পশ্চিমাবিশ্বে বাল্যবিবাহ নিয়ে খুব একটা হৈ চৈ দেখা যায় না কারন এখানে একেতো পারিবারিক বন্ধ শিথিল তার ওপর যখন কৈশোরে পদার্পন করে তখন তারা জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিক সেটা তারা চায় না। তার ওপর শারিরীক সক্ষমতা, ক্যারিয়ার এসব নানা দিক ভেবে প্রায় সবদেশেই ১৮ এর কাছাকাছি রাখা হয়েছে। অনেক পশ্চিমা উন্নত দেশে এটাকে ১৬ তেও রাখা হয়েছে। এর নীচে তারা মনে করে বিয়ে করাটা ঠিক না। যদিও তাদের এজ অব কনসেন্ট ১৪ তেই দিয়ে দেয়া হয়। তবে এখানে একটা সূক্ষ্ম ব্যাপার আছে। যার সাথে যৌনতায় মিলিত হবে তাকেও তার বয়সের আশেপাশেই হতে হবে এবং যদি কিশোরী মনে করে তার সম্মতিতে করা হয় নি, তাহলে যতদিন পরেই হোক আইনের সাহায্য নিতে পারে। হাজার হোক টিনেজ বয়স, ভালো বুঝানো হলে আর প্রেসার দিলে সবই সেদিকে বুঝে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে তারা বয়স ৯ হতে শুরু করে ১২ বছরের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দেয়। দেখা গেলো যারা বিয়ে করছেন সেই পুরুষটির বয়ষ ২৫, ৩০ কখনোবা ৪০। ৩০,৪০ বছরের পুরুষ যদি ৯ বছরের কন্যাকে বিয়ে করে সেটা শুনতেও উদ্ভট শোনায়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র দেশ হলেই জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারিতেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি হলেও ৪৫ বছর পর তা এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ১৬ কোটিতে। আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে লাগাম ধরতে পারলেও জনসংখ্যার বিস্ফোরন ঠেকাতে পারিনি। বলা হয় কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ (যার ফলে অধিক সন্তান গর্ভ ধারন), শিক্ষার অভাব ইত্যাদি এজন্য দায়ী। তবে এটা ঠিক দক্ষিন এশিয়ায় সর্বোচ্চ বাল্যবিবাহের হার বাংলাদেশেই। সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্বেও বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না।
সাধারন জন গনের মধ্যে একটা চিন্তা বসবাস করে যে মেয়ের বয়ঃসন্ধী হলেই তাকে বিয়ে করা যায়, গর্ভবতীও করা যায়। মেয়েরা যেনো সন্তান বানানোর মেশিন। আর তাই অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ের বাজার এদেশে বেশ রমরমা এবং যারা পচিশোর্ধ্ব তাদের বাজার পড়তির দিকে। অনেকে আবার এটাও বলে বাংলাদেশের মেয়েরা এখন অল্প বয়সেই যৌনচর্চা করছে, ফলে যেহেতু তাতে তাদের সমস্যা হচ্ছে না সেহেতু বিয়ে দিলে কি সমস্যা?
তবে সকল কিছুর মূলে একটা ধর্মীয় দিক আছে। ইসলামের শেষ নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) যখন তার বয়স ২৫ ছিলো তখন ৪০ বছরের নাম্নী হযরত খাদেজা (রাঃ) বিয়ে করেছিলেন। এরপর আরো বিয়ে করলেও যখন তিনি ৫১ বৎসর বয়সে উপনীত হন তখন তিনি ৬ (মতান্তরে ৯) বছর বয়সী হযরত আয়েশা (রাঃ) বিয়ে করেছিলেন। যেহেতু নবিজী (সাঃ) করা সব কাজই আমল করা মুসলমানদের সুন্নতী আমলের মধ্যে সেহেতু অনেকেই এই বাল্যবিবাহের পেছনে এডভোকেসী করেন। আবার মুসলমানদের মধ্যে এমন একটা অংশ আছেন যারা যুক্তি দিয়ে বিশ্বাস করেন যে আয়েশা (রাঃ) বিয়ের বয়স সম্পর্কিত হাদিস টি মিথ্যা। এই ব্যাপারেও কিছু মতভেদ আছে।
আমি এর আগে বাল্যবিবাহ নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলামযেখানে ইসলামের এটা সিদ্ধ কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো এবং সেই একই পোস্টে বিজ্ঞান অনুযায়ী এই বাল্যবিবাহ কি আসলেই ক্ষতির কারন সেটা নিয়েও লিখেছিলাম। লেখার পর বুঝতে পারলাম আসলে এত বিশাল একটা ব্যাপার নিয়ে এক পোস্টে লেখা ঠিক হয় নি। এত বড় বিশালত্বের পরিসরে আলোচনা যেমন ফলপ্রসূ হয়নি তেমনি এর আলোচনার পরিণতিও খুব একটা সুখকর হয় নি। সেটা বিবেচনা করেই এই বাল্যবিবাহ ব্যাপারটা আমি দুভাগে ভাগ করি। আজ হলো তার প্রথম ভাগ এখানে আমরা শুধু আলোচনা করবো ইসলাম ধর্মে সত্যিকারার্থেই বাল্যবিবাহ সমর্থন করে কিনা? হযরত আয়েশা (রাঃ) যখন বিবাহ করেন তখন তার বয়স কত ছিলো এবং হাদিসটা কি আদৌ জাল না সহী?
এসব কথা মাথায় রেখে আমি আমার পোস্ট দু ভাগে ভাগ করি। প্রথমে আমি শুধু কোরানের কোটেশন দিয়ে দেখার চেষ্টা করবো আসলে কোরানে কি বলা আছে বর্ননায় এবং বিধি নিষেধের আমলে। পরের অংশে আমরা আসবো হাদিস পর্যালোচনায়। আশা করি পোস্টের কমেন্টে ব্যাক্তিগত বা ধর্মীয় আক্রমন ব্যাতিরেকে উপযুক্ত রেফারেন্স দিয়ে কথা বলবো যাতে সবাই আমরা আলোকিত হতে পারি আসলে ইসলামে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে কি বলেছে!
কোরানের আলোকে:
আমি এখানে আরবী গুলো কপি করো না, শুধু বাংলাতে তার অর্থ লিখবো অনুবাদকের সুত্র সহ। আপনারা আরও অনুবাদকের সম্মিলন ঘটাতে পারেন। আমি বাংলা অর্থ নিছি আমি এখান থেকে। আর আরবী অর্থ করছি গুগল ট্রান্সলেটর আর আমার অনুর্বর মাথা থেকে।
১) সূরা আল আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৪৯
"মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নাই। অতঃপর তোমরা তাদেরকে কিছু দেবে এবং উত্তম পন্থায় বিদায় দেবে। "
এই আয়াতে বলা হইছে তালাকের জন্য ইদ্দতের সময় দরকার সেসব স্ত্রীদের যারা বিয়ের পর যৌনসংসর্গে লিপ্ত হইছে স্বামীর সাথে। তাদের দরকার নেই যারা যৌনসংসর্গে লিপ্ত হয় নাই।
২) সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৪
"তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।"
এটার আরবী উঠায় দেই, কারন আরবীতে একটু ক্যাচাল আছে:
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُوْلَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
প্রথম অংশে: يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ এর অর্থ আভিধানিক অর্থ যতদূর খুইজা পাইলাম গুগল করে যাদের ঋতুঃ অতিশীঘ্র চালু হবে। যদি বিশ্বাস না করেন তাইলে গুগল ট্রান্সলেটে চীপা মারেন তাইলে আপনেও আরবী জেনে যাবেন। যাই হোক আপনারা অন্য ট্রান্সেলেশনে যেতে পারেন।
দ্বিতীয় অংশে: وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ এর মানে হলো আভিধানিক অর্থ খুজলে বুঝবেন যে এখনো নোংরা(stain) করে নাই। এখন মেয়েদের দুই সময়ে পিরিয়ড হয় না, এক হইলো বয়স না হইলে আরেক হইলো প্রেগন্যান্ট থাকলে। কিন্তু প্রেগন্যান্টের কথা পরে বলা হইছে। যেহেতু কোরান সাহিত্যের ভাষায় লেখা সেহেতু এটাই বুঝানো হইছে বলে মনে হচ্ছে।
তার মানে এই আয়াত অনুসারে যাদের পিরিয়ড শুরু হয় নাই তাদেরকে বিয়ের পর তালাক দিতে চাইলে কি করা উচিত সেটা বলা হইছে কিন্তু আয়াতানুসারে এই পিচ্চি মেয়েদের বিয়ে করতে মানা করে নাই বা করার জন্য আদেশ উপদেশও নাই! খেয়াল কইরা।
এখন আসেন আমরা واللائي لم يحضن" فعدتهن ثلاثة أشهر এইটা নিয়া আরেকটু গভীরে যাই:
وَ মানে 'এবং', وَاللَّائِي মানে হইলো "এবং যারা', لَمْ মানে হইলো 'না did not (অতীত কাল)', يَحِضْنَ মানে হইলো মেয়েদের মাসিক, পিরিয়ড যেটা বলেন, حيض মানে হইলো মাসিক করা, কিন্তু এই শব্দটার সাথে কিছু প্রিফিক্স সাফিক্সের ব্যাপার আছে ওগুলা ভালো কইরা খেয়াল করলে বুঝবেন এর অর্থ মূলত স্ত্রী লিঙ্গ, ব হুবচন, থার্ড পার্সন পার্সপেক্টিভে বলা হইছে। সাথে লামের কাহিনী আগেই বলছি।
তার মানে বুঝা যাইতেছে যে ঐ ধরনের স্ত্রীলোক যাদের মাসিক হয় নাই (অতীত কালে)। তার মানে لَمْ يَحِضْنَ এইটার অর্থ আভিধানিক ভাবে বলা যাইতে পারে এখনও মাসিক হয় নাই এমন কিছু। কারন এই "এখনও হয় নাই" এটা ছাড়া একটা মেয়ের আর কিই বা হতে পারে (ভাষাগত কমনসেন্স)! বিশ্বাস না হইলে যারা আরবী ভাষা নিয়া গবেষনা করে তাগো জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।
আপনার ইচ্ছা করলে ইবনে আব্বাস, ইবনে খাতির, আল ওয়াহিদির মতো ভাষাবিদকে অনুসরন করতে পারেন।
