আল্লাহ নবি (সা.) ও পরকাল ইসলামের প্রধান আলচ্য বিষয় কিন্তু বিদ্যমান জীবন ও জগৎ বিজ্ঞানের আলচ্য বিষয়।আল্লাহ নবি (সা.) ও পরকাল বিষয়ে যার পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই ইসলাম তার নিকট গৃরুত্বপূর্ণ নয়।কিন্তু বিজ্ঞানের উপকার সবার জীবনে দৃশ্যমান বিধায় এটা সবার নিকট গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরকাল বিষয়ে বিজ্ঞান তেমন কাজের বিষয় নয়। কারণ বিজ্ঞান এখনো পরকালের সঠিকতা আবিষ্কার করতে পারেনি।তবে বিজ্ঞানে থাকা বা না থাকা সঠিকতার জন্য জরুরী নয়।কারণ অনেক কিছুই বিজ্ঞানে না থাকলেও সঠিক ছিল বা আছে। যেমন পানির ভরতত্ত্ব আবিষ্কার হওয়ার আগেও এর কার্যকারিতা ছিল। আবার বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি এমন অনেক কিছু আছে সেটা যে কি তা’ আবিষ্কারের পরে বুঝা যাবে। যেমন আবিষ্কারের আগে ভরতত্ত্বও বোধগম্য ছিলনা। বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করতে পারেনি তা’ সঠিক নয় বলা বেকুবি। যেমন এক বিজ্ঞান ভক্ত বলছে কেয়ামত রূপ কথা। তো কেয়ামত বিষয়ের সঠিকতা নির্ণয়ে তার বিজ্ঞান অপারগ হওয়া কি কেয়ামতের দোষ? এরপর কোন এককালে যখন তার বিজ্ঞান কেয়ামতের সঠিকতা আবিষ্কার করবে তখন সে কি বলবে? তো তার বিজ্ঞান কোন কালে কি আবিষ্কার করবে তার জন্য আমরা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছাড়া বসে থাকব নাকি? কেউ যদি বলে কেয়ামতের সঠিকতা না জেনে বিশ্বাস করবেন কিভাবে? কিন্তু কেয়ামতের সঠিকতা জানতে বিজ্ঞানই লাগবে এটা এমন জরুরী নয়। কারণ বিজ্ঞান ছাড়াও বহু বিষয়ের সঠিকতা জানা যায়। যেমন আমার জমিতে আমি যে গাছ লাগিয়েছি সেটা আমার গাছ এটা জানতে বিজ্ঞান লাগেনা।
ইসলাম বিশেষ কারো জন্য নয় বরং ইসলাম সাধারণভাবে সবার জন্য।কাজেই ইসলামের সঠিকতা নির্ণয়ে সাধারণ জ্ঞান যথেষ্ট হওয়ার কথা। একজন নিরক্ষর সাধারণ মানুষের পক্ষে বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান দিয়ে ইসলামের সঠিকতা নির্ণয় সম্ভব নয়। অথচ তার জন্য ইসলাম স্বীকার করা ও ইসলাম মান্য করা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য।আল্লাহ বলেছেন,‘লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসয়াহা-আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পন করেন না যা তার সাধ্যাতীত’। সূরাঃ২ বাকারা, আয়ত নং-২৮৬।সংগত কারণে ইসলামের সঠিকতা অকাট্যভাবে নির্ণয় করতে বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন না হওয়ার কথা। আর কেউ যদি বিজ্ঞান দিয়েও ইসলামের বিরোধীতা করে তবে সাধারণ জ্ঞান দিয়েই তাকে থামাতে পারার কথা।কেউ কেউ বিগ ব্যাংগ, জেনেটিক্স, স্ট্রিং খিওরী, কোয়ান্টাম মেথড ও বিবর্ত ইত্যাদি উপস্থাপন করে বলে সৃষ্টিকর্তার আর দরকার নেই। দেয়ার ইজ নো গড- সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছুই নাই। ধর্মসব মানুষের বানানো।তারা যে সব কাজের কথা বলল এসব যে সৃষ্টিকর্তার কাজ নয় সাধারণ জ্ঞানের এ প্রশ্নের জবাব তারা বিজ্ঞান দিয়ে কিভাবে প্রদান করবে? বিজ্ঞান অনেক সমস্যার সমাধান দিয়েছে কিন্তু সব সমস্যার সমাধান কি বিজ্ঞান দিয়েছে? আর বিজ্ঞান বিশেষ জ্ঞান হোক আর অশেষ জ্ঞান হোক এটা যেহেতু মানুষের জ্ঞান, যেহেতু মানুষ মাত্রই ভুল আছে, সেহেতু বিজ্ঞানেও ভুল আছে এটা অস্বীকারের উপায় নেই।সংগত কারণে অনেকে বিজ্ঞানকে যতটা গুরুত্ব প্রদান করছে বিজ্ঞান আসলে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞান বিজ্ঞান হতে গুরুত্বপূর্ণ।যেমন বাবু ও মাঝির গল্পে বাবুর বিজ্ঞানের জ্ঞান মাঝির সাঁতার জানার সাধারণ জ্ঞানের কাছে তুচ্ছ প্রমাণীত হয়েছে। বিজ্ঞানের জ্ঞান না থাকায় বাবু মাঝির জীবন বার আনা মিছে বলেছে। আর বাবুর সাঁতার জানার সাধারণ জ্ঞান না থাকায় মাঝি বাবুর জীবন ষোল আনা মিছে বলেছে।হাসরের দিন আল্লাহ যখন বিচারকের আসনে বসে বিজ্ঞানীর কাজের হিসেব নিবেন তখন বেচারা বিজ্ঞানী কোন বিজ্ঞানে এ কঠিন অবস্থা থেকে বেঁচে যাবে? আর বিজ্ঞানীকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন কোন বিজ্ঞানে বেচারারা জহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে? সংগত কারণে বেহুদা বিজ্ঞানকে গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়ে বিপদে পড়ার কোন যুক্তি নেই। যে বিজ্ঞানে উপকার হয় সে বিজ্ঞান মানা হবে আর যে বিজ্ঞানে ক্ষতি সে বিজ্ঞান অবশ্য পরিত্যাজ্য। এবার সেটা বিশেষ জ্ঞান হোক আর অশেষ জ্ঞান হোক ক্ষতিকর কোন জ্ঞানের কোন দরকার নেই। যে জ্ঞান আল্লাহর পথ ছেড়ে শয়তানের পথে চলতে বলবে সে জ্ঞান থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা বাঞ্চনীয়।
বিজ্ঞান হলো বিশেষ জ্ঞান।কেউ যদি ইসলামকে ভুল প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী নিয়ে হাজির হয় এবং তার বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী যে ভুল সেটা যদি বিজ্ঞান দিয়ে বুঝালে সে ভাল বুঝে ঘটনা এমন হয় তবে সে ক্ষেত্রে ইসলামের স্বপক্ষে বিজ্ঞান উপস্থাপন করা যেতে পারে।তবে ইসলামের সাধারণ জ্ঞান এতটাই শক্তিশালী যে ইসলাম অস্বীকারকারীদের বিজ্ঞানও সে সাধারণ জ্ঞানের সাথে কুলাতে পারেনা। তবে এটা ঠিক যে ভুল বিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞানের চেয়ে নিম্নমানের।ভুল বিজ্ঞান বলতে যেটা মূলত বিজ্ঞান নয় নাম দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান এমন বিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞান থেকে উঁচুমানের হতে পারেনা।কারণ ওটা মোটে বিজ্ঞানই নয় বরং ভুয়া কথা তবেতো ওটা জ্ঞানও নয় আর সাধারণ জ্ঞান তবু জ্ঞান কাজেই এমন ভুয়া বিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞানের সামনে দাঁড়াতে পারে কেমন করে? কাজেই সত্যিকারের সাধারণ জ্ঞান ভুয়া বিজ্ঞান থেকে শক্তিশালী। সংগত কারণে সত্যিকারের সাধারণ জ্ঞান দিয়েই ভুয়া বিজ্ঞানকে পরাজিত করা যায়।সংগত কারণে ইসলামের সাধারণ জ্ঞানের সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা ভুয়া বিজ্ঞানের নেই।
বিবর্তন হয় এটা কেউ প্রমাণ করেছে, তাই বলে বিবর্তন হয়েছে এটা কি প্রমাণ হলো? কেউ ভাত খায় বলে এটা কি প্রমাণ হলো যে কেউ ভাত খেয়েছে? যেখানে দেখাগেল যে ভাত প্লেটেই রয়ে গেছে পেটে ঢুকেনি।তবে প্লেটে ভাত ছিল এখন প্লেটে ভাত নেই এমন হলে বুঝা যায় ১। ভাত সে খেয়েছে, ২। অন্য কেউ ভাত খেয়েছে, ৩। ভাত সে ফেলে দিয়েছে, ৪। অন্য কেউ ভাত নিয়ে গেছে (সে দিয়েছে বা জোর করে নিয়েছে)।কাজেই বিবর্তন হয় এমন প্রমাণ দ্বারা বিবর্তনের মাধ্যমে সব হয়েছে এমন কথা প্রমাণ হয়না। আর এটাও প্রমাণ হয়না যে বিবর্তন সৃষ্টিকর্তার কাজ নয়। কতিপয় লোককে আল্লাহ বলেছেন, ‘কুনু কিরাদাতান খাসেইন-তোমরা অধম বানর হয়ে যাও’। এখানে মানুষ থেকে বিবর্তন হয়ে বানর হয়েছে এটা মূলত আল্লাহর কাজ ছিল।কাজেই বিবর্তন কোরআন স্বীকার করলেও এটা আল্লাহর কাজ নয় কোরআন এটা স্বীকার করেনা আর বিবর্তন বাদের মাধ্যমে সব হয়েছে এটাও কোরআন স্বীকার করেনা। একজন বলল কারা নাকি কোথায় কি বিবর্তন হতে দেখেছে।তো তাতে হয়েছে কি? কিছু একটা বিবর্তনের ফল এর মানে কি সব কিছু বিবর্তনের ফল? আটার গোল্লা থেকে রুটি হয় এটা আমরা দেখছি এটা মানুষের কাজ। এমন বিবর্তন এমনি এমনি হয় না। কাজেই বিবর্তনই যদি এমনি এমনি না হয় তবে এ বিবর্তন দিয়ে আল্লাহকে অস্বীকার কারা যায় কেমন করে? কাজেই বিবর্তন আবর্তন আর প্রর্তন যাই হোক তা’ কিন্তু মোটেও আল্লাহ নবি (সা.) ও পরকাল বিশ্বাসের অন্তরায় নয়। কাজেই বিবর্তন হয় হোক বা না হয় না হোক তাতে আল্লাহকে অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই।
ইসলামকে সাধারণ জ্ঞানেই অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণ করা যায়। আর বিজ্ঞান দিয়ে ইসলামকে বেঠিক প্রমাণ করার কোন যোগ্যতা বিজ্ঞানের নেই। আর তেমন যোগ্যতা কোন কালে হবেও না। কাজেই বিজ্ঞানকে ইসলামের বিপরীতে দাঁড় করার চেষ্টা অহেতুক। আর ইসলামের কোন কিছুকে রূপকথা বলা বেকুবী। এমন বেকুবের কথা কোন মুসলমান মান্য করতে পারেনা। কারণ ইসলামের সব কিছু যথাযথভাবে সঠিক প্রমাণ করা যায়। কোন ব্যক্তি তেমনটা না পারা তার নিজের অপারগতা। কোন ব্যক্তির তেমন না পারা ইসলামের অপারগতা নয়। কাজেই ইসলাম বিরুদ্ধ কথা সঠিক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৫৭