গল্প আমাদের সবার মাথাতেই আছে। কিন্তু আমরা সেই গল্পগুলো মাথা থেকে কাগজে উপস্থাপন করতে পারি না। মাথার ভিতরে দুর্দান্ত সব আইডিয়া থাকা সত্যেও আমরা সেগুলোকে সিঠিকভাবে লিখতে পারি না। কিছুদিন পরে গল্পগুলো মাথা থেকে হারিয়ে যায়। ফলে দুর্দান্ত কিছু সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয় না।
লেখালেখিটাকে অনেকেই ঈশ্বরপ্রদত্ত বিশেষ গুন বলে থাকেন। আবার অনেকেই লেখালেখিটাকে খুব কঠিন কাজ বলে মনে করেন। কথাটা সত্য নয়। লেখালেখি করার জন্য প্রেয়োজন আক্ষরিক জ্ঞান এবং শব্দ ভান্ডার। যার শব্দভান্ডার যত সমৃদ্ধ তার লেখালেখি ততো নন্দিত। শব্দভান্ডার খুব বেশি সমৃদ্ধশালী না হলে যে লেখালেখি করা যাবে না - এমনটা কিন্তু নয়। অনেকেই মনে করেন লেখালেখির ক্ষেত্রে সাধারন ভাষা প্রয়োগ করা যাবে না, অতি সাহিত্যিক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। লেখালেখির ক্ষেত্রে ভাষা হবে অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং বোধগম্য। খুব সাধারন ভাষা দিয়ে অসাধরন সব সাহিত্যকর্ম রচনা করা সম্ভব।
মনের কথাগুলো বা দুর্দান্ত আইডিয়াগুলোকে সাহিত্যে পরিনত করাটা খুব কঠিন কাজ না। একটু গুছিয়ে খুব সাধারন ভাষা দিয়েই এটা সম্ভব। এর জন্য দরকার ইচ্ছা ও মনোবল। তবে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ না থাকলে তার পক্ষে সাহিত্য রচনা করা সম্ভব না। তাই বেশি বেশি বই পড়তে হবে। একজন ভালো পাঠকই পারেন একজন ভালো লেখক হতে।
লেখালেখির ক্ষেত্রে ধৈর্য্য দরকার সবচেয়ে বেশি। মাথার ভিতরের আইডিয়াকে গল্পে পরিনত করে একটি নান্দনিক সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির জন্য অবশ্যই আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। লেখালেখির পেছনে আপনি যত বেশি সময় দিবেন আপনার লেখা ততোবেশি সুন্দর হবে।
ধাপ - ১
আপনার মাথাতে কোনো একটা গল্প আছে। গল্পটা আপনি লিখতে চান। প্রথমেই একটা বিষয় মনে রাখুন - গল্পটা শুধুই আপনি জানেন, পাঠক কিন্তু জানে না। গল্পটা পাঠকে সঠিকভাবে জানানোই আপনার কাজ। অন্য কিছু না ভেবে এই কাজটাই ঠিকভাবে করুন। কিভাবে আপনি জানাবেন সেটা আপনার বিষয়। তবে পাঠক যেন গল্পটা জানতে পারে।
ধাপ-২
গল্পটা কোথা থেকে শুরু করবেন? এটা সম্ভবত খুব খুব কমন প্রশ্ন। কোনোকিছু লিখেতে গেলেই প্রশ্নটাই সবার প্রথমে মনে আসে। একটা গল্পকে যেকোন জায়গা থেকে শুরু করা যায়। এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে হয় না। গল্পটাকে ভালোভাবে উপস্থাপন করাটাই বড় কথা। কোথা থেকে শুরু করবেন সেটা বড় কথা নয়। আপনার ইচ্ছেমতো যেকোন জায়গা থেকে শুরু করতে পারেন। তবে কথা প্যচাবেন না। শুরুতে কোনো উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কোনোকিছু না ভেবেই শুরু করে দিন। আস্তে আস্তে ঘটনাকে এগিয়ে নিতে থাকুন।
ধাপ-৩:
শুরু করার পর কয়েক লাইন লিখার পরেই আসল চ্যালেঞ্জ। এই ধাপে এস আগ্রহ হারিয়ে ফেলা চলবে না। কি লিখছেন বা লেখাটা কেমন হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাববেন না। আপনি লিখে যেতে থাকুন। খুব বেশি তারাহুরার প্রয়োজন নেই। তবে লেখা থামাবেন না। যদি ছোট গল্প হয় তবে পুরোটা শেষ করে ওঠার চেষ্টা করুন। কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা পর্যন্ত লিখতে থাকুন। কোনো মতেই এই সময়টার আগে লেখা থামানো যাবে না। এটাই গুরুতাবপূর্ণ বিষয়। লেখাটা নিজের ভাষায় নিজের মতো করে লিখুন। এভাবে লিখেতে পারলে আপনার লেখাটা একটা পর্যায়ে চলে আসবে। একদিনে শেষ না করতে পারলে আরেকদিন বসুন। তবে যখনই বসবেন হাতে কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা সময় নিয়ে বসবেন। এভাবে চালিয়ে যান। লোখাটা শেষ করুন।
ধাপ ৪:
লেখাটা শেষ করার পর পুরো গল্পটা ভালোভাবে পড়ুন। এরপর পরিচর্যা করুন। প্রয়োজনে কাটছাট করুন। এবার বানানের দিকে নজর দেওয়ার সময় এস গেছে। বানানগুলো ঠিক করে নিন। এ পর্যায়ে গল্পটা পড়ে আপনি সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন। মনে হতে পারে, খুব ভালো হয়নি। লেখাটা নষ্ট করতে বা কাগজ ছিড়ে ফেলতে আপনার খুব ইচ্ছে হবে। কিন্তু এই কাজটা ভুলেও করার চেষ্টা করবেন না। লেখাটা পাবলিশ করার চিন্তা বাদ দিয়ে রেখে। এভাবে যতদিন খুশি ফেলে রাখুন।
ধাপ ৫:
লেখাটার কথা ভুলে গিয়ে নিয়মিত কাজে মনোনিবেশ করুন। বিভিন্ন লেখকদের বই পড়ুন। এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ পর লেখাটা নিয়ে বসুন। এবার লেখাটা আবার পড়ুন। এখন লেখাটাকে আগের মতো অতোটা খারাপ লাগবে না। একজন পাঠকের দৃষ্টি দিয়ে লেখাটা পড়লে ভুলগুলো খুব সহজেই আপনার চোখে পড়বে। একটু ঘষামাজা করুন প্রয়োজনে।
ধাপ ৬: অন্য কাউকে লেখাটা পড়তে দিন। বিশেষ করে লেখালেখি সম্পর্কে যারা ভালো ধারনা রাখে তাদেরকে পড়তে দিন। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। তাদের পরামর্শগুলো গ্রহন করুন। এতে আপনার লেখার শিল্পমান বৃদ্ধি পাবে।
ধাপ ৭: এতাদিনে আপনার লেখাটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রথম থেকে শেষ পর্য়ন্ত লেখাটা বিশ্লেষণ করুন। সব ঠিক থাকলে লেখাটা পাবলিশ করুন। বেশি বেশি মানুষকে লেখাটা পড়ার সুযোগ দিন। পাঠকদের প্রতিটি মতামত নোট করে রাখুন য আপানর পরবর্তী রচনার ক্ষেত্রে ভালো কাজ দিবে।
[এগুলো শুধুমাত্র নতুন লেখকদের জন্য প্রযোজ্য। এক্সপার্টদের জন্য নয়]