এতক্ষন আমি যেটা বললাম সেটা হলো বাল্যবিবাহের পক্ষে যারা কোরানিক প্রমানের কথা বলেন তাদের কথা, কিন্তু যারা কোরান অনুসারে মনে করে বাল্যবিবাহে ইসলামে মানা তারা নীচের আয়াতের কথা বলে:
وَابْتَلُواْ الْيَتَامَى حَتَّىَ إِذَا بَلَغُواْ النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُواْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَلاَ تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَن يَكْبَرُواْ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُواْ عَلَيْهِمْ وَكَفَى بِاللّهِ حَسِيبًا
"আর এতীমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। এতীমের মাল প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ করো না বা তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যারা স্বচ্ছল তারা অবশ্যই এতীমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকবে। আর যে অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ খেতে পারে। যখন তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যার্পণ কর, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য আল্লাহই হিসাব নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট। "
এই আয়াতে বলা আছে বিয়ের বয়স। যারা বাল্যবিবাহের বিপক্ষে তাদের যুক্তি হলো النِّكَاحَ যেখানে এর লিটারাল অর্থ হলো যৌনসঙ্গম (ঢিকটিং ডিসটিং!) অনেকে হয়তো বলবেন কুটিকালে হিন্দি ছবি নিকাহ দেখছিলেন যারা অর্থ হইলো বিয়া। ভাইসু! আরবীতে বিয়ার শুদ্ধ আরবী زواج জুয়াজ।
কথা হইলো এই আয়াতে বিয়া নিয়া খুব একটা আলোচনা করা হয় নাই, আলোচনা করা হইছে এতিমের গার্ডিয়ানশীপ নিয়া। এখানে বলা হইছে যে মোটামোটি যৌনসংসর্গের ধারনা হইলেই সে বিয়ার জন্যউপযুক্ত কথাটা পাল্টাপাল্টিই ধরতে গেলে।কিন্তু এইখানে বয়স নিয়া কুনো বাতচিত নাই। তবে অনেক তাফসীর কারী এই বয়সটাকে বয়ঃসন্ধির সময় ভাবতেই ভালোবাসেন।
এখন আমরা ফিরে আসি সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৪ এ যেখানে একটা শব্দ আছে সেটা হলো مِن نِّسَائِكُمْ (মিন নিসা-কুম) এখানেবাল্যবিবাহের যারা বিপক্ষেতারা এই নিসার মানে বলতে চান প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদেরকে, অল্প বয়সী মেয়েদের না। কোরানে এই নিসার আরো অনেক ব্যাব হার আছে যেগুলোর অর্থ ঐ প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদেরকে বোঝানো হইছে। কিন্তু যদি এইটা সত্যি কোরানের গ্রামাটিক্যাল ব্যাপারে বড় একটা প্রশ্নের পয়দা হয়। যাই হোক আমরা নিসা ব্যাব হ্রত আরো কিছু আয়াত দেখি:
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ) আয়াত ৪৯
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوَءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءكُمْ وَفِي ذَلِكُم بَلاء مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ), আয়াত ১২৭
وَقَالَ الْمَلأُ مِن قَوْمِ فِرْعَونَ أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءهُمْ وَنَسْتَحْيِـي نِسَاءهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ
ফেরাউনের সম্প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার সম্প্রদায়কে। দেশময় হৈ-চৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য। সে বলল, আমি এখনি হত্যা করব তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর প্রবল।
একই সূরার ১৪১ নম্বর আয়াত:
