পৃথিবীতে মোবাইল ফোন দ্ধারা নির্গৃ্হিত প্রথম ব্যক্তির নাম কি?
উত্তর: ফরমান তৈয়ব।
আর এর সাথেই জুড়ে আছে তোর নাম। কারণ রাংগামাটি লেকের ভ্রমনে ওই ব্যাটার জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে তোর সেই সাধের বুশ সেট দিয়ে তাকে পিটিয়েছিলি। আহারে কি সেই ভ্রমন! রাতের বেলায় সবকয়টা মিলে তোকে হোটেলের রুম থেকে বের করে দিয়েছিলো। শীতল বাতাসে তোর খালি চান্দিতে ঠান্ডায় বড়ই কষ্ট পেয়েছিলি তাই না? তবে আগের যুগের মোবাইলফোনের সেটগুলো ছিলো সেইরকম। পিটিয়ে সুখ ছিলো। ফিলিপসের ডিগা বলে একটা সেটা ছিলো যেইটা হাতে নিয়ে হাঁটলে দূর থেকে অস্ত্র বলে মনে হতো। আরে বলি কি আর কি-বোর্ড লেখে কি! তোর জন্য লিখতে গিয়ে প্রথম থেকে ব্যালেন্স ছাড়া হয়ে যাচ্ছি। এ যেনো আমাদের সেই ব্যালেন্স ছাড়া দিনের মতো। তুই আর আমি হলাম চিৎ-কাইত ভাই। প্রায় প্রতিদিন সকালে তুই ফোন করে জিগ্গাসা করতি কি নাস্তা করবো। তারপর উদরপূর্তি করে আমার বিছানায় একজন চিৎ আর একজন কাঁত হয়ে ভাবতাম ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে আমাদের কি লাভ হলো। যারা সেকেন্ড ডিভিশন পয়েছিলো তারা কি সুন্দর চাকরী-বাকরি করে জীবনের প্রতিষ্ঠার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আচ্ছা তোর ছোট চাচা ভার্গিস কেমন আছেন? বেচারা একদম হাসতো না বলে আমরা সমরেশ মজুমদারের আট কুঠুরী নয় দরজা উপন্যাসের পুলিশ অফিসারের নাম অনুসারে তার নাম রেখেছিলাম ভার্গিস। তোর কি মনে আছে একদিন তুই একটা টেপ রেকর্ডার কিনে বাসায় ফিরে দেখি ভার্গিস তোর ঘরে। আমি আর ভয়ে ঢুকিনি। অথচ কত ইচ্ছা ছিলো নতুন কেনা যন্ত্রটা একটু বাজিয়ে পরখ করে নিবো। তবে ভার্গিসের বিয়েতে আমরা যথেষ্ট মজা করেছিলাম।
তোর গ্রামের বাড়ীর সেই ভ্রমনটা মনে পড়লে একদিকে যেমন রোমান্চিত হই অপরদিকে তোকে একটা গালিও দিয়ে উঠি। কি দরকার ছিলো পলাশের কথা শুনে আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা তপ্ত বালির উপরে হাঁটানোর? সারারাত আমি আর গাজী বেচারা মরার মতো ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলাম। সকালবেলায় তোর ভাইদের খচ্চর মৌলভী সাহেবের উচ্চশব্দে যদি ঘুম না ভাংতো তবে নিশ্চিত পুরোটা দিন একঘুমে কাটিয়ে দিতাম। তবে এই সফর, সারাজীবন শহরে বড় হওয়া আমার জন্য ছিলো এক চমৎকার অভিজ্ঞতা।
আমি দেশ ছাড়ার পর নাকি ওদেরকে নিয়মিত জ্বালাতন করার মহান (!) দ্বায়িত্ব নাকি তুই কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। তোর খোর্মা নামটা কি এখনও আছে? বন্ধুরা নাকি তোকে এখন হাজার ওয়াটের বাত্তি দিয়েও খুঁজে পায়না। আচ্ছা তোকে খোর্মা কেন ডাকতো? কারো কারো এখনও দৃঢ় বিশ্বাস তোর ফেসবুক আই-ডি আমি চালাই। হাজার হাজার হুমকি-ধামকি আর গলাবাজী করেও প্রমান দিতে পারলোনা তোর এ্যাকাউন্টটা আমি চালাই। যতসব বেওকুফ। আমাকে মারার জন্য নাকি ভোঁতা দাঁও নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, বাংলার মাটিতে পা রাখার সাথে সাথে নাকি আমার জান কোরবান করে দেয়া হবে। ওরে বাপ! আমি ডরাইসি। খেক! খেক!! খিক! খিক!! খিকজ!
তোর আর আমার স্মৃতি একবারে ডিজিটাল ছবির মতো ঝকঝকে। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন হয়েছে। তোর বাসার ছাদের আড্ডা, বাড়ির উঠানে ক্রিকেট খেলা। বড়ই মজার দিন ছিলো। আচ্ছা তোদের বাড়ির পাশে সেই বুড়ো নানা'র কি খবর? যাকে দেখলে আমরা 'বুইজ্জা নান................' বলে চিৎকার করতাম। পলাশদের কাজির দেউড়ির বিল্ডিংয়ে নিয়মিত - "কানাবতি শিশি পুরাণা কাগিজ" বলে হাঁক দিয়ে উঠতাম শুধু মাত্র তিনতালার মেয়েটা যাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। আমি নিয়মিত চিৎকার করলেও আন্টির হাতে ধরা খেলি কিনা তুই!!! ফাটা কপাল আর কাকে বলে। অথচ মাথায় চুল কম থাকার কারণে তোর কপাল ছিলো সবচেয়ে বড়।
স্মৃতির পাতায় রংগীন খাতায় দিনগুলি কেমন জানি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। জীবনের জটিলতায় আজ আমরা কে কোথায় তার হিসেব মিলছেনা। ঠিক সেই দিনগুলির মতো, যখন আমরা চিৎ-কাঁইত হয়ে বিছানায় শুয়ে হিসেব মিলাবার চেষ্টা করতাম ফাস্ট ডিভিশন পেয়ে কি লাভ হলো রে?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:০২