান্ত বিজ্ঞানে এরা নেহায়েত শিশু। এ বিষয়ে এদের জ্ঞানের স্তর শূণ্যমাত্রায় বিদ্যমান বলে এরা এ বিষয়ে নেহায়েত হাস্যকর মন্তব্য করে থাকে। অথচ এরাই কিনা নিজেদেরকে বিজ্ঞান মনষ্ক ও মুক্তমনা মনে করে। আর তারা ধর্মানুসারীদেরকে নিচক অজ্ঞ ও ধর্মান্ধ মনে করে।আমি অনেক মানসিক রুগীকেও নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী-গুণী ভাবতে দেখেছি।এমন হয়। নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করতে সাবাই ভালবাসে।
নাস্তিকদের কথা আমি বেশ উপভোগ করি।একদিন ওদেরকে বললাম, বুঝলুম সৃষ্টিকর্তা বলতে কিচ্ছুটি নেই, তো মহা প্রকৃতির সব কিছু কিভাবে হলো? তারা বললো, নিজে নিজে হয়েছে। আবার জিজ্ঞাস করলাম, নিজে নিজে বড় হয় না ছোট হয়? তারা বললো, বড় হয়। জিজ্ঞাস করলাম, সসীম বড় না অসীম বড়? তারা বললো, অসীম বড়।জিজ্ঞাস করলাম, নিজে নিজে তবে কি হয়েছে, অসীম না সসীম? তারা বললো, অসীম। জিজ্ঞাস করলাম, তোমরা কি অসীম না সসীম? তারা বললো, সসীম। বললাম, নিজে নিজেতো সসীম হয় না তোমরাই স্বীকার করলে। তারমানে তোমরা সহ মহাপ্রকৃতির সসীম কিছুই নিজে নিজে হয়নি তোমরা স্বীকার করছো? আর স্বীকার না করেই বা কি করবে, অস্বীকারেরতো কোন পথ নেই। কাজেই সাব্যস্ত হলো সসীম সব কিছু কারো না কারো সৃষ্টি। এরপর জিজ্ঞাস করলাম, অসীমের সংখ্যা কত? তারা বললো, এক। তারমানে সাব্যস্ত হলো মহাপ্রকৃতির সবকিছু একজন অসীমের সৃষ্টি। আর তিনিই হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা, যাঁকে অস্বীকারের কোন শুদ্ধ পথ নেই। এখন কেউ জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞানী হয়েও যদি এমন সহজ বিষয় বুঝতে না পারেন তবে এ বিষয়ে তাদেরকে নিতান্ত শিশু না মেনে উপায় কি?
আচ্ছা নিজে নিজে যে হয় সে ছোট হয় কি? বড় হতে পারলে কেউ ছোট হয় জগতে এমন কথা কেউ শুনেছে কি? বরং সত্য কথা হলো যে বড় হতে পারে সে বড়ই হয়। আর যে ছোট হয় সে বড় হতে অপারগ হয়ে ছোট হয়।যে নিজে নিজে হয় তাকে বড় হতে ঠেঁকায় কে? যেহেতু যে নিজে নিজে হয় এবং যেহেতু হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিবন্ধক নেই সেহেতু যে নিজে নিজে হবে সে নিজে নিজে অবশ্যই বড় হবে।কোন অবস্থাতেই সে নিজে নিজে ছোট হবে না।
নিজে নিজে যে হয় সে কোন কারণ বসত ছোট হতে পারে কি? নিজে নিজে হওয়া যখন শুরু হয়েছে তখন কিছুই ছিল না। কিছু থাকলে উহা শুরু হয় কেমন করে? তো কিছুই যখন নেই তখন ছোট হওয়ার কল্পিত কারণ কোথা হতে আসে?
