আগেই বলে নিচ্ছি এই লেখার উদ্দেশ্য পালিয়ে বিয়ে করতে উৎসাহিত করা নয়, বরং পালিয়ে বিয়ে করার পর এর কুফল বা সম্ভাব্য ফলাফল সম্বন্ধে সাবধান করা। এ বিষয় নিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং পালিয়ে বিয়ে করার পর সম্ভাব্য মামলার পর করণীয় কি সেটাও তুলে ধরেছি।
পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে অনেক ছেলে মেয়েদের, মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয় যেমন,বিয়ের পরে কোনো সমস্যা হবেনাতো বা বিয়েটার বৈধতা কেমন হবে।
বিয়েটাই বা কোথায় করতে হবে?
কোর্টে নাকি কাজী অফিসে?
ছেলেরা ভাবে, মেয়ের বাবা যদি মামলা করে দেয় নারী নির্যাতনের তাহলে কি জেল টেল খাটতে হবে? ইত্যাদি।
অনেকে ভাবেন এসব ক্ষেত্রে হয়ত কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে।
কোর্ট ম্যারেজ টার্মটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের একটু ভুল ধারনা আছে। অনেকে যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায় তারা কোর্ট মারেজ করতে যায় বা করতে চায়। অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা। অথবা মাজিস্ট্রেট-এর সামনে বিয়ে করা। আসলে তা নয়।
♦কিভাবে বিয়ে করবেন?
কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কোন নোটারী পাবলিকের (সরকারী রেজিস্টার্ড উকিল) কাছে। তিনি আপনাদেরকে (বর কনে) ১০০ বা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি হলফনামায় সই করাবেন যাতে লিখা থাকবে আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। তার মানে কি দাড়ালো? বিয়ে, আপনাদেরকে আগেই করতে হবে। কোথায়? যথারীতি কাজী অফিসে।
রেজিস্ট্রী কাবিনমূলে। কাজী অফিসে কাবিননামায় সই করতে হবে । কাজী সাহেবকে আপনাদের এস এস সি-এর সার্টিফিকেট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডদেখাতে হবে বয়স প্রমাণের জন্য। বয়স অবশ্যই আঠারো (মেয়ে) ও একুশ (ছেলে) হতে হবে। আর লাগবে দুইজন সাক্ষী। আর অই কাবিননামাই আপনাদের বিয়ের প্রধান আইনি দলিল।
আর নোটারী পাবলিকের কাছে গিয়ে আপনি শুধু অই দলিলের আরও একটা সম্পূরক আইনি দলিল করে রাখলেন ভবিষ্যতে মামলা টামলায় একটু সুবিধা পেতে। তবে জেনে রাখবেন, নোটারী পাবলিকের কাছে করা হলফনামার কোনো দাম নেই যদি আপনার কাবিননামা না থাকে।
কাবিননামা থাকলে আপনার বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবেনা। কাবিননামাই সব। বিয়ে হয়ে গেলে অনেকসময় পরে দুই পক্ষের বাবা মা-রা মেনে নেয়, অনেকসময় মেনে নেয়না। অনেকসময় মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে।
♦বিয়েরপর মামলা করলে কি করবেন?
মামলাগুলো হয় সাধারনত অপহরণপূর্বক ধর্ষনের। এই মামলাগুলোর জামিন বা রিমান্ড শুনানী এবং বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। মামলার ধারাগুলো জামিন-অযোগ্য। এবং আমলযোগ্য, মানে পুলিশ এসব ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের অনুমতি ছাড়াই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারে।
তাই যখন শুনবেন মামলা হয়েছে তখন থেকে কিছুদিন পালিয়ে থাকুন কারন পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে কিন্তু প্রথমেই জামিন হবেনা। আর মানসিকভাবে শক্ত থাকুন, দুজনেই।
মামলা (উক্তরূপ) হবার পর তদন্ত শুরু হবে। ভিকটিম (মেয়ের বাবার চোখে মেয়েটি এখানে ভিকটিম)-এর জবানবন্দী দিতে হবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-এর সামনে। এটি ২২ ধারার জবানবন্দি, ম্যাজিস্ট্রেট-এর চেম্বারে হয়। কেউ কোন প্রভাব খাটাতে পারেনা। এখানে মেয়েকে বলতে হবে, “আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমাকে কেউ অপহরন করেনি।" ব্যাস।
তাহলে মামলায় পুলিশ আর চার্জশীট দেবেনা। আসামি (ছেলে) অব্যাহতি পাবে।
♦প্রেম করে বিয়ে; অতঃপর মামলা ও তার ফলাফল
অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা তাদের ভালবাসাকে বাস্তবে রূপ দিতে একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সাবালক-সাবালিকা হিসেবে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও আইনগত অধিকার তাদের আছে। সেই অধিকারের ভিত্তিতে তারা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এতে বাঁধ সাধে উভয় পরিবারের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন। শেষমেশ বিষয়টি অনেক সময় থানা-কোর্ট কাচারীতে গিয়ে পৌঁছায়। তাতে কার কি লাভ হয়-এ নিয়েই একটি শুনুন বাস্তব কেইস স্টাডি।
