♦
মাছরাঙাটাকে উল্টো করে
লোকগুলো জলে ছেড়ে দেয় রাঙামাছ
কিছু দুঃখঘাস গুঁজে দেয় মাছটির বুকে
পৃথিবীর ওই প্রান্তিক পল্লীতে দাঁড়িয়ে।
মানুষের গভীরে গিয়ে মাছটি করে নোঙর,
ফের বেরিয়ে আসে শ্বাসনালী দিয়ে দীর্ঘশ্বাস হয়ে।
যে প্রান্তিক পল্লীতে তারা দাঁড়িয়ে
তার আশপাশেই কারখানা মেশিনগানের
কোথা দিয়ে কতদূর গেলে সে কারখানা,
জানি না
ওগুলো শিল্পনগরী-টগরীর ব্যাপার।
♦
কুকুরের জিভ থেকে টুপ করে ঝরে পড়া মধ্যদুপুর
আমি তার ভেতর দিয়ে এগিয়েছি আরেকটু দূর
এখানে সবার ভিড়— মঠবাড়ি, মার্বেল মীর
বাহারি ওদের মেয়ে মনেমনে মরে গিয়ে স্থির
এখন দাফন হবে, কোদালের সহ্য করি কোপ
মনেমনে রুপে দেই তাতে দু'টো বাতাসের ঝোঁপ
কুকুরের জিভ থেকে টুপ করে ঝরে পড়া মধ্যদুপুর
আমি তার ভেতর দিয়ে এগিয়েছি আরেকটু দূর
এখানে আলতো বসে বাদুড়েরা উড়ে যেতে পারে-
একাকিত্বতা এক ইলেক্ট্রিকের খোলা তারে।
♦
গভীরভাবে অগভীরে কামড় দিয়ে দেখি—
আমার জিভ নেই
জিভ কাটা রক্তে ভেসে গেছে দেশ
রক্ত পঁচে সার হয়
আশপাশে নেই গোলাপ-শিউলির চারা
তাই তরতরিয়ে বাড়ছে মহান ইপিলইপিল
তার শব্দফুল, সুরেলা গড়ন
এমতাবস্থায়ও পেছন থেকে শার্ট খামচে
একটা লম্বালম্বি সা-র-প্রা-ই-জ দিয়ে ফেললো
হর্ষরোদ
তার হাতে ধূসর উপহার প্যাকেট
ভেতর থেকে কে একজন আমার স্তুতি রিডিং পড়ছে
সংরক্ষিত মহিলা আসনে দাঁড়িয়ে।
♦
রাজপথে ম্যানগ্রোভ মিছিল
আমি ধরলাম তার পাশ-ঘেঁষা উপপথ
নাক অবধি নোনাজলে ডুবন্তদের প্রতিবাদ সারিতে
ব্যাবহৃত দেশলাই কাঠির মত উদাসীনতা ছুঁড়ে
চলতে থাকলাম উপপথের নিঃসঙ্গ ফেরিওয়ালার সাথে পা-চালিয়ে
নাক-মুখে তার টলমলে একশো নোনা-দুপুর
ম্যানগ্রোভ মিছিল রাজপথে
শ্বাসমূল এক আমিও
তবু ধরলাম উপপথ
কারণ প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন-স্বারকলিপিগুলো লেখা হয় না ব্রেইল অক্ষরে !
♦
একজন সর্বজয়ী শেরপার হাত ধরে বসেছিলাম,
আমার হত ধরে তিনি
শুধু শেখালেন না পাহাড় ভাঙার অংক
এগিয়ে দিলেন জল
যেন পান করে এলাম অহং একগ্লাস !
একটুও দমিনি তাও
স্নেহের দুয়ার খোলেই কারো না কারো
যেমন, আমার চুলের স্পর্শ নিয়ে
এখনও ঝুলছে একটি দুয়ারের কড়া !
যে মাঝারি পাহাড়টির শৃঙ্গ ছুঁলাম একটু আগেই, সেটা পেছনে
অনেক চেষ্টায় শৃঙ্গে পৌঁছে দেখি— একটি লোক, মুখ ভার
কোলে একটি মৃত বিড়াল হাঁ হয়ে আছে
সর্বজয়ী শেরপার পরাজয়ের মত !
