তিতলি একজন জেএসসি পরীক্ষার্থী। আজ তার রেজাল্ট। পরীক্ষা নামক মহান যন্ত্রনার পর ফল প্রকাশের সুসময়ের পূর্বে তার মনের অবস্থা খুবই খারাপ। তিতলির মামা সকাল থেকেই রেজাল্ট প্রাপ্তির আশায় এডুকেশন বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঠু মারা শুরু করে। দুইটার পরে রেজাল্ট পাওয়ার কথা থাকলেও বারোটার আগেই অনেকে রেজাল্ট পেয়ে যায়। তিতলির অনেক বান্ধবী ফোন দিয়ে A+ প্রপ্তির উচ্ছাস প্রকাশ করে। তিতলির মন খারাপ হয়। সে মামাকে খোচায়। মামা থ্রজি ইন্টারনেট দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। মামা বলেন, ধৈর্য্য ধর খুকী। ২ টার আগে রেজাল্ট পাওয়া যাবে না।
তিতলির খুব কান্না পায়। আশ্রুতে চোখেরর পানি নাকেরর পানি একাকার হয়ে যায়। তিতলির বাবা টেনশনে সিগারেট ধরাতে গিয়ে নিজের আঙুল পুড়িয়ে ফেলেন। তিতলির মা নফল নামাজ পড়তে বসেন। বারবার সুরায় ভুল করেন। তিতলোর ছোট বোনটা বসে বসে দাত দিয়ে নখ কাটে। তিতলির ছোটখালু রেজাল্ট জানতে চেয়ে ১৪ বার বিদেশ থেকে কল করেন।
অবশেষে ২টা বাজে। তিতলির মামা ব্রাউজার ওপেন করে এডুকেশন বোর্ডের সাইটের নাম লিখতে ৫ বার ভুল করেন। কয়েকবার চেষ্টার পর তিতলির মামা ওয়েবসাইটর প্রবেশ করেন। অনন্দে তিনি লাফিয়ে ওঠেন। কাঁপা-কাঁপা হাতে ঢাকা বোর্ড সিলেক্ট করেন। রোল নাম্বার টাইপ করেন। অবশেষে তিনি 'সাবমিট' ক্লিক করেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই রেজাল্ট চলে আসবে। সবাই ল্যাপটপ ঘিরে উবু হয়ে দাড়ায়। তিতলি বুকে থুথু দেয়। হঠাৎ করেই সকল আশা নিরাশা হয়ে যায়। রেজাল্টের বদলে গুটি গুটি অক্ষরে 'Error 503 Service Unavailable' লেখাটা ভেসে ওঠে।
তিতলি অবার কেঁদে ওঠে। তিতলির বাবা আবার সিগারেট ধরায়। তিতলির মা আবার নফল নামাজে দাড়ায়। তিতলির বোন দাত দিয়ে নখ কাটা শুরু করে। তিতলির মামা আবার চেষ্টা করে। ল্যাপটপ গরম হয়ে ওঠে।
তিতলি মোবাই ফোন থেকে ১৬২২২ নাম্বারে নিজের রোল নম্বর লিখে এসএমএস পাঠায়। অপেক্ষা করতে থাকে। দশ মিনিট অপেক্ষা করার পরেও রিপ্লাই আসে না। উৎকন্ঠা বাড়তেই থাকে।
অনেক চেষ্টার পর তিতলির মামা রেজাল্ট বের করতে সক্ষম হয়। তিতলির পরিবার রেজাল্ট পাবার পর সারাদিনের হয়রানি, উৎকন্ঠার কথা ভুলে যায়। পরিবারটি আনন্দে মেতে ওঠে।
দিন শেষে অভিযোগ করার মত কেউ থাকে না।
তাই আনুন্নত সার্ভারের ঘোড়ার গড়ি মার্কা এডুকেশন বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে যায়। এই একটা ভাঙ্গাচুরা ওয়েবসাইটের কারণে কত লক্ষ লোক হয়রানির শিকার হয়েছে, দিন শেষে তার হিসাব কেউ রাখে না। দিন শেষে বাংলাদেশ ডিজিতালত্বের পথে কেবল এক ধাপ এগিয়ে যায়।