অসীম একাধীক হয় কি? অসীমকে একাধীক করতে হলে এটাকে বিভক্ত করে এর প্রতি অংশের সীমা দিতে হবে।আর সীমা দিলে অসীম সসীম হয়ে যাবে, অসীম আর থাকবে না। কাজেই অসীমের একাধীক হওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু অসীম একাধীক নয় এবং যেহেতু নিজে নিজে সৃষ্ট একাধীক নয়, সেহেতু নিজে নিজে হওয়া সেই একজন ছাড়া আর সব সেই একজনের সৃষ্টি। যেহেতু সেই একজন সৃষ্টিকর্তা সেহেতু সেই একজন জড় জাতীয় কিছু নন। সুতরাং জড়বাদ সাকুল্যে মিথ্যা।
যেহেতু সব কিছু একজন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হিসেবে সাব্যস্ত সেহেতু বিবর্তন বাদ, বিগ ব্যাংগ, জেনেটিক্স, কোয়ান্টাম মেথড, স্ট্রিং থিওরী সত্য হলে তা সেই সৃষ্টিকর্তার কর্ম সম্পাদনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।এসব দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। কাজেই নাস্তিক্যবাদ মতবাদ হিসেবে বাদের তালিকায় পরিগণিত হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
মহাজাগতিক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞ বিজ্ঞানীগণ এটা বুঝার চেষ্টা করেছেন যে মহাজগত নির্মাণে কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন আছে কি? অথচ আমরা জানি বিনা প্রয়োজনেও জগতে অনেক কান্ড ঘটে। এমনকি জোর পূর্বক অনেক ঘটনা ঘটে। তাহলে সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন না থাকলে সৃষ্টিকর্তা নেই এমন সিদ্ধান্তে কেমন করে উপনিত হওয়া যাবে? আর কারো প্রয়োজন থাকুক অথবা না থাকুক সৃষ্টিরকর্তার নিজের যদি থাকার প্রয়োজন হয়। তাঁর যদি থাকার সক্ষমতাও তাঁর থাকে তাঁর থাকা কে ঠেঁকাতে পারে? বিজ্ঞানীর মহাজগতের জন্য সৃষ্টিকর্তার থাকার প্রয়োজনের অংক কষার দরকার হলো, অথচ থাকার বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার নিজের প্রয়োজনের বিষয়ে অংক কষার দরকার বিজ্ঞানীর মাথায় আসেনি, এটা বিস্ময়কর। সৃষ্টিকর্তাতো তাঁর নিজ যোগ্যতায় নিজ প্রয়োজনে আছেন বিজ্ঞানী সেটা অস্বীকার করেন কোন যুক্তিতে? বিজ্ঞানীর নির্বুদ্ধিতা কেউ মেনে নিবে কি? সব বিষয়ে বিজ্ঞানীর বুদ্ধিমত্তা আবশ্যক আছে কি? হয়ত এমন অনেক বিষয় থাকতে পারে যে ক্ষেত্রে আমার বাসার কাজের বুয়ার থেকে বিজ্ঞানী কম বুঝতে পারে।কাজেই বিজ্ঞানী বলেই তার সব কথা শীরধার্য অবশ্যই নয়। কাজেই বিজ্ঞানীকেও তার কথা গ্রহণযোগ্য কি না সেটা ভেবেই কথা বলতে হবে।
আমাকে একজন কাচুমাচু করে জিজ্ঞাস করলো, সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন? আমি বললাম, তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেনি, তিনি নিজে নিজে হয়েছেন। তখন আবার জিজ্ঞাস করলো, সৃষ্টিকর্তা নিজে নিজে হতে পারলে আরকিছু নিজে নিজে হতে পারলোনা কেন? আমি বললাম, যোগ্যতার অভাব। যোগ্যতা ছিল বলে সৃষ্টিকর্তা নিজে নিজে হতে পেরেছেন, আর কারো যোগ্যতা ছিল না বলে নিজে নিজে হতে পারেনি।যেমন যোগ্যতার অভাবে মুচি জুতা সেলাই করতে পারলেও পেট সেলাই করতে পারে না। অনুরূপ যোগ্যতার অভাবে ডাক্তার পেট সেলাই করতে পালেও জুতা সেলাই করতে পারে না। কাজেই কেউ কোন একটা কাজ পারলেও অন্যরা সে কাজ করতে পারে না কেন, এমন প্রশ্ন অবান্তর।
নাস্তিক্যবাদ সম্পর্কে আমরা যতটা অনুসন্ধান করেছি তাতে করে আমরা এ মতবাদের কোন ভিত্তি খুঁজে পাইনি। এ কারণেই এ মতবাদ এখনো তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।আর সুদীর্ঘ্য কাল থেকে আস্তিক্যবাদ এর উপর ছড়ি ঘুরিয়ে চলছে। তথাপি কিছু লোকের ভ্রান্তির উপর এ মতবাদ টিকে আছে। তারমানে ভুল করে কিছু লোক এ মতবাদের অনুসারী হয়ে আছে। আর এদেরকে পুঁজি করে এ মতবাদ না চলার মত করে চলছে।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
প্রাথমিক কথা
ভিন্ন চিন্তা
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪০