মিনা ফারাহ
তারিখ: ২৮ মার্চ, ২০১৩
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার:
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর শহীদের বিকৃত সংখ্যা পুনরুদ্ধার না করলে কোনোটারই সতীত্ব আর রা হবে না। বঙ্গবন্ধু আর জয় বাংলার পাঁচফোড়নের খপ্পরে পড়ে জাতির বুদ্ধিবৃত্তি ধ্বংস হচ্ছে। তাই ইতিহাস বদলে দেয়ার বদলে সত্য আদায় করতে হবে। ’৭১-এ জনসংখ্যা সাত কোটি। মুজিব বললেন, ৩০ লাখ শহীদ। পাটিগণিতের হিসাব অনুযায়ী ৭০০ লাখের ৭ মার্চের বক্তৃতা অনুযায়ী পাঁচ শতাংশ ৩৫ লাখ। একে সর্বনিম্ন মূল্যে আনলে শহীদের হার দাঁড়ায় ২০ঃ১ অর্থাৎ প্রতি ২০ জনে একজন, যে প্রশ্নটি তুলেছে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কাগজ ইকোনমিস্ট। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাবাব ব্যবসায় আর ৩০ লাখ সংখ্যা নিয়ে মুজিববাদীদের মিথ্যাচার রুখতে হবে, অন্যথায় শহীদের সতীত্ব নষ্ট হবে। এই দেশে কোনো গ্রাম বা শহর নেই, যেখানে কেউ বলতে পারবে প্রতি ২০ জনে একজন শহীদ হয়েছে। নরসিংদী বা রাজশাহীতে হয়নি। খুলনা বা ময়মনসিংহে হয়নি। এমনকি মেহেরপুরেও হয়নি। তাহলে হয়েছেটা কোথায়? ৩০ লাখ সত্য হলে একটি পাড়ায় যদি এক হাজার লোক থাকে, ন্যূনতম ৫০ জন শহীদ হতে হয়েছে। শেখ হাসিনার মতো ফাঁকা বক্তৃতার বদলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার বিশ্বাসযোগ্য হিসাব তারা কাগজপত্রে তৈরি করেছে। কিন্তু শেখ মুজিব বা হাসিনার সরকার কি গণহত্যার না মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজ অবধি করতে পেরেছেন? কাজে নয় শুনে মুসলমান। নেত্রী যা বলেন, মুজিববাদীরা শিশুদের মতো লাফায়। মুজিববাদীরা সহজ পাটিগণিত পড়লেই উদ্ধার হবে ৩০ লাখ না ৩০ হাজার। সুতরাং শহীদের সম্মানে এখন থেকে বলা হোক, ৩০ হাজার। বলতে বলতেই ইতিহাস শুদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্য গবেষণাগুলো কী বলে? যেমন শর্মিলা বোসের ‘ডেড রেকোনিং’ বইয়ে দুই বছরের মাঠপর্যায়ে গবেষণা অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা ৩০ হাজার কিংবা কম এবং অপারেশন সার্চলাইটে মৃতের সংখ্যা ৭০০ কিংবা কম। এ ছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন মত, যা আওয়ামী মত থেকে ১০০ ডিগ্রি উল্টো। এর বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত যদি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও দিতে পারেন বক্তব্য প্রত্যাহার করব। ’৭১ শেষে মানুষ যখন ফিরতে শুরু করল, এমনকি শহরের মানুষেরাও বলেনি দু-একজনের বেশি শহীদের কথা। শেরপুরের জনসংখ্যা কয়েক হাজার হলেও, সম্মুখ সমরসহ সামরিক বেসামরিক ৪০ জনের মতো নিহত হয়েছিল। শহীদের সংখ্যা ঊর্ধ্বে ২৪, বাকিরা পাকিস্তানি। এই একটি উদাহরণই কি যথেষ্ট নয়? তাহলে এই উদ্ভট সংখ্যাটির স্রষ্টা কে? যখনই প্রশ্ন তুলি, বড়ভাইয়েরা ধমক মারেন, মুজিব যেটা বলেছেন, তর্ক করতে নেই। এ জন্যই কি প্রজন্ম চত্বরে মিথ্যার জয় আর সত্যের পরাজয়? আজ বলছি, একটি দেশের কয়টা স্বাধীনতা দিবস থাকা উচিত। কয় মাস স্বাধীনতার মাস হয়। বিশ্বে আর কোথাও বিজয় আর স্বাধীনতা দিবস বলে আলাদা কিছু নেই। ২১ ফেব্র“য়ারি একটি দিবস, এক মাস পালনের কোনো কারণ নেই। জাতিকে বিপথগামী করতেই আওয়ামী লীগ মাস আর দিবসের ব্যবসায় করছে বলে প্রমাণ করেছে। সুতরাং চেতনার ব্যবসায় বন্ধ করতে ফরমালিনমুক্ত রাজনীতি ফিরিয়ে এনে জাতির মাথায় রাজনীতির ফরমালিন ঢালা বন্ধ করতে হবে।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী, নিউইয়র্ক
ইমেইল : [email protected]