وَإِذْ أَنجَيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَونَ يَسُومُونَكُمْ سُوَءَ الْعَذَابِ يُقَتِّلُونَ أَبْنَاءكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءكُمْ وَفِي ذَلِكُم بَلاء مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদেরকে ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছি; তারা তোমাদেরকে দিত নিকৃষ্ট শাস্তি, তোমাদের পুত্র-সন্তানদের মেরে ফেলত এবং মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখত। এতে তোমাদের প্রতি তোমাদের পরওয়ারদেগারের বিরাট পরীক্ষা রয়েছে।
সূরা ইব্রাহীম (মক্কায় অবতীর্ণ) আয়াত ৬
যখন মূসা স্বজাতিকে বললেনঃ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দেন। তারা তোমাদেরকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দিত, তোমাদের ছেলেদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের মেয়েদেরকে জীবিত রাখত। এবং এতে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা হয়েছিল।
সূরা আল-মু’মিন (মক্কায় অবতীর্ণ), আয়াত ২৫
فَلَمَّا جَاءهُم بِالْحَقِّ مِنْ عِندِنَا قَالُوا اقْتُلُوا أَبْنَاء الَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ وَاسْتَحْيُوا نِسَاءهُمْ وَمَا كَيْدُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ
অতঃপর মূসা যখন আমার কাছ থেকে সত্যসহ তাদের কাছে পৌঁছাল; তখন তারা বলল, যারা তার সঙ্গী হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা কর, আর তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখ। কাফেরদের চক্রান্ত ব্যর্থই হয়েছে।
মোটামোটি এই আয়াত গুলাতেই নিসা ব্যাব হ্রত হইছে। এখন কথা হলো এইলো এই নিসা বলতে কি সত্যি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরকেই বোঝানো হইছে নাকি ঋতুবর্তী মেয়েদের বোঝানো হইছে এইটা নিয়া একটু আলোচনা করা যেতে পারে। এখন আপনি রেফারেন্স কোনটা ধরবেন? কোরানের বাইরে সাধারন মানুষের মুখের ভাষা, কিন্তু সমস্যা হলো কোরানিক আরবী এখন আর কোথাও ব্যাবহার হয় না। সবাই যে আরবী ভাষায় কথা বলে তাও বর্তমানে আন্ঞ্চলিক ভাবে ভিন্নতর অনেকটা বাংলার আন্ঞ্চলিক ভাষার মতো। কোরানিক ভাষা ঐ সময়ের পর ব হুবার বিবর্তিত হইছে।
তো কোরান নিয়ে আরও ঘাটাঘাটি করলে নিসা সম্পর্কে একটু পরিস্কার ধারনাও পাওয়া যেতে পারে:
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ১২৭
وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاء قُلِ اللّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ وَمَا يُتْلَى عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ فِي يَتَامَى النِّسَاء الَّلاتِي لاَ تُؤْتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُونَ أَن تَنكِحُوهُنَّ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَأَن تَقُومُواْ لِلْيَتَامَى بِالْقِسْطِ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللّهَ كَانَ بِهِ عَلِيمًا
তারা আপনার কাছে নারীদের বিবাহের অনুমতি চায়। বলে দিনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অনুমতি দেন এবং কোরআনে তোমাদেরকে যা যা পাট করে শুনানো হয়, তা ঐ সব পিতৃহীনা-নারীদের বিধান, যাদের কে তোমরা নির্ধারিত অধিকার প্রদান কর না অথচ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার বাসনা রাখ। আর অক্ষম শিশুদের বিধান এই যে, এতীমদের জন্যে ইনসাফের উপর কায়েম থাক। তোমরা যা ভাল কাজ করবে, তা আল্লাহ জানেন।
এখানে নিসা বলতে বোঝানো হইছে:
১) এতিম
২) কৈশোরী
৩) যাদের বিয়ে করতে চাও
৪) নবজাতক
