somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় আব্বা

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০-০৪-১২
বের্ডফোর্ড

ইংল্যান্ডে দশ পাউন্ডের নোটে চার্লস ডারউনের ছবিটা দেখলে তোমার কথা মনে পড়ে যায়। 'সারভাইভেল অব দ্যা ফিটেস্ট' কথাটা তুমি প্রায় বলতে।। বিজয় হয়ত এখনও অধরা রয়ে গেছে কিন্তু বিলেতের শক্ত মাটিকে আরো শক্ত করে কামড়ে ধরে নিজেকে যোগ্যতম করার প্রানপণ সংগ্রাম করে যাচ্ছি। তবে সময়ের তুলনায় এই গতি খুবই মন্থর। আমার কোনো সাফাই দেয়ার নাই। কারণ তুমিতো ভালো করে জানো তোমার ছোটো ছেলেটা মুখে ফটর ফটর করলেও কাজে অতীব বৃষ প্রজাতির।

প্রিয় আব্বা, তোমাকে চিঠি লেখার ইচ্ছা অনেকদিন ধরেই ছিলো। কিন্তু হাতের লেখা খারাপ বলে কখনো সাহস করিনি। খারাপ হাতের লেখা তোমার পছন্দ না ভালো করেই জানতাম। আমার সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়েটা যখন বলে, আমার বাবা বেস্ট। তখন ভিতরে ভিতরে অট্টহাসি দিয়ে উঠি। তোমাকে দেখলে হয়ত বেস্ট তো দূরের কথা কোনো প্রকার লিস্টে আমার নাম থাকতো কিনা সন্দেহ। কারণ তুমিই তো শ্রেষ্ঠ বাবা। আমরা এত ভাইবোনদেরকে তুমি ঠিকমতো শিক্ষা দিয়েছো, চলার সঠিক রাস্তা দেখিয়েছো আর ভালোভাবে বেড়ে উঠার প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছো। সে কম কথা নয়, আমি যেখানে একটা নিয়ে হাঁসফাঁস করছি সেখানে দশটি সন্তানের উন্নতমানের ভরণপোষণ শুধু তোমাকে দিয়েই সম্ভব ছিলো। তাই তুমি শুধু শ্রেষ্ঠ নও, শ্রেষ্ঠতম।

আমার জন্মের সালেই তুমি বাংলাদেশ সরকারের সি.আই.পি (কমার্শিয়াল ইমপরর্টেন্ট পার্সন ) হিসেবে মনোনিত হলে। আমার জন্মটাই তোমার জন্য শুভ মনে করে মনের মধ্যে সুখবোধ হতো। পরে, যখন বাস্তব জীবনে প্রবেশ করলাম তখনই বুঝতে পারলাম এর পিছনে তোমার কত শ্রম, মেধা, অধ্যাবসায় আর দূরদর্শিতা জড়িয়ে আছে। ভাবতাম তোমার সময়ে প্রতিযোগিতা কম ছিলো বলেই তুমি দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছিলে। অথচ এই কথা কখনো চিন্তা করিনি সবসময় সুযোগ সৃষ্টি করে নিতে হয়। সবসময়ই প্রতিযোগিতার ভিতর যেতে হয়। এইসব ভাবলেই আপনাতেই অনুপ্রানিত হই। অনুপ্রেণার কথা যখন আসলো তখন ছোট একটি ঘটনা উল্লেখ না করে পারছিনা। তোমার কি মনে আছে আব্বা, সেই ১৯৮৮ সালের অক্টোবরের সন্ধ্যাটির কথা? নবীন মেলার বক্তৃতা প্রতিযোগীতায় সেরা দশজনকে বাছাই করা হয়েছিলো দেশের দশটি সমস্যার উপর বক্তব্য রাখতে। আমার ভাগ্য পড়েছিলো বন্যা সমস্যা। ক্লাশ ফাইভে পড়া ছোট ছেলেটা মাইক্রোফোনের নাগাল পায়নি বলে টুলের উপরে দাঁড়িয়ে বন্যা সমস্যা আর প্রতিকার নিয়ে ভারী ভারী কথা বলেছে। অথচ অল্পের জন্য পুরস্কার পায়নি। পুরস্কার না পাওয়ায় বরং আরো লাভ হয়েছে, তুমি সবার সামনে আমাকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ৫০ টাকা দিয়েছিলে। ক্লাশ ফাইভের একটা ছেলের কাছে তৎকালীন সময়ে ৫০ টাকার মূল্যমান অনেক বেশী হলেও এর পিছনের অনুপ্রেরণা ছিলো অমূল্য। এরপরে আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তারপরও সেই বিশেষ পুরস্কার আজো মনের বিশেষ অংশে ঠাঁই নিয়ে আছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, বয় স্কাউটে যখন প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড পেলাম তখন তুমি সবাইকে গর্ব করে বলতে আমার ছেলেটা প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড পেয়েছে। কিন্তু, বোর্ড পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্হান নিয়ে তোমাকে গর্বিত করতে না পারায় যণ্ত্রণা হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় ঈস একটু যদি মন দিয়ে পড়তাম তাহলে হয়ত পত্রিকায় মেধাবী পুত্রের সাথে তোমার ফটো তোলার সখ পূরণ করতে পারতাম।

