বান্দরবানে গ্রেফতার কৃত জঙ্গি আবদুল মালিক বান্দরবানের মেম্বারপাড়ায় একটি মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস মসজিদে ইমামতি করতেন। তিনি চরমোনাই পীরের দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বান্দরবান জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর জঙ্গি সংগঠন আল মুনতাদার আল ইসলামী বাংলাদেশের বান্দরবান প্রতিনিধি। (সমকাল ২১ সেপ্টেম্বর/০৫)
এদিকে মুফতে আমিনী তথা কমিনীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা এতই বেশি যে, তিনি যখন এমপির পর মন্ত্রী পদ দখলের মত রীতিমত নাটক নভোলাচিত আন্দোলন-ফান্দোলন তথা অভিমান গোস্সা করেন তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী (বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া) তার গোস্সা ভাঙ্গান এই বলে যে- দেখেন, আমি তো আপনাকে মন্ত্রিত্ব দিতে চাই ঠিকই কিন' কি করব বলুন? ওই মার্কিনীদের কালো খাতায় জঙ্গিদের জ্বলজ্বল তালিকায় আপনার নাম ঝলমল করছে। অগত্যা কমিনীকে লেজ গুটাতে হয়।
ইসলামের নামধারী জামাতটি অবশ্য কমিনীর মত অতটা শিশুসুলভ চপলতায় বিশ্বাসী নয়। তারা গভীর পানির মাছ বটে। সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবেনা এ নীতিতে তারা সিদ্ধহস্ত। গিরগিটির ন্যায় ঘন ঘন রং পাল্টানো যে এদের অভ্যাস শুধু তাই নয়।
বরং এদের ক্যাডার বাহিনীর প্রাচুর্যতায় এরা একই সময়ে বহুরূপে অবস্থান করে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আহলে হাদীছ, ইত্যাদি এসব সংগঠনের নামে জঙ্গিপনা হালে মানুষ দেখছে। কিন' এদের শুরুটা হল কিভাবে? গুরুটা তাহলে কে?
পৃথিবীর কোথাও কোন হত্যাকাণ্ড হলে প্রথম তার গুনাহ কাবিলের আমলনামায় লিখা হয়। কারণ নর হত্যা প্রথমে সেই করেছে।
সে প্রেক্ষিতে ইসলামের নামে এসব সন্ত্রাসী তৎপরতা তথা জঙ্গিপনা প্রথম কারা করলো? পায়ের রগ কাটা বাহিনীই যে আজকের হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি তথা আহলে হাদীছ আন্দোলনের শীর্ষ জঙ্গি তথা বোমাবাজে পরিণত হয়েছে তা পাগল আর শিশু ছাড়া সবাই বোঝে। এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে একজন সাবেক আমীরই যে এ মিশনটি নিয়ে কাজ করছেন তাও অনুসন্ধানী মহল অবগত আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর (বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া) একটি বিখ্যাত উক্তি হলো “পাগল ও শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়।” প্রতিভাত হয় এহেন নিরপেক্ষহীনতার কারণেই বর্তমান (তৎকালীন) প্রশাসন ইসলামের নামধারী ওই জামাতের জঙ্গিদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা (নেয়নি)। যদিও পত্র-পত্রিকার পাতায় ইসলামের নামধারী এ জামাতের জঙ্গি কানেকশন দিন দিন উন্মোচিত হয়েছে। অথচ লাজ, শরমের মাথা খেয়ে ইসলামের নামধারী জামাতটির আমীর, মুফাসসির বলে যাচ্ছে যে বোমা হামলার সাথে জামাত জড়িত নয়। অথচ ধৃত জঙ্গিদের প্রায় ৫০ ভাগই জামাতের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছে।
সঙ্গত কারণেই এ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন, মন্তব্য এমনকি সম্পাদকীয় নিবন্ধ নিয়মিত পত্রস্থ হচ্ছে। যার কিছু এখানে তুলে ধরা হলো-
মূল নেতা বাদ কেন?