আবার উপরের সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৪ এ ফিরে আসি যেখানে ইদ্দতের কথা বলা হইছে কিন্তু যৌনসংসর্গের কথা বলা হয়নি। এই ব্যাপারে আমরা সূরা আল আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণ), ৪৯ নম্বর আয়াতে ফিরে আসি। এখানে ইদ্দাহর কথা বলা হইছে তবে যৌনসংসর্গের কথা বলা হয় নাই। তার মানে বিয়া করা যায়।
এখন আসি হাদিসে:
হাদিস অনুসারে সবচেয়ে সহী হাদিস হযরত আয়েশা (সাঃ) নিজে ব্যাক্ত করা হাদিস:
Volume 7, Book 62, Number 65, bukhari:
Narrated 'Aisha:
that the Prophet married her when she was six years old and he consummated his marriage when she was nine years old. Hisham said: I have been informed that 'Aisha remained with the Prophet for nine years (i.e. till his death)." what you know of the Quran (by heart)'
তবে এই হাদিস নিয়ে আধুনিক সন্দেহবাদীরা অনেক হিসেব নিকেশ করে এটাকে ভুল প্রমান করতে চান। তাবাকাত অনুসারে আয়েশা (রঃ) এর পিতার ভাষ্যমতে মুহম্মদ (সাঃ) এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসার আগে থেকেই আয়েশা রাঃ এর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। আবার ইসাবা অনুসারে নবিজী সাঃ এর নব্যুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে আয়েশা রাঃ এর জন্ম তাই ধরে নেই যে ৫১ বছর বয়সে যদি বিয়ে হয় তাহলে কমপক্ষে হযরত আয়েশা রাঃ এর বয়স হবে ন্যুনতম ১০ কি এগারো। এবং যেহেতু স হবাস প্রায় ৫ বছর পর হয় তাহলে তার বয়স হবে ১৬।তালাকাতে হিজরী সনের হিসাব দেখিয়েও এটাই প্রমান করা হয়েছে যে তার বিয়ে ন্যুনতম ১০ আর স হবাস হয়েছিলো ১৬ তে। পরে আরো অনেক ইসলামিক গবেষক এবং ইতিহাসবিদ আয়েশা রাঃ এর বড় বোন আসমা রাঃ এর মৃত্যু সময় ধরে হিসাব করে দেখেছেন তখন আয়েশা রাঃ এর বয়স হতে পারে ১৮ কি ১৯।
এই হিসাবগুলোর যাবতীয় রেফারেন্স পাবেন এখানে। যদি এটাই হয় তাহলে একটা গুরুত্বপূর্ন হাদিস জঈফ হাদিসে পরিনত হবে এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) অনেক হাদিস এরকমভাবে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাড়াবে। যদি তাই হয় তাহলে কোরানের নির্দেশিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী মানে হাদিস নিয়ে বড় ধরনের সন্দেহ প্রবনতা আর বিতর্কের সৃষ্টি হবে।
এই ব্লগে ঠিক এই বিষয়ে খুব সুন্দর সুন্দরলেখা আছে।
কিন্তু আরো অনেক স হী হাদিস আছে যেখানে বাল্যবিবাহের ব্যাপারে সরাসরি সম্মতিমূলক নির্দেশনা আছে:
Book 008, Number 3309 বুখারী:
'A'isha (Allah be pleased with her) reported: Allah's Messenger (may peace be upon him) married me when I was six years old, and I was admitted to his house at the age of nine. She further said: We went to Medina and I had an attack of fever for a month, and my hair had come down to the earlobes. Umm Ruman (my mother) came to me and I was at that time on a swing along with my playmates. She called me loudly and I went to her and I did not know what she had wanted of me. She took hold of my hand and took me to the door, and I was saying: Ha, ha (as if I was gasping), until the agitation of my heart was over. She took me to a house, where had gathered the women of the Ansar. They all blessed me and wished me good luck and said: May you have share in good. She (my mother) entrusted me to them. They washed my head and embellished me and nothing frightened me. Allah's Messenger (, may peace be upon him) came there in the morning, and I was entrusted to him.
Book 008, Number 3310 বুখারী:
'A'isha (Allah be pleased with her) reported: Allah's Apostle (may peace be upon him) married me when I was six years old, and I was admitted to his house when I was nine years old.
Book 008, Number 3311 বুখারী:
'A'isha (Allah be pleased with her) reported that Allah's Apostle (may peace be upon him) married her when she was seven years old, and he was taken to his house as a bride when she was nine, and her dolls were with her; and when he (the Holy Prophet) died she was eighteen years old.
Book 29, Number 29.33.108, বুখারী:
108 Yahya related to me from Malik that he had heard that the Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace, visited Umm Salama while she was in mourning for Abu Salama and she had put aloes on her eyes. He said, "What is this, Umm Salama?" She said, "It is only aloes, Messenger of Allah." He said, "Put it on at night and wipe it off in the daytime."
Malik said, "The mourning of a young girl who has not yet had a menstrual period takes the same form as the mourning of one who has had a period. She avoids what a mature woman avoids if her husband dies."
Malik said, "A slave-girl mourns her husband when he dies for two months and five nights like her idda.''
Malik said, "An umm walad does not have to mourn when her master dies, and a slave-girl does not have to mourn when her master dies. Mourning is for those with husbands."
তবে আপনারা যারা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ৬ বছরের আয়েশা (রাঃ) বিয়ে করার ব্যাপারে মানতে পারেন না এই ব্লগ গুলোপড়ে দেখতে পারেন।
উম্মে ফাদল এবং অন্যান্য:
ইবনে ইসহাকের সীরাত উল রাসুল এর ইংলিশ অনুবাদ বইয়ের ৩১১ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্নিত
"সুহাইলী ii.৭৯: ইউনুস I.I. এর রিওয়াইয়াতে বর্নিত নবী মোহাম্মদ তাকে (উম্মু-ল-ফাদল) দেখলেন যখন সে শিশুবস্থায় তার সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছিলো এবং বললেন যে যদি সে বড় হবার সময় আমি জীবিত থাকি তাহলে তাকে আমি বিয়ে করবো।কিন্তু সে বড় হবার আগেই তিনি মারা যান এবং সুফিয়ান বিন আল আসওয়াদ বিন আব্দুল আসাদ আল মাখযুমিকে বিয়ে করেন এবং তিনি রিজকি ও লুবাবাকে প্রসব করেন।"
পেজের স্নাপশট:
এখানে দেখা যাচ্ছে তিনি যখন ঐ হামাগুড়ী দেয়া শিশুটিকে বিয়ে করতে চান তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ২ বছরের কম এবং তার কয়েক বছর পর মারা গেলে এই শিশুবস্থাতেই তার বিয়ে হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, মুহাম্মদের তৃতীয় কন্যা কুলসুমের বিয়ে হয় মাত্র ৭ বছরে। মারা যান মাত্র ২৭ বছর বয়সে অসুস্থতার কারনে প্রায় বিনা চিকিৎসায়। নবী মোহাম্মদের দ্বিতীয় কন্যা রুকাইয়ার বিয়ে হয় ৮ অথবা ৯ বছর বয়সে এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে অসুস্থতার কারনে মারা যান।
তার মানে দেখা যাচ্ছে বাল্যবিবাহের করাল গ্রাস থেকে কেউ মুক্তি পায় নি যারা গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন বিয়ের পরপরই অল্প বয়সে।
অনেকেই বলতে পারেন তখনকার আমলে বাল্যবিবাহের চল ছিলো তাই ইসলাম এই ব্যাপারটাকে নিষেধ না করে একটা নিয়মের মধ্যে এনেছে মাত্র। কিন্তু সর্বোপরী ইসলামে যে বাল্যবিবাহের ব্যাপারে সম্মতি দেয় এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই
যদি সন্দেহ থাকে বা কিছু বলার থাকে তাহলে আমার মনে হয় কমেন্টে এই ব্যাপারে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনা করা যেতে পারে।
বিঃদ্রঃ আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য এটা নয় যে বাল্যবিবাহ খারাপ না ভালো। পোস্টের বিষয়বস্তু ইসলাম বাল্যবিবাহ সমর্থন করে কি না!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২০