গতকল্য অলসতার কারণে হুড়োহুড়ি করিয়া শেষ করিয়াছি। শপথ লইয়া বসিয়াছি - আজিকে শেষ না করা পর্যন্ত উঠিবো না।
বউয়ের বান্ধবী (প্রথম পর্ব)
লোরেটা যেহেতু আপিস হইতে আসিয়াছে তাই জামা-কাপড় লগে করিয়া লইয়া আসে নাই বিধায় গিন্নীর দেয়া এক প্রস্হ কাপড় পরিধান করিলো। লুলায়িত ভাব লইয়া গিন্নীরে কহিলাম, "দেখ তুমি মনে করিয়া পিছন হইতে জড়াইয়া ধরিলে তুমি কিন্তু মাইন্ড খাইতে পারিবে না"। হই হই করিয়া জ্বালামুখী লাভা উগরাইয়া কহিলো, "মিনসের সুযোগ লইবার বাহানা দেখিয়া বাঁচিনে। চোখের কি মাথা খাইয়াছো নাকি? আমার কালো লম্বা কেশ আর তাহার খাঁটো বাদামী কেশ কি পিছন হইতে ঠাহর করিতে পারিবে না। একবার ছুঁইয়া দেখো তাহা হইলে হাত দুইখানা গুড়া করিয়া ইস্ট লন্ডন মসজিদের সামনে পার্মানেন্ট রোজগারের ব্যবস্হা করিয়া দিব।" ঝাড়ি খাইয়া গজদন্ত বিকশিত করিয়া কহিলাম, "আরে না সোনা বউ আমার আমি তোমার সহিত রংগ করিতে ছিলাম।" এইদিকে মনে মনে শ্যালককে মনে করিয়া একখান কষিয়া গালি দিলাম। শালা যদি তাহার ভগ্নী মহাশয়াকে একটু আদব লেহাজ শিখাইতো তাহা হইলে আমার এই পরিণতি হইতো না।
ক্ষণকাল পরে খানাপিনা শুরু হইলো। আমি লোরেটাকে অতিরিক্ত খাতির করিয়া খানা তুলিয়া দিতেছিলাম। বউ তাহার সামনেই বাংলায় আমারে শুধাইলো,"ওহে মিনসে, চউক্ষের মাথা খাইয়াছো নাকি? আমি বসিয়া আছি তোমার সামনে কই আমারে তো একটু লইয়া দিতাছোনা।" মিন মিন করিয়া উত্তর দিলাম, "অতিথি দেবঃ ভবঃ। তাই তাহারে আগে লইয়া দিতাছি, এরপরেই তোমার টার্ন আসিবে।" যাহা হউক খানাদানা সমাপ্ত হইবার পর হাতে গরম কফির মগ লইয়া সকলে মিলিয়া গল্প করিতে বসিলাম। কথা প্রসংগে জানিতে পারিলাম সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিয়াপক ভক্ত। বিগলিত হইয়া কহিলাম, "ভুখে আয় ভাবুল।" কথা শেষ করিতে পারি নাই, কাঁচের টেবিলে গিন্নীর দড়াম করিয়া মগ রাখার আওয়াজে বুঝিলাম সীমা লংগন হইয়া গিয়াছে। যাহা হউক পরিস্হিতি সামলাইবার দরুণ মুখস্ত করিয়া রাখা একখানা জুক্স ছাড়িয়া দিলাম। লোরেটা দেখি দারুণ ইমপ্রেস হইয়া পড়িয়াছে। গিন্নীর দিকে ফিরিয়া কহিলো, "এমন স্বামী পাওয়া মানেই ভাগ্যকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র । তুমি, তুমি বড় ভাগ্যবতি।" ভাগ্যিস টি-শার্ট পড়িয়াছিলাম। নচেৎ কলার নাঁড়িতে নাঁড়িতে ছিড়িয়া যাইতো। তবে এরপরে যাহা শুনিলাম তাহাতে কলিজা ভাংগিয়া শতেক টুকরা হইয়া গেলো। লোরেটা কহিলো, "আমার স্বামী মোটেই রসিক নহে, সারাদিন ল্যাপটপে নচেৎ ক্যালকুলেটারে মুখ গুঁজিয়া থাকে।" হায় আল্লাহ! ইহা কি শুনিলাম। লোরেটা বিবাহিতা এইকথা তো আমি আগে জানিতাম না।
