শহুরে বৃষ্টি:
বাইরে আকাশের অবস্থা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই সকাল-দুপুর না সন্ধ্যা, কারণ বাইরে এখন বৃষ্টি হবে! প্রচন্ড শব্দ নিয়ে একটু পরপর বাজ পড়ছে কাছে-দূরে আর চারদিক প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে! এমতাবস্থায় ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে আপনি কিন্তু বলতে পারবেন না কয়টা বাজে! ঠিক এমন সময় আপনার মনে হতে পারে, ছোটবেলায় এরকম বৃষ্টিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ফুটবল খেলতাম কিংবা আমের দিনে আম কুড়াতাম! নষ্টালজিক হয়ে যাবেন তখন আপনি, মনে হতে থাকবে একের পর এক ঘটনাবলী! যদি অফিসে থাকেন তাহলে কাজে মন বসবে না, আর যদি বাসায় থাকেন তাহলে হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন, আজ বৃষ্টিতে ভিজবোই! এদিকে শহুরে বৃষ্টি শুরু হবার নাম গন্ধ নেই। দু'এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে কিনা তার ঠিক নেই কিন্তু মেঘেদের ডাকাডাকিতে বাসার ছোট-ছোট বাচ্চাগুলোর কান্নাকাটি শুরু হবার যোগাড়। এসময়টাতে আবারো ফিরে যেতে পারেন অতীতে; ফেলে আসা দিনগুলোর মজার স্মৃতিগুলো হাতড়িয়ে বেড়ানো যেতে পারে। মনে হতে পারে, আসলেই কি শহুরে জীবন আমাদের যান্ত্রিক বানিয়ে ফেলেছে নাকি আমরা আরেকটু ভাল ভাবে বাঁচবো বলে এমন হয়ে গেছি যে, বেঁচে থাকার অর্থটাই ভুলে গেছি! যাই হোক এরকম একটা সময় দেখবেন বাইরের অন্ধকারটা মিলিয়ে যাচ্ছে, সকাল-দুপুর কিংবা সন্ধ্যার অনুমানটা এখন খুব বেশি দূরে নয়। বৃষ্টি তেমন একটা হলো না এবারো! তখন আপনার মনে হবে, যতগর্জে তত বর্ষে না। অতপর: খানিকক্ষন পরে কাপড় চোপড় হাতে নিয়ে ছোট বদ্ধ একটা ঘরে গিয়ে বৃষ্টির অনুভূতি পাবার জন্য শাওয়ারটা ছেড়ে নিচে দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন, যদিও গোসলের সময় সাধারণত আপনি বালতি আর মগই ব্যবহার করেন।
লিফট সমাচার:
লিফট একটা আজব জায়গা। সেখানে পাচ মিনিট আটকা পড়লে আপনার মনে হবে পাচ ঘন্টা আটকা পড়েছেন! আর যদি অফিসের লিফটে আটকা পড়েন এবং লিফটের জনসংখ্যা ১২/১৪ জন হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে এমন একটা ভাব নিতে হবে যেন, 'লিফটে আটকা পড়াটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা... ভয়ের কিছু নেই...আমি তো দিনে ২/৩ বার লিফটে আটকা পড়ি...' যদিও ভেতরে ভেতরে আপনার অবস্থা কাহিল! দেখবেন, অন্যদেরও একই অবস্থা। ভেতরে ভেতরে অনেকে হয়তো দোয়া-দরুদ পড়া শুরু করেছে। আপনিও মনে মনে দোয়া পড়া শুরু করতে পারেন। যদি খুব ভয় লাগে, তাহলে এ সময় কথা না বলাই শ্রেয়; অন্যথায় পরিচিত দুই-এক জনের সাথে হাসি হাসি মুখে অভয়বাণী শেয়ার করতে পারেন, অনেকটা এই টাইপের যে, 'আরে আমাদের লিফটগুলোর বয়স ২৫ বছর হলেও এগুলো অত্যন্ত আধুনিক লিফট! দড়ি ছিড়ে গেলেও একেবারে নিচে পড়বেন না, ইমার্জেন্সী ব্রেক আছে না!'
অত:পর পাচ/ছয় ঘন্টা.... থুরি.... পাচ/ছয় মিনিট অপেক্ষার পর যদি দেখেন কেউ দয়াপরবেশ হয়ে বাইরে থেকে 'মাস্টার-কি' দিয়ে দরজাটি খুলে দিচ্ছে তখন যেন তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরে সুস্থে সবার শেষে বেড়িয়ে আসুন, কেননা, দরজা একবার যখন খুলেছে তখন আসলেই কিংবা সত্যি সত্যি ভয় পাবার কিছু নেই! এবং যথারীতি বাকীপথটুকু হেটে নিজের ডেস্কে বসে ঢকঢক করে ২/৩ গ্লাস পানি পান করুন। তারপর অন্যদের সাথে আপনার লিফটে আটকে পড়ার ভয়ংকর কাহিনীটা শোনান। কাহিনী ভয়ংকর বানানোর স্বার্থে অনেক কিছু যোগ করতে পারেন, যেমন, লিফটে দুই আপা ছিল। তারা তো রীতি মত কান্না শুরু করেছেন! .... একে তো লিফট বন্ধ তার উপর আবার লাইটটাও নিভে গেল..... ইত্যাদি ইত্যাদি!
এবং পরবর্তীবার লিফটে উঠার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ সাহস সঞ্চয় করুন নতুবা ১০/১২ তলা পর্যন্ত হেটেই উঠুন!
এসি সমাচার:
প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এসি কিনতে গেলেন... গিয়ে দেখলেন অনেক লম্বা লাইন... ৭ দিনের আগে ডেলিভারী দিতে পারবে না... তারপর অনেক অনুরোধ করে ৪ দিনের মাথায় একটা ডেলিভারী ডেট পেলেন... ৪ দিনের মাথায় যখন লোকজন এসে এসি লাগিয়ে দিয়ে টেস্ট করে চলে গেল তারপরেই টানা ৫ ঘন্টার লোডশেডিং, অতঃপর মুষলধারে বৃষ্টি.... তখন কি আপনার মনে হবে না, ”এসিটা এবার না কিনলেও পারতাম???
ছবি: গুগলমামা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৫৭