প্রথমেই বইলা নেই, আমি ডাক্তার না। পোলাপান বয়সে ছাত্ররা যখন বায়োলজী পড়ছে আমি তখন সিস্টেমের ফাঁক গলে তখন ইটা বাদ দিয়া কৃষি শিক্ষা, উচ্চতর গনিতে বাইপাস করছি। তবে জীব বিজ্ঞান আর মানুষের শারীরিক এনাটমি নিয়া আমার আগ্রহের অন্তঃ নাই।
সামু কয়দিন ধইরা একটা পোস্ট ঝুলাইছেযেইখানে জন্মবিরতিকরন পিলের সর্বনাশা সাইড এফেক্ট নিয়া লেখা হইছে। পোস্ট পইড়া নানা মানুষের অভিযোগ যে পোস্ট টা অনেকটা পুরুষবিরোধী। আসলে আমি এই ক্যাচালে যাইতে চাই না। কারন আমি একে নারীবাদী কিন্তু তাই বইলা এই নয় যে নারী নারী হইছে বইলা সব জায়গায় নারীত্ব দেখাইয়া ডিসকাউন্ট, প্রোয়োরিটি নিবো, নিজেগো নবী রাসূল গো মতো নিস্পাপ দাবী করবো আর পুরুষ পয়দা হইয়া বড় হইলেই ইতায় ইবলিশ, নারী পেটায়, এরে কোনো সুযোগ দেয়া যেইবো না এইটা আমি বিশ্বাস করি না। যাই হোক পোস্টের বিষয় বস্তু এইটা না।
জন্ম বিরতিকরন পিল:
জন্ম বিরতিকরন পিল কেমনে কাজ করে সেইটা আগে বুঝি। মেয়ে মানুষের শরীরে দুইটা হরমোন থাকে এস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টিন।
এস্ট্রোজেন: যখন শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমান বেশী থাকে তখন মেয়েদের ডিম্বাশয় সবচেয়ে উর্বর থাকে। এখন ঐ সময়ে যদি এমন কোনো উপায় করা যায় যে এস্ট্রোজেনের পরিমান কমায় রাখা হয় তাইলে কি হবে? যখন ডিম্বাশয় তার নিষিক্তকরন প্রক্রিয়া শুরু করে তখন ডিম্বানু ডিম্বাশয় থিকা চইলা আসে ইউটেরিয়াসে চিকনা ফেলোপিয়ান টিউবের মাধ্যমে। এখন বার্থ কন্ট্রোল পিলে থাকে সিন্থেটিক এস্ট্রোজেন যেটা শরীরে এই হরমোনের পরিমান এমন একটা মাত্রায় থাকে যে শরীরে আসল এস্ট্রোজেন হরমোন তার নিঃসরন করে না। তার মানে বোকা বানানো হয় যাতে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু ইউটেরিয়াসে না পাঠায়। ফলে নো গর্ভধারন।
প্রোজেস্টেরন: এই হরমোন মেয়েদের পিরিয়ডের সময় পরিবর্তন করে ফেলে। এই হরমোনের লেভেল কমে গেলে ইউটেরাইন লাইন মোটা হইতে থাকে এর ফলে শরীর সিগনাল পায় এর পিরিয়ড শেষ তাই ডিম্বাশয়ের নিষিক্তের সময় শেষ। বার্থ কন্ট্রোল পিলের সিনথেটিক প্রোজেস্টিন মেয়েদের কার্ভিক্সের মিউকাসের পুরুত্ব বাড়ায় ফলে ডিম্বানু কার্ভিক্সের পৌছাইতে পারে না। তখন যৌনকর্মের ফলে শুক্রানুর আগমন ঘটলে সেখানে কোনো ডিম্বানুও পায় না তাই নো গর্ভপাত।
অন্যান্য উপাদান: এগুলা ছাড়াও এর মধ্যে থাকে চিনি, গ্লুকোজ, টাইটানিয়াম ডাইক্লামেট, ম্যাগনেসিয়ামের কিছু যৌগ হাবিজাবি যা শরীরে অন্যান্য কাজে লেগে যায়।
এখন উপরে পইরা জানতে পারলাম যে প্রক্রিয়ায় গর্ভধান ঠেকানো হয় সেটা মূলত প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা শরীরে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। এখন কথা হইলো পিল খাইলে যে সমস্যা হয় এগুলা কি এবং কেন?
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
তার আগে এই পোস্টে দেইখা নেই কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা লেখা আছে:
১) লিপিডের সমস্যা: রক্তে লিপিড বলতে যেটা বুঝায় সেইটা হইলো প্রথমত কোলেস্টেরল আর ফ্যাটি এসিড। কোলস্টেরল নিয়া আমাগো আমজনতার মাঝে একটা ভুল ধারন হইছে সেইটা হইলো গরুর গোস্তে কোলেস্টেরল বেশী। আসলে আমাগো শরীরে যে কোল্সটেরল থাকে তার ৭৫ ভাগ আমাগো শরীরেই পয়দা হয়। কোলেস্টেরল দুই প্রকার। এর মধ্যে যেইটা খারাপ তার বেশীরভাগ অংশ শরীর থিকাই পয়দা হয় আর মাত্রা ভাগ খাবার থিকা খাই। এর বেশী খাইলে টাট্টি দিয়া বাইর হইয়া যায়। ফ্যাটি এসিড অবশ্য খুব একটা ভালো না। এখন কথা হইলো আপনে একজন হৃষ্টপুষ্ট মানুষ এখন ডেইলী যদি কোক আর ঘি এ ভাজা রোস্ট খান, কার্ডিও বা ওয়েটলিফটিং এর খবর নাই, তাইলে সমস্যা তো এমনেই হইবো।
একটা গবেষনা পত্র যেইখানেবলা আছে যে যারা এই বার্থ কন্ট্রোল পিল খায় তাগো শরীরে লিপিডের যে কোলস্টেরল লেভেল মানে এলডিএল (যেইটা সবচেয়ে খারাপ) সেইটা খুব বেশী যা হ্রদরোগের ঝুকি বাড়ায়। কিন্তু গবেষনায় এইটাও দেখা গেছে যাদের লিপিড লেভেল নরমাল তাগো কোনো সমস্যা হয় না। এর কারন হিসেবে বলা হইছে যে পিলে প্রোজস্টিন আছে ঐটা খাইলে এলডিএল বাড়ে। তার মানে এস্টজেন যুক্ত পিল খাইলে সমস্যা হবার কথা না। তারপরও আরও নানান কথা বলা আছে কিন্তু বাকীটা এই জার্নাল থিকা পইড়া লন। কিন্তু সব কথার একটাই কথা এই পিল খাইলে এলডিএল যতটুকু বাড়ে অতটুকুতে মাইয়াগো হ্রদরোগের ঝুকি বাড়ায় না।
২) প্যানক্রিয়াটিস: খাবার খাওয়া হইলে পিত্তীর সাথে আরেকটা গ্লান্ড আছে প্যানক্রিয়াটিস যেইটা আমাদের খাবারের হজমে স হায়তা করে। এখন গবেষনায় দেখা গেছে এস্ট্রোজেন যুক্ত পিলে অনেকের প্যানক্রিয়াটিসে সমস্যা হয়। তাইলে এর সমাধান কি? সোজা ডাক্তারের কাছে হাটা ধরেন। যদি ডাক্তার কয় এই এস্ট্রোজেন শালার ব্যাটার দোষ, পিলটা টুক কইরা প্রোস্টেজনেরটা নেন।
৩) মাথা ধরা, নসিয়া: এগুলা দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো ভালো ডায়েট। ভালো ডায়েট বোলে তো পিল খাওনের সময় দুধ আর ভালো খাবার যেখানে আমিষ এবং প্রোটিন আছে সেসব খাওয়া।
এরম আরও বহু সমস্যার কথা বলা হইছে যেগুলার বিষয়ে বলা যায় আপনে যদি বাজার থিকা মাথা ব্যাথার এন্টাসিড কিনে আনেন এখন মুড়ির মতো খাওয়া শুরু করেন তাইলে কি হবে? অথবা রেনিট কিনে এনে আলসারের জন্য খাওয়া শুরু করলেন। এমনও লোক দেখছি সে দৈনিক ২ বার খাওনের পর বছরের পর বছর খাচ্ছে। একটা সময় পর দেখা গেলো হয় তার পিত্তীতে পাথর নাইলে কিডনি টাটা বায় বায় জানাইছে।
কথা হইলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। কিন্তু আপনে যদি সপ্তাহে কোনো বার মিস করেন তাহলে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কভার করেন তাহলে ক্ষতি হবার কথা না। নতুন বিয়ে হইলে প্রথম কয়েকমাস জন্ম নিয়ন্ত্রনবড়ি নিয়মিত খাওয়া লাগতে পারে কিন্তু যতদূর বুঝি বা জানি সময় গড়াইলে এই হার পারস্পরিক মিলনের হারের কমার সাথে সাথে মাসে কততে নাইমা আসে পারলে একটা সার্ভে করেন। তার ওপর বাংলাদেশে যে কাম কাইজ গ্যানজ্ঞাম আমার তো মনে হয় না মানুষের সারা জীবন বা মাস ধইরা খাওয়া লাগবে! যাই হোক স্পর্শকাতর বিষয়ে মানুষ জেনারেল নলেজ নিয়া টোকা দিতে চাই না!
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যদি হয়ই তাইলে সমস্যা কোথায়:
এখন বাংলাদেশ হইলো পুরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ সেইটা নিয়া নাই বললাম। তবে মনে পড়ে ২০০২ বা ২০০৪ এর দিকে হঠাৎ দেখা গেলো ১২ টা শিশুর কিডনী ফেইলর। তাদের ডায়ালাইসিস করন লাগতেছে। এখন শরীরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং স হনশীল অংগ হইলো কিডনী তাইলে পিচকিদের কিডনী নষ্ট হইবো কেন? না খায় মদ না করছে অন্যকিছু। তো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্টার সদ্য জাপান ঠেকে আসছে। সে জাপানের ঐ ইউনির স হায়তায় এক মাসের মধ্যে বাইর করে যে পয়ারাসিটামল খাইয়া এই সমস্যা। তো এই পয়ারাসিটামল আসলো কইতে থিকা? খোজ নিয়া জানা গেলো এক ভদ্রলোক নতুন ঔষুধের ফ্যাক্ট্ররি খুলছে। সেই লোক তার ব্যাবসার প্রথম যে দুইটা ঔষুধ বানাইছে তার মধ্যে এই প্যারাসিটামল আরেকটা গ্যাস্ট্রিকের। তো সাথে সাথে এইটা নিয়া তোলপাড়। তখন র্যাব আছিলো হট কেক। র্যাব ধরলো। জানা গেলো সেই বেটা নাকি বিএনপির এক নেতা আছিলো। নেতাবাজী ভালা লাগে না, তাই নিজে ব্যাবসা খুলছে। ঔষুধে আবার বিএসটিআই এর সীল ছাপ্পর আছে।
ত যখন এমন কোম্পানী লাইসেন্স নিয়া বা না নিয়া যদি ঔষুধ বানানি শুরু করে এবং আমাদের সাধু সন্ত বিএসটিআই এমনে কিরা লাইসেন্স দেয়া শুরু করে বা তার সীল নকল কইরা ঔষুধ বানায় তাইলে শুধু জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি কেন, যেকোনো কিছু খাইলে নিজের বা নিজের আপন জনের রাম নাম সত্য হবার চান্স থাকে। পশ্চিমা বিশ্বে যে রেগুলাটেরী বডি আছে, যে কন্ট্রোল আছে সেখানকার মেয়েরা তো মুড়ির মতো এসব খায়, কই ভাই এগো তো এমন জনে জনে বাচ্চা পয়দা হওয়া বন্ধ বা এইডসের মহামারী ছড়াইতেছে না।
কারন এদের যৌনশিক্ষা এবং এরা যা খায় সবগুলোই সঠিক ভাবে দেয়া হইতেছে, নিয়ন্ত্রন করা হইতেছে। ফলে যেরকম "ডাহা মিথ্যা কথা" শিরোনাম দিয়া লেখা হইলো তখন মনে হইলো এই পোস্টের অন্য উদ্দেশ্য থাকে।
তো আমরা যদি সরকারকে প্রেসার না দিয়া বা সিস্টেম কেমনে চেন্জ করা যায় সেটা না বইলা পুরা একটা রাস্তা বন্ধ করে দেই তাহলে কি হবে চিন্তা করছেন?
