দেখিতে দেখিতে দুই সপ্তাহের ছুটি শেষ হইয়া গেলো। কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়া যাইতে হইবে বলিয়া কিন্চিৎ মিজাজ খারাপ হইলেও অপরপক্ষে একখানা স্বস্তির নিঃশ্বাস নির্গত হইলো। কর্মক্ষেত্রে ম্যানেজারের খিঁচানো মুখ ছাড়া অন্যকোনো সমস্যা নাই। অথচ গৃহে গত দুই সপ্তাহ যেনো কয়েদখানায় কাটাইয়াছি। প্রত্যুষে চক্ষু খুলিবার পর হইতে চক্ষু মুদিবার পূর্ব পর্যন্ত কেবল যোগালীর মত খাটিয়া যাইতাম। মাঝে মাঝে মনে হইতো 'কারার ঐ লৌহ কপাট' বলিয়া বিদ্রোহী হইয়া উঠি। কিন্তু পরক্ষণে গৃহকত্রীর "ভাতে মরিবো, পানিতে মারিবো" হুংকার শুনিয়া কুঁই কুঁই করিয়া শান্ত-শিষ্ট লেজবিশিষ্ট হইয়া গৃহকোণে অবস্হান গ্রহন করি। মনে মনে গে ম্যানেজারকে শাপ-শাপান্ত করিয়া উঠিতাম। ব্যাটা যদি আমার ছুটি মন্জুর না করিতো তাহা হইলে আমার এই দূর্গতি হইতো না। পরক্ষণে আবার চিন্তা করি হয়ত তাহার পিতার এমন দূর্গতি দেখিয়াছিলো বলিয়া নিজে গে হইয়া গিয়াছে। অশেষ দূর্গতি সহ্য করিতে না পারিয়া একদিন তো গিন্নীকে বলিয়া উঠিয়াছিলাম 'শ্বশুড়মশাই যেনো আমাদের বিবাহ দেন নাই, আমার গলায় গোলামীর জিন্জির পরাইয়াছেন'। খথ
কথা বলিয়া শেষ করিতে পারি নাই ফুটন্ত কড়াইতে তেল পড়িলে যেরকম ছ্যাঁৎ করিয়া উঠে তেমন কিছু উদ্ভট শব্দ শুনিলাম আর কানের দুই পাশ দিয়া কি জানি উড়িয়া যাইবার বাতাস পাইলাম। পিছন হইতে সীসা ভাংগিয়া যাইবার আওয়াজ পাইলাম। তবে হুঁশ হারাইবার পূর্বে শুধু 'মিনসে' শব্দখানার মর্মার্থ উদ্ধার করিতে সক্ষম হইলাম।
ক্ষণকাল বাদে হুঁশ ফিরিবার পরেও বুঝিতে পারিলাম গিন্নীর গালি মেশিন চালু রহিয়াছে। তাই মটকা মারিয়া পড়িয়া রহিলাম। কোথাকার কি দড়াম করিয়া ড্রইংরুমের দরজা বন্ধ হইবার শব্দ শুনিলাম। ভাবিলাম বাঁচা গেলো, আস্তে করিয়া উঠিয়া নিজ ঘরে সিঁধিয়া গেলাম। ওরে বাবা ক্ষণকাল বাদে রণাংগিনী আমার ঘরে উদয় হইলেন। কহিলেন, 'হুঁশ হারাইবার ভান করিয়া মনে করিয়াছ আমি কান্দিয়া-কাটিয়া একাকার হইবো। তোমার মতো মিনসেকে আমার ঢের জানা আছে। অন্য রমনী দেখিলে ড্যাব ড্যাব করিয়া তাকাইয়া গিলিতে থাকো আর আমাকেই দেখিলেই হুঁশহারা হও। এইবার মহাশয় রসুঁই ঘরে গিয়া মুরগীখানি চামড়া ছাড়াইয়া পরিস্কার করিয়া দেন। না নইলে আজিকে খানা জুটিবেনা বলিয়া দিলাম।' পরাজিত সৈনিকের ন্যায় সুরসুর করিয়া আপন কর্মে লিপ্ত হইলাম।
ঠিক তখনই তোর কথা মনে পড়িলো, আহারে লেন্জা না কাটিয়া তুই যে কি পরিমাণ সুখে আছিস তাহা ভাবিতেই অসুখ হইয়া যাইতেছে। গিন্নীর রোষ নেই, সীসা টুঁটিবার ভয় নেই কিংবা মুরগীর চামড়া ছিলিবার ঝামেলা নাই। কোন দূঃখে যে টেসকো হইতে চামড়াযুক্ত হালাল মুরগী কিনিয়াছিলাম! যে কোনো হালাল দোকান হইতে কিনিলে তাহারা ছিলিয়া, বাছিয়া এবং কাটিয়া দেয়। মুরগীর চামড়া ছিলিতে ছিলিতে মনে পড়িলো কি ভাবে বড়ভাইদের পকেট ছিলিতাম। কি সুখের না দিন ছিলো। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!!!! ওহে ভ্রাতা বিবাহ করিবার জন্য উতলা হইস না। না হইলে আমার মত হুশ ফিরিবার পরেও মটকা মারিয়া পড়িয়া থাকিতে হইবে।
অফটপিক: হাঁচা-মিছা কথা বানাইয়া রম্য বানাইবার অপচেষ্টা মাত্র। আদতে আমার গিন্নী শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট, টানা টানা চক্ষুর অধিকারিণী
আমাদিগের ভালোবাসা হইয়া গেলো ঘাস, খাইয়া লইলো গরু দিইয়া গেলো বাঁশ।{একটি পুরুষ নির্যাতন বিরোধী লেখা}
বিবাহিত জীবন যেনো একখানা ফাঁটা বাঁশ। {একখানা বিবাহ বিরোধী প্রযোজনা}
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:৫৮