প্রশ্নটা আমার মনে উকি দিচ্ছে ডুব বিতর্কের শুরু থেকেই। মেহের আফরোজ শাওন যখন সেন্সর বোর্ডের কাছে ডুব নিয়ে আপত্তিপত্র পাঠালেন, পত্রিকায় নিউজটা পড়েছিলাম। এই আপত্তিপত্রের কারণ হলো, এই চলচ্চিত্রে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের এমন কিছু প্রসঙ্গ রয়েছে, যেগুলোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এরপর থেকেই ডুব বাংলাদেশী মিডিয়ায় আলোচনা ও সমালোচনার তুঙ্গে। মুক্তির পরেও সেই আলোচনা ও সমালোচনা থেমে নেই।
বাতিঘর প্রকাশনীর কর্ণধার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের বেশ কয়েকটি অনুবাদ পড়েছিলাম। তার প্রথম মৌলিক উপন্যাস 'নেমেসিস' প্রকাশ হওয়ার পর বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়ে ফেললাম। বাংলাদেশী লেখকের লেখা ভালো লাগার উপাদানে পরিপূর্ণ থ্রিলার উপন্যাসটি পড়ে আনন্দিত হয়েছিলাম। উপন্যাসে খুন হওয়া জনপ্রিয় লেখক জায়েদ রেহমানের সাথে হুমায়ূন আহমেদের মিল খুজে পেয়ে বিস্মিত হয়েছি। উপন্যাসটা পড়ে শেষ করার পর মেহের আফরোজ শাওনের কথা বার বার মনে এসেছে। উপন্যাসটা সম্পূর্ণ মৌলিক। সেখানে হুমায়ূন আহমেদ, শাওন, গুলতেকিন নামের কোনো চরিত্র ছিল না। তবু এদের কথা বারবার মনে এসেছে।
'নেমেসিস' উপন্যাসে জায়েদ রেহমান নামের জনপ্রিয় লেখকের খুন হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই কাহিনী শুরু। খুনীকে খুজে পাওয়ার জন্য তদন্ত করতে করতে ঘটনা এগিয়ে চলে। জায়েদ রহমানের জীবনের বিকৃত যতোসব সত্য সামনে চলে আসে। উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে এসে জানা যায়, জায়েদ রেহমান একজন সমকামী।
এই উপন্যাসে লেখকের দ্বিতিয় স্ত্রী বর্ষা ছোট পর্দার নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা তরুনী। বর্ষার বয়স একুশ। জায়েদ রহমানের মেয়ের বান্ধবী বর্ষা। লেখকের প্রথম স্ত্রী গোলনূর আফরোজ তরফদার। লেখকের প্রতি যার রয়েছে চাপা ক্ষোভ। পুরো উপন্যাসে লেখক জায়েদ রেহমানের সাথে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর মিল পরিলক্ষিত হয়। এই উপন্যাস পড়ার পর হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন সম্পর্কে মনের আজান্তেই বিরূপ ধারনা তৈরি হতে পারে।
'ডুব' চলচ্চিত্রটি প্রেক্ষাগৃহে অনেকেই হয়তো দেখে ফেলেছেন। যারা দেখেননি তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিভিউগুলো থেকে চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পেরেছেন। ডুব চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র জাভেদ হাসাস। জাভেদ হাসান একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, তার স্ত্রী মায়া। তাদের এক কন্যা সাবেরি, আর এক ছেলে আহির। নিতু জাভেদের মেয়ে সাবেরির ছোটবেলার বন্ধু। চলচ্চিত্রটির মূল কহিনী হুমায়ূন আহমেদর জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দেখার পর থেকে অনেকেরই আক্ষেপের শেষ নেই। ফারুকী তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। যারা আক্ষেপ করছেন তারা নেমেসিস পড়েছেন কিনা জানা নেই। নেমেসিস পড়ার পর আক্ষেপ আরো বেশি হওয়া উচিত।
হুমায়ূন আহমেদ পরশ পাথরের মতো দামী একজন মানুষ ছিলেন। যখন যেখানে হাত দিয়েছেন, তখন সেটা দামী হয়ে গেছে। সফল, বিতর্কিত ও জনপ্রিয় এই মানুষটি বাংলাদেশের সেরা লেখক। তাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে, হতেই থাকবে। আগামী কয়েক দশক কিংবা শতকে তিনি আলোচনায় থাকবেন। তাকে নিয়ে গল্প হবে, উপন্যাস হবে, চলচ্চিত্র হবে, নাটক হবে।
'নেমেসিস' একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস। যদি হুমায়ূন আহমেদের চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে পারেন, উপন্যাসটা পড়ে মুগ্ধ আপনাকে হতেই হবে। টান টান উত্তেজনা ঘেরা চোর পুলিশ খেলার এই উপন্যাসটি অবশ্যই অসাধারন একটি থ্রিলার।
'ডুব' দেখার সময় হুমায়ূন আহমেদকে মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দেখতে পারলে গল্পটা অন্যরকম মনে হবে। একজন বাবার গল্প, একজন মেয়ের গল্প, জীবনের গল্প আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করবে।
যে প্রশ্নটা দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, মেহের আফরোজ শাওন 'নেমেসিস' পড়েছেন কিনা জানা নেই।