জানা আপা তথা সামু সমীপে:
আমি কারো পক্ষ নিতেছি না। আমি শুধু কিছু ঘটনা মিলাই। আইয়ুব খা যখন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি দেয় তখন আমাদের জাতীর পিতা ভরা মাঠে বলিয়া ছিলেন,"ওরা বাঙ্গালী জাতী কমানোর ষড়যন্ত্র করতেছে।"
যখন বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে গ্রামে গ্রামে তা ছড়িয়ে দেয়া হলো তখন মোল্লারা ফতোয় দিলো কনডোমের বিরুদ্ধে: যারা কনডোম বয়াব হার কইরা বীর্য নষ্ট করটেছে তারা একেকটা সন্তান হত্যা করতেছে।
এমনকি ৮০ র দশকের শেষের দিকেও মনে পড়ে ছোটবেলায় যখন ইত্তেফাক পড়তাম তখন ভেতরের পাটায় দেখতাম জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি ব্যাবহার করার জন্য গ্রামে সালিশ বসছে, দোররা মারা হইছে। জন্ম নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মী বা এনজিও র কর্মীরা যাতে গ্রাম ঢুকতে না পারে সেজন্য মোল্লারা গার্ড বসাইতো এমনকি যেসব মেয়েরা কাজ করতো তাদেরকে নষ্টা নারী বা বেশ্যা পরিচয় দিয়ে তাদের জীবন যাপন অতীষ্ট করে তুলতো।
আর তার ফল দেখেন: ১৬ কোটি মানুষ এই পুচকে দেশে। ধান উৎপাদনে ৪র্থ হবার পরও মানুষ ভাত পায় না। ঢাকা শহরে দিনের বেলা ফার্ম গেট গেলে মানুষ মানুষরে চাইপ্পা টিপ্যা শেষ কইরা ফেলায়।
এখনও গ্রামে গেলে এইসব জঙ্গি কাঠমোল্লা এসব শুনলে ভিত্রে ভিত্রে বা মসজিদে গিয়া ভরা খুতবায় জন্ম নিয়ন্ত্রনের খ্যাতা পুইড়া যেই বক্তব্য দেয় শুনলে মনে হয় দেশ এখনো ৮০ র দশকেই পইড়া আছে।
এমন একটা সময়ে এসব এক পেশে লেখা স্টিকি করা হলো যেখানে আধা সত্য আধা মিথ্য তাও এমন যদি হইতো কোনো ডাক্টার ভালো রেফারেন্স দিয়া লেখছে তাও না।এটা আসলে দুঃখ জনক
আশা করি আপনারা ভেবে দেখবেন এমন আত্মঘাতী আধা সত্য আধা প্রোপাগান্ডা মূলক পোস্ট স্টিকি করা ব্যাপারে!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২০