♦
সুদিপ্ত পুষ্পের পাপড়ি খোলো
বেরিয়ে পড়ুক রাতাভ শেমিজ
সঙ্গম অনীহার রেণুগুলো জোর করে ছোঁও
বোঝাও—কি আছে তার বাধ্যবাধকতা
মর্মর ধ্বনি নয় তুলে দাও পাতা থেকে পায়ে।
সুদিপ্ত পুষ্প কে তাড়াও
আবার ধরে ফেলো
যেহেতু— ওলান তার কাপড়ের সরে যাওয়া থেকে
তখনও কিছুটা করে ফুলোফুলো হাতছানি দেয়
হিল্লে বিয়ের রাতে আসমানি ব্যারিকেড
নামে গর্ভাশয়ে
চিন্তা কোরো না।
♦
পৈত্রিক সূত্রে লাল যোগ-চিহ্নের মালিক,
পারিবারিক ভাবে মেহনতী মানুষের চোখে
মেডুসার চোখ জুড়ে দিয়ে পাথর বানিয়ে ফেলা পুঁজি-গীত,
জিহ্বাগ্রে গণহত্যা ঠেকিয়ে করা চুকচুক, আর
প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে বুকভর্তি রায়ট বের করে দেয়া এক প্রয়াত জোৎস্না-পুরুষের উত্তরাধিকারীর ছোঁড়া থুথু থেকে ছিঁটকে
আমার পায়ের কাছের মাটিতে এসে পড়লেন আমার বাবা
উত্তরাধিকারীটি ঠিকই আছে
আমার বাবা কে কখনো তার বাবার মত
অমন আন্দোলিত দেখেনি সে
কিন্তু, আমাদের ঘরেও মাঝেমাঝে জোৎস্না এসে লম্বালম্বি শুয়ে থাকতো
চালের বাজার দরের সহজলভ্যতা বিছিয়ে !
♦
ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে সে
কয়েকটি চুল লেগে আছে গালের উপর
প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে দেখার মত তাকে
ভিজে আছে ঠোঁট
সদ্য স্নান-ফেরৎ তার ঠোঁট দেখেছিলাম
বিন্দু বিন্দু জল সমেত যেমন
আমাদের আঙ্গুলে আঙ্গুল
গত আষাঢ়ে যেভাবে ভিজেছিলাম সর্বশেষ
কানে হেডফোনে ছিলো গান’স এন্ড রোজেস !
ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে সে
বসে আছি খুন হওয়া প্রেমিকার পাশে
কান্না পাচ্ছে খুব
জানাজানি হবার পর্যন্ত থাকবো অনুরূপ !
♦
আমি ঘুমের ভেতর খিলজী খিলজী
বলে চেঁচিয়ে জেগে উঠি
আশপাশের সবাই এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়েন যে,
আমার কিচ্ছু হয়নি
আশপাশের গর্বিত সবাই এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়েন যে,
খর্বকায় আমার হাতগুলো হতে যাচ্ছে
অস্বাভাবিক লম্বা,
অসাধারণ।
তাঁদের লম্বালম্বি ঘুম বরাবর
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে যায় একটি বেঁটে আবাবিল।
আমি ঘুমের ভেতর খিলজী খিলজী বলে
চেঁচিয়ে জেগে উঠি
আশপাশের সবাই মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়েন
আমার ঘুম আসে না, বৃষ্টি আসে
জলছাঁট মুখে লেগে
গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে
লক্ষণ সেনের খণ্ড খণ্ড নিরীহ প্রজারা।
♦
অরণ্যে বেড়াতে গিয়ে তার সাথে দেখা
একজন প্রৌঢ় তিনি
যেহেতু আজ আর ফিরতে পারবো না, রাত হয়ে গেছে,
সেহেতু আমাকে ঘামিয়ে দিয়ে
শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল রাতের অরণ্য
অনুভব করে অভয় দিলেন তিনি
বললেন— তিনি এখানেই থাকেন
তাকে অরণ্যজন আখ্যা দিয়ে ফিরে এলাম পরদিন
অরণ্যের সবচে কাছের হাটটিতে
হাটবার ছিলো তার দু’দিন পর
একজন বিক্রি করছিলো খেলনা পাখি
বিক্রেতা সেই অরণ্যজন
পাখিগুলো তৈরি হয় জ্যান্ত পাখির পালক দিয়ে
পাখিদের পক্ষপাত শেষ হলো
চলুন, পরের খসড়াটি করে ফেলি
প্রৌঢ়ের অভুক্ত শিশুগুলোর পক্ষে !
