somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাযহাব কী? কোর'আন এক, নবী এক, ইসলাম এক, তাহলে মাযহাব কেন চারটি? এবং সবগুলো সঠিক হয় কীভাবে!?

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

●“মাযহাব” শব্দের অর্থ হলো পথ বা মত। ইসলামী আইনের পরিভাষায়, মাযহাব (School of Thought) হলো এমন কিছু “উসুল” বা মূলনীতি (Set of Principles) যা অনুসরণ করে কোনও কাজের শারঈ’ বিধান (অর্থাৎ হালাল, হারাম, ফরজ, নফল ইত্যাদি) নির্ধারণ করা হয়।
ইসলামের ইতিহাসে ২০টিরও বেশী মাযহাব এর সন্ধান পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৪ টি মাযহাব প্রসিদ্ধ। এই চার মাযহাব নির্দিষ্ট চারজন ইমাম বানিযে যান নি, বরং তাঁদের দেয়া উসুল অনুসারে শত শত মুহাদ্দিস, মুজতাহিদ বিভিন্ন শারঈ’ বিধান উৎসারণ করেছেন।
এগুলো হলো- ইমাম আবু হানিফার (মৃত্যু ১৪৮ হিজরী) দেয়া উসুল অনুসারে হানাফী মাযহাব, ইমাম মালিকের (মৃত্যু ১৭৯ হিজরী) এর দেয়া উসুল অনুসারে মালিকি মাযহাব, ইমাম শাফিঈ’র (মৃত্যু ২০৪ হিজরী) এর দেয়া উসুল অনুসারে শাফিঈ মাযহাব ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (মৃত্যু ২৪১ হিজরী) এর উসুল অনুসারে হাম্বালী মাযহাব। প্রত্যেক মাজহাবের পক্ষেই গত ১১০০ বছরের হাজার হাজার ইমাম আছেন।
একসময় এসে চার মাযহাবের উপর ইজমা-এ-উম্মত তথা “উম্মতের ঐক্য’’ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ইবনে খালদুন বলেনঃ Click This Link
শরীয়তের কোনও আদেশ পালনের ক্ষেত্রে কোনও মাযহাবের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমামের ঐক্যমতকে ঐ মাযহাবের ফিকহ (Understanding) বলা হয়।
যারা এই ফিকহ অনুসরণ করেন তাদেরকে “মাযহাবী” বলা হয়।

●সকল মাযহাবেরই “উসূল” বা মূলনীতি অভিন্ন।
সেই উসুলের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদা পেয়েছেঃ
(i) কুরআন ও
(ii) সহীহ হাদিস (এদেরকে একত্রে আন-নাস বলে)।
এর পর মর্যাদা পাবে।
(iii) ইজমা’ (সাহাবা বা কোনও যুগের সকল আলেমের ঐক্যমত)।
উপরের তথ্যগুলির সাহায্যে কোনো বিষয়ের ফিকহ (Islamic Ruling / Understanding) নির্ধারণ না করা গেলে
(iv) কিয়াস (Analogy) ব্যবহার করা হয়েছে।
কুরআন ও হাদিসকে সেভাবে বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবী ও সালাফরা বুঝেছিলেন। কারণ, তাঁরা যেহেতু রাসূলুল্লাহ(সা) এর সরাসরি ছাত্র ছিলেন তাই তাঁদের চাইতে ভালো আর কেউ এই বিষয়গুলো বুঝতে পারবে না।

■■এবার প্রশ্ন করা হয়, সব মাযহাব যদি একই কুরআন আর সুন্নাহ এর অনুসরণ করে থাকে, তাহলে এদের বিধানগুলো এত আলাদা কেন? আর একই সাথে কয়েকটি মত সঠিক হয় কীভাবে!?

●এবিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে একবার বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভাবলে। যদি জিজ্ঞেস করা হয়,”বাংলাদেশের সংবিধান এক, আইনসভা এক, এবং সমগ্র রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যও এক ও অভিন্ন, তথা- দেশ ও দশের সেবা করা। তারপরও কেন এতো দল? এরকম ভাগাভাগি হচ্ছে কেন?”

কারণ; সব দলই সংবিধানকে মেনে এবং সর্বপ্রকার আইনের আওতায় থেকেই দেশের উন্নয়ন করতে চাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু উন্নয়নের পদ্ধতি আবিস্কারে যে মূলনীতি বা উসুল" অনুসরণ করেছে সসেগুলোর ভিন্নতার কারণে দলের ভিন্নতা এসেছে। এখন যদি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বলে- “এক সংবিধান, এক সংসদ এবং একই উদ্দেশ্যে; অতএব রাজনৈতিক দল একটিই থাকবে, এক সাথে কয়েকটা দল কিংবা মত সঠিক হতে পারে না! অবস্থা কী দাঁড়াবে? কিংবা কেউ বলল- “যেহেতু সবক’টি রাজনৈতিক দলই সঠিক, সেহেতু আমি মসজিদে গেলে জামায়াতে ইসলামী করবো আবার বাজারে গেলে আওয়ামী লীগ করবো, অতঃপর সরকার বদল হলে বিএনপি করবো।”
অবস্থা কী দাঁড়াবে?

