১.
সুইডেনের স্টকহোমের অরলান্ডা এয়ারপোর্টে যখন প্রথম পা রাখি তখনও আমি কোনো বাসা বা রুম ঠিক করার জন্য কাউকে মেইল করিনি। যখন ভার্সিটির শহরে পৌছালাম তখন দেখলাম ট্রেন স্টেশনে আমি আর কালু। কালু এসেছিলো নাইজেরিয়া থেকে, নাইজেরিয়ার এটমিক রিসার্চ সেন্টার থেকে এখানে পাঠিয়েছিলো। আমি কালুরে সাহস কইরা জিগাইলাম,"থাকার জায়গা ঠিক করছাও চান্দু?"
: হে হে হে, লাখ টাকার কুশ্চেনের কোটি টাকার জবাব হইলো না। তয় একখান ফুন নম্বর আছে কিন্তু আমার মোবাইল নাই, কল করার টাকাও নাই।
: নো সমস্যা, আমার কাছে মুবাইল আছে। শর্ত একখান যে তুমারে হেল্পাইবো সে যেন আমার জন্যও একটু করে।
সে হা না কিছু না কইয়া সমানে নম্বর টিপাইলো আর ফুন করলো। পরে ফুন চেক কইরা দেখলাম ছাগলটায় ফ্রি পাইয়া সুইডেন থিকা নাইজেরিয়া ডাইরেক্ট কল করছে দুইটা। তারপর সুইডিশ নম্বর একটা। একটু পর দেখলাম একটা বিএমডব্লু আসলো, ভিত্রে আরবী হামদ নাতে কিছুক্ষন পর পর আল্লাহু আল্লাহু গাইতেছে। আমি সালাম দিতেই দেখি তারা আমারে জড়ায় ধরলো। মনে হইলো কুটিকালের নাম না জানা বৈশাখের জসিমউদ্দিন মেলায় হারিয়ে যাওয়া সেই ভাইটি। একজন হারাইয়া ফরিদপুর আরেকজন হারাইয়া নাইজেরিয়া, অখন ভাগ্য আমাদের দুটি ভাইকে সুইডেনে ফিক্কা মারছে। পরে অবশ্য জানতে পারলাম যেই কাল্লু আমার সাথে আইছিলো সেই কাল্লুর নাকি আপন ভাই এবং তাকে আমি কল করতে দিছি এইটা নাকি বিশাল আচায্যের বিষয়!
কি কমু আর! পরে এক হাত দুই হাত ঘুইরা সেই রাইতেই আরেক বাঙ্গালী পোলার লগে ঘরে উঠি। এরপর কামের সন্ধানে আরেক শহরে যাই। ঐ শহরে গিয়া আরেক বাঙ্গালীর পাল্লায় পড়ি। তো যেদিন প্রথম তার ঘরের কিচেনে ঢুকি তখন সে ডাল রানতেছিলেন। পেটে ক্ষুধায় ইন্দুরগুলান পুশআপ মারতেছিলো। সে আমারে দেইখা কয়,"ভাইসু, আমার ডাইল খাওনের লিগা স্টকহোমে ঐ রাস্তা দিয়া লাইন ধরতো। আমার ডাইল তো তারা খাইতো না, প্লেট কমড়াইয়া যাইতো!"
আমি হাসি দিলাম কিন্তু সমস্যা হইলো ডাইলের চেহারা সাদা আর কুনো সুবাস নাই। ডাইল রান্ধার পর রুটি দিয়া খাইতে গিয়া দেখি কলের পানির যেই স্বাদ তার চেয়েও বিস্বাদ এই ডাল। আমি খাওন মুখে দিয়া বইসা আছি। সে আমার মুখ দেইখা একটা হাসি দিয়া কয়," ডাইলে স্বাদ হয় নাই?"
আমি একটু হাসলাম। অমুন সময় তার কল আসলো। সে আমার সামনেই পেয়ারের আলাপ করতে লাগলো। দেশ থিকা তার পেয়ারী ফোন করছে মনে হয় বইলা মন অন্য দিকে নেয়ার ট্রাই করলাম। কিন্তু আলাপের বিষয়বস্তু ভয়াবহ, রাইতের বেলার অন্তরঙ্গ কামের ইঙ্গিত! যন্ত্রনা! আমি একটা কাশি দিতে সে এক্সকিউজ মি বইলা ফোনটা রাখলো,"ভাই, আমার বয়ফ্রেন্ড ফোন করছে!"