সরকার ঘটনার পরপরই কিছু লোককে গ্রেফতার করেছিল। তাদের অধিকাংশকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অনেক পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট বলেছে, যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের ভিতরও কয়েকজন দোষী ছিল। কিন' সরকারের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর চাপে তাদের ছেড়ে দিতে হয়েছে। এ রিপোর্ট যদি ঠিক হয়, তাহলে বলা যায়, সরকার এখানে ৫২৭টি বোমা বিস্ফোরণের মতো ভয়াবহ ঘটনা থেকে জামায়াতকে রক্ষা করার কাজটি বড় মনে করেছে। এখানে তাদের কাছে দেশের নিরাপত্তার থেকে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সখ্য বড় হয়ে উঠেছে। (দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদকীয়, ৩০ আগস্ট-২০০৫)
শ্রমিক ফেডারেশনের কাউন্সিলে নেতৃবন্দ ॥ বোমা হামলার সাথে জামায়াত কোন না কোনভাবে জড়িত
স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কাউন্সিলে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরে বিচার না করলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। বোমা হামলাকারীরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিচার করতে হবে। বক্তারা বলেন, বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত যারাই ধরা পড়েছে তারা সবাই জামায়াতে ইসলামীর সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। (ইনকিলাব, ২৪ সেপ্টেম্বর/০৫)
জেএমবির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে ॥ সারাদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক
জেএমবির জঙ্গিদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। জোট সরকারের অন্যতম শরিক জামায়াত-শিবিরের অদৃশ্য সম্পৃক্ততায় মৌলবাদী সংগঠন জেএমবি সারাদেশে গড়ে তুলেছে জঙ্গিনেটওয়ার্ক। জামায়াত নেতারা জঙ্গি কানেকশন অস্বীকার করলেও মাঠ পর্যায়ে জামায়াতের কাঁধে ভর করে জঙ্গীরা বিচরণ করছে এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার তথ্য প্রমাণ রয়েছে। দেশব্যাপী জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতারা। অতিসম্প্রতি (৭ সেপ্টেম্বর) ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর-এর রিপোর্টার ডেভিড মনটিরো তার বাংলাদেশে যেভাবে জঙ্গিদের উত্থান শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনের পর ইসলামী রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বেড়ে উঠেছে জঙ্গিরা। প্রতিবেদনে পুলিশ রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গত দু’বছরে যে সব সশস্ত্র জঙ্গি ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, অন্যথায় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাকর্মী।
জামা’আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) কথিত আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের পিতা আবুল ফজল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন জামালপুরে কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিল। আব্দুর রহমান ছাত্রজীবনে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিল। আব্দুর রহমানের ছোট ভাই আতাউর রহমান মাদ্রাসা ছেড়ে যাওয়ার পর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের নেতা ছিল।
জেএমবি’র অপারেশন কমান্ডার মৌলবাদী জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে কথিত বাংলা ভাই বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজে অধ্যয়নকালে শিবিরের রগকাটা বাহিনীতে সক্রিয় ছিল। আব্দুর রহমানের অনুপসি'তিতে জেএমবির নেতৃত্বদানকারী নুরুল হুদা আবেদন আব্দুর রহমানের ভগ্নিপতি এবং জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলা জামায়াতের নেতা। একই সঙ্গে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এমপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মুদাররেছীন সরকারি ছত্রছায়ায় ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের উত্থানের বিরোধিতার কারণে এই সংগঠন ভেঙে সাঈদীর নেতৃত্বে জামায়াত পন'ীর গঠন করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ। মৌলবাদী জঙ্গি নেতা কথিত বাংলা ভাই রাজশাহীর বাগমারায় গিয়ে জনৈক রফিকের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। একসঙ্গে শিবিরের রাজনীতি করার সূত্র ধরে রফিকের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটেছিল। কথিত বাংলা ভাই ভবানীগঞ্জের যে ক্লিনিকের দোতলায় কিছুদিন অবস্থান করেছিল সেই ক্লিনিকের মালিক ড. বারী রাজশাহী মেডিকেলে পড়ার সময় শিবিরের বড় নেতা ছিল। গত বছর ড. বারী এই প্রতিবদেককে তার ক্লিনিকে বসে স্বীকার করেছে- সে এক সময়ে শিবির করতো। নওগাঁ জেলার জেএমবি ক্যাডারদের মধ্যে আবুল হোসেন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অধ্যাপক লুৎফর রহমান জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া নজরুল মৌলভী জামায়াত ও সীমার শিবিরের রাজনীতি করে। (দৈনিক জনকণ্ঠ, ১১ সেপ্টেম্বর-২০০৫, ১২ পৃষ্ঠা)
চট্টগ্রামে গ্রেফতার ৫ জেএমবি নেতা জামায়াতি রাজনীতিতে জড়িত ছিল
ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লেনদেন
গত ১৭ আগস্ট বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চট্টগ্রামে গ্রেফতারকৃত পাঁচ জঙ্গি স্বীকার করেছে, তারা একসময় জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। বোমা হামলার জন্য ব্যয়ের ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বোমা হামলা নেপথ্যে ছিল কক্সবাজারের মোহাম্মদ।
তারা আরো বলেছে, বোমা হামলার প্রায় এক সপ্তাহে আগে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রধান কথিত শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই ও এ সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান চট্টগ্রাম আসে।
সে চট্টগ্রাম দু’রাত ছিল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে জেএমবি প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে নগরীর খুলশী থানা এলাকার ঝাউতলা আহলে হাদীস মসজিদে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ওই বৈঠকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে বোমা হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। (দৈনিক প্রথম আলো, ২১শে সেপ্টেম্বর-২০০৫)