somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার পরিণতি

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ্ যুগে যুগে অসংখ্য নবী এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন। নবীগণ ছিলেন মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ট মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, প্রত্যেক নবীই তাঁর স্বজাতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের বাধা বিপত্তি, অবমাননার শিকার হয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا شَيَٰطِينَ ٱلۡإِنسِ وَٱلۡجِنِّ يُوحِي بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ زُخۡرُفَ ٱلۡقَوۡلِ غُرُورٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُونَ ١١٢ ﴾ [الانعام: ١١٢]
“আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জ্বিনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে, আর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন। [সূরা আল-আন‘আম-১১২]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا مِّنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيٗا وَنَصِيرٗا ٣١ ﴾ [الفرقان: ٣٠]
“আর এভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের থেকে শত্রু করে দিয়েছি। আর আপনার রবই তো হিদায়াতকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট”। [সূরা আল-ফুরকান: ৩০]
আর এই ধারাবাহিকতা থেকে আমাদের প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁর উপরও নবুওয়তী জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের কটুক্তি, অবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও অপবাদ দেয়া হয়েছে।
মূলত ইসলাম এবং নবীর প্রতি হিংসার কারণেই অমুসলিমরা একাজ করে থাকে।
আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন,
﴿إِن فِي صُدُورِهِمۡ إِلَّا كِبۡرٞ مَّا هُم بِبَٰلِغِيهِۚ ﴾ [غافر: ٥٦]
“তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। [সূরা গাফির-৫৬]
বাস্তবে হিংসা তাদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, ইসলাম এবং নবীর কোনো ক্ষতিই তারা করতে পারে নি।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
«ألا ترون كيف يصرف الله عني شتم قريش ولعنَهم، يشتمـــون مُذمَّماً، ويلعنون مُذمَّماً، وأنا محمد»
“তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, কীভাবে আল্লাহ আমাকে কোরাইশদের অবমাননাকর গালি, অভিসম্পাত থেকে পবিত্র রাখেন, তারা আমাকে মুযাম্মামকে (নিন্দিতকে) গালি দেয়, মুযাম্মামকে অভিসম্পাত করে , আর আমি মোহাম্মদ (প্রশংসিত) ।
তারা নবীকে নিয়ে যতই কটুক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন,
﴿ وَرَفَعۡنَا لَكَ ذِكۡرَكَ ٤ ﴾ [الشرح: ٤]
“আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি। [সূরা আশ-শারহ্-৪)।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়ায্যিন বলছে,
«أشهدُ أن محمداً رسول الله»
(আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।”
একজন অমুসলিম মনিষি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশংসায় বলেনঃ
محمد هو النبي الوحيد الذي وُلد تحت ضوء الشمس
অর্থঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাত্র নবী যার জীবনচরিত সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট।
তাঁর অবমাননাকারীদের অবমাননা থেকে তাঁকে রক্ষার জন্য আল্লাই যথেষ্ট।
আল্লাহ্ বলেন,
﴿ إِنَّا كَفَيۡنَٰكَ ٱلۡمُسۡتَهۡزِءِينَ ٩٥ ﴾ [الحجر: ٩٥]
“অবমাননাকারীদের জন্য আমরাই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সূরা আল-হিজর-৯৫]।
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা করেন,
﴿ أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ﴾ [الزمر: ٣٦]
“আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য কী যথেষ্ট নন?” [সূরা আয-যুমার: ৩৬]
এই আয়াতের তাফসীরে সুদ্দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে কেউই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর আনিত বিধান নিয়ে বিদ্রূপ বা অবমাননা করেছে আল্লাহ্ তাকে ধ্বংস করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন।
যুগে যুগে যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অবমাননা করেছে তাদের কেউ রক্ষা পায়নি, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, “নিশ্চয়ই যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়, তাঁকে অবমাননা করে, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন, তিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয় করবেন, আর মিথ্যুকদের মিথ্যা রটনাকে মিথ্যায় পরিণত করবেন, যদিও মুসলিমরা তাদেরকে শাস্তি দিতে না পারে।”

পরিণতিঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অবমাননা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কখনও কখনও সেটা দুনিয়ার জীবনেও অবমাননাকারীর উপর নেমে আসে, আবার কখনও কখনও সেটা আখেরাতের জন্য বরাদ্দ থাকে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمۡ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٥٧ ﴾ [الاحزاب: ٥٧]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখেরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” [সূরা আল-আহযাব: ৫৭]
আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়।
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কেরাণীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল মোহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল এটা মোহাম্মদ এবং তার সাথীদের কাজ; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তারা লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল। (বোখারী ও মুসলিম)
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! হতে পারে আজকের এই শ্যাম বাসিল ইয়াহূদী তার আত্ম তৃপ্তির জন্য বা কোনো পক্ষের প্ররোচনায় একাজ করেছে, কিন্তু তাকে নির্মম পরিণতির শিকার অবশ্যই হতে হবে, এ যেন নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারা। মুসলিম হিসেবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আমাদের অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু তা যেন কোনোভাবেই আক্রমনাত্মক না হয়, প্রত্যেকে তার সাধ্য অনুযায়ী লিখনীর মাধ্যমে, বক্তব্যের মাধ্যমে, অন্যথায় মনে মনে এই কাজকে ঘৃণা করার মাধ্যমে।
কিন্তু কোনোভাবেই সীমালঙ্ঘন করে নয়। মুসলিমরা যেন নতুন করে অমুসলিমদের কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা না দেয়, তাদেরকে আক্রমন করা বা ক্ষতি করার কোনো সুযোগ কাফেরদের জন্য তৈরী করা সমীচীন হবে না।

আল্লাহ তা‘আলার কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, তিনি যেন তাঁর দ্বীন, নবী ও মুসলিমদেরকে হেফাযত করেন।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×