আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে না জানায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতাও বেড়ে গেছে বহুগুণ। বাড়িঘর – দোকান- ব্যবসা বাণিজ্য – নিজের জীবন সবকিছুই যেকোন মূহুর্তে দূর্ঘটনার তথা হামলা- আক্রমণের স্বীকার হচ্ছে দেশজুড়ে। ঘটনা যদি ঘটেই যায় এবং আপনি যদি আইনের আশ্রয় নিতে চান তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটা হলো "এজাহার"।
বিস্তারিতঃ
♦এজাহার কি ?
সহজ কথায়, অপরাধ বা অপরাধমূলক কোনো কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় যে সংবাদ দেওয়া বা জানানো হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বলে। প্রকৃতপক্ষে, এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। কারণ রাষ্ট্রপক্ষের যে কোন মামলার আইনি প্রক্রিয়ার শুরু হয় এই এজাহারের মাধ্যমে।
অর্থাৎ যে কোন মামলার প্রথম ধাপ হল এই এজাহার।
♦এজাহার কাকে করতে হবে ?
√ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে;
√ তাঁর পরিবারের কেউ ; কিংবা
√ অন্য কোন ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন।
♦আবেদন কোথায় করতে হবে?
আবেদনটি দাখিল করতে হবে নিকটস্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা ওসি'র নিকট ।
♦দেওয়ার পদ্ধতি কি?
এজাহার লিখিত ও মৌখিক দুইভাবে দেওয়া যায়। তবে লিখিত দেওয়াটাই ভালো। ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময়, কীভাবে ঘটনা ঘটল, কেন ঘটল, দায়ী ব্যক্তি তথা আসামির নাম -ঠিকানা জানা থাকলে তার পূর্ণ বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।
এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে, যদি লিখিত বা কম্পোজ আকারে দেওয়া হয়। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে এজাহারকারীর বক্তব্য থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সঠিকভাবে লিখবেন। লিখিত আকারে নিয়ে এজাহারকারীকে তা পড়ে শোনাবেন। তারপর অভিযোগকারীর স্বাক্ষর নিবে। এবং যে কর্মকর্তা এজাহার লিখবেন, তিনিও সিল ও সই দেবেন।
★একটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যে, কখনো এজাহার করতে যেন দেরি না হয়। অনেক সময় মামলার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। কারণ দেরিতে এজাহার করলে মামলার গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে। যার ফলে অভিযোগকারী ন্যায়বিচার না পাওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। যদি কোন কারণে এজাহার করতে দেরি হয়েই যায় তাহলে তার সুনির্দিষ্ট কারণসহ আবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
♦পুলিশ কি করবে ?
এজাহার করার পর যদি উল্লিখিত অপরাধ আমলযোগ্য কিংবা এমন কোনো ঘটনাসংক্রান্ত হয়, যা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে আসামিদের ধরা যাবে বা শনাক্ত করা যাবে, বা করা উচিত, সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে বা ঘটনার তদন্ত করবে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই (ফৌজদারী কার্যবিধি, ধারা- ১৫৬)
আর যদি এজাহারে বর্ণিত অপরাধ বা বিষয়টি আমলযোগ্য না হয়, তবে পুলিশ এ- সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নেবে । (ফৌজদারী কার্যবিধি, ধারা- ১৫৫)
উভয়ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়োজিত কোন ব্যক্তি নিম্মোক্ত ধাপগুলো সাধারণত পালন করে থাকেন -
(ক) ঘটনাস্থলে যাওয়া।
(খ) মামলার ঘটনা এবং অবস্থা ascertain করা বা অবগত হওয়া।
(গ) সন্দেহভাজন অপরাধী বা অপরাধীদের বের করা এবং গ্রেপ্তার করা।
(ঘ) অভিযুক্ত অপরাধ সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করা।
যেমন :- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি নেয়া ও জিজ্ঞাসাবাদ করা ; জব্দ তালিকা তৈরি করা ; case ডায়েরি তৈরি করা ; 173 ধারা অনুযায়ী চার্জশিট তৈরির ব্যবস্থা করা। ফৌজদারি কার্যবিধির 154 , 190 ,200 ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে।
(ছবিঃ সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:২৫