বিবাহিতা হইয়াছে তো কি হইয়াছে? মন্দের ভালো হিসাবে কহিলাম, "দূঃখ করিয়া লাভ নাই। কালিকে আমি তোমারে লইয়া বেডফোর্ড বেড়াইতে বাহির হইবো। এইখানকার মনোরম দৃশ্য দেখিয়া তুমি দূঃখ ভূলিয়া যাইবে।" এদিকে গিন্নী দেখি মিটিমিটি হাসিতেছে। লোরেটা বিবাহিতা জানিয়া আমি যে চমকাইয়া গিয়াছি তাহা সে খেয়াল করিয়াছে। তাহার চক্ষু দেখিয়া অন্তরের ভাষা বুঝিলাম, "মিনসের উচিৎ শিক্ষা হইয়াছে।"
রাত্তিরে ঘুমের বন্দোবস্তে দেখিলাম কন্যা, মাতা আর লোরেটা নাকি একত্রে ঘুমাইবে। আর আমি একা অন্যকক্ষে ঘুমাইবো। কেনো জানিতে চাহিলে উত্তর পাইলাম যেহেতু দশ বৎসর পর তাহাদের সাক্ষাৎ হইয়াছে সেহেতু তাহারা সারারাত গল্প করিবে। কি আর করা, অন্যকক্ষে গিয়া লোরেটাকে নিয়া নিয়া বেডফোর্ড ঘুরিতেছি সুখস্বপ্ন দেখিতে দেখিতে ঘুমাইয়া পড়িলাম।
প্রত্যুষে জাগিয়া দেখিলাম তাহারা কেহ জাগ্রত হয় নাই। টেলিভিশন দেখিতে দেখিতে ক্লান্ত হইয়া পড়িলাম তারপরেও তাহাদের উঠিবার নাম নাই। দুপুর গড়াইয়া বিকাল হইবার পথে তাহারা উঠিলো। জানিতে পারিলাম সকাল সাতটা পর্যন্ত গল্প করিয়া তাহারা ঘুমাইয়াছে। তাই উঠিতে দেরী হইয়াছে এবং এই কারণে তাহারা ঘুরিতে বাহির হইবে না। সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ শুনিলাম, কি জানি জরুরী কাজ পড়িয়াছে বিধায় লোরেটা সাঁঝবেলায় লন্ডন ফিরিয়া যাইবে। মনে হইলো চিক্কুর দিয়া কান্না করিয়া উঠি।
লোরেটাকে বিদায় দিতে সকলে মিলিয়া স্টেশন পৌছাইলাম। মিনিট দশেক পরে তারা ট্রেন আসিবে। শুধাইলাম, কিছু খাইবে কিনা। মাতাল করা একখানা হাসি দিয়ে কহিলো, এইমাত্রই তো ঘর হইতে খাইয়া আসিয়াছে। ভাবিলাম একবার বলি, "ওগো সুন্দরী, এতটা পথ তুমি একা কিভাবে যাইবে? বরং আমি তোমারে লন্ডন পৌছাইয়া ফিরতি ট্রেনে বাড়ি ফিরিবো।" কিন্তু জ্বালামুখীর দিকে নজর পড়িতেই কথা গিলিয়া লইলাম। এইবারও বদহজম হইলেও স্টেশনে বিধায় পিছন দিকে স্বশব্দে প্রতিবাদ করিলাম না বরং বহু কষ্টে চাপিয়া গেলাম। বিদায়বেলায় লোরেটা আমারে কহিলো, "তোমার সহিত পরিচিত হইয়া বড়ই প্রীত হইলাম। আমি তোমারে ফেসবুকে এডাইয়া লমু।" উত্তরে শুধুই কহিলাম, "প্রতিক্ষায় থাকিবো।"
আমার লুল হৃদয়খানা ভর্তা করিয়া দিয়া যাই লোরেটা ট্রেনে উঠিয়া গেলো অমনি গিন্নী আমার কান ধরিয়া হিড় হিড় করিয়া টানিতে টানিতে কহিলো, "বড়ই লুল বাড়িয়া গিয়াছে, আজিকে গৃহে চল আমি তোমার ক্লাশ লইতেছি।"
ক্লাশের কহিয়া, আর কথা বাড়াইতে চাইনা। শুধু এইটুকু জানাইয়া রাখি, ফেসবুকে লোরেটার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট জুটে নাই। আমিও কোনো রিকুয়েস্ট পাঠাই নাই, পাছে যদি আবার লুল মনে করে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:২৭