♦
লেগুনায় লুঙ্গি উড়িয়ে ঝুলতে ঝুলতে গেলো একজন
সাথে পাল্লাদেয়া মটর বাইকে অষ্টাদশী ওড়না
সাম্প্রদায়িকতার একটা সীমা থাকা প্রয়োজন
তাই, ওড়াউড়ি দুটো রাখলাম একই বুকপকেটে
ঘরে ফিরে শুলাম উপুড় হয়ে
উপুড় শোয়ার চাপে
পকেটের ওড়াউড়ি দুটো থেকে
তাদের চরিত্র বেরিয়ে গেলো
একটা ভেজা ময়দার বল
আরেকটা কাঁটাওয়ালা মার্বেল যেন
তাদের বেরিয়ে যাওয়া চারিত্রিক স্পর্শে
আমার পেয়ে গেল ভীষণ কাতুকুতু
পতপত করে হাসতে লাগলাম
জাতিসংঘ হেডকোয়ার্টারের
সামনের ফ্ল্যাগ-পোস্টের মত।
♦
ঘাসাতুর শেফালীর বোন
ঘাসে শুয়ে থাকে কোলে করে-
আমাদের প্যাঁচানো সিঁড়িটা।
আমাদের ঘুম যাতে চড়ে-
নেমে আসে এখনও নয়ন
জুড়ে রেখে মিথ্যুক ভার
আমাদের খোদাতালারাও
করতো যে সিঁড়ি ব্যবহার
সেই ঘাসাতুর শেফালীকে
শুধাতে দারুণ মন চায়
গাছে তার মন কি টেকে না
কে তাকে ঝরিয়ে ফেলে যায়
ভালো আমাদের ভালোতায়!
♦
শূন্য সংখ্যাটা পরীর মত
ডানা আছে, স্বাপ্নিক, বহুগামী
অন্যরা গণ্ডিবদ্ধ, জো-হুকুম প্রেমী !
শূন্য এসব ভাবায়
যেমন-
আমার ভেতর আমারই জায়গা হয় না
চেগিয়ে বসেছে সুখ, বেদনা, রাত-ছাতিম
চেগিয়ে বসেছে বউয়ের পালা মুরগি, তার ডিম-
ফোটা বাচ্ছার জন্য আনার তাগিদ ভ্যাকসিন !
শূন্য সংখ্যাটা পরীর মত
শূন্যকেও সেদিন এটাই বললাম
জবাবে সে আমাকে বাঞ্চোৎ বললো
আমার পরীমূলক দুর্ব্যবহারে !
♦
বিছানায় মাথা রাখতেই
মাথার ভেতর রামপুরার ডিসপেনসারি খুলে যায়
সুন্নতে খৎনা হয় সেখানে
সাইনবোর্ডে ঝুলতে থাকে—
‘খৎনা শেষে রুগি হাঁটিয়া বাড়ি যাইতে পারে’র উল্লেখ।
কিন্তু সেটা ভাবনার বিষয় নয়
বিষয়— কাটাপড়া আগাগুলো
আগা নিয়ে ভাবতে ভাবতে
আমি ভাবনার আগামাথা পাই না
ওগুলো কোথায় যায় ? কী করে ?
মনে পড়ে যায়— হালকা আঁচে
কড়াইয়ে জাল হওয়া ছোলাবুটের দৃশ্য
আমার ভাবনা বুটের জায়গায় আগাগুলো বসিয়ে দেয়
ওগুলো ফুটতে থাকে মশলার মাখোমাখো বুজকুড়ি সমেত
আগাগুলো কি রান্না হয় ?
শুকিয়ে হয় শুটকি ?
নাকি সোনালু ফুলের মত
তাদের তুলে নিয়ে আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয় আগালু ফুল নামে ?
বিছানায় মাথা রাখতেই
মাথার ভেতর এসব ভাবনা খুলে যায়
ভাবনার কোনো আগামাথা পাই না, তাই
উঠে পড়ি, হাঁটতে থাকি
আমার পাশে পাশে লুঙ্গি উঁচিয়ে
চেগিয়ে চেগিয়ে হাঁটতে থাকে
দুই লাখ ছেচল্লিশ হাজার সাঁইত্রিশ বর্গকিলোমিটার।
♦
বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফেরা পথে
ব্যাগ খুলে দেখি—
ঠাঠা করে হেসে গড়াচ্ছে আড়ৎদার
হাসিমাখা সেই থুৎকার-
থেকে কেঁদে বাড়িমুখো দীঘল মতিন !
তারপরও দেখা যাবে একদিন
সারারাত বউয়ের সাথে শুয়ে
সকালে আলের ধারে পোয়াতি-মতিন
তার গায়ে থোকা থোকা বরবটী-ফুল !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১