এই পোস্ট লেখছিলাম কালকে আর আজকেই শুরু হয়ে গেছে। যেই ভয়ে লেখছিলাম এই পোস্ট, সেই ভয়ই সত্য হলো। সংখ্যালঘুদের ঘর জ্বালানো ধর্ষন, হত্যা, জমি ভিটা দখলে বাংলা মুসলমানেরা আজ সিদ্ধ হস্ত তাও আবার এই কর্ম শুরু করার আগে মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে শুরু করেছে।
আসলে ব্যাপারটা স্পর্শকাতর। স্পর্শকাতর এই জন্য যে বাংলাদেশের শিক্ষিতের হার ৭৮% হলেও এ দেশের জন গন কেতাবী সুরের চেয়ে নিজের আবেগ, নিজের অবস্থান এবং জনস্রোতের গুন্জ্ঞন শুনতেই বেশী পছন্দ করে। কিন্তু দিন বদলাচ্ছে, পারিপার্শ্বিক বিশ্বব্যাবস্থার আমূল পরিবর্তনের ধাক্কা এদেশেও লেগেছে বৈকি।
ইদানিং সুপ্রিম কোর্টের একটা রুলিং নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়েছে সেটা হলো বাংলাদেশের সংবিধানে রাস্ট্রধর্ম ইসলাম থাকাটা বৈধ কি না! এ নিয়ে দেশের ইসলামিক দলসমূহ, বিচার বিভাগ এবং সরকার মুখোমুখি।
যাই হোক আগে দেখি বাংলাদেশে রাস্ট্রধর্মের ইতিহাস নিয়ে:
১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নামের ছোট্ট একটা দেশের জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা নেবার পর স্বভাবতই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে একটা সংবিধান প্রনয়ন করা। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রনয়ন করা হয় তার মূলনীতি ছিলো চারটি: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র। মনে করা হয় এই চার নীতির ওপর ভিত্তির করেই শুরু হয় বাংলাদেশের যাত্রা। সেনা ষড়যন্ত্রে নৃশংস ভাবে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর মেজর জিয়াউর রহমান রাস্ট্রপতি পদ দখল করেন এবং ১৯৭৭ সালে সিংবিধানে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি বাদ দেন "বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" যুক্ত করেন।
এরপর ক্ষমতার পালাবদলে সামরিক অভ্যুথ্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এইচএম এরশাদে রাষ্ট্রপতি পদ দখল করেন এবং ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী আনেন যেখানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত হয়। ২(ক)-তে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম। ১৯৮৮ সালেই রাষ্ট্রধর্মের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের আগস্ট মাসে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।এ সময়ের মধ্যে রিটকারী ১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে ১০ জন মারাও গেছেন৷ তখন রিটের আবেদনকারীদের আইনজীবী ছিলেন সুব্রত চৌধুরী৷ বর্তমানেও রিটকারীদের আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন সুপ্রিম কোর্টের সেই সিনিয়র আইনজীবী৷১৯৮৮ সালে জেনারেল এরশাদ যখন সংবিধানে আর্টিকেল ২(এ) সংযোজন করে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে আসেন, তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেছিল৷ এমনকি তারা একদিন হরতালও ডেকেছিল৷ তারা বলেছিল, কোনোদিন যদি তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে এরশাদের এ সব কাজকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে এবং আর্টিকেল ২(এ)-টিও বাতিল করা হবে৷ এমনটা তখন সকলেরই অঙ্গীকার ছিল৷ তারপরও সে সময়কার ১৫ জন বুদ্ধিজীবী মিলে একটি রিট আবেদন করেন, ১৯৮৮ সালের জুন মাসে৷ তখন অষ্টম সংশোধনীতে দু'টি অংশ ছিল৷ একটা হলো, হাইকোর্টকে পাঁচটি শহরে নিয়ে যাওয়া৷ সেটার একটা রিট হয়৷ আর অন্য রিটটা হয় এই রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে৷ তখনকার সিনিয়র আইনজীবীরা বলেছিলেন, আগে হাইকোর্টের রিটটা ধরি, তারপর রাষ্ট্রধর্ম রিটটা ধরব৷ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনে সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করে।এরিমধ্যে ২০১০ এর জুনের দিকে কোর্ট থেকে রায় দেয়া হয় যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যাব হার কারা যাবে না।ওই কমিটি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে ওই সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানে আনা হয় পঞ্চদশ সংশোধনী। ২০১১ সালের ৩০ জুন এ সংশোধনী আনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখা হয় এ সংশোধনীতে। এছাড়া এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২’র সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১১ সালে অষ্টম সংশোধনীর আর্টিকেল ২(এ) ওপর রুল ইস্যু হলো৷ প্রশ্ন উঠলো, এটা কেন বেআইনি এবং কেন এটা বাতিল ঘোষণা করা হবে না৷ এরপর পঞ্চদশ সংশোধনীতে আর্টিকেল ২(এ) আবারো সন্নিবেশিত করা হলো৷এরশাদের ওটা একটু মডিফাই করে আওয়ামী লীগ সরকার আবার এটা করল৷ এটার ওপর আবার সাপ্লিমেন্টারি রুল ইস্যু হলো৷ পঞ্চদশ সংশোধনীতে শুধু আর্টিকেল ২(এ) চ্যালেঞ্জ করা হলো৷ অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের মামলাতে দু'টো রুল পেন্ডিং হয়ে গেল৷ এই দু'টি রুলই এ মুহূর্তে শুনানির জন্য একটি বৃহত্তর বেঞ্চে অপেক্ষাধীন আছে৷
সুত্র: ডয়েচ ভেল
এই হলো এক ঝলক ইতিহাস। বাংলাদেশের সংবিধান অনলাইনে পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
এখন আসি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে কি অবস্থা:
* রাস্ট্র ধর্ম ইসলাম চালু আছে সাংবিধানিক ভাবে এখনো তার নাম গুলো দেখি: বাংলাদেশ, জিবুতি,ইরাক, পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন, তিউনিসিয়া, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনাই, কমোরোস, মিসর, জর্ডান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ওমান, কুয়েত, ইয়েমেন, বাহরাইন।
* সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশ হওয়া সত্বেও যেসব দেশ সাংবিধানিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহন করেছে: আলবেনিয়া, আজারবাইজান, বুর্কিনা ফাসো, চাদ, জাম্বিয়া, গিনি, কাজাখস্তান, কসোভো, কিরগিজস্তান, মালি, সেনেগাল, তাজিকিস্তানের, তুর্কমেনিয়া, তুরস্ক, উজ্বেকিস্থান।
* আমরা জানতাম পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু দেশ নেপাল যেখানে ভারতে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বি লোকের অবস্থান। কিন্তু ২০০৮ সালের পর তারা সংবিধান থেকে রাস্ট্রধর্ম হিন্দু ধর্ম সরিয়ে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে পরিণত হয়। এজন্য তাদেরকে এখনো উগ্র হিন্দুমতাবলম্বীদের মোকাবেল করতে হয়।
* আমেরিকার সংবিধান শুরু হয়েছে In God we trust কিন্তু রাস্ট্রের কোনো ধর্ম নেই। সংবিধানে সকল ধর্মাবলম্বি লোকদের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ধর্ম বর্ন নিয়ে কোনোকিছু দিয়েই মানুষকে যেনো বিচার করা হয়। রাস্ট্র ঈশ্বরকে মেনে নিলেও কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে না মেনে তারা সকল ধর্মকে মেনে নিয়েছে।
* ১৭ টি দেশের রাস্ট্রপ্রধানকে মুসলমান হতে হবে: আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনাই, ইরান, জর্ডান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সিরিয়া, টিউনিশিয়া ও ইয়েমেন৷
*লেবাননে জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ মুসলিম৷ এর মধ্যে ২৭ শতাংশ সুন্নি ও বাকি ২৭ শতাংশ শিয়া৷ খ্রিষ্টান জনগণের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০ শতাংশ৷ এর মধ্যে ২১ শতাংশ ম্যারোনিট ক্যাথলিক ও ৮ শতাংশ গ্রিক অর্থোডক্স৷ এবার বলুন তো রাষ্ট্রপ্রধানকে কোন ধর্মের হতে হবে? সংবিধান বলছে, অবশ্যই ম্যারোনিট ক্যাথলিক৷ আর প্রধানমন্ত্রীকে হতে হবে অবশ্যই সুন্নি মুসলমান৷ রাষ্ট্রপ্রধান খ্রিষ্টান হতে হবে এমন শর্ত আছে অ্যান্ডোরাতেও৷
*যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সহ কমনওয়েলথভুক্ত ১৬টি দেশের রাজা অথবা রানিকে (বর্তমানে যেমন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ) অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি ধর্মের হতে হবে৷ রানির পদ অলংকারিক হলেও তিনি সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান৷ ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেন এর ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য৷
*বলিভিয়া, মেক্সিকো ও এল সালভেদর সহ আটটি দেশের সংবিধান বলছে, ধর্মীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না৷ অন্য দেশগুলো হচ্ছে মিয়ানমার, কোস্টারিকা, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা৷
সুত্র পিউ রিসার্চ ও ডয়েচ ভেল এবং উইকিপিডিয়া
এখন আসি রাস্ট্র ধর্ম আর ধর্মনিরপেক্ষতা কিছু কেতাবী কথা:
রাস্ট্রকে আমরা যদি একটা প্রতিষ্ঠান ধরি তাহলে দেখা যাবে রাস্ট্র যদি চায় তাহলে সে ধর্মনিরপেক্ষতা বা ধর্মতন্ত্র গ্রহন করতে পারে। এরকম চর্চা বহু আগে থেকেই চলে আসছে। পুরোনো রোমান সভ্যতা দেখলে বোঝা যায় তারা এক সময় তাদের রাস্ট্রকার্য্যে ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব মেনে নেয়। আধুনিক ইংল্যান্ডের সংবিধানে এখনও এরকম একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসন পালনে কোনো বাধ্য বাধকতা নাই।
কারন সংবিধানে রাস্ট্রধর্ম রাখলেও পার্লামেন্ট ইচ্ছা করলে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি পালন করতে পারে। অনেকেই বলেন যে ধর্ম নিরপেক্ষ হলে তাহলে ধর্ম পালনে সমস্যার সৃস্টি হবে বা অনেকেই ভয় পান। রেফারেন্স হিসেবে তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক বা আলবেনিয়ার কথা বলেন।
আসলে যেগুলো বলা হয়েছে সেগুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা তা বলে না।
একটা ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হলো নিরপেক্ষতার সেই কনসেপ্ট যার মধ্য দিয়ে একটা রাস্ট্র ধর্মীয় যেকোনো ব্যাপারে নিরপেক্ষতার পরিচয় দেবে, তার পক্ষ সব সময় ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনোটাতেই না। সূত্র
আপনি যদি আরো অন্যান্য সংজ্ঞা দেখেন তাহলে সবগুলোর ভাবার্থ একই। এখন কোনো রাস্ট্র শাসক যদি এই পথ অবলম্বন না করে শক্তি প্রদর্শন করে তাহলে এই গ্যারান্টিও দেয়া যাবে না যে ইসলামী দেশ হলেও সংখ্যালঘুদের সেরকম নির্যাতন হবে না।
এখন ধর্ম তন্ত্রের অর্থ কি? ধর্ম তন্ত্র কোনো রাস্ট্র গ্রহন করলে সে রাস্ট্রের রাজা হিসেবে স্বয়ং ঈশ্বরকেই গন্য করে তার প্রেরিত পবিত্র পুস্তকের উপর নির্ভর করে দেশ চালিত হবে। সেক্ষেত্রে রাস্ট্রের অর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা, বিধি নিষেধ, সুযোগ সুবিধা সবকিছুই ধর্ম দ্বারা রাস্ট্র নিয়ন্ত্রন করতে পারে। সংখ্যালঘু শ্রেনীকে ধর্ম প্রদত্ত যে বিধান থাকে সে অনুযায়ী স্বাধীনতা দেয়া থাকলেও আধুনিক ধর্ম নিয়ন্ত্রিত রাস্ট্র ব্যাবস্থায় আইনের ক্ষেত্রে তাদের জন্য আলাদা আইন প্রনয়ন করা হয়। তারা সেগুলো মেনে চলে। ব্যাবসা বানিজ্য, সামাজিক সুযোগ সুবিধা ধর্মের ভিত্তিতে তৈরী করা নিয়ম মেনে চলে ঠিক যেমনটা দেখি পাকিস্থান বা ইরানে।
বর্তমানে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশগুলোর কি অবস্থা:
আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনি ধর্ম নিরপেক্ষতার কারনে আজান বা নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যায় অথবা হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। সেগুলো নিয়ে কথা বলবো।
হিজাব: অনেকেই বলে থাকেন ফ্রান্সে নাকি হিজাব ব্যান, কিন্তু কথাটা ঠিক না। আসলে পর্দাপ্রথায় খোদ মুসলমানরাই একটু অজ্ঞতার শিকার। পর্দার করার দুটো প্রথা আছে একটা হলো হিজাব আরেকটা নেকাব। ইসলামে পর্দা প্রথা বলতে হিজাবের কথা বলা হয়েছে। ফ্রান্স ব্যানকরেছে মুখবন্ধ বা নিকাবের ওপর, হিজাব নয়। এর জন্য কারো পর্দায় বাধা দেয়া হয় নি। স্বাভাবিক ভাবে বর্তমান সন্ত্রাসী আক্রমনের পর প্রতিটি মসজিদে ট হল দারী বাড়ানো হয়েছে যার সাথে সেক্যুলারিজমের কোনো সম্পর্ক নেই। এই যেমন আমেরিকার ৯/১১ এর পর পাকিস্থান ২০০৩ সালে একটা নিয়ম পাশ করে যেখানে বলা হয়েছিলো সকল মাদ্রাসার রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এছাড়া সুইডেন, ডেনমার্কে প্রতিটা কমিউনে একটা করে মসজিদ আছে। তবে আওয়াজ দেয়াটা সম্ভব না কারন মাইক লাগিয়ে উচ্চ স্বরে আজানের ধ্বনি এদের সমাজে যায় না। এটা এদেশের অধিকাংশ জন গনের মত। তুরস্ক হিজাবের ওপর ব্যান উঠে গেছে বহু আগেই।
আজান: তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যারা গিয়েছেন তারা আজান শুনেননি এটা মানা কষ্টকর। একটা গোপন কথা বলি, ইসলামের অজনপ্রিয়তার কারনে ওখানে এখন বেশীরভাগ মসজিদে টেপে আজান দেয়। কারন তুরস্কের জন গন ঐতিহ্য গত ভাবেই সেক্যুলার। ইন্দোনেশিয়া সেক্যুলার হওয়া সত্বেও সে দেশের বেশীর ভাগ মসজিদে আজান দেয়া হয়। তেমন ভাবে ইউরোপীয়ান বেশীর ভাগ দেশে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বেশী হবার কারনে তাদের দেশে ঘন্টা বাজে, বেশীর ভাগ উৎসব ছুটি ছাটা খ্রিস্ট ধর্ম অনুসারে করা হয়।
সাতটি ‘নাস্তিক’ দেশের কথা
চীনে শতকরা ৯০ ভাগই ‘নাস্তিক’
৬৫টি দেশে জরিপ চালিয়েছিল ‘গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল’৷ জরিপ থেকে বেরিয়ে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাস্তিকেরও দেশ৷ সে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ভা পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন৷ চীনের শতকরা ৬১ ভাগ মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করেন, বাকি ২৯ ভাগ নিজেদের ধর্মে বিশ্বাসী নন বলে দাবি করেছেন৷
সুইডেনে ৭৬ শতাংশ
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনে সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাত্র শতকরা ৮ ভাগ মানুষ উপাসনালয়ে গিয়ে ধর্ম চর্চা করেন৷ তবে গ্যালাপ-এর জরিপ অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৬ ভাগ সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে মনে করেন না৷
চেক প্রজাতন্ত্রে সামান্য কম
‘নাস্তিক’ চেক প্রজাতন্ত্রেও খুব বেশি কম নয়৷ মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ ভাগ মানুষ নিজেদের সরাসরিই ‘নাস্তিক’ বলেন৷ তবে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের ধর্মবিশ্বাস আছে কিনা, তা জানাতেই রাজি নন৷ মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন৷ গ্যালাপ-এর জরিপ জানাচ্ছে, সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশটিতে এক হিসেবে শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষই নাস্তিক, কেননা তাঁরা ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার গুরুত্ব স্বীকার করেন না৷
ব্রিটেনে ৬৬ শতাংশ
জরিপে অংশ নেয়া ব্রিটেনের শতকরা ৫৩ জন মানুষ বলেছেন যে, তাঁদের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই৷ আর ১৩ ভাগ সরাসরিই বলেছেন, ‘আমি নাস্তিক’৷
হংকং ও জাপানে শতকরা ৬২ ভাগ
বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৬৪ হাজার মানুষের মাঝে এই জরিপ চালিয়েছে গ্যালাপ৷ হংকংয়ের মানুষদের সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া গেছে এই জরিপ থেকে৷ দেখা গেছে, হংকংয়ের শতকরা ৪৩ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে নাস্তিক৷ বাকি ৫৭ ভাগের মধ্যে ১৯ ভাগকেও আস্তিক অন্তত মনে হয়নি৷ জাপানে প্রত্যক্ষ নাস্তিক শতকরা ৩১ ভাগ হলেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের গুরুত্ব নিয়ে ভাবেন না এমন মানুষও আছে অনেক৷
জার্মানিতে ৫৯ ভাগ
জার্মানির ৫৯ ভাগ মানুষকেই নাস্তিক হিসেবে দেখিয়েছে গ্যালাপ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যেমন স্পেন, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের নাগরিকদেরও বড় একটা অংশই নাস্তিক৷ বিশ্বের যেসব দেশে অনেক ‘আস্তিক’, সেসব দেশ থেকে অনেক মানুষই এসব ‘নাস্তিক’ দেশে এসে উন্নত জীবনের সন্ধান পেয়েছেন, পাচ্ছেন৷ ইউরোপের বেশ কিছু দেশেই এখনো নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু৷ তবে সংখ্যালঘু আস্তিকদের ধর্ম চর্চায় তাতে কোনো সমস্যা হয় না৷
সুত্র: আরজেডএন/এসিবি এবং ডয়েচভেল
আমাদের দেশের কি অবস্থা:
দুঃখজনক হলেও সত্য শুধু আমাদের দেশেই না, ভারত পাকিস্থানে সংখ্যালঘু যারাই হোক তারা কস্টে আছে। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়া সত্বেও সেখানে মুসলামনরা অনেকক্ষেত্রে নির্যাতিত। এমনও আছে চাকুরীর বড় বড় পোস্টে ধর্ম ও একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে সেটা আসলে পীড়াদায়ক। যদিও ভারতের রাস্ট্রপতি মুসলমান, শিখ ধর্মাবলমবী হয়েছিলো কিন্তু পাকিস্থান বা বাংলাদেশে রাস্ট্রপ্রধান হিন্দু বা সংখ্যালঘু কেউ সেটা চিন্তা করা যায় না।
সংখ্যালঘুরা যেসব দেশে সবচেয়ে হুমকির মুখে:
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
সপ্তম: পাকিস্তান
শিয়া (হাজারা সহ), আহমদি, হিন্দু, খ্রিষ্টান, মোহাজির, পশতুন, সিন্ধ সম্প্রদায়৷
অষ্টম: মিয়ানমার
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷
সুত্র এবং ডয়েচভেল
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের যে অবস্থা:
১) বাংলাদেশের ইংরেজি জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টার এর একটি প্রতিবেদনের অনুবাদ ছিল এমন যা থেকে আমরা সে সময়ের বাংলাদেশের হিন্দুরা কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল তার কিছু ধারনা পেতে পারি , “1992 বাংলাদেশ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে ইসলামবাদীদের বাংলাদেশে অ মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালান হয়। সহিংসতার ঘটনা ডিসেম্বর 1992 সালে শুরু হয় এবং মার্চ 1993 পর্যন্ত চলতে থাকে।এতে 28,000 হিন্দু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, 2,700 ব্যবসা এবং 3,600 মন্দির ও পূজার অন্যান্য স্থানে ধ্বংস করা হয়েছে। মোট ক্ষতির হিসেব 2 বিলিয়ন টাকা থেকে বেশি।
7 ডিসেম্বর, জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে আক্রমণ করা হয়। ঢাকায় ভোলানাথ গিরি আশ্রম আক্রমন ও লুট করা হয়। হিন্দু মালিকানাধীন গহনা দোকান পুরনো ঢাকায় লুট হয়।রায়েরবাজারে হিন্দু ঘরে আগুন দেয়া হয়েছিল।
সার্ক চার জাতির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দাঙ্গার কারণে আক্রান্ত হয়। 7 ডিসেম্বর, লোহার রড এবং বাঁশের লাঠি দিয়ে সশস্ত্র 5,000 মুসলমানদের বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার ম্যাচ চলাকালীন সময় ঢাকা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম মধ্যেআক্রমন করার চেষ্টা করে। পুলিশ আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে । কিন্তু ম্যাচ 8.1 ওভারে পর পরিত্যক্ত হয়। উদ্যোক্তারা 11 ডিসেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার ও ফাইনাল ম্যাচ পুন নির্ধারণ করে কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়।
8 ডিসেম্বর, হিন্দু কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার হামলা চালানো হয়। মুসলমানদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত 14 হিন্দু মন্দির, তাদের আট জন দগ্ধ হয় ।
চট্টগ্রাম জেলায় ফটিকছড়ি এবং মিরসরাই গ্রাম সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়। পঞ্চানন ধাম এবং তুলসী ধাম সহ পাঁচ হিন্দু মন্দির আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২) বাংলাদেশের অর্থনীতি বিদ আবুল বারাকাত যিনি গবেষণা করে দেখিয়েছেন কি ভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের সম্পদ মুসলিমরা রাষ্ট্রীয় ডাকাতির মাধ্যমে গ্রাস করে নিয়েছে।
“(ক) ১৯৭১-২০১৩ অবধি ৪২ বছরে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে তাদের আগের সংখ্যার এক-চতুর্থাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ২৮% ভাগ থেকে ৮% শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের গবেষণা গ্রন্থ ‘এ্যান ইনকোয়ারি ইন টু কজেস এন্ড কনসিকোয়েন্সেস অফ ডিপ্রাইভেশন অফ হিন্দু মাইনরিটিজ ইন বাংলাদেশ থ্রু দ্য ভেস্টেড প্রপার্টি এ্যাক্ট (প্রিপ ট্রাস্ট, ২০০০ সাল)’ বইয়ে দেখা যাচ্ছে ১৯৬৪ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি বছর ১৯৬, ২৯৬ জন হিন্দু হারিয়ে যাচ্ছেন এদেশ থেকে। প্রতিদিন হারাচ্ছেন ৫৩৮ জন মানুষ। শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তির আওতায় এপর্যন্ত ৯২৫,০৫০ হিন্দু পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ৭৪৮,৮৫০ পরিবার হারিয়েছেন কৃষি জমি, ২৫১,০৮৫ পরিবার হারিয়েছেন বসতভিটা, ৪৮,৪৫৫ পরিবার হারিয়েছেন উদ্যান জমি, ২২,০২৫ পরিবার হারিয়েছেন বাড়ির পাশের পতিত জমি, ৭৯,২৯০ পরিবার হারিয়েছেন পুকুর, ৪,৪০৫ পরিবার হারিয়েছেন বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন জমি এবং ১১৪,৫৩০ পরিবার হারিয়েছেন আরো নানা শ্রেণীভুক্ত জমি।
(খ)আসুন আবার দেখি আবুল বারকাত কি বলেছেন? শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের আওতায় এপর্যন্ত ১.৬৪ মিলিয়ন একর জমি হারিয়েছে হিন্দুরা। এটা ১৯৯৫ সালের হিসাব। এরপর পদ্মা-মেঘনায় আরো জল গড়িয়েছে। আরো অনেক সহায়-সম্বলহারা হয়েছে হিন্দুরা। এপর্যন্ত ১.৩৪ মিলিয়ন কৃষি জমি (মোট বেদখল হওয়া জমির ৮১.৭ ভাগ), ১৫৬ হাজার একর বা¯ত্তজমি (মোট বেদখল হওয়া জমির ১০% ভাগ), ২৯ হাজার একর উদ্যান জমি (মোট বেদখলকৃত জমির ১.৭৪% ভাগ), ১১ হাজার একর পতিত জমি (০.৬৮% ভাগ), ৩২৯ একর বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত জমি এবং ৫৬ হাজার একর অন্যান্য জমি (৩.৪% ভাগ)-র অর্থমূল্য ২০০০ সালের বাজারদরে গড় দামে হিসাব করলে (প্রতি ডেসিমাল ৫৭৬০ টাকা), শুধুমাত্র শত্র“ সম্পত্তি আইনের আওতায় হিন্দু পরিবারগুলো যত জমি হারিয়েছে, তার মোট আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৯৪৪,৬৪০ মিলিয়ন টাকা যা বাংলাদেশের জিডিপি-র শতকরা ৫৫ ভাগ এবং ২০০০-২০০১-এ বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। আবুল বারকাত আরো বলেন নগদ আর্থিক মূল্যের বিবেচনা ছাড়াও মানসিক হতাশা ও ভেঙ্গে পড়া, পারবারিক বন্ধন হারানো (পরিবারের তিন জন ওপারে ত’ চার জন এপারে), সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও স্বাধীনতার অভাবের মত বিষয়গুলোর কোন আর্থিক পরিমাপই হয় না।
সুত্র ফেসবুক পোস্ট
৪) সংখ্যালঘু নির্যাতন ও জামাত শিবির: ২৮ তারিখ জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে ৭১ এর মানবতা বিরোধী মামলায় ফাঁসি দেয়ার পর নোয়াখালীর রাজগাঞ্জবাজার গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালানো হয়। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি Amnesty Internation কে জানায় যে জামাত-শিবিরের হরতাল সমর্থনকারীরা তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়, এসময় তাড়া প্রায় ৩০টি বাড়িতে আগুন দেয় যেগুলোতে প্রায় ৬৬টি পরিবার বাস করতো। তারা সেখানে মন্দির গুলোতেও আগুন দিয়েছে। একই দিনে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় একটি গ্রামে ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় আরও মন্দিরে ভাংচুর করে।
পুরো মার্চ মাস জুড়েই লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, মুন্সীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নাটোর, কুমিল্লা, নেত্রকোনা, বগুড়া, ভোলা, রংপুর, সিলেট, নেত্রকোনা সহ প্রায় সারা দেশেই হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা চালায় জামাত-শিবির। লুটপাট করে, ঘড় বাড়ি ও উপাসনালয় পুড়িয় দেয়।
এপ্রিলের ৫ তারিখ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তিনটি মন্দিরে আগুন দেয় এবং এ মাসে আরও জায়গায় আগুন দেয় তারা। ২০১৩ প্রায় সারা বছরটি জুড়েই জামাত শিবিরের এ তাণ্ডব চলতে থাকে। ২৫শে নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করবার পর থেকে ১৮ দলীয় জোটের তীব্র ক্ষোভের স্বীকার হয় এই অমুসলিম সম্প্রদায় গুলো। ডিসেম্বরের ১২ তারিখ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর হামলা চালায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। কিছুদিন হ্রাস হামলা বন্ধ থাকলেও ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর তা আবারও শুরু হয়।
