সিয়াশার ফোনটা রিসিভ করতেই ভয় পেয়ে গেলাম । মেয়েটা কাঁদছে !
অত্যন্ত জেদী, প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক, নেপোলিয়নের উত্তরসুরি- অসম্ভব কোন কিছুই যার ডিকশনারিতে নেই । আমরা ছেলে হয়েও যেসব কাজ করতে ভয় পাই, ও অনায়াসেই সেসব করে বসে । ঢর-ভয় কিছুই নেই তার । অদম্য সাহসী মেয়েটি যদি হঠাত্ ফোন দিয়েই কাঁদতে থাকে তবে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক ।
:- কি রে ? কাঁনতাছস ক্যান ?
:- ...... (নিশ্চুপ)
:- আরে বাপ ! কি হইছে সেটা তো বলবি ?
:- ...... (নিশ্চুপ)
:- অদ্ভুত ! কিছু না বললে কি হইছে বুঝব কেমনে ?
:- ...... (নিশ্চুপ)
:- আঙ্কেলের কিছু হইছে ?
:- না (ফোঁপাতে ফোঁপাতে)
:- আন্টির কিছু হইছে ?
:- না (নাক ঝাড়তে ঝাড়তে)
:- তাইলে ভাইয়ার ? ভাইয়ার কিছু হইছে ?
:- ....... (নিশ্চুপ)
:- কি হইছে ভাইয়ার ?
:- আরে কারো কিছু হয় নাই তো... (ক্ষেপে গিয়ে)
:- তাইলে কাঁনতাছস ক্যান ?
:- আবির...... (কন্ঠে চরম আকুতি)
ওহ আবির !
আবিরের কথা তো বলাই হয় নি ! সিয়াশার বয়ফ্রেন্ড আবির !
ডাকসাইটে মেয়েটা কিছুদিন হল প্রেমে পড়েছে । এইত মাস ছয়েক হবে । ছেলেটার নাম আবির । দুই ইয়ারের সিনিয়র ওর থেকে । ছয় ফিট লম্বা । আড়ালে আবিরকে আমরা তালগাছ ডাকি ।
অবাক হই, ছেলেটা কি করে মেয়েটারে সহ্য করে ! তালগাছের জন্য আমাদের মাঝে মাঝে দুঃখ হয় । বেচারা..... সিয়াশার মত একটে বিচ্ছুর প্রেমে পড়ছে । নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে ! আমাদের কি করার আছে ?
সিয়াশা আবিরের নাম ধরে কাঁদছে । তার মানে ওর কি কিছু হয়েছে । দেশের যা অবস্থা ! কোন কিছুর সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেয়া যায় না ।
:- আবির ? কি হইছে আবিরের ?
:- ....... (ফোঁপানির শব্দ)
:- আরে কি হইছে সেটা তো কইবি !
:- বাড়িতে...
:- তো ?
:- গত শুক্রবার বাড়িতে গেছে ।
:- ওর বাড়িতে কিছু হইছে ?
:- না ।
:- তাইলে কাঁনতেছস ক্যান ?
:- ও আসতে পারে নাই ।
:- মানে কি ?
:- মানে ও বাড়িতে গেছে । হরতাল/অবরোধের কারণে আসতে পারে নাই ।
:- আসতে পারে নাই ভাল কথা । কিন্তু তুই কাঁনতাছস ক্যান ?
:- কাঁনতাছি ক্যান মানে ? কত প্লান ছিল কালকের দিনটা নিয়ে ! থার্টি ফার্স্ট নাইটে পুরা রাত আমরা ফোনে কথা বলব । পরদিন একদম ভোরে ঘুরতে বের হব । সারাদিন একসাথে কাটাবো । কত জায়গায় ঘুরবো, ছবি তুলব । কত প্লান ছিল । আর হাঁদারামটা এখন বাড়িতে গিয়ে বসে আছে ।
প্রবাদে আছে- অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর ।
শোকে আমি পাথর হয়ে গেলাম । ভাবছিলাম কি আর হল কি ?
তার চেয়েও বেশী অবাক হলাম । কোথায় সেই তেজস্বিনী সিয়াশা, যাকে আমরা ডাকতাম বাঘিনীর কন্যা ! আর কোথায় ন্যাকামার শিরোমনি, লুতুপুতু কন্যা সিয়াশা !
মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও এতটা অবাক হতাম না, যতটা হলাম সিয়াশার এই পরিবর্তনে ।
মহামতি পুলক ভাই একদা বলেছিলেন- প্রেম মানুষের প্রতিভা ধ্বংস করে তাকে অকর্মণ্য করে দেয় !
আজ আমি তার সাথে যুক্ত করলাম- প্রেমে পড়লে মানুষ শুধু অকর্মণ্যই হয়না, তার সহজাত বুদ্ধি লোপ পায়, পেটভর্তি ন্যাকামি তাকে গ্রাস করে, সাথে সাথে মাথার স্ক্রুগুলাও ঢিলা হয়ে যায় ।
দাঁতে দাঁত চেপে সিয়াশা বললাম- সিয়াশা, তোকে একটা কথা বলি ?
:- বল (এখনো ফোঁপাচ্ছে)
:- ডি জি এম ।
:- ডিজিএম মানে কি ?
:- মানে হল- দূরে গিয়া মর ।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম । ফাইজলামির একটা লাগাম থাকে ! এসব লাগামছাড়া ফাইজলামির কোন মানে হয় ?