কাজের নমুনা দেখে মানুষ বলে এটা অমুকের কাজ না হয়ে পারেনা। যেমন তারা জুতা সেলাই দেখে বলে এটা অবশ্যই মুচির কাজ আর পেট সেলাই দেখে বলে এটা অবশ্যই ডাক্তারের কাজ। অনুরূপ জামা সেলাই দেখে বলে এটা অবশ্যই দর্জির কাজ। এখানে একজনের কাজকে তারা কিছুতেই অন্যের কাজ বলে দাবী করেনা। যেমন তারা কিছুতেই পেট সেলাইকে মুচির কাজ বলেনা।অনুরূপ কোন কাজ দেখে যদি বলতেই হয় যে এটা অবশ্যই আল্লাহর কাজ, এটা আল্লাহ ছাড়া অন্যকারো কাজ নয়, তবে আর আল্লাহকে অস্বীকার করা যায় কিভাবে? কারো কাজ আছে সে নেই এমনটা তো আর বলা যায়না।
আল্লাহর কাজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানি তাকভীম-নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। সূরা ৯৫, সূরা আত-তীন, আয়াত নং-৪। এখানে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিকরার দাবী করেছেন।প্রমাণ হিসেবে বলেছেন মানুষের সর্বোত্তম আকৃতি।কারণ সর্বোত্তম হতে ভুল মুক্ত হওয়ালাগে।সীমাবদ্ধ কেউ ভুল মুক্ত হতে পারেনা। কারণ কাজ যদি তার সীমা অতিক্রম করে হয় তবে ভুলতো দূরের কথা সে কাজটা করতেই পারবেনা। যেমন মুচি যদি ডাক্তারি বিদ্যা মোটেও না জানে তবে সে কিছুতেই পেট সেলাই করতে পারবেনা।আবার বিদ্যা না থাকলে রিক্সা চালকের পক্ষ্যে কিছুতেই উড়ো জাহাজ চালানো সম্ভব নয়। কোন মহাজ্ঞানীও যদি বলে এটা সম্ভব তবে এটা বিশ্বাস যোগ্য হবেনা যদি না রিক্সাওয়াণা বিমান চালানো না শিখে।অনুরূপ সসীমের পক্ষ্যে ভুলমুক্ত থাকা অসম্ভব। আবার কাজের সর্বোত্তম মাত্রায় পৌঁছানোও অসম্ভব। জ্ঞান ও বুদ্ধিগত ত্রুটির কারণে সসীমের কোন কাজকে সর্বোত্তম মনে হলেও দেখা যায় পরে এরচেয়ে উত্তম কেউ করে ফেলেছে। যে সর্বোত্তমের চেয়ে উত্তম বানানো যাবেনা তার জন্য অসীম হওয়া দরকার। অসীমে তথ্যগত ঘাটতি না থাকায় তাতে ভুল কিছুতেই স্থানলাভ করতে পারেনা।ভুলহতে গেলেও শুদ্ধতথ্যের আমদানীতে কাজটা শুদ্ধ হয়ে যায়। ভুল আর হতে পারেনা। এজন্য পদ্ধতিগতভাবেই অসীমের ভুল হতে পারেনা। অসীম একজনের বেশী হতে পারেনা। কারণ অসীমকে একাধীক করতে এর সীমা দিতে হবে। আর সীমা দিলে অসীম আর অসীম থাকেনা। সসীম হয়ে যায়। সে জন্য অসীম একাধীক হওয়া সম্ভব নয়। কাজেই দাবীকৃত সর্বোত্তম কাজটি অসীমের এবং সেটা শুধুই একজনের। তাঁর নাম আল্লাহ। অন্য কেউ অন্য কোন নাম দিলেও তিনি একজন। একজনের একাধীক নাম পার্থক্য শুধু এটা।কাজেই মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি এটা সাব্যস্ত। এখন যার কাজ আছে তিনি নেই এটা সঠিক কথা নয়। আপনি দেখুন অথবা না দেখুন কাজ যাঁর আছে তিনি অবশ্যই আছেন।
