১৮ পেরিয়ে সবে ১৯-এ পড়েছিলেন এমা। আপাতপক্ষে আর পাঁচটা প্রাণচঞ্চল তরুণীর সঙ্গে তাঁর তফাত ছিল না। তবে একান্তে সমাজসেবার ব্রত নিঃশব্দে পালন করে চলছিলেন। শখ ছিল ফটোগ্রাফির। সারাদিন ক্যামেরা কাঁধে ঘুরে বেরানোই ছিল তাঁর নিত্য দিনের কাজ। সেই সূত্রেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে লোকজনের উপকার করাও ছিল জীবনের অঙ্গ। মৃত্যুর পরও সেই ব্রত পালন করে গেলেন এমা। শেষ কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর বাবা-মা।
তবে জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে বয়ে গেল এক দিন। ইংল্যান্ডের লিডসের বাড়িতেই হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়েন এমা। বাড়িতে তখন একলাই ছিলেন। তাঁর মা ক্যাথেরিন গিয়েছিলেন দিদার বাড়িতে। ফোনে মাঝা মাঝে মেয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছিল তাঁর। এমা চাঁকে বলেছিল, ‘আজ বাড়িতেই থাকব মা’। কিন্তু বাড়িতে থাকা হল না। রাত ২টোয় একটা ফোন পান ক্যাথেরিন, হাসপাতাল থেকে ফোন করে তাঁকে জানানো হয় এমা গুরুতর অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন এমা অসংলগ্ন কথা বলছে। দু’-তিন দিনের মধ্যেই সব শেষ। ২০ জুন মৃত্যু হয় এমার। চিকিত্সকরা ক্যাথেরিনকে জানিয়েছিলেন, এমার মাথায় একটা হেমারেজ ছিল। সেটাই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন করেন, ‘এমা মরণোত্তর অঙ্গ দান করতে চাইতেন কি?’ এই প্রশ্নটাই তাঁদের ভাবিয়ে তোলে ক্যাথেরিনকে।
শেষ সময়ে হাসপাতালে এমার বন্ধু ওলি ডবসনও উপস্থিত ছিলেন। ক্যাথেরিন তাঁকে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই চাইত। ও এমনই ছিল। নিজে না খেয়েও খুধার্ত বাচ্চাদের খাওয়াত। ও নিশ্চয়ই এতে সায় দিত।’ এ কথা শোনার পরই অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নেন এমার অঙ্গ যদি কয়েক জনের প্রাণ বাঁচায়, তাহলে তার মধ্যেই এমা জীবিত থাকবে। এমার হৃদয় আজ বছর কুড়ির এক যুবকের বুকে লাবডাব করছে। তাঁর অগ্নাশয়, কিডনি, ফুসফুস, যকৃত্ আরও ৫ জনের প্রাণ বাঁচায়। এমার চোখ দিয়ে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন এক দৃষ্টিহীন। ক্যাথেরিন জানিয়েছেন, ‘ওর মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। কিন্তু এটা ভেবে আমি শান্তি পাচ্ছি যে, এর চোখ দিয়ে এক জন এখনও পৃথীবি দেখছে, এর হৃদয় আজও কারও বুকে বাজছে। আমি নিশ্চিত, ওর আত্মা এতে শান্তি পেয়েছে।
please click