♣♣♣গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিপাটি চেহারার ভদ্রলোক মামলা করেছেন থানায় একজন তরুণ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ হচ্ছে, শিক্ষক বেচারা ভদ্রলোকের স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অপরাধ খুবই গুরুতর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় যুবক শিক্ষক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সহসা জামিনের আশা নেই। কারণ,
প্রথমত, জামিন অযোগ্য ধারার অপরাধ;
দ্বিতীয়ত, এ মামলায় জামিন শুনানী করার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই। সে কারণে অভিযোগকারী ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আসামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে শিক্ষক বেচারা গা-ঢাকা দিয়েছে। বাড়িতে আছেন কেবল যুবক স্কুল শিক্ষকের মা-বাবা এবং কথিত অপহরণ করা কিশোরী মেয়েটি।
মামলার এফ.আই.আর সহ মামলাটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সরকার পক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর (পুলিশ) আদালতকে বলছেন, হুজুর আসামী খুবই দুর্দান্ত ও প্রভাবশালী। সে ভিকটিম তথা কিশোরী মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছে। কোর্ট ইন্সপেক্টর আদালতের কাছে ফৌজদারী র্কাযবিধির ১০০ ধারার বিধান মতে, আসামির বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে বে-আইনীভাবে আটক মেয়েটিকে উদ্ধারের অনুমতি প্রার্থণা করেন। আদালত কোর্ট ইন্সপেক্টরের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আসামীর বাড়িতে তল্লাশীর পরোয়ানা ইস্যু করেন। পুলিশ অবিলম্বে এ পরোয়ানার ভিত্তিতে ওই আসামীর বাড়িতে তল্লাশী চালায় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের কাঠগড়ায় এক দিকে উদ্ধারকৃত মেয়েটি এবং তার সঙ্গে কথিত অপহরণকারীর পিতা-মাতা। অন্য দিকে মেয়েটির পিতা-মাতা। মেয়ের পিতা-মাতার দাবী তাদের মেয়ে অপরিণত বয়সের। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা মেয়েটির হয়নি। তাই তারা মেয়েটিকে তাদের জিম্মায় দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পুলিশ অফিসারও তাদের আবেদনে সমর্থন করেন। মেয়েটির বয়স কম সে বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য সরকার পক্ষ তথা মেয়ের বাবা মেয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত একটি সনদপত্র এবং মেয়ের মায়ের একটি এফিডেভিট আদালতে দাখিল করেন।
অন্যদিকে মেয়ের কথিত অপহরণকারী শিক্ষকের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীরা বলছেন, মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্কা, মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক তার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থায় মেয়েকে তার ইচ্ছানুযায়ী স্বামীর গৃহে যেটি এখন তার নিজেরই ঘর অবস্থানের অনুমতি দেয়া হোক এবং তার শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় মুক্তি দেয়া হোক। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে মন স্থির করতে পারেন না কি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত তো তাকে দিতেই হবে। মেয়েটি কোথায় যাবে? পিতার গৃহে নাকি কথিত অপহরণকারীর বা স্বামীর গৃহে? এ পর্যায়ে তিনি মেয়েটির বক্তব্য শুনতে চান। মেয়েটি আদালতকে জানায়, আসামী তার স্বামী। তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ে কাজী অফিসে রেজিস্ট্রি হয়েছে। সে তার স্বামীকে ভালবাসে। তাদের বিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার স্বামী পারিবারিকভাবে তার পিতা-মাতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তার অহংকারী পিতা-মাতা স্বল্প আয়ের শিক্ষকের সাথে বিয়েতে রাজি হয়নি। তাই তারা বাধ্য হয়ে নিজেরাই বিয়ে করেছে। মেয়েটি জানায়, তাকে তার পিতা-মাতার কাছে যেতে বাধ্য করলে তারা তাকে মারধর করবে, তার উপর অমানসিক নির্যাতন চালাবে এবং তাকে বাধ্য করবে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে। একবার তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার স্বামীর জেল হবে।
এ অবস্থায় তার পিতা-মাতার সাথে যাওয়ার চেয়ে তার মৃত্যু হওয়ায় ভালো। এ ধরণের বক্তব্য আদালতে মেয়েটি উপস্থাপন করে।
