কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দফতরে বোরখা বা অন্য কোনও ধর্মীয় পোশাক পরা বাধ্যতামূলক করা যাবে না মর্মে হাইকোর্ট গত ২২ আগস্ট ২০১০ তারিখে কথিত জনস্বার্থে একটি রায় দেয়। রায়ে বোরখা বা অন্য কোনও ধর্মীয় পোশাক পরা বাধ্যতামূলক করা যাবে না মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু মুসলিম মহিলারাই নন, সব সম্প্রদায়ের মহিলা ও পুরুষকে এই নির্দেশিকার আওতায় আনা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দফতরে ফেজ টুপিও পরাও বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতিরা। এর আগে আরেকটি মামলায় শুধুবোরকা বা পর্দা ব্যবহারে বাধ্য না করার ব্যাপারে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু এ সকল নির্দেশনার কোথাও বলা হয়নি যে, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দফতরে ধর্মীয় পোশাকের সাথে সাদৃশ্য আছে এমন স্কুল ড্রেস বা ইউনিফর্ম আছে তা পরা যাবেন না। বাংলাদেশের প্রায় সকল স্কুলেই স্বতন্ত্র স্কুল ড্রেস রয়েছে। স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রী তা পরিধানে বাধ্য। কোন কোন স্কুল ড্রেস এতটাই খোলামেলা, আটোসাটো ও যৌনউদ্দীপক যে মেয়েদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো অশ্লীলভাবে দৃশ্যমান হয়। যারা শালীনতা পছন্দ করে বা যারা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী পরিবারের সন্তান (বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারই ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী) তারা কামোদ্দীপক এসব পোশাকে বিব্রতবোধ করেন, কিন্তু স্কুল কলেজের নিয়মের কারণে তা পরিধানে বাধ্য হন। অধিকাংশ স্কুল কলেজে বখাটেদের আড্ডা দেখা যাই বিশেষত স্কুল ড্রেস পড়া মেয়েদের আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো দেখার জন্য। এর ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে সমাজে বখাটেদের উৎপাত , ইভ টিজিং, ঠিক তেমনি উঠতি বয়েসী তরুণীরা বখাটেদের যৌন আবেদনে সাড়া দিয়ে সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনছে। অনেকেই বখাটেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে, পর্নো ছবি ও ভিডিওর মডেল হতে অজ্ঞাতসারে বাধ্য হচ্ছে এবং ব্লাকমেইলিংয়ের ফাঁদে পড়ে দেহ ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এ সকল সমস্যার মূলে যে স্কুল ড্রেস গুলো তা পড়তে ছাত্রীদের বাধ্য করা যাবে না এ মর্মে কিন্তু আদালত বা সরকার কোন আইন করছে না, রুল জারি করছে না, প্রজ্ঞাপন দিচ্ছে না।
প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই স্বতন্ত্র ড্রেস রয়েছে। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজেও তেমনি ড্রেস রয়েছে। এখানে ছেলেরা মাথায় টুপি পড়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, মেয়েরা পড়ছে স্কার্ফ। কিন্তু ধর্মীয় পোশাকের সাথে সাদৃশ্যশীল হওয়ার অভিযোগে এবার প্রতিষ্ঠানটির ইউনিফর্ম বাতিলের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজ দৈনিক সংবাদে “আইডিয়াল কলেজে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের টুপি ও স্কার্ফ বাধ্যতামূলক” নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে। অথচ পত্রিকাটির পুরো বিপোর্ট পড়লে দেখা যায় যে অমুসলিমদের টুপি পরিধানে বাধ্য করা হয় না। স্কুলটিতে মুসলিম ছেলেরা টুপি পড়ায় অনেক হিন্দু ছেলেও অন্যদের সাথে তাল মেলাতে টুপি পড়ে বলে পত্রিকা রিপোর্টেই উল্লেখ আছে। কিন্তু কোন হিন্দু ছাত্রকে টুপি পড়তে বাধ্য করা হয়েছে এমন নজীর নেই। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ছেলের অভিভাবক জানান, ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মুসলিম সম্প্রদায়ের। তারা বাধ্য হয়ে টুপি পরিধান করে। আর তাদের দেখাদেখি দৃষ্টিকটুভাব এড়াতে আমার সন্তানও টুপি পরে”। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিতআইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ইর্ষণীয় সাফল্য রাখছে। শালীন পোষাক কখনো তাদের সাফল্যের জন্য বাধা হয়ে দাড়ায় নি। আর স্কার্ফ ধর্মীয় পোশাকের সাথে সামঞ্জস্যশীল হলেও সরাসরি ধর্মীয় পোশাক নয়। এক্ষেত্রে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেছেন, “ধর্মীয় পোশাক হিসেবে আমরা টুপি ও স্কার্ফ পরাচ্ছি না, তা করা হচ্ছে স্কুল ড্রেস হিসেবে”। , স্কার্ফ নিষিদ্ধ করতে হয়, টুপি নিষিদ্ধ করতে হয়, তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যাদেবী সরস্বতীর সাদা পোশাকের সাথে সামঞ্জস্যশীল সাদা রঙ্গের স্কুল ড্রেস কিংবা সাদা শাড়িই বা কেন নিষিদ্ধ হবে না? একুশে ফেব্রুয়ারী, পহেলা বৈশাখের মত যে সকল জাতীয় অনুষ্ঠানে সাদা শাড়ীর রেওয়াজ তাই বা কেন নিষিদ্ধ হবে না? তবে কি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের শত্রুতা শুধুই ইসলামের সাথে, শালীনতার সাথে?
