‘ক’ একজন হিন্দু, ‘খ’ নামে তার একজন মুসলিম স্ত্রী রয়েছে। তারা স্পেশাল ম্যারেজ এ্যাক্ট, ১৮৭২- এর অধীনে বিবাহ বন্ধনে হয়ে সংসার করছেন এবং তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। ‘ক’ এর জিজ্ঞাসা-
** ক-এর পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সে উত্তরাধিকার হিসাবে পরিগণিত হবে কি না?
** তার নিজের(ক)-এর মৃত্যুর পর ‘খ’ অর্থাৎ তার স্ত্রী তার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তির অংশ দাবী করতে পারবে কি না?
উত্তরঃ বিবাহ সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা না থাকলেও প্রসঙ্গক্রমে এই বিষয়ে কিছু মন্তব্য করা বাঞ্চনীয়- সেই প্রাচীনকাল থেকে বিবাহ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত, বিবাহ শুধুমাত্র ধর্মীয় কোন আচার নয়; এটির সামাজিক প্রয়োজনীয়তাসহ সন্তান জন্মদান ও তার বৈধকরণ সম্পর্কিত ভূমিকাও অসীম।
আমাদের দেশে মুসলিমদের বিবাহের জন্য মুসলিম আইন আর হিন্দুদের বিবাহের জন্য হিন্দু আইন প্রচলিত ও প্রযোজ্য। তবে আন্তঃধর্মীয় বিবাহের (cross religion marriage) ক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ প্রযোজ্য। অর্থাৎ ১৮৭২ সালের আইন শুধুমাত্র কিছু বিশেষ টাইপের বিবাহের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য। ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইনের ২ ধারায় দুটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র এ বিয়ে সম্ভবঃ
১) যেখানে বর বা কনে কোন পক্ষই হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, শিখ ইত্যাদি ধর্মের অনুসারী নয় (অর্থাৎ পক্ষদ্বয়কে এ বিয়ের উদ্দেশ্যে স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করতে হবে, অর্থাৎ তাদের পরিচয় হবে 'Nastik'/atheist) এবং
২) যেখানে বর এবং কনে অবশ্যই ইসলাম ভিন্ন উপরে বর্ণিত অন্য কোন ধর্মের অনুসারী (অর্থাৎ পাত্র-পাত্রী হিন্দু, জৈন, শিখ বা খৃষ্টান হবে কিন্তু মুসলিম হবে না)।
ফলতঃ বিশেষ বিবাহ আইনে হিন্দু, মুসলমানদের নিজ নিজ ধর্ম বলবৎ রেখে কোন বিবাহ অনুমোদিত নয়। অধিকন্তু, মুসলিম আইনে একজন মুসলিম মহিলাকে একজন হিন্দু পুরুষকে বিবাহের ব্যাপারে কড়া ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে।
এবার প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তরের সাপেক্ষে কিছু লেখা যাক, আপনার স্ত্রী একজন মুসলিম; এবং সে মুসলিম হওয়ায় ধর্ম ত্যাগের কারনহেতু সে কোন ক্রমেই একজন হিন্দুকে বিবাহ করতে পারে না। এখানে, প্রশ্নকর্তা যখন তার স্ত্রীর সহিত বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তখন তাদেরকে দুটি ভিন্ন Declaration Form-এ স্বাক্ষর করতে হয়েছিল যাতে উল্লেখ ছিল যে, পক্ষদ্বয় কোন ধর্মের অধীন নয় এবং তারা যা বর্ণনা করছে তা তাদের জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য ও শুদ্ধ। So when you have signed the declaration, both of you have declared yourself as non-believer. যদিও এখন পক্ষদ্বয় তাদের স্ব স্ব ধর্ম পালন করছে বলে দাবী করছে কিন্তু হলফনামা অনু্যায়ী আপনারা কোন ধর্মই পালন করছেন না। উত্তরে হয়ত আপনারা খুশি না, তারপরেও এটা সত্য। উল্লেখ্য, বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ সালে বৃটিশ সরকারের সময়ে, এই আইনের সংশোধনের তাগিদ থাকলেও যতদিন এটি সংশোধিত না হচ্ছে ততদিন এটিই আমাদের জন্য পালনীয় বৈধ আইন যা অবশ্য পালনীয়।
তর্কের খাতিরেও যদি ধরি যে, আপনি এখনো হিন্দু আর আপনার স্ত্রী মুসলিম সেক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের বিষয়টি নিন্মোক্তভাবে মীমাংসিত হবে... Special Marriage Act, 1872 এর Section 23’তে পরিস্কার ভাবে বলা আছে, “a person professing Hindu religion shall have the same rights with regard to any right of succession to any property as a person to whom the Caste Disabilities Removal Act, 1850 applies.” অর্থাৎ ১৮৫০ সালের আগে হলে ধর্ম ত্যাগের অযুহাতে আপনি হয়ত আপনার পিতা-মাতার সম্পত্তির অধিকার হতে বঞ্চিত হতেন কিন্তু এখন (১৮৫০ সালের পর Caste Disabilities Act পাশের পর) conversion of religion বা শুধুমাত্র ধর্ম ত্যাগের দরুন উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হিন্দু ধর্মের অনুসারী হওয়ায় আপনার পিতার মৃত্যুর পর আপনি তাঁর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বলে পরিগণিত হবেন।
আপনার বক্তব্য অনু্যায়ী, আপনার স্ত্রী যদি এখনো মুসলিম আইনের অনুসারী হয়ে থাকেন তার বিবাহ মুসলিম আইন অনুযায়ী একটি 'irregular marriage' বা অনিয়মিত বিবাহ বলে গণ্য হবে। এই অনিয়মিত বিবাহটি নিয়মিত হতে পারে তখনই যখন ‘অনিয়মিত’ হবার কারণটি দূরীভূত হয় অর্থাৎ আপনি যদি মুসলিম হন। এবং তাহলেই শুধুমাত্র আপনার স্ত্রী আপনার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হবেন অন্যথায় নয়। কিন্তু মূল বিষয় বিবেচনা করলে অর্থাৎ আপনাদের ঘোষণা অনুযায়ী আপনাদেরকে স্ব-ধর্মত্যাগী স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করলে আপনারা Succession Act অনুযায়ী পারস্পরিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবেন।
জানি, উত্তরে আপনারা হয়তবা চূড়ান্তভাবে অসন্তুষ্ট হয়েছেন কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে এটিই সত্য। সুতরাং যারা বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার ইচ্ছা পোষণ করছেন তারা আশা করি উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন, সেই সাথে এই আইনটির সংশোধনীও কাম্য।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৪