মানুষের আকৃতি কি আসলেই সর্বোত্তম? তাহলে কাগজে-কলমে এর অঙ্গসজ্জা একটু পরিবর্তন করে দেখুন না এর চেয়ে উত্তম হয় কিনা। অথবা মাটি দিয়ে ব্যতিক্রম মুর্তি গড়েও দেখতে পারেন যে মানুষ আপনি দেখছেন তারচেয়ে উত্তম আকৃতি হয় কিনা।যদি না হয় তবেতো এটাই সর্বোত্তম আকৃতি।যেমন ধরুন মানুষের নাক থাকলো পিঠে। মুখ থাকলো মাথার পিছনে। চোখ যথাস্থানে থাকলো। তো মানুষটা কেমন দেখতে হলো? আর তার সুবিধা কি হবে? ডাল মাখা ভাত প্রথমে পিঠে নিয়ে শোঁকাও সেটা পঁচা কি না। তারপর অন্য দিকে দেখাও ময়লা আছে কিনা। এরপর মুখে তুলতেই সব গায়ে পড়ে একাকার। আর এখন কত সুবিধা। সব আছে এক জায়গায় সামনে খাবার আসলেই চোখ দেখে তাতে ময়লা আছে কি না। মুখের কাছে খাবার তুলতেই নাক বলে সেটা পঁচা কি না। এরপর বিনা দিধায় মুখে পুরো। কত সুবিধা। কাজেই সাব্যস্ত হলো মানুষের বিদ্যমান আকৃতি সর্বোত্তম। এরচেয়ে উত্তম আকৃতি সম্ভব নয়।সংগত কারণে এটা আল্লাহর কাজ। আর কাজ দ্বারাই আল্লাহ সাব্যস্ত। সুতরাং তাঁকে অস্বীকারের কোন পথ নেই। তাঁকে অস্বীকারকরতে বেকুব হওয়া জরুরী।আল্লাহ নিজেও কোরআনের স্থানে স্থানে বলেছেন।জ্ঞানবানদের জন্য তাঁর নিদর্শন রয়েছে।
এবার প্রত্যেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বানানো সম্ভব কি না। অথবা মানুষ নিজে নিজে হতে পারে কি না। তথাপি যদি আপনি আল্লাহকে স্বীকার করতে না পারেন। তবে শেষ বিচারে জাহান্নামে নিক্ষেপ হওয়ার পর হয়ত স্বীকার করতে পারবেন। আর তখনও অস্বীকার করলে ক্ষতি নেই। কারণ তখন আপনার অস্বীকারে পাপের শাস্তি আপনি পেতে থাকবেন। আর তখন অস্বীকার করলে আরো ভাল। কারণ আপনার কষ্টের দায় আর আপনি আল্লাহর উপর চাপাবেন না। আপনি তখন বলবেন প্রকৃতিগত ভাবেই আপনি এখানে এসে পড়েছেন। আর প্রকৃতিগত ভাবেই আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। কাজেই কারো প্রতি আপনার কোন অভিযোগ থাকবেনা। আর যদি অভিযোগ করেনও তবে আল্লাহ বলবেন আরে না না তোমার বিশ্বাস অনুযায়ী তুমিতো এমনি এমনি শাস্তি পাচ্ছ। তোমাকে আবার শাস্তি দেয় কে? আর মুক্তিইবা তোমাকে কে দেবে? অনুরূপ যারা দেব-দেবীতে বিশ্বাস করেছে আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের দেব-দেবীদেরকে ডাক। তারা তোমাদেরকে উদ্ধর করুক। আমার কাছে তোমাদের আরজি পেশের কোন সুযোগ নেই। কাজেই সময় থাকতে আল্লাহকে বুঝে তাঁর কাছ থেকে ভাল কিছু পাওয়ার চেষ্টা করা সংগত। বিগত সময় চলে গেলে আর পাওয়া যায় না।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৫