মেয়েটির এ বক্তব্য শোনার পর বিচারক কিছুটা বিভ্রান্ত হন। কি আদেশ দেয়া যায়? অবশেষে তিনি আদেশ দেন ভিকটিমের (মেয়েটির) বয়স প্রমাণের পরীক্ষা করার জন্য ভিকটিমকে সিভিল সার্জনের কাছে প্রেরণ করা হোক। ভিকটিমের বয়স প্রমাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জুডিশিয়াল কাস্টোডিতে তথা বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হোক। বয়স প্রমাণের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর এবং এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। দুদিন পর মেয়েটির বয়স সম্পর্কে প্রতিবেদন পাওয়া গেল। মেডিকেল রিপোর্টে দেখা গেল, মেয়েটির বয়স ১৫ হতে ১৬ বৎসরের মধ্যে, অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে সনদপত্র দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির বয়স ১৫ বৎসর। আর মেয়েটির মা এফিডেভিট করে বলেছেন, তার মেয়ের বয়স ১৩ বছর। সব মিলিয়ে মেয়েটির বয়স যে কত তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় উভয় পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের নিজ নিজ দাবীর পক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিচারক যে আদেশ দেন তা নিম্নরুপঃ
উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য ভিকটিমের বয়স সম্পর্কিত প্রমাণাদি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা হলো। বিয়ের কাবিননামায় দেখা গেল, সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং ভিকটিমের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করে আদালতের কাছে মনে হচ্ছে যে, ভিকটিমের বয়স ১৬ বছর অতিক্রম করেছে এ সম্ভাবনা বাদ দেয়া যায় না। তদুপরি তার বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং ঘটনা ও পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনা করে আদালতের কাছে এটিও প্রতীয়মান হয়, ভিকটিম মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় তার পিতা-মাতার ঘর ত্যাগ করেছে এবং ফিরে আসার কোন ইচ্ছা তার মধ্যে আপাততঃ দেখা যাচ্ছে না, তাই তাকে জুডিশিয়াল হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হলো। তিনি স্বেচ্ছায় যেখানে যেতে চান সেখানে যেতে পারেন, স্বামীর গৃহে কিংবা পিতা-মাতার বাড়িতে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং একজন উপযুক্ত স্থানীয় জামিনদারের জিম্মায় জামিনে থাকবেন।
অবশেষে মামলার অভিযোগ গঠনের সময় বিচারক মহোদয় এই মর্মে আদেশ দেন যে, আসামি উল্লেখিত ধারায় কোনো প্রকার অপরাধ সংঘটন করেনি। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বিধান বর্ণিত ও দন্ডবিধি মতে, অপহরণ মামলার কোনো উপাদান এখানে বিদ্যমান নেই। তাই আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলা চলতে পারে না এবং সে মতে আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (গ) ধারা মতে অত্র মামলা দায় হতে অব্যহতি প্রদান করা হলো।
♦♦এখন জেনে নিন পালিয়ে বিয়ে করার খারাপ দিক
অল্প বয়সে ভালবাসার মূল্যায়ন দিতে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন অথচ, যে বাবা-মা আপনাদের আদর যত্নে এত বড় করেছে তাদের ভালোবাসা কি এতই তুচ্ছ? তাদের মতের কোন মুল্য নেই? কোন বাবা মা তাদের সন্তানের খারাপ চান না। প্রত্যেক বাবা মা'ই চান তাদের সন্তান প্রতিষ্ঠিত হোক পরে এমন কারো সাথে বিয়ে হোক যাতে সারা জীবন সুখে থাকে। আপনি যখন আপনার বাবা মাকে আপনার প্রেমের কথা বলেন যদি মানেন না তখন হয়তো ভাবেন তারা আপনার মতামতের গুরুত্ব দিচ্ছেন না অথবা তারা জোর করে তাদের পছন্দ আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে আপনি ভুল। বলতে পারেন কিভাবে? আগেই বলেছিলাম বাবা মা কখনই তাদের সন্তানের অমঙ্গল চান না, যখন আপনি আপনার প্রেমের কথা আপনার বাবা মা'কে বলেন প্রথমেই ভাবেন আপনি ভুল পথে পা বাড়াচ্ছেন না'তো! বাবা মা আপনার উজ্জল ভবিষ্যতের কথা ভাবেন, তাই ভাবেন এই প্রেম আপনার ভবিষ্যতের ক্ষতি করতে পারে। কারণ এখন পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়। বাবা মা'র ভালবাসায় কোন খাদ নেই বলে আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপনার প্রেমের সম্পর্কের বিষয় মেনে নেন না। শেষমেষ আপনি পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
আচ্ছা আপনি কি ভেবে দেখেছেন পালিয়ে করে আপনার স্ত্রীকে কি খাওয়াবেন, পরাবেন, থাকবেন কোথায়? জীবন টা সিনেমার মত নয় যে, ভাড়ায় ঘর একটা পেয়ে যাবেন, রিক্সা কিংবা সিএনজি চালায়ে নায়িকা'কে খাওয়াবেন!
