আল্লাহ আদমকে (আ.) যাবতীয় নাম জিজ্ঞাস করলেন। তিনি তা’ বলতে পারলেন। ফেরেশতাদেরকে যাবতীয় নাম জিজ্ঞাস করলেন। তারা তা’ বলতে পারলোনা। আর তাতে আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বুঝালেন যে আদম (আ.) সেরা। কিন্তু ইবলিশ এটা মানতে পারলোনা। কারণ আল্লাহ নামগুলো ফেরেশতাদেরকে শিক্ষা দেননি বরং আদমকে (আ.) শিক্ষা দিয়েছিলেন। কাজেই আদমের (আ.) সেরা হওয়ার কারণ আল্লাহ, আদম (আ.) নিজে নয়। কাজেই আদমকে (আ.) সেরা বলা হলেও মূলত আদম (আ.) সেরা নয়।অতি জ্ঞানী ইবলিশ আল্লাহকে অভিযুক্ত করে এমনটাই মনে করেছে। সে আগুনের তৈরী হিসেবে নিজেকেই সেরা মনে করেছে। আর মাটির তৈরী হিসেবে আদমকে (আ.) সে অধম মনে করেছে। কিন্তু তার মনে করা সঠিক ছিলনা। কারণ আদমকে (আ.) নামগুলো শিক্ষা দেওয়া হয়েছে আদমের (আ.) নাম গুলো শিখার যোগ্যতা ছিল বলে। ফেরেশতাদেরকে নামগুলো শিক্ষা দেওয়া হয়নি তাদের সেগুলো শিক্ষা গ্রহণের যোগ্যতা ছিলনা বলে। আর আল্লাহ বেদরকারী কাজ করেন না। আদমের (আ.) যোগ্যতার কারণ তাঁর স্মৃতি শক্তি। আদমের (আ.) নামগুলো মনে রাখার মত স্মৃতি শক্তি ছিল কিন্তু ফেরেশতাদের নামগুলো মনে রাখার মত স্মৃতি শক্তি ছিলনা। আদমের (আ.) স্মৃতি শক্তি থাকার কারণ তাঁর গঠন উপাদান মাটি কিন্তু ফেরেশতার গঠন উপাদান আলো।মাটির স্মৃতি ধারণ সক্ষমতা বেশী কিন্তু আলোর স্মৃতি ধারণ সক্ষমতা কম। উল্টো আলোর গতি বেশী মাটির গতি কম। ফেরেশতা গতি বেশী পেয়েছে স্মৃতি কম পেয়েছে। আদম (আ.) স্মৃতি বেশী পেয়েছে গতি কম পেয়েছে। ফেরেশতা গতি দিয়ে জীবনকে সহজ করেছে। আর আদম (আ.) স্মৃতি দিয়ে জীবনকে সহজ করেছে।ফেরেশতা কেন ফেরেশতা হয়েছে? আদম (আ.) কেন আদম হয়েছে? সম্ভববত নেচারাল সিলেকশন বা প্রকৃতিগত নির্বচন। ফেরেশতার আত্মা ধীরগতি নিয়ে বাঁচতে চায়নি। আদম আত্মা কম স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে চায়নি। সংগত কারণে আদম আত্মার বিবর্তন হয়েছে মানুষে আর ফেরেশতার আত্মার বিবর্তন হয়েছে ফেরেশতায়।আর সেটা হয়েছে আল্লাহর ক্রিয়েটিং প্রোগ্রাম অনুযায়ী। সেজন্যই আল্লাহ কিয়েটর বা সৃষ্টিকর্তা।
আদমের (আ.) ইচ্ছার কারণে আদমকে আদম (আ.)আর ফেরেশতার ইচ্ছার কারণে ফেরেশতাকে ফেরেশতা করা হয়েছে। আর তাদের গঠন উপাদানের কারণে কেউ সেরা হতে পেরেছে আর কেউ সেরা হতে পারেনি। আবার উপাদানগত কারণেই আদমের (আ.) জীবন কষ্টকর কিন্তু সে সেরা। আর উপাদানগত কারণেই ফেরেশতার জীবন সহজ কিন্তু সে সেরা নয়। কাজেই সেরা হতে হলে কষ্টের বিকল্প নেই। আপনাকে কষ্ট করেই সেরা হতে হবে।
আদমের (আ.) নিকট গতির চেয়ে স্মৃতি সেরা ছিল আর ফেরেশতার নিকট স্মৃতির চেয়ে গতি সেরা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো গতির চেয়ে স্মৃতি সেরা। স্মৃতি অধিক পেয়ে আদম (আ.) বেশী জ্ঞানী হলেন। তাঁর জিনের বাহক সন্তানেরা আজ কত বিস্ময়কর কান্ড ঘটাচ্ছে। সে দিক থেকে অন্য সবার অবস্থান বহু দূরে। আদম সন্তানেরা আজ প্রমাণ করেছে গোষ্ঠিগত ভাবে তারা অনেকবেশী সেরা। আর এটা এখন প্রমাণীত সত্য।কাজেই কেউ যদি আল্লাহকে ন্যায় বিচারী মনে না করে তবে সেটা তার ভুল ধারণা।মূলত আল্লাহর ন্যায় বিচারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি নেই।আর ইবলিশ আল্লাহকে অমান্য করে বড় ভুল করেছে। আল্লাহ আদমের (আ.) পক্ষে কোন পক্ষপাতিত্ব করেননি। এমন কথা কেউ প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনা।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১৮