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্ম্পকীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট বাম রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি হওয়ায় আওয়ামী পন্থী ও বামপন্থী অভিভাবকদের দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্কুলটিকে নৈতিকমূল্যবোধ হীণ করণের হীণ পায়তারা শুরু হয়েছে। তাদের অদ্ভূত যুক্তি, কলেজের শিক্ষকরা কেন ছাত্র-ছাত্রীদের মতো একই পোশাক পড়ে না। এমন হাস্যকর যুক্তি বাংলাদেশের আর কোন প্রতিষ্ঠানে কেউ দেখিয়েছে বলে জানা নেই। ছেলে মেয়েদের মতো স্কুল ড্রেস পড়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা প্যারেড করছে, ক্লাস করছে এমন কোন নজির নেই দেশের কোথাও নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কালিয়াকৈরে বোরকা পরার অপরাধে পেটানো হয়েছে স্কুল ছাত্রীকে, বন্ধ হয়ে গেছে তার স্কুলে যাওয়া। অথচ এসব ক্ষেত্রে আদালত নিরব, সরকার নীরব। এসব ক্ষেত্রে কোন আদালত রায় দিচ্ছে না যে কাউকে ধর্মীয় পোশাক পরিধানে বাধা দেয়া যাবে না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও কোন পরিপত্র জারি করা হয় না। অথচ আটোসাটো পোশাকের ফিগার প্রদর্শণীর মাধ্যমে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে ছাত্রীদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির সম্মুখীন করলে সমাজের অভিভাবক শিক্ষকরা যদি কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা করে তবে আইন আদালত সরকার হারে রে রে করে ঝাপিয়ে পরে। নারীকে শালীন পোষাকে ঢেকে রাখলেই যে বিপদ! পথে ঘাটে, অফিস আদালতে, স্কুল কলেজে নারী দেহের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে চোখ দিয়ে চেটে চেটে লম্পট এসব কর্তাব্যক্তিরা বিকৃত যৌনক্ষুধা নিবৃত করতে চায়। সুযোগ পেলে প্রকাশ্যে পুরস্কার বিতরণীর নামে করমর্দন, আশীর্বাদের নামে মাথা পিঠ ব্রার হুক হাতানো, স্নেহ চুম্বন আর আড়ালে আবডালে ভীড় ভাট্টায় শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাতাহাতিতে বড় ধরণের বাধার সৃষ্টি করে ধর্মীয শালীন পোশাক, তাই যে কোন মূল্যে কামুক এসব কর্তাব্যক্তিরা শালীন পোষাক পরিধানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ভোগের সামগ্রীতে পরিণত করতে চায় নারী সমাজকে। অথচ ইভ টিজিংএ অতিষ্ঠ পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের কোন কোন মহিলা কলেজে নারীদের শালীন পোষাক পড়তে নির্দেশ দিয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামী ভীতগুলোর উপর কুঠারাঘাতে মেতে উঠেছে। আর এর প্রভাবে নারীর প্রতি পাশবিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বাড়ছে, বাড়ছে ইভটিজিং।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে নার্সদের নিকাব পড়া নিষিদ্ধ হয়েছে অথচ হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ট পশ্চিমবঙ্গে অশালীন স্কার্ট-মিডির বিড়ম্বনার শিকার নার্সরা শাড়ী-সালোয়ার পরিধানের দাবী তুলেছেন। রাজ্যে নার্সদের বৃহত্তম সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সচিব শিখা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “অনেক সময় বসতে গেলে পোশাক উঠে যায় বা সরে যায়। নার্স পোশাক সামলাবেন, না রোগীর সেবা করবেন? তিনি গর্ভবতী হলে তো ওই পোশাকে মেঝের রোগী দেখা আরও সমস্যার!”। “এক দিন পা ভাঙা এক রোগীকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য মেঝেতে উবু হয়ে বসতে গিয়ে স্কার্ট অনেকটা উঠে গেল। রোগীরও চোখ পড়ল সেখানে। তিনি রোগী বলে আমার কি অস্বস্তি হবে না?”
বাংলাদেশের পার্কগুলোতে কি হয় তা কে না জানে। নারীপুরুষের অবাধ যৌনামিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ওগুলো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসব স্থানে ভ্রমন রীতিমত বিব্রতকর এবং বিপদজনকও বটে। এসব প্রতিরোধে বিধান আছে, আর পুলিশের কাজ তা বাস্তবায়ন করা। প্রকাশ্য স্থানে অবাধ যৌনাচার, বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে যৌনাচার কোন সভ্য দেশেই স্বীকৃত নয়। অথচ এসব ব্যবিচার অনাচার বন্ধে যখন কোন পুলিশ এগিয়ে আসে তখনই তাকে আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। পার্কে আপত্তিকরভাবে চলাচলকারী মেয়েদের গ্রেফতার করায় সম্প্রতি এক পুলিশ অফিসারকে প্রত্যাহার করা তারই উদাহরণ। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সরকার বাংলাদেশের নারীদের কাছ থেকে বোরকা কেড়ে নেবে, স্কার্ফ কেড়ে নেবে, সালোয়ার কামিজ কেড়ে নিয়ে স্কার্ট পড়াবে, এবং সুযোগ বুঝে নাংটো করে বারে বা বেডরুমে তুলবে, যেমনটা আওয়ামী লীগ নেতারা তুলছেন ইডেন কলেজের ছাত্রীদের। বাংলাদেশের সভ্য হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান নাগরিকেরা কি ধর্মদ্রোহী এসব লম্পটদের হাত থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে না?