শুইনা খাওন যে মুখে দিছিলাম, ওগুলা ঢুকার বদলে বাইর হইয়া যাইতে চাইলো। মন চাইলো সব ফেলায় দিয়া পলাই। কিন্তু যাইতে পারলাম না। কারন পকেটে টাকা নাই, কামটা খুব দরকার। হিসাব করলাম কয়টা ইনার আর আণ্ডার ওয়ার আনছি, রাইতের বেলা নিজের প্রটেকশনের দরকার আছে। যাই হোউক, তার সাথে একই রুমে কিন্তু আলাদা বেডে ৫ মাস থাকি। তারপর সে স্টক হোমে চলে আসে। যতদিন রুমে ছিলাম প্রচন্ড প্রাইভেসি দিতো। এমন সৎ এবং অমায়িক মানুষ দেখিনি। সমকামী দেখাইয়া সুইডেনে পারমিশন নিয়েছিলেন এবং নিজের কাপল দেখিয়ে অনেককে পারমিশন করাইয়া দিছে। আমাকে সে খুব ভালো একটা কাজও দিয়েছিলো। পরে আর তার সাথে যোগাযোগ রাখা হয়নি নিজের ব্যাস্ততা এবং দৌড়াদৌড়ির কারনে।
২.
বিজ্ঞান কি বলে?
আসলে বিজ্ঞান অনেক দূর এগোলেও জেনেটিকসের ব্যাপারটা এখনও যতটা এডভান্স হওয়া দরকার ততটা হয়নি কারন জেনেটিক্যাল ম্যাপিং গুলো কিছুদিন আগে সমাপ্ত হলেও এগুলো নিয়ে প্রচুর পড়ালেখার প্রয়োজন। তাই বলে বিজ্ঞান থেমে নেই। বিভিন্ন ইউনিভর্সিটি রিসার্চ ইনস্টিটিউশন গুলো এই সমকামী ব্যাপারটা নিয়ে প্রচুর গবেষনা করছে। সকল গবেষনা তিনটি কারনকে দায়ী করেছে:
ক) জীন ঘটিত
খ) হরমোন সংক্রান্ত
গ) পরিবেশ গত
ক) জীন ঘটিত
অনেকগুলো গবেষনা ব্যাপক সমালোচনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ৮০ র দিকে হ্যামারের তথ্য অনুযায়ী একটা ক্রোমোজম গুচ্ছের দিকে নজর পড়ে সবার সেটা হলো Xq28 যেটার মধ্যে তিন ধরনের জায়গা আছে। এর মধ্যে MECP2 এবং IRAK1 অটিজম আর দুশ্চিন্তার জন্য দায়ী। এই Xq28 জীনটা X ক্রোমোজোমের ভেতরই পাওয়া যায়। হ্যামার স্টাডিতে দেখা যায় ১১৪ জন সমকামীর পরিবারের মধ্যে এই Xq28 খুব বেশী পরিমানে পাওয়া যায় তাদের X ক্রোমোজমে।
হ্যামারের এই পরীক্ষার পর ৯৯ তে আরও একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা করা হয় যেখানে এই X ক্রোমোজমের সাথে সমকামীতার একটা সম্পর্ক খুজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০১২ সালে এসে আমেরিকার জেনেটিক্স সোসাইটি আরও ব্যাপকভাবে সমকামীতার সাথে জীনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটা খুজে দেখে। দেখা যায় X ক্রোমোজম ৮ এ Xq28 ব্যাপকভাবে এর উপস্থিতি জানান দেয় যেটা ঐ হ্যামার স্টাডিকেই সমর্থন করে।
রেফারেন্স:
১) হ্যামার স্টাডির জার্নাল কপি
২) ১৯৯৯ সালের সেই এক্সপেরিমেন্ট
৩) ২০১২ সালের সেই পরীক্ষা
আপনারা হয়তো বলতে পারেন হ্যামার স্টাডি কতটা প্রতিষ্ঠিত? জ্বি ইহা মোটামোটি সায়েন্স জার্নাল, সায়েন্টিফিক আমেরিকা স হ খ্যাতনামা জার্নাল জোনে ছাপানো হয়েছে। গুগল করে দেখতে পারেন।
খ) হরমোন ঘটিত
১৯৫৯ সালে ফিনিক্স নামের এক বিজ্ঞানী একটা হাইপোথিসিস দেন যেটার ভিত্তি ছিলো কিছু গিনিপিগের উপর পরীক্ষা। তিনি মত দেন যে স্তন্যপায়ী প্রানী যার মধ্যে মানুষও বিদ্যমান যখন মায়ের পেটে থেকে তখন যদি টেস্টোরন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরনের সংস্পর্শে আসে তখন ঐ শিশুটির ব্রেনে কোনো প্রভাব তৎক্ষনাত ফেলে না। কিন্তু শিশুটি যখন জন্ম নিয়ে বয়স বাড়তে বাড়তে বয়ঃসন্ধী প্রাপ্ত হবার সময় ব্রেনে ঐ টেস্টোরন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরনের প্রভাব একটা সুইচের মতো কাজ করে। তখন দেখা যেতে পারে তার যৌনতার অরিয়েন্টেশন ভিন্ন হতে পারে যা এতদিন সুপ্ত ছিলো। ঐ জার্নালে রেফারেন্স ছিলো ৯৫০ টা জার্নালের উপ্রে।