ছোটবেলায় গৃহশিক্ষকের হাতে তুলে দিয়ে তুমি যখন বলতে, মাংস আপনার, হাড্ডি আমার - একেবারে আলাদা করে ফেলেন। তখন তোমাকে বিশ্বের সবচেয়ে পান্ডষ বাবাদের একজন মনে হতো। তোমার জাপানী রি-কন্ডিশন গাড়ীর ব্যবসা ছিলো বলে বাড়ির উঠোন ভর্তি ঝকঝকে গাড়ী থাকতো সবসময়। অথচ স্কুল কলেজে যখন টেম্পু বা বাসে চড়ে যেতাম তখন তোমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কৃপণ বাবাদের একজন মনে হতো। আজ এইবেলায় এসে বুঝতে পারছি এই সবকিছুই আমাদের ভালোর জন্য ছিলো। আমাদেরকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তোমার প্রশিক্ষণ। তোমার সম্পদ নিয়ে তুমি কবরে যাওনি, আমাদের জন্য রেখে গিয়েছিলে।

প্রতিদিন ফজরের নামাযের সময় আমাকে ডেকে দেয়া, একসাথে টেবিল টেনিস খেলতে যাওয়া, তোমাকে ফাঁকি দিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ীর বাইরে যাওয়া, আবার মাগরিবের ওয়াক্তে তোমাকে হাজিরা দেয়ার জন্য কিছু সময়ের জন্য হলেও বাসায় ফিরে আসা সহ কত লক্ষ কোটি স্মৃতি জড়িয়ে আছে তোমাকে ঘিরে। তোমার শেষ যাত্রায় আমি ছিলাম না আব্বা। অবশ্য আমি থাকতেও চাইনি। বুকের ভিতরে তোমার যে প্রাণবন্ত স্মৃতি আছে তা নিষ্প্রাণ নিথর চেহারা দেখে আমি মুছে ফেলতে চাইনি। তবে তোমাকে না বলা কত কথা জমে আছে, তা হয়তো কখনো বলা হবেনা।

প্রিয় আব্বা, তোমাকে চিঠি লেখার ইচ্ছাটা আমার অনেকদিন ধরে। ভয়ে কখনোই লিখতে পারিনি। আত্মা যদি অবিনশ্বর হয় তাহলে তুমি আমার এই চিঠি পাবে আর জানবে যে কথা কখনোই তোমার বাচাল ছেলেটা তোমাকে বলতে পারেনি, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আব্বা।

ইতি,

তোমার ছোটছেলে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৭:২৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×