হয়'তো কোনো রকমে একটা ব্যবস্থা করে নিলেন। ছোটখাটো একটা কাজ নিলেন, কিন্তু পারবেন কি পড়ালেখা ও সংসার চালাতে? নাকি প্রেমের জন্য স্বপ্ন বিসর্জন দিবেন!
আপনি ভুল যদি ভাবেন দুটোই আপনি একসাথে চালিয়ে নিতে পারবেন। বিয়ে মানে এক বিছানায় শুয়ে কাটানো নয়, সেটা এক মহান কঠিন দায়িত্ব। বলবেন, আমরা মানিয়ে নিবো। কতদিন পারবেন মানিয়ে নিতে? একটা কথা প্রচলিত আছে "অভাব যখন সংসারে দেখা দেয় তখন ভালবাসা জানলা দিয়ে পালায়!"
কেউ কেউ ভাবেন হয়ত একটা বাচ্চা নিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেটা সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত, তখন আপনার ভুলের মাশুল দিতে হতে পারে বাচ্চাটির।
মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে পরবে বাচ্চাটির ভবিষ্যৎ। আর এর দায়ভার আপনারদেরই নিতে হবে। তাই যা সিদ্ধান্ত নিবেন ভালোভাবে নিবেন, আমি বলছিনা প্রেম করবেন না, করবেন তবে আগে মাথায় রাখবেন নিজের ভবিষ্যতের কথা। আগে প্রতিষ্ঠিত হোন পরে ভালবাসার কথা বলুন, বাবা মাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন আপনার ভালবাসার মানুষের সাথেই আপনি সুখে থাকবেন, একবারে হয়তো মানবে না বারবার চেষ্টা করুন। আমার বিশ্বাস বাবা মা মেনে নিবে। কারণ সন্তানের সুখই বাবা মায়ের কাছে সবচয়ে বড়। প্লিজ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েন না যার কারণে বাবা মা কষ্ট পায়। বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে এ জগতে কোন সন্তান সুখী হতে পারে না। আরেকটা কথা, ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে যেখানে প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে পায়নি, তাই বলে কি ভালবাসা মরে গেছে! ভালবাসা শুধু অর্জনের জন্য নয়।
প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বাবলম্বী হওয়া ছাড়া কোন ছেলের প্রেম করা এবং প্রেম করে বিয়ে করার কোন অর্থ নেই। তাই স্টুডেন্ট লাইফের মানুষদের উচিত এইসব থেকে দূরে থাকা, কারণ এটা হচ্ছে কর্তব্যের অবহেলা, বাবা মা টাকা খরচ করে তোমায় পড়াচ্ছে একটা ভালো কিছুর জন্য আর তুমি মাঝ পথে এসে একটা ঘটনা ঘটিয়ে সব শেষ করে দিচ্ছ! তোমার ভাবার উচিত ছিল কারো স্বপ্ন ভাঙ্গা কতটা নিচু কাজ আবার তা হচ্ছে মা বাবার সাথে, যারা তোমায় জন্ম দিয়েছে এবং তাদের সাথে তোমার সম্পর্ক ১৫/১৬/১৮/২১ বছরের আর এক জন অচেনা মানুষের সাথে অল্প কয়দিনের সম্পকর্কে তাদের সম্পর্ক এখন অর্থহীন, বিরক্তিকর। আরে ভাই মা-বাবা কি তাদের ছেলে/মেয়েকে নিয়ে ভাবেন না, যখন তোমার সময় এবং বয়স হবে নিশ্চয় তোমায় বিয়ে দিবে এর ব্যতিক্রম কোথাও নেই কিন্তু আমাদের মাথায় এইটা আসে না। আর যারা সক্ষম হয়েছেন তারা প্রেম করতে চাইলে অবশ্যই বাবা মাকে জানিয়ে করবেন এতে পরিবারে অশান্তি আসবে না এবং আপনাদের প্রেম সার্থক হবে। আর মা-বাবারও উচিত ছেলে মেয়ের যুক্তিসংঙ্গত পছন্দ মেনে নেওয়ার।
(বি:দ্র: আমি বিয়ের আগে প্রেমে বিশ্বাসী নই। আর পরিবারের যুক্তিসংঙ্গত সিদ্ধান্তকে উপযুক্ত মনে করি)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪২