আপিস হইতে আসিয়া প্রফুল্ল চিত্তে পেয়ারের ল্যাপুখানিতে ব্লগাইতেছিলাম। আচমকা বউ আসিয়া ল্যাপুখানা ছোঁ মারিয়া লইয়া ফেসবুকানো শুরু করিলো। একখানা গালি পাড়িতে গিয়াও জ্বালামুখীর ভয়ে গিলিয়া লইলাম। গালিখানা উদরে গিয়া বেশীক্ষণ থাকিতে না পরিয়া স্বশব্দে পশ্চাৎপদ দিয়া বাহির হইয়া গেলো। এই ভাবিয়া ক্ষান্ত হইলাম যে মুখে পারি নাই তো কি হইয়াছে অন্যদিকে হইলেও প্রতিবাদ করিয়াছি। হঠাৎ করিয়া বউ ইয়াহু করিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলো। ভাবিলাম ডাক্তার মানুষ নিশ্চয় আমার বায়ু প্রবাহে কিছু আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছে। কিয়ের মধ্যে কি! বউ কহিলো, সিংগাপুর হইতে তাহার বান্ধবী আসিতেছে। দীর্ঘ ১০ বৎসর পর তাহাদের সাক্ষাৎ হইবে। আমার বউ যখন সিংগাপুর পড়ালেখা করিতো তখন তাহারা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। এখন একজন ইংল্যান্ডে ডাক্তারী করে ও অপরজন সিংগাপুরে এইচ.এস.বি.সি ব্যংকের বড় কত্রী হইয়া গিয়াছে। কর্মসূত্রে ১৫ দিনের লাগি ইংল্যান্ডে আসিতেছে । ইহার মাঝে দুইদিন বের্ডফোর্ড আমাদের সহিত দিন গুজরান করিয়া যাইবে। ল্যাপিখানায় উকিঁ মারিয়া যাহা দেখিলাম তাহাতে আমার অন্তরখানায় হাজারো কোকিল ডাকিয়া উঠিলো। কি চিকণ টানা টানা চক্ষু তাহার, ছিপছিপে কোমর, আর ঢেউ তোলা চুলের বাহার দেখিয়া মনে হইলো, আহা এতো পরীর দেশের রাজকন্যা। হাঁ করা মুখখানি দেখিয়া বউ আমার কচকচাইয়া উঠিলো, "আহা মিনসের দেখি হাঁ দেখি বন্ধ হয়না। খবরদার যদি তাহার সহিত লুলামী করিবার চেষ্টা করো তাহা হইলে তিন ঠ্যাংগে হাটিঁবার পার্মানেন্ট বন্দোবস্ত করিয়া দিবো।" বালিকার ছবিখানা একেবারে মনে গাথিঁয়া গিয়াছে। শাসানী খাইয়াও তাই প্রেমিক থুক্কু লুল মন কি আর বাঁধা মানে? সারাক্ষণ তাই অন্তরে বাজিঁতে ছিলো, "কখন বাজে বারোটা, কখন বাজে বারোটা " দুষ্টু মন আমার!!!
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ আসিয়া পড়িলো। বউ আমার হাসপাতাল হইতে ছুটি লইয়া দুইদিন নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করিলো। গুগল মামুরে সার্চাইয়া এবং তাহার মা'রে ফোনাইয়া বিভিন্ন রেসিপি সংগ্রহ করিয়া রন্ধন করিলো। অবশ্য আমিও কম প্রস্তুতি লই নাই। ইউনিসেক্স সেলুনে গিয়া সুন্দর করিয়া চুল কাটাইয়া আসিলাম, নতুন করিয়া কালো রঙে কেশ রাঙাগাইলাম, আয়নার সামনে প্র্যাকটিশ করিলাম কিভাবে চোস্ত কথা বলিয়া মোহিত করা যায়, দুই-চারখানা ইংরেজী জুক্স মুখস্ত করিলাম যাহাতে সময় ও সুযোগমত তাহা জায়গা বরাবর ফিট করিয়া দিতে পারি। আবার এই সমস্ত প্রস্তুতি আবার বউয়ের অগোচরে করিয়াছি। না হইলে প্রতিঘন্টার খবর প্রতি সেকেন্ডে হইতো।
লোরেটা মানে বালিকা গৃহে পদার্পন করিলো। মনে তখন হাজারো পায়রা বাকবাকুম করিতেছে। ভাবিয়া পাইতেছিলাম না কিভাবে কি শুরু করিবো। বউ আমাকে পরিচয় করাইয়া দিলো। সাথে সাথে স্বহাস্য হাত বাড়াইয়া দিলো। উহু হু হু মাখনের মতো নরম হাত। মনে হইলো অনন্তকাল ধরিয়া রাখি। কিন্তু ছাড়িতে হইলো। নইলে যে আবার লুল মনে করিবে যে।
( আগামী পর্বে সমাপ্য)