রেফারেন্স: ফিনিক্স মিয়ার জোড়াজুড়ি।
এর পর ব হু পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয় গর্ভবতী মায়েদের ওপর এবং দেখা যায় এর প্রভাব ১৬-১৭% শিশুদের ওপর যা খুব একটা আশা ব্যান্জ্ঞক যোগসূত্র নয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরাসরি কিছু পরীক্ষায় দেখা যায়:
মেয়েদের ক্ষেত্রে যারা জন্মের সময় উচ্চমাত্রার এন্ড্রিনালিন এনড্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শে এসে কনজেনিটাল এড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া রোগে ভুগে তাদের মধ্যে সমকামীতা এবং দ্বিগামীতা বেশী দেখা যায়।
রেফারেন্স: এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা
কিন্তু সমস্যা হলো হরমোনের এই অতিরিক্ত নিঃসরনের ফলে যে পরিবর্তনটা ঘটতে পারে এরকম ঘটনার সংখ্যা খুব কম হওয়ায় অনেকেই মনে করে এর প্রভাব সমকামীতার ওপর থাকতে পারে তবে তার হার হবে খুব কম। তবে এর প্রভাব আছে অবশ্যই!
২০০১ সালে আরেকটা এক্সপেরিম্যান্টে দেখা যায় গর্ভবতী অবস্হায় যদি মা অতিরিক্ত টেনশনের কারনে স্ট্রেস হরমোন বেশী নিঃসরন করে রক্তে তাহলে শিশুর ব্রেনে এর প্রভাব পড়ে। কারন এতে টেস্টোটেরন হরমোনের নিঃসরনও বেড়ে যায়।
গ) পরিবেশগত
এই ব্যাপারটা বেশীর ভাগ সমাজবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের ভেতরে পড়ে। এই যেমন বয়ঃসন্ধিতে আসলে কিশোর কিশোরীরা অনেক ধরনের দুর্ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার শিকার হয় যার একটা স্হায়ী প্রভাব তার মনোজগট পাল্টে দেয়। এক্ষেত্রে তার ইচ্ছা অনিচ্ছা অনেক কিছুই তার অবচেতন মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
পারিবারিকভাবে দেখা যায় অনেক সময় পরিবারের বড় ছেলেটা একটু বেশী পৌরুষোচিত হয় যার ফলে তার সমকামী হবার সম্ভাবনাটা ২৮ থেকে ৪৮% এর মতো কারন প্রথম বার অন্তঃসত্বায় গর্ভকালীন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরনের শিকার হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
এবার আসি ধর্ম কি বলে?
প্রথমেই জানার চেষ্টা করি ইসলামে কি আছে?
কোরান শরীফে সমকামীর জন্য কোনো শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় নি তবে বিভিন্ন সুরার ব হু আয়াতে লুত আঃ এর সময় এই সমকামীতার জন্য পুরো একটা জনপদ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো জানা যায়। এছাড়া আরও ব হু আয়াতে একে ভয়াব হ পাপের সাথে তুলনা করেছে কিন্তু এটা ক্ষমার যোগ্য। যদি একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে তওবা করে তাহলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন।
সুরা আন নিসা আয়াত ১৬:
"তোমাদের মধ্য থেকে যে দু’জন সেই কুকর্মে লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর। অতঃপর যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু। "
কিন্তু হাদীসে একটু কড়া শাস্তি আছে। যে একটিভ তাকে ১০০টা দোররা আর যে প্যাসিভ তাকে মৃত্যুদন্ড।(আল তিরমিজী, ১৩৭৬: নবিজী (সাঃ) বলেছেন, লুতের সময়ের মানুষের মতো যাকেই পাবে এই কাজ করছে, তাদের দু'জনকেই মেরে ফেলো যে এটা করেছে এবং যার সাথে করা হয়েছে)
হিজড়াদের সম্পর্কে ইসলামে খুব বেশী বলা যায়। যা পাওয়া যায় দু একটা হাদীসে যেখানