বাল্যবিবাহ নিয়ে আগের পোস্টগুলো পড়ে দেখতে পারেন:
বাল্যবিবাহ-১: এখানে আলোচনা করা হয়েছে ইসলামে বাল্যবিবাহ জায়েজ না হারাম এই বিষয়ে। তাও শুধু কোরান ও হাদিসের আলোকে। যারা মনে করেন কোরান ও হাদিসের আলোকে ইসলামে বাল্যবিবাহ জায়েজ তাদের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে তেমনি যারা মনে করে কোরানে এটার অনুমতি নেই এবং হাদিস যা আছে সব জাল সে ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়েছে। যতটুকু করে আয়াত আর হাদিস সমূহ পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, বাল্যবিবাহের জন্য মেয়েদের সর্বনিম্ন বয়স সম্পর্কে ইসলামে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং কোরানে এসব বিয়ে কিভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং বিবাহ পরবর্তী কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশও দেয়া আছে। আপনারা এখানে স্ববিস্তারে যেকোনো সময় আলোচনা করতে পারেন।
বাল্যবিবাহ-২:এই পোস্টে বাল্যবিবাহের ফলে সমাজ এবং রাস্ট্রে কি কি প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে কি কি ক্ষতিকর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা নিয়ে রেফারেন্স স হ আলোচনা করা হয়েছে। তার সাথে মেডিক্যাল সায়েন্স অনুসারে কি কি মরনঘাতী রোগ এবং দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় সেটাও আলোচনা করা হয়েছে রেফারেন্স সহ। মানসিক দিক নিয়ে খুব বেশী আলোচনা করা হয় নি। যেহেতু এই ব্যাপারটা নিয়ে কেউ এখনো আলোচনা করছে না সেহেতু এটাকে গৌণ ধরা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আলোচনা করা যেতে পারে।
আলোচনার রীতি: যেকোনো বিষয়েই সুস্থ আলোচনা বান্ঞ্চনীয়। সুস্থ আলোচনা বলতে যেখানে গালিবাজী, কটু কথা ব্যাক্তিগত আক্রমন পরিহার করা হয়, তথ্য এবং তথ্যের প্রাপ্যতা উল্লেখপূর্বক একটা প্রানবন্ত আলোচনা করাটাই মূখ্য। এখানে কাউকে ভুল প্রমান করা মূখ্য না। তবে কেউ যদি প্রোভোক করতে চান বা কোনো প্রকার উষ্কানি দেন কমেন্টে তাহলে মনে হয় না তার সাথে কোনো আলোচনায় যাবার দরকার আছে। আপনি ভিন্নমত নিতেই পারেন, সে অধিকার আপনার অবশ্যই আছে। সে কারনে আপনি এমন কোনো তথ্য দিলেন যার সূত্র বা রেফারেন্স নাই, সোজা বলে দিন। আমি খুজে নেবো। যদি তাও না পারেন তাহলে সময় সুযোগ করে মোবাইলে একটা স্নাপশট নিয়ে খুব স হজে এখানে কমেন্টে দিতে পারেন। আমিও মানুষ, আমার টেম্পার আছে। আপনারও টেম্পার আছে।
যাই হোক, মূল আলোচনায় আসি।
যদিও বাল্যবিবাহ নিয়ে লেখাজোকা আমি দু'পর্বেই সমাপ্ত করতে চেয়েছিলাম কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো এ দুটো ছাড়াও আরও কিছু কনফিউশন রয়ে যায় যেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি এবং যেগুলো নিয়ে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি অবশ্যই আছে। ব্লগে এবং ব্লগের বাইরে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে যতদূর বুঝতে পারলাম ইসলামে যে বাল্যবিবাহের পারমিশন দেয়া আছে সেটার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তবে অনেকে বলছেন এটা সুন্নাত, না পালন করলে গুনাহ হবে। কারন সুন্নাতের সংজ্ঞানুসারে তাই আমরা জানি। আবার অনেকেই বলেন বাধ্যবাধকতা নেই, ইহা স্বতঃস্ফূর্ত। এখন ইসলামে স্বতঃস্ফূর্ত যে কোনো টার্ম আছে সেটা সম্পর্কে বিশেষ কেউ বলতে পারেননি। স্বভাবতই আমাদের দেশের মানুষের নিজেদের সম্পর্কে একটা ধারনা আছে যে সে সব জানে। কিন্তু আসলে সে তেমন কিছুই জানে না। তারা সব জানে এটা বলে এই কারনে যে তারা মনে করে তাদের পরিবারে যে ইসলামিক চর্চা হয় এবং পরিবারগত ভাবে তারা যাকে অনুসরন করে ইসলাম শিখেছেন তারাই স হী। যখন ছোটকাল থেকেই এমন একটা কনসেপ্ট মাথায় ঢুকে যায় তখন সেটা থেকে বের হওয়া মুস্কিল। তাছাড়া আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রমাগত শিক্ষার মানের অবনতিও এর একটা বড় কারন। যাই হোক আমরা প্রথমে ইসলামের এই বেসিক জিনিসটা নিয়ে খুব স হী ভাবে আলোচনা করবো রেফারেন্স সহ।
সুন্নত কি?: সুন্নত আসলে আরবী শব্দ সুন্নাহ سنة থেকে আবর্তিত। সুন্নাহ এখানে একবচন, বহুবচনে এর উচ্চারন হলো সুন্নান। সুন্নাহ এসেছে আরবি শব্দ সান্না থেকে যার আভিধানিক অর্থ হলো পরিস্কার এবং স্বচ্ছ সোজা পথ। সেক্ষেত্রে সুন্নাহ বলতে আরবীতে যা বোঝানো হয় সেটার বাংলা করলে আমরা যা পাই আমাদের নবী করিম সাঃ তার জীবদ্দশায় তার কর্মকান্ড, মুখ নিঃসৃত প্রতিটা বানী, অভ্যাস, নীরব সম্মতি সমুহ এবং তার সাহচার্য পাওয়া সাহাবীদিগের তার সম্পর্কে বয়ানসমুহ।
সে হিসেবে সুন্নাহ তিন প্রকারের:
সুন্নাহ কাওলিয়াহ: নবিজী সাঃ এর মুখ নিঃসৃত বানী যেগুলো পরবর্তী সময়ে তাবে তাবেঈনরা লিপিবদ্ধ করেছেন হাদিস হিসেবে
সুন্নাহ ফিইলিয়াহ: নবিজী সাঃ এর ধর্মীয় কর্মকান্ড ও মৌখিক নির্দেশ
সুন্নাহ তাক্রিরিয়াহ: নবিজী সাঃ বিভিন্ন কর্মকান্ডের ব্যাপারে তার সম্মতি সমঝ যেগুলোকে আবার দু ভাগে ভাগ করা যায় প্রথমত: তার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহের বিরোধিতা করেননি বরং চুপ থেকেছেন, দ্বিতীয়ত: তার সঙ্গীর কোনো ঘটনা দেখে তিনি হেসেছেন এবং আনন্দ অনুভব করেছেন।
সুন্নত কোরানের আলোকে:
হাদিস পালন করার ব্যাপারে কোরানের কিছু আয়াত যাদের অর্থ আমি এখান থেকে নিয়েছি:
সূরা নাহল (মক্কায় অবতীর্ণ), আয়াত ৪৪
"প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।"
একই সূরা, আয়াত ৬৪:
"আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদের কে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে। "
সূরা আন-নূর (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৫৪
"বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া।"
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৮০
"যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। "
ওপরের আয়াত সমূহ স্পস্টতই কোরানের পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনাদর্শকে অনুসরন করার ব্যাপারে মত দেয়া হইছে। এখন কেউ যদি হাদিস অমান্য করে তাহলে সে ব্যাপারে বলা আছে:
সূরা আল হাশর (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৭
"আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।"
সূরা আল আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৩৬
"আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। "
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ১১৫
"যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। "
উপরোক্ত আয়াত সমূহ থেকে ইহা প্রতীয়মান যে সুন্নাহ অস্বীকার করার কোনো উপায় মুসলমানদের নেই।
বাল্যবিবাহ কি সুন্নত?:
বাল্যবিবাহ সম্পর্কে বলার আগে বিয়ে সম্পর্কে বলি। আমি নিজেই একেকসময় কনফিউজ হয়ে যেতাম আসলে বিয়ে ফরজ না সুন্নত না ওয়াজিব। কারন বিয়ে সম্পর্কে কোরানেও নির্দেশনা দেয়া আছে, নবিজী সাঃ যেহেতু এটা ভালোভাবেই করেছেন সেহেতু এটা সুন্নতও আবার বিয়ে করা যাবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা আমি পাইছি। তো একটু পড়া লেখার পর বুঝলাম বিয়ে করার মধ্যে ৪ টা কাহিনী আছে:
১) ফরজ: বিয়ে তখনই ফরজ হয়ে যায় তার জন্য যখন উক্ত ব্যাক্তির (মাইয়া পোলা দুইটারই) যৌন চাহিদা এমন বেশী যা মেটাতে হলে হারাম পন্হা অবলম্বন করতে হবে। তার জন্য ফরজ।
"তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। "সূরা আন-নূর (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৩২।
২) কিন্তু কারো যদি যৌনক্ষুধা অতো বেশী না থাকে এবং পাপকার্যে পড়ার ভয় নাই তাহইলে সেটা সুন্নত হয়ে যায় কারন নবিজী সাঃ এটা নিজে করেছেন এবং সবার এই কাজে সম্মতি জানিয়েছেন এবং খুশীও হয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং খাদিজা রাঃ এর বিয়ের উদাহরনের চেয়ে প্রকৃষ্ট কোনো উদাহরন আমার মাথায় আসতেছে না।
৩) যদি কোনো ব্যাক্তির অতো যৌনক্ষুধাও নাই এবং তার সঙ্গীবা সঙ্গিনীর দায়িত্ব পালনের ক্ষমতাও নাই তাহলে তার জন্য বিয়ে হারাম।
৪) যদি কোনো ব্যাক্তির যৌনক্ষুধা আছে কিন্তু সঙ্গী বা সঙ্গিনীর দায়িত্ব পালনে সামর্থ নাই তাহলে তার বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয় এই শর্তে যে সে হালাল পন্থায় রুজি রোজগারের জন্য চেষ্টা করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ এই দুনিয়ায় সবার রিজিকের ব্যাবস্থা করে রেখেছেন এছাড়াও ঐ মুসলিম কম্যুনিটিরও একটা দায়িত্ব হয়ে যায় তার জন্য একটা হালাল কাজ খুজে দেয়া।
(শুকুরআলহামদুলিল্লাহ)
এমনকি হাদিসে এমনও আছে বিয়ের যদি কেউ ইনভাইটেশন নিয়ে আসে তাহলে অবশ্যই যেনো সে দাওয়াত গ্রহন করে নেয়া হয়। এটা খোদ রাসুলুল্লাহ বলেছিলেন, উমার রাঃ এর কন্যা সাইয়েদুনা (রাঃ) উদ্ধৃতানুসারে।
তার মানে দেখা যাচ্ছে বয়ঃসন্ধিতে পৌছানোর পর যদি কোনো ছেলে এবং মেয়ের অতিরিক্ত যৌনক্ষুধা থাকে যার ফলে পাপের রাস্তা ধরার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু তার সামর্থ্য নাও থাকে তাহলে ১ নম্বর অনুসারে তার জন্য বিয়ে ফরজ।
আবার সেই হিসেবে যেহেতু নবিজী সাঃ নিজে হযরত আয়েশা রাঃ তাকে অম্প বয়সে বিয়ে করেছেন সেহেতু এটাকে সুন্নতও বলা যেতে পারে খাস বাংলায়.....
উম্মে ফাদল এবং অন্যান্য:
ইবনে ইসহাকের সীরাত উল রাসুল এর ইংলিশ অনুবাদ বইয়ের ৩১১ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্নিত
"সুহাইলী ii.৭৯: ইউনুস I.I. এর রিওয়াইয়াতে বর্নিত নবী মোহাম্মদ তাকে (উম্মু-ল-ফাদল) দেখলেন যখন সে শিশুবস্থায় তার সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছিলো এবং বললেন যে যদি সে বড় হবার সময় আমি জীবিত থাকি তাহলে তাকে আমি বিয়ে করবো।কিন্তু সে বড় হবার আগেই তিনি মারা যান এবং সুফিয়ান বিন আল আসওয়াদ বিন আব্দুল আসাদ আল মাখযুমিকে বিয়ে করেন এবং তিনি রিজকি ও লুবাবাকে প্রসব করেন।"
পেজের স্নাপশট:
এখানে দেখা যাচ্ছে তিনি যখন ঐ হামাগুড়ী দেয়া শিশুটিকে বিয়ে করতে চান তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ২ বছরের কম এবং তার কয়েক বছর পর মারা গেলে এই শিশুবস্থাতেই তার বিয়ে হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, মুহাম্মদের তৃতীয় কন্যা কুলসুমের বিয়ে হয় মাত্র ৭ বছরে। মারা যান মাত্র ২৭ বছর বয়সে অসুস্থতার কারনে প্রায় বিনা চিকিৎসায়। নবী মোহাম্মদের দ্বিতীয় কন্যা রুকাইয়ার বিয়ে হয় ৮ অথবা ৯ বছর বয়সে এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে অসুস্থতার কারনে মারা যান।
তার মানে দেখা যাচ্ছে বাল্যবিবাহের করাল গ্রাস থেকে কেউ মুক্তি পায় নি যারা গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন বিয়ের পরপরই অল্প বয়সে।
কিন্তু এখানে কিছু প্রশ্ন আছে:
*** ইসলাম অনুসারে ছেলেদের শুধুমাত্র তালাক দেয়ার ক্ষমতা আছে আর মেয়েরা সেপারেশন হবার জন্য আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে অল্প বয়স্কা মেয়েকে যদি অনেক প্রৌঢ় ব্যাক্তি বিয়ে করে এবং তার জ্ঞান বুদ্ধির পরিপক্কতা আসার আগেই মারা যান তাহলে কি হবে? তার দায়িত্বই বা কে নেবে?
এক্ষেত্রে ইসলামী স্কলাররা নানা মত দিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহন যোগ্য যে মতগুলো সেগুলো বলি:
ইবনে আব্দ আল বার রাঃ (আল তামহীদ ১৯/৯৮) এর মতে:
একজন পিতা তার নাবালিকা কন্যার বিয়ের ব্যাপারে কন্যার অনুমতি না নিয়েই বিয়ের আয়োজন করতে পারেন। এক্ষেত্রে কন্যা বয়ঃসন্ধিতে এসেছে কিনা সেটার দরকার নাই। তবে পিতার কাছে তার জন্য একটা ভালো কারন থাকতে হবে। কারন হযরত আয়েশা রাঃ এর বিয়ে হয়েছিলো ৬ বছর বয়সে যখন তিনি বয়ঃসন্ধিতে আসেননি।
আবার আল তামহীদের ১৯/৮৪ তে ইসমাঈল ইবনে ইস হাক রাঃ বলেছেন:
একজন পিতা তার নাবালিকা কন্যার অনুমতি নিয়েই তার বিয়ের আয়োজন করতে পারেন, তার বয়ঃসন্ধি আসুক না আসুক।
ইবনে শুবরুম্মাহ আবার এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষন করেছেন:
নাবালিকা কন্যার বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কাউকে উৎসাহিত করা হয় নি যদি না তাতে কোনো স্বচ্ছ এবং যুক্তিযুক্ত লাভ নিহিত না থাকে। একই কথা নাবালক ছেলের জন্যও খাটে। কিন্তু নিয়মটা বেশী জোর দেয়া হয়েছে মেয়ের ক্ষেত্রে কারন ইসলাম অনুসারে তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র ছেলেদের।
ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা করেন আল নাওয়ায়ি রাঃ যিনি আশ শাফির উদ্ধৃতি টেনে বলেন:
কন্যার দাদা বা বাবা তার নাবালিকা কন্যা বা কুমারী কন্যার (যতদিন না বয়ঃসন্ধিতে না পৌছায়) বিয়ের আয়োজন ততক্ষন করতে পারবেন না যতক্ষন না ঐ কন্যা নিজের বিয়ের ব্যাপারে এটাকে ফাঁদ মনে করে বা সম্মতি না দেয়। তবে আয়েশা রাঃ এর ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে সেটা হলো আয়েশা রাঃ এর অভিভাবকগন তার বিয়ে দিতে পারতো না যতক্ষন এর মধ্যে কোনো যুক্তিযুক্ত লাভ বা কারন না থাকতো। এখানে যুক্তিযুক্ত কারন বলতে এমন কারনকে বোঝানো হয়েছে যে যদি আয়েশা রাঃ এর ঐ সময় বিয়ে না হতো তাহলে সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যেতো বা দেরী হয়ে যেতো। এখানে সুযোগ বা যুক্তিযুক্ত লাভের কথা এটাই বলা হয়েছে যে আয়েশা রাঃ এর বাবা নবিজী সাঃ কে উপযুক্ত মনে করেছিলেন তার হাতে তার কন্যার উপযুক্ত দেখভাল হবে। তার প্রতি কোনো অবজ্ঞা বা অসম্মান হবে না।(স হীহ মুসলিম ৯/২০৬)
কিন্তু কথা হলো নবিজী সাঃ আমাদের কাছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাই তার কাছে যেকোনো ব্যাক্তির কন্যা নিরাপদেই থাকবে। তাই বলে বাকী ক্ষেত্রে তো সেটা হবে না। এটার কথা মাথায় রেখে পরবর্তীতে আলেমরা (শায়খ আল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ উদ্ধৃত করেছেন ইবনে শুবরুম্মাহ রাঃ থেকে)যে মত দেন যে মেয়ের বয়স ৯ বা বয়ঃসন্ধি না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেয়া যাবে না। এখন আমরা যদি বলি যে তার সম্মতি আছে, সেক্ষেত্রে বলা যায় যে তার সম্মতি ধর্তব্যের মধ্যে পড়বে না কারন তার এই অল্প বয়সের সম্মতিতে কিছু যায় আসে না। আবার সে যখন বয়ঃসন্ধিতেও পৌছাবে তার ওপর জোর জবরদস্তিও করা যাবে না তবে যদি সে রাজী থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে তার অমতে দারিদ্র, নিরাপত্তা তাংফাং এর কারন দেখিয়ে জোর করা হয় তাহলে সেটাও গ্রহন যোগ্য হবে না। কারন সন্তানের নিরাপত্তা, ভরনপোষনের দায়িত্ব তাদের অভিভাবকের।
এখন তারপরও যদি বিয়ের এসব শর্ত পূরন হয় মেয়ের সম্মতি নিয়েও তখন দেখতে হবে যে বরের বয়স কত এবং যদি ভয় থাকে যে মেয়ে সাবালিকা হবার পূর্বেই তার মৃত্যু হতে পারে তখন মেয়েটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে যেটা দেখা যায় তার অভিভাবকত্ব চলে যায় বরের ভাই দের ওপর, এবং তাদের ই মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াসনেস নাও থাকতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে বিয়ে দেয়ার শর্তাবলী পূরন করে না। কিন্তু যদি মেয়ের সম্মতিতে ভালো পাত্র পাওয়া যায় যার মধ্যে এসব কোনো অনিশ্চয়তা নেই সেক্ষেত্রে বিয়ে দেয়া যেতে পারে।
কিন্তু মেয়ে যদি বলে বসে যে সে রাজী না তাহলে কোনো মতেই তাকে বিয়ে দেয়া যাবে না এবং ব্যাপারটা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তখন আল্লাহই তার ভাগ্য ঠিক করে দেবেন। দেখা গেলো ঐ পাত্রের অবস্থা পরে পরিবর্তনও হয়ে গেলো অথবা আল্লাহ আরও ভালো পাত্র তার জন্য এনে দিলো কারন সবকিছুই তো আল্লাহর হাতে। (আশ শারহ্ আল মুমতি, ১২/৫৭-৫৯)
আবার আশ শারহ্ আল মুমতি, ১২/৫৩ অনুসারে ছেলের বয়ঃসন্ধি হওয়ার আগে তার বিয়ে দেয়া যাবে না।
এছাড়া অন্যান্য আলেমেরা যত মত দিয়েছেন সবাই মেয়ের সম্মতি, এবং বয়ঃসন্ধির ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন।
তার মানে দেখা যাচ্ছে বাল্যবিবাহকে আমরা যদি সুন্নত হিসেবেও দেখি তাহলে বেশ কিছু শর্ত আছে আমরা যদি প্রায়োরিটির ক্রম অনুসারে সাজাই:
১) কন্যার কি বয়ঃসন্ধি হয়েছে?
ক) তাহলে পাত্র কি মহানবী সাঃ এর মতো আদর্শবান এবং তার কন্যা কি শংকামুক্ত?
আমার মনে হয় না এরকম পাত্র পাওয়া মুশ্কিল এবং কারো মনে যদি উল্টা পাল্টা চিন্তা না থাকে তাহলে এ রাস্তায় না যাওয়ার ব্যাপারেই তৎকালীন তাবেঈ তাবেঈনরা মত দিয়েছেন।
২) কন্যার বয়ঃসন্ধী হলে, কন্যার কি মত আছে?
যদি না থাকে তাহলে বিয়ের সকল কার্যক্রম বাদ। এ নিয়ে এতটুকু জোর করা যাবে না
৩) যদি কন্যার মত থাকে তাহলে পাত্র যে সে কি উপযুক্ত?
উপযুক্ত বোলে তো তার বার্ধক্যজনিত সমস্যা হতে পারে কিনা সাবালিকা হবার আগ পর্যন্ত? যদিও জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে, তাই যদি হয়েও যায় তাহলে তার ভাইদের উপযুক্ততা এবং মনোভাব কি?
যদি এগুলো নিয়ে সামান্য তম সন্দেহও থাকে তাহলে ঐ পাত্র বাদ। উপযুক্ত পাত্রের জন্য অপেক্ষা করা উচিত অথবা কন্যা যদি একান্তই চায় তাহলে বিয়ের ব্যাপারে এগুনো যেতে পারে।
৪) পাত্র যদি উপযুক্ত হয় তাহলে বিয়ের আয়োজন করা যেতে পারে ইসলামিক তরিকা অনুসারে।
পাত্রের উপযুক্ততা নিয়ে উপরে যে চারটি অপশন দেয়া আছে সেগুলো দ্রষ্টব্য!
তাহলে আমরা কি সিদ্ধান্ত নিতে পারি?
১) আমার মনে হয় উপরোক্ত আলোচনা থেকে এতটুকু ক্লিয়ার যে হযরত আয়েশা রাঃ এর যে বিয়ে সেটা একটা বিশেষ অবস্থা। যেহেতু আমরা মুসলান আল্লাহ এবং তার প্রেরিত রাসুল সাঃ এর ওপর নিঃশর্ত বিশ্বাস সেহেতু আমরা এই বিয়েটাকে সেই হিসেবেই দেখবো। নাস্তিকরা যাই বলুক, কারন তারা যে উত্তর চায়, সেই উত্তর গ্রহন করার মতো প্রথম যে শর্ত: আল্লাহ এবং তার রাসুল সাঃ কে বিশ্বাস করতে হবে সেটাই তারা পূরন করতে পারছে না। তাই নাস্তিকদের শিশুকাম বা হাবিজাবী কথা কানে না দেয়াই উচিত।
২) মেয়ের বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এরপরে মেয়ে যদি বিয়ের ব্যাপারে সম্মতি দেয় এবং সেরকম উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যায় তবেই কেবল বিবাহের আয়োজন করা যেতে পারে।
৩) মেয়ের সম্মতি না থাকলে যত সমস্যাই থাকুক, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবার রিজিক এবং জান মালের নিরাপত্তা প্রদান কারী।
৪) মেয়ের অসম্মতিতে যেকোনো বয়সের যে কোনো বিবাহ ইসলাম মতে অবৈধ!
তার মানে যদি যৌনক্ষুধা নিবারনের তাড়নায় পাপ কাজে প্রলুব্ধ না করে এবং সঙ্গি বা সঙ্গিনীর প্রতি কর্তব্য পালনের সামর্থ্য না থাকে এই কন্ডিশন ব্যাতীত যেকোনো বয়ঃসন্ধি প্রাপ্ত ছেলে বা মেয়ের সম্মতিতে বিয়ে দেয়াটা সুন্নাত, ক্ষেত্রবিশেষে ফরজও!
বিঃদ্রঃ: লেখায় যেকোনো প্রকার ত্রুটি বা ভুল হলে বলবেন, আমি শুধরে নেবো এবং আমার ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী কারন তিনি সর্বজ্ঞানী এবং দয়ালু! আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান ধারনের তৌফিক দিন আমিন!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:১৯