হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে আগে মাঝেমধ্যে শুনতাম, কিন্তু তেমন বুঝতাম না। চিন্তা করতাম এ আবার কেমন বিয়ে! একজনের স্ত্রী অন্যজনের সাথে বিয়ে দেয়, কারন টা কি! যাইহোক হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে জানেন না এমন বাংলাদেশী হয়তো একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলায় এটা কোনকালেই ছিল না কিন্তু এখন গত পনেরো বিশ বছর ধরে এটা খবরের কাগজে প্রায়ই ওঠে। গ্রাম-গঞ্জের কাঠমোল্লা ও মাতুব্বররা মিলে ফতোয়ার তাৎক্ষণিক আদালতে বিভিন্ন মামলার শরিয়া-মাফিক বিচার করে রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রীয় বৈধতা না থাকলেও সে-রায় প্রচণ্ড সামাজিক শক্তিতে অপরাধীর ওপরে প্রয়োগ করা হয়।
হিল্লা হলো এরই একধরনের শরিয়া-মামলা যাতে কোন হিল্লা বিয়ের কারণে শরিয়া-আদালত কোন দম্পতির বিয়ে বাতিল ঘোষণা করেন। তারপর তাদের আবার বিয়ে দেবার শর্ত হিসেবে স্ত্রীকে অন্য লোকের সাথে বিয়ে ও সহবাসে বাধ্য করেন। দ্বিতীয় স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দিলে তবে সে আবার আগের স্বামীকে বিয়ে করতে পারে। এটা ঘটে প্রধানত স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীকে একসাথে তিনবার তালাক বলে ফেলেছে বলে, তার কথা শোনার সাক্ষী কখনো থাকে, কখনো থাকে না।
এই হিল্লা বিয়ে শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আর ভারতে নয়, পৃথিবীর সব মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই কম-বেশী প্রচলিত আছে। আরবে এই হিল্লা বিয়েকে হাল্লালা বলে।
অর্থ্যাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে গেলে তারা আবার বিয়ে করতে চাইলে মধ্যবর্তীসময়ে স্ত্রীকে আরেকটি বিয়ে করতে হতো। এই দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাক্তি (স্বামী) স্ত্রীকে তালাক দিলে বা মারা গেলে স্ত্রী পুনরায় প্রথম স্বামীকে বিয়ে করতে পারতো। এই মধ্যবর্তীকালীন বিয়েকে ‘হিল্লা’ বিয়ে বলে।
হিল্লা বিয়ে হারাম এবং তা মূলত কোনো বিয়েই নয় বরং হিল্লা স্বামীর সাথে বিয়ে ও সহবাস হারাম। সে যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো, তালাকের পরে আপন স্ত্রী যদি পর নারী হয়েই যায় তবে তাকে আবার বিয়ে করা বৈধ হওয়া উচিত। কেননা আপন ভগ্নী, খালা-ফুফু ইত্যাদি ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করা জায়েজ। সে তো তখন ঐ গোত্রেই পরে।
হিল্লা বিয়ে নিয়ে যাদের কনফিউশন আছে, যারা মনে করেন এ বিয়ে ইসলাম স্বীকৃত বা বৈধ, তারা নিচের লিঙ্কটিতে ক্লিক করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
হিল্লা বিয়ে ইসলাম বিরোধী ও নারীর প্রতি বৈষম্য - মুফতি কাযী ইব্রাহিম
★★★আইন অনুযায়ী হিল্লা বিয়ে---
এবার আসুন জেনে নিন আমাদের মুসলিম আইনে হিল্লা বিয়ে নিয়ে কি বলা আছে। আমাদের আইনে বর্তমানে এরকম হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ প্রথমবার তালাক দেওয়ার পর হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে হিল্লা বিয়ের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত ও গঠনগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। পূর্বে ইসলামিক আইন অনুযায়ী স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তিনবার তালাক উচ্চারণ করতো, অর্থ্যাৎ প্রথমবার তালাক দেওয়ার পরই হিল্লা বিয়ে দিতে হতো, কিন্তু বর্তমানে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবার তালাক দেওয়ার পর হিল্লা বিয়ের নিয়ম এখন আইনে স্বীকৃত নেই।
কিন্তু এখন কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে যদি তিনবার তালাক দেয় এবং স্ত্রীকে পুনরায় নিয়ে আসতে চায় তাহলে হিল্লা বিয়ে দিয়ে নিয়ে আসতে হবে। অথচ আগে একবার তালাক দিলেই হিল্লা বিয়ে দিতে হতো। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইনের ধারা ৭ উপধারা ৬ অনুযায়ী হিল্লা বিয়ের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
(ছবিঃ ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪১