প্রাথমিক কথা
আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তার জন্য পথভ্রষ্টতা নেই; আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য হেদায়েত নেই।আল্লাহ বলেছেন, মন্দলোক ছাড়া তিনি পথভ্রষ্ট করেন না।তারমানে যারা ভাললোক তিনি তাদেরকে হেদায়েত দান করেন।যারা হেদায়েত পায় না লোকের নিকট তারা ভাললোক বিবেচিত হলেও আল্লাহর নিকট তারা ভাললোক বিবেচিত নয়।এমন অনেক দেখা যায় অনেক লোক বাইরের লোকের নিকট যথেষ্ট ভাললোক বিবেচিত হয় কিন্তু সে তার নিজের ঘরের লোকের নিকট ভালবিবেচিত হয় না।কারণ বাইরের লোকের সাথে তার আচরণ ভাল হলেও ঘরের লোকের সাথে তার আচরণ ভাল নয়। তেমন লোকের সাথে ভাল আচরণের কারণে অনেক লোক লোকের নিকট ভাল বিবেচিত কিন্তু আল্লাহর সাথে তাদের আচরণ মোটেও ভাল নয়।তারা আল্লাহকে মোটেও পাত্তা দেয় না।আল্লাহর বিষয়ে তারা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে না। তারা তাঁর সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করে না।তাদের সামনে একটা বিস্ময়কর জগৎ বিদ্যমান, তথাপি তাদের মনে এ প্রশ্নের উদয় হয় না যে এ জগতের কোন সৃষ্টিকর্তা আছে কি না। থাকলে সে সৃষ্টিকর্তা কেমন? তাঁর প্রতি তাদের কোন দায়িত্ব কর্তব্য আছে কি না, সে বিষয়েও তাদের কোন ভাবান্তর নেই।এমন লোকের প্রতি আল্লাহর অসীম ক্রোধ সৃষ্টি হয়। মানুষদের মাঝে আল্লাহ এদেরকে ভাল থাকার ব্যবস্থা করলেও এদের পরকাল অন্ধকার করার জন্য আল্লাহ এদেরকে হেদায়েতের বাইরে রাখেন।তবে ভাল লোক হওয়ার কারণে পরকালে জাহান্নামে এদের শাস্তির মাত্রা কম থাকে। যেমন মহানবির (সা.) চাচা ও পালক পিতা আবু তালিব ভাললোক ছিলেন কিন্তু হেতায়েত প্রাপ্ত ছিলেন না।জাহান্নামে তাঁর শাস্তির মাত্রা কম হবে বলে ঘোষণা এসেছে।পক্ষান্তরে কিছু লোক মানুষদের বিবেচনায় ভাল নয় কিন্তু তারা আল্লাহকে নিয়ে খুব ভাবে।শেষমেস তারা হেদায়েত পেয়ে যায়। পাপ কাজের শাস্তি আল্লাহ তাদেরকে ইহকালে দিয়ে দেন আর তাদের পরকাল তিনি ভাল করে দেন।আল্লাহর হেদায়েত দেওয়া ও না দেওয়া বিষয়ের সাথে ইসলামের সঠিকতা বুঝা ও না বুঝার যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তার সম্মুখে তিনি ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান করেদেন। সে জন্য মহা কষ্ট স্বীকার করেও সে ইসলামের পথে অবিচল থাকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ সে চোখ দিয়ে দেখতে পায়না, ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণের কথা কান দিয়ে সে শুনে না, ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণের কথা সে হৃদয় দিয়ে বুঝে না। কারণ আল্লাহ এমন সব লোকদের আচার আচরণে বিরক্ত হয়ে এদের অন্তরে ও কানে মোহর মেরে দেন।আর এদের চোখে এ বিষয়ে পর্দা থাকে।কাজেই ইসলামের সঠিকতার বিষয়ে এরা ঈমান আনে না। এদের বিরক্তিকর আচরণ হলো, এরা বলে এদের পূর্ব পুরুষ যা করেছে এরাও সেটাই করবে, যদিও এদের পূর্ব পূরুষেরা ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকার বিষয়ে, এরা নিশ্চিত ছিল না। যারা ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে কেউ যদি তাদের অনুসরনে বদ্ধপরিকর হয় তবে তাদেরকে শুদ্ধ পথে আনার কি দায় আল্লাহর রয়েছে? সেজন্য আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত প্রদান করেন না। এরা শুধু ইসলামের বেঠিকতা দেখতে পায়। এরা জিজ্ঞাস করে ডাস্টবিন থেকে কেন শিশু ও দ্ররিদ্রলোক খাবার তুলে খায়? মানুষের মাঝে কেন এমন হানাহানি মারামারি কাটাকাটি? বনের পশুদের উপর এমন নির্মমতা কেন? আল্লাহ থাকলে আল্লাহ কেন এসবের প্রতিকার করেন না? এরা এটা বুঝার চেষ্টা করে না যে আল্লাহ থাকলেও কোন কারণ বশত হয়ত আল্লাহ এসব বিষয়ে এখন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত প্রদান করেন তারা বলে, ইসলাম বিরোধীরা আল্লাহর যে সব কাজে দোষ ধরে, আল্লাহর সে সব কাজ করার পিছনে যথাযথ কারণ অবশ্যই আছে।বিনা কারণে আল্লাহ কিছুই করেন না। যারা উত্তম খাবার পায় ও যারা সুখে থাকে তাদের এতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের বিষয় রয়েছে। আর যারা উত্তম খাবার পায় না ও কষ্টে থাকে তাদের এর চেয়ে অধীক কষ্টে না থাকার সান্তনার বিষয় রয়েছে। তারা যদি আরো অধীক কষ্টে না থাকার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তবে তাদের কষ্টকর পরিস্থিতি শান্তিতে পরিবর্তীত হয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘সানাজজিল্লাহুশ শাকিরিন- আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে অচিরেই কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দান করেন’। কিন্তু আল্লাহর প্রতি দোষারোপ করে তাঁর বিচার করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তাঁর প্রদত্ত শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার সক্ষমতাও কারো নেই। কাজেই সঠিক কাজ হলো আল্লাহর শাস্তির ভয় করা। তাঁর প্রতি অহেতুক দোষারোপ না করা। তাঁর প্রিয় ইসলামের সঠিকতা বুঝার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এমন সঠিক কাজ সমূহ যারা করতে থাকে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত প্রদান করে থাকেন। তাদেরকে তখন কেউ কোনভাবে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।
যারা ইসলাম বুঝার চেষ্টা না করে অযথা ইসলামের বিরোধীতায় লিপ্ত তাদের প্রধান কাজ ইসলামের কুৎসারটনা করা।ইন্টারনেটের সুবাদে তারা ইসলামের কুৎসা রটনার মাধ্যমে মানুষের অন্তর থেকে ইসলাম পুরোপুরি মুছে দিতে চায়।আমি এদের সাথে ইসলাম বিষয়ে বহু তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি। এদের কথার অসারতার যে সব প্রমাণ আমি উপস্থাপন করেছি তারা সে সব প্রমাণ কর্তন করতে পারেনি। আবার ইসলামের সঠিকতার যে সব প্রমাণ আমি উপস্থাপন করেছি সে সব প্রমাণও তারা কর্তন করতে পারেনি।সে জন্য আমি ভাবলাম যদি এসব প্রমাণের গ্রন্থরূপ প্রদান করা যায় ও সে গ্রন্থের ব্যাপক প্রচার করা যায় তাহলে ইসলাম বিরোধীদের বিভ্রান্তি থেকে মানুষকে সহজে হয়ত বিরত রাখা যাবে অথবা এ গ্রন্থ মানুষের হেদায়েতের সহায়ক হবে।এ চিন্তা থেকেই আমার ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ নামক পুস্তক প্রণয়নের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। বিষয়টি শুনার পর তাদের অনেকে আমাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।তারা বলছে ইসলামের সঠিকতা প্রমাণের অকাট্য প্রমাণের আবার দরকার কি? এ পুস্তকের কারণে অনেকেই তাদের কুৎসার যোগ্য জবাব দিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করে দিবে এখানেই তাদের ভয়। অনেকে বলে হেদায়েত দেওয়ার মালিক আল্লাহ, মানুষের হেদায়েতের জন্য আপনার আবার পুস্তক লেখা লাগবে কেন? এ ক্ষেত্রে আমাদের কথা হলো, হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কোরআন যথেষ্ট। কিন্তু উহা পড়তে অযু করতে হয়। সেজন্য কোরআন ও হাদিসের জ্ঞানের আলোকে আমরা গ্রন্থ প্রণয়ন করছি যেন লোকেরা অযু ছাড়াও সে পুস্তক পড়ে ইসলামের সঠিকতার বিষয় বুঝতে পারে।তা’ছাড়া কোরআন নাজিলের অনেক পর লোকেদের মাঝে যে সব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সে সব প্রশ্নের জবাব কোরআন থেকে খুঁজে নিয়ে লোকদেরকে জানানো দরকার হয়ে পড়েছে। এর কারণে লোকেরা কম কষ্টে কিছু বিষয় অবগত হতে পারলে ক্ষতি কি? আর লোকদের হেদায়েতের বিষয়ে আমি সহায়তার চেষ্টা করছি যেন আমি আল্লাহর করুণা ও হেদায়েত প্রাপ্ত হই।কারণ আল্লাহ না চাইলে যে কোন লোকের যে কোন সময় বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য মু’মিন মাত্রই সব সময় আল্লাহর ভয়ে ইন্তিজার থাকে এবং আল্লাহর নিকট কায়মনে হেদায়েত কামনা করে।
তবে যেহেতু আমি মানুষ সেহেতু আমার কথায় ভুল হতেই পারে। এ ক্ষেত্রে যিনি যে ভুল পাবেন সেটা বাদ দিয়ে অবশ্যই সঠিকটা মানার চেষ্টা করবেন।আমার পুস্তক পাঠে মানুষ যদি কিছুটা হলেও হেদায়েত প্রাপ্ত হয় তবে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
বিঃদ্রঃ ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ গ্রন্থের কয়েকটি অধ্যায় পূর্বে পোষ্ট করেছি এখন এর প্রাথমিক কথা ব্লগারদের পাঠের জন্য উপস্থাপন করলাম। বইটি এখনো লেখা শেষ হয়নি বরং বইটি লেখার কাজ চলমান রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