৫) ২০০১ সাল, নির্বাচন পরবর্তী পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে নিথর দেহ ভাসিয়ে দেয় নদীতে: ভোলার লাল মোহনে অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের চার পাশের ধানৰেত ও জলাভূমি পরিবেষ্টিত ভেন্ডার বাড়িতে অর্ধশতাধিক মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রৰার লৰ্যে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সে বাড়িটিও এই নরপিচাশদের নজর এড়ায়নি। শত শত বিএনপি সন্ত্রাসীরা ৮/১০টি দলে বিভক্ত হয়ে অত্যনত্ম পরিকল্পিতভাবে ওই রাতে হামলা চালায়। মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রৰা করতে পারেনি। সম্ভ্রম রৰায় অনেকে, প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশেপাশের ধানৰেত ও জলাশয়ে। কিন্তু তাদের শিশুদের পানিতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে পানি থেকে ওঠে আসতে বাধ্য করায়। সেখানে ধর্ষিত হয় ৮ বছরের শিশুও। মা, মেয়ে, পুত্রবধূকে ধর্ষণ করা হয় এক সঙ্গে। ছেলের চেয়েও ছোট বয়সী সন্ত্রাসী কর্তৃক মায়ের বয়সী নারী ধর্ষিত হয়। এদের কবল থেকে রৰা পায়নি পঙ্গু, অন্ধ, প্রতিবন্ধী নারীরাও। কোন কোন ৰেত্রে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়াসহ লোমহর্ষক অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এতে ।
৬)পুর্নিমার রানীকে পালাক্রমে ধর্ষন: পনেরো বছর বয়সের দশম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা গণধর্ষণের শিকার হয়ে অনেকটা বাকরম্নদ্ধ হয়ে পড়েছিল। সিরাজগঞ্জের উলস্নাপাড়া থানার দেলুয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের পরিবারের ওপর ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ রাতে চালানো হয় বর্বরতম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন। রাতে জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার-নির্যাতনের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা অনিল শীলের ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।তদন্ত কমিশন সরেজমিন তদনত্ম করতে গেলে বাগেরহাট সার্কিট হাউসে এসে নির্মম নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করে গণধর্ষণের শিকার হওয়া ছবি রানী। ধর্ষণের সময় তার বয়স ছিল ২০ বছর। ছবি রানী কমিশনের সামনে বলে, ২০০২ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি নেতা মলিস্নক মিজানুর রহমান ওরফে মজনু ও বাশার কাজীর নির্দেশে সন্ত্রাসী মজনু রহমান (বিএনপি থানা আহ্বায়ক), আবুল বাসার, তায়েব নুর, কামাল শিকারী, কামাল ইজারাদার, বজলুর রহমান, পলাশ, মাঝে শিকদার, ইল ফরাজী, হিমু কাজী, জিন্না নুর প্রহরী, ইমদাদ, এমএ মান্নান, হারম্নন মলিস্নক, মোসত্মাফিজুর রহমান, হাফিজ উদ্দিন, আলতাফরা সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় তাকে বিএনপি অফিসে ডেকে নিয়ে গণর্ধষণ করে। পরে মাথার চুল কেটে দেয়। পরে নগ্ন ছবি করে যৌনাঙ্গে বালু ও কাঁচের গুঁড়া ঢুকিয়ে দেয়। পানি খেতে চাইলে প্রসাব করে তা খেতে দেয়। জবানবন্দী দেয়ার সময় তার শরীরের কয়েকটি চিহ্ন কমিশনের সদস্যদের দেখান। এ সময় ছবি রানী তদনত্ম কমিশনকে জানায়, বাগেরহাট আদালতে এ মামলা চলাকালে বিএনপির তখনকার সভাপতি ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম তাঁর বাগেরহাটের বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোর করে মামলা মীমাংসাপত্রে স্বাৰর করিয়ে নেয় এবং সন্ত্রাসীর হুমকির মুখে সাৰী হাজির করতে না পারায় বাধ্য হয়ে মামলাটি প্রথমে ঢাকা, পরে খুলানা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালে স্থানানত্মর করে।
যাই হোক এরকম ব হু ঘটনার সাক্ষ্মী আমাদের এই দেশ।
আবার রাস্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার পক্ষে ইসলামী দল গুলো আর অন্যান্যরা যা বলছে:
* কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের সমুন্নত সংগ্রামী আইনজীবি পরিষদের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের আইনজীবিরা বলেন এদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠি মুসলমান। এদেশের মুসলমানরা স্বভাবগতভাবেই ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু। যে দেশে ১০লাখ মসজিদ রয়েছে। যেদেশে প্রতি জুমুয়ার জামাতে কোটি কোটি লোকের সমাগম হয়। সেদেশে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্ম হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হবে ‘ইসলাম’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ বর্তমানে বিশ্বের ৬০টিরও অধিক দেশে সংখাগরিষ্টদের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। যেমন, খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ব্রিটেনসহ ২৬টি দেশে ক্যাথলিক ও প্রোটেষ্ট্যান্ট মতবাদ তাদের রাষ্ট্রধর্ম। একমাত্র গ্রীসে অর্থডক্স মতবাদ তাদের রাষ্ট্রধর্ম। আবার ভুটান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ ৫টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। কিছুদিন পূর্বেও নেপালের রাষ্ট্রধর্ম ছিল সনাতন বা হিন্দু। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম। তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হওয়াও স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ বহাল থাকাও স্বাভাবিক।
* রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই, ধর্ম হলো ব্যক্তির, এছাড়া রাষ্ট্রে একাধিক ধর্মাবলম্বিরা রয়েছে ফলে কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। যদি তাই হয়, তাহলে একইভাবে রাষ্ট্রেরও কোন ভাষা থাকতে পারে না। কারন রাষ্ট্র কখনো কথা বলে না। কথা বলে ব্যক্তি। অথচ এদেশে চাকমা-মারমা-সাওতাল- বিহারীসহ বহু ভাষী লোক রয়েছে। তাই রাষ্ট্র ভাষা বাংলা কি বাদ দেয়া হবে? যদি না দেয়া হয় তাহলে রাস্ট্রধর্ম হিসেবেও ‘ইসলাম’ বাদ দেয়া যেতে পারে না।
*১৯৫২ সালে ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক মহাসম্মেলনে গৃহীত খসড়া সাংবিধানিক প্রস্তাবসমূহে, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে ঘোষিত ২১ দফা কর্মসূচীতে, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৬ দফা কর্মসূচীতে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ১১ দফা কর্মসূচীতে, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে, ১৯৭১ সালের ২৩ জানুয়ারি সাবেক রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত লাখ লাখ লোকের জনসভায় সেই সময়কার জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণকে পাঠ করানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শপথবাক্যে, মুজিব ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর মধ্যে ১৯৭১ সালে ১৪ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক পেশকৃত পাকিস্তানের খসড়া সংবিধানে এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে অর্থাৎ বাংলাদেশের জাতীয় ৮টি দলিলের একটি দলিলেও সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে বাংলাদেশের মৌলিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। তারপরও বাহাত্তরের সংবিধানে সেগুলো ঢুকানোর কারণে যদি পঞ্চদশ সংশোধনীতেও সেগুলো বহাল রাখা যায় আবার সেগুলো চ্যালেঞ্জ করে মামলা না করা হয়, তাহলে ৮ম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ ঢুকানোর কারণে সেটাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা কেন? যদি ৮ম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ বহালের কারণে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ বাদ দিতে হয়, তাহলে একইভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী থেকে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে মামলাও দিতে হবে এবং বাদও দিতে হবে।
*২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে সরকার জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাপন আইন ৬ষ্ঠ বার সংশোধনীর মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তি আইনের ‘খ’ তফসিল বাতিল করার কারণে দেশের লাখ লাখ মুসলমান তাদের বৈধ ভূমি থেকে বঞ্চিত হবে। অর্পিত সম্পত্তি ‘খ’ তালিকায় বিনিময় সম্পত্তিও ভূমি অর্ন্তভূক্ত। কিন্তু উক্ত অর্পিত সম্পত্তি আইনে বিনিময় সম্পত্তি নিয়মিত করণ ও ভারতীয় বিনিময় দলিলের নকল কপি ঘোষনার কোন বৈধ আইন না থাকায় বিনিময়কারী মুসলমানরা এখন লাখ লাখ একর জমি থেকে বঞ্চিত হবেন। দেশের সংখ্যালঘুরা এককভাবে এসব জায়গার মালিক হতে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় হাজার হাজার বিনিময় সম্পত্তির মামলা অনিস্পত্তি অবস্থায় রহিয়াছে। তাই অর্পিত সম্পত্তি আইনের ‘খ’ তফসিল পুণর্বহাল করা জরুরী।
*অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তফসিলও সংখ্যালঘুরা এককভাবে পেতে পারে না। এটাও বিবেচেনায় নিতে হবে। কারণ যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নাগরিকরা সম্পত্তির দাবিদার হতে পারেনা। যারা দেশপ্রেম বাদ দিয়ে শত্রু দেশে আশ্রয় নেয় এবং স্বদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা কিভাবে ভুমি ফেরত পেতে পারে? পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যারা দেশ ত্যাগ ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছিল তাদের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ গন্য করা হয়। তাই ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তির মোড়কে বৈধ হতে পারেনা। তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। এটা এখন সরকারী সম্পত্তি।
*আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল, মিশরের সিনাই উপত্যকা, সিরিয়ার গোলান উপত্যকা, জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা, ও কানিত্রা শহরটি দখল অনেক জায়গা দখল করলেও যুদ্ধ শেষে ইসরাইল কোন জায়গা ফেরত দেয়নি। বরং তা ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গন্য করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে বিবদমান পক্ষদ্বয়ও এক পক্ষ অন্য পক্ষের ফেলে যাওয়া বা দখল করা সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গন্য করে। অনুরুপ পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যারা পূর্ব পাকিস্থান থেকে এসব সম্পত্তি ফেলে গিয়েছিল তাদের সম্পত্তিও ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে এটা সরকারী সম্পদ। যা তারা দাবি করতে পারেনা।
* পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিল সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। যে সংখ্যালঘুদের নেতা ও প্রতিনিধি। তার নেতৃত্বেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে এবং পাশ হয়েছে। সেই পঞ্চদশ সংশোধনীতেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রয়েছে। সংখ্যালঘুদের নেতা ও প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ স্বীকার করে নেয়ার পর এটা নিয়ে সংখ্যালঘুদের আর বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। সংবিধারে পঞ্চদশ সংশোধনীতে শুধু ইসলামকেই রাষ্ট্রধর্ম করা হয়নি বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মকেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাহলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শুধু ইসলাম ধর্ম বাদ দেয়ার জন্য মামলা করা আবার অন্যান্য ধর্ম নিয়ে চুপ থাকার রহস্য কি?
পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের সময় মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুইজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর রাষ্ট্রধর্মের বিরোধীতাও মেনে নেননি (যারা রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তনের সময় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন) এবং যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একটি মীমাংসিত বিষয় সেখানে নতুন করে রাষ্ট্রধর্ম ইস্যু তোলা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
সবশেষে কি করা যেতে পারে:
১৯৮৮ সালের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন ভিন্ন। কারন তখন সরকার ছিলো রাস্ট্রপক্ষ ছিলো রাস্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে। আর এখন যে সরকার ক্ষমতায় তারা ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে। এছাড়া যদি তত্বীয় ভাবে বলতে যাই বাঙ্গালী জাতী বর্তমান ধর্মীয় দিক অস হিষ্ণু জাতিতে পরিণত হয়েছে। হয়তো মোটা দাগে অনেকেই না, কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। আর সেক্যুলার কনসেপ্ট বা আধুনিক রাস্ট্রের কনসেপ্ট গুলো পশ্চিমা বিশ্ব হতে আমদানী কৃত। পশ্চিমা বিশ্বের মানুষের বর্তমান সময়ের স হনীয় মন মানসিকতার পুরো বিপরীতে আমরা বসবাস করছি। এখন আমাদের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতন খুব বড় কোনো সমস্যা না কারন তারা আমাদের মূল জনসংখ্যার অতি সামান্য পরিমান। এটা দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক ব্যাপার হলেও এটাই বাস্তবতা।
আর রাস্ট্রধর্ম ইসলাম চাই: এই রীটের পুরো মীমাংসা হবে আদালতে। আদালত কোনো গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নয়। যদি আদালত রায় দেয় তাহলে সরকার মানতে বাধ্য আবার সংসদ একটা গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এখানে গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোর ধর্ম পুরোপুরি মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়েছে ফলে এখানে আরেকটা ধর্মীয় স হিংসতা লাগারও সম্ভাবনা আছে। আর প্রতিটা ধর্মীয় স হিংসতায় হিংস্রতা বড় বীভৎস। যারা রাস্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে তারা এই স হিংসতা এড়াতেও ইচ্ছুক নন যদি তাই হতেন তাহলে এই রিটের বিরুদ্ধে প্রানপন লড়ে যেতেন।
এটা অনেকটা এমন যে যদি আমরা হারি তাহলে সংখ্যালঘুদের খবর আছে আর যদি জিতি তাহলে যেসব হচ্ছে সেভাবেই চলবে। সরকারের আচরন দেখেও মনে হচ্ছে না যে তারা এই সমস্যার সুষ্ঠু কোনো সমাধান চায়। এ যেন এমন যে তারা বিচারবিভাগের কাধে বন্দুক রেখে গুলি চালাচ্ছে!
এখন যদি বাংলার আমজনতা এগিয়ে না আসে, কোর্টে যাই ঘটুক, বড় একটা স হিংসতা ঠেকানো মুশ্কিল!
আমরা কি এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারি?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:১৯