শহরের গাছেদের আজ ভীষণ মন খারাপ,
পাতায় পাতায় আজ বিষাদের ঘনঘটা!
বর্ষাকালীন হাওয়ার স্রোতে পাহাড়ের গাছেরা তাদের চিঠি পাঠিয়েছে।
‘আনুষ্ঠানিক সম্ভাষণ ও কুশলাদি বিনিময়ের পর তারা জানিয়েছে যে,
পাহাড়ে তারা বেশ ভালো আছে,
নির্জন নিস্তব্ধ পরিবেশ, নির্মল বিশুদ্ধ বাতাস তাদের সুস্বাস্থ্যের ইন্সুরেন্স জোগাচ্ছে,
প্রতিদ্বন্দ্বীহীন মাটির মাঝ থেকে তারা শুষে নিচ্ছে প্রয়োজনীয় খাদ্যরস।
তাদের সন্তান সন্তানাদিরা দিব্যি বেড়ে উঠছে আকাশমুখী হয়ে,
চারপাশে দুই হাত মেলে তারা ছড়িয়ে পরছে তাদের আশপাশ জূড়ে।
তারা সেখানে বেশ ভালো আছে। ‘
পুরা চিঠি জূড়েই তীব্র সবুজের গন্ধ।
চিঠি পড়ে শহরের গাছেদের বেশ মন খারাপ !
অচেনা সেই পাহাড়ের জগতটার জন্য তাদের মন কেমন করতে থাকে।
শহরে যে তাদের ইচ্ছামত বেঁচে থাকার অধিকার টা নেই!
তারা এখানে মর্জিমত বাড়তে পারে না, শহরে তারা বন্দী কংক্রিটের চারকোণা বেড়ার ভেতর,
চাইলেই তারা প্রিয় গাছের পাশে দাড়াতে পারে না!
তাদের সারিবদ্ধ দাড় করিয়ে দেওয়া হয় অনিচ্ছাস্বত্তেও!
মাটি খুজতে গিয়ে অনেকসময় কংক্রিট কেই মাটি বলে ভ্রম হয় তাদের,
তাতে না আছে রস, না আছে স্বাদ!
শিকড়্গুলা তাও আকড়ে থাকে সেই কংক্রিট দেয়ালেই!
শহরের গাছেরা ইচ্ছামত বাড়তে পারে না,
দুই রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানেই হোক বা সুবিশাল কোন অট্টালিকার সুশ্রী বারান্দা!
বড় কাঁচির অধিকারী নাপিত তাদের সাজিয়ে রাখে মনমর্জি মত!
ইচ্ছামত চারপাশে দুইহাত মেলে দাঁড়াবার অধিকার তাদের নেই।
শহরের গাছেদের তাই সবসময় মন খারাপ থাকে!
এরই মাঝে খবর এলো,
রাজ্যে নতুন রাজা এসেছে, মানুষ রাজা !
রাজা হিসেবে সে কেমন সে বিচারে গাছেরা না গেলেও মানুষ হিসেবে সে কেমন!
তা নিয়ে গাছসমাজে আজ বড্ড তোলপাড়……
সে ভাল হলে তাদের জন্য ভাল, খারাপ হলে তাদের জন্য ও খারাপ।
দিনকতেক যাবার পর গাছেরা টের পেল,
নতুন রাজার মন বেশ সবুজ।
সে বেশ সবুজকে ভালোবাসে।
ইচ্ছামতন গাছ লাগিয়ে বেড়ায় শহরের এখানে সেখানে।
কিছুদিনের মধ্যে পুরো শহর জূড়েই সবুজ নিয়ে একটা মাতামাতি ঘটে গেল!
নিয়মভাঙা ছোট ছোট গাছেরা আস্তে আস্তে আকাশের দিকে বাড়তে লাগলো।
ভেঙে ফেলা হলো প্রচুর অলিখিত বেআইনি স্থাপনা!
গাছেদের বেড়ে ওঠার জন্য দিব্যি চারপাশ ফাঁকা হতে লাগলো!
গাছেরা বেশকিছুদিন ধরে ভালো আছে!
কিছুকাল পর গাছেদের মাঝে নতুন এক আলোড়ন!!
পাহাড় থেকে আবার চিঠি এসেছে !
উত্তর লেখার জন্য গাছেরা বেশ জোরেসোরে শুরু করলো প্রস্তুতি ।
তারাও এবার তাদের গল্প শোনাবে পাহাড়কে।
চিঠিটা লেখা প্রায় শেষের দিকে,
আনুষ্ঠানিক কুশলাদি বিনিময়ের পর গাছেরা লিখেছে তাদের শহরের কাব্য।
‘ইতি, তোমারদের শহরের গাছবন্ধুরা’
লেখার ঠিক আগমূহুর্তে বাতাসে এক শোকের আবহাওয়া,
ফিসফিসানীতে শোনা গেল, রাজা মারা গেছেন।
কেমন জানি এক অজানা আশংকা গাছেদের মাঝে!
কলমটা লেখা শেষ না করেই নামিয়ে রাখা হলো।
নতুন রাজার আগমনী বার্তা আবার শহর জূড়ে,
শহরের গাছেরা আবার আশায় বুক বাধে,
‘এ রাজার মন ও যেন সবুজ ই হয়’ !
বেশিদিন লাগেনি সত্যিটা প্রকাশ পেতে,
টের পাওয়া গেল- নতুন রাজার মনের রঙ কালো! বড্ড কালো!
আস্তে আস্তে কাটা পরতে লাগলো অনেক নতুন গাছের স্বপ্ন!
শহরের গাছেরা আবার কংক্রিট বন্দী!
তারা হারিয়ে ফেল্ল ইচ্ছামত বেড়ে ওঠার অধিকার।
যেদিন দেখা গেল ,
নতুন রাজার রাজপ্রাসাদ টা শহরের সব থেকে উঁচু গাছটাকে ছাড়িয়ে আকাশ ছুয়ে যাচ্ছে,
শহরের গাছেরা সেদিন বিশ্বাস করে নিলো যে,
শহরের গাছেদের ইচ্ছে থাকেনা, স্বপ্ন থাকে না!
শহরের গাছেদের নিজের মত বাঁচার অধিকার থাকে না!
ওদিকে,
পাহাড় গাছ রাজ্যে একটি নিখুঁত মিথ্যে চিঠি লেখার জন্য আশিবয়সের বটবৃক্ষ পেলো পুরস্কার।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৯