ঠিক একই কথা মাযহাবের বেলায়ও। একই কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার পরেও বিধান আলাদা হয় আলাদা “উসুল” (Set of Principles)’র কারণে।
“উসুল” (Set of Principles)’র এই পার্থক্যের কিছু উদাহরণ দেখুন -ইমাম মালিক মুরসাল হাদিস (যে হাদিস সাহাবা নয় বরং তাবেঈ’ থেকে বর্ণিত হয়েছে) গ্রহণ করেছেন, আর ইমাম শাফেঈ’ শুধু নির্দিষ্ট কিছু তাবেঈ’র মুরসাল হাদিস নিয়েছেন।
ইমাম মালিক মদীনার তাবেঈ’দের আমলকে সহীহ হাদিসের বিপরীতে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো – যে মদীনার মাটিতে ১০ হাজার সাহাবা শুয়ে আছেন, সেই মদীনার সাহাবা ও তাবেঈ’দের আমল সহীহ হাদিসের চাইতেও শক্ত দলীল। কারণ, হাদিস বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে তাঁদের জ্ঞান নিঃসন্দেহে বেশী ছিল।
কিছু মুতাওয়াতির হাদিস (যে হাদিস তার সনদের প্রত্যেক স্তরে বহু মানুষ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে) আছে যেগুলি কুরআনের আয়াতের সাথে আপাত: দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক (Apparently Conflicting)। এই ক্ষেত্রে কি কুরআনের আয়াত নেয়া হবে নাকি হাদিসকে নেয়া হবে – তা নিয়ে মাযহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একেক মাযহাব এক্ষেত্রে একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছে।
যদি কোনও আহাদ হাদিস (যে হাদিসের সনদের প্রতিটা স্তরে তিনজনের বেশী বর্ণনাকারী পাওয়া যায় না) কুরআনের কোনো প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে হানাফী মাযহাব হাদিস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও, সেটা না নিয়ে কিয়াস ব্যবহার করে। এটা একটা কারণ যার ফলে আমরা হানাফী মাযহাবে সহীহ হাদিস বিরোধী এত আহকাম (Islamic Ruling) দেখতে পাই।
কোন্‌ হাদিসগুলো ‘আম (General), আর কোন্‌ হাদিসগুলো খাস (Specific/Exception) – এই বিষয়ে ইমামদের মতপার্থক্যের কারণেও ফিকহী পার্থক্য হয়।
■একাধিক মত সঠিক হওয়ার একটি উদাহরণঃ
উসুল” এর ভিন্নতার কারণে আবু-বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতপার্থক্য :
“উসুল” এর এই ধরনের পার্থক্য সাহাবাদের সময় থেকেই ছিল, আর তাবেঈনদের মধ্যে তো ছিলই। দুইজন সম্পূর্ন ভিন্ন বিধান এর অনুসারী হয়েও দুইজনেই সঠিক হতে পারে, যদি তাদের নিয়ত হয় আল্লাহর ﷻ হুকুমকে মনে চলা। শ্রেষ্ঠ দুই সাহাবী আবু বকর(রা) ও উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) অসংখ্য বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারপরেও তারা দুইজনেই রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে নিঁখুতভাবে অনুসরণ করেছেন। যেমন – আবু বকর(রা) এর খিলাফতকালে সাহাবীদের যে ভাতা দেয়া হতো, তা সকল সাহাবার জন্য সমান অংকের ছিল। আবু বকর(রা) এর যুক্তি ছিল – মহান আল্লাহ ﷻ কুরআনে বলেছেন যে তিনি সকল সাহাবার উপরই সন্তুষ্ট, তাই তাঁরা সবাই সমান ভাতা পাবেন।
অন্যদিকে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) খলীফা হওয়ার পরেই এই নিয়মের পরিবর্তন করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যারা ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে তা গ্রহন করেছে, তারা যে কষ্ট সহ্য করেছে সেই তুলনায় যারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তারা অনেক কম কষ্ট সহ্য করেছে, ফলে তাদের মর্যাদাও কম। কে কত আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এর ভিত্তিতে তিনি ভাতার স্কেল নির্ধারণ করেন। এখানে আবু বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতামত সম্পুর্ণ বিপরীত – কিন্তু তাঁরা দুইজনেরই নিয়ত ছিল রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে নিঁখুতভাবে অনুসরণ করা। সাহাবাদের জীবন ঘাঁটলে এরকম অগুনতি পরষ্পর-বিরোধী মতামত পাওয়া যায়। কিন্তু, যেহেতু তাঁদের প্রত্যেকেরই নিয়ত শুদ্ধ ছিল, কাজেই যিনি যে বিধান অনুসরণ করেছেন, তাঁর জন্য সেটাই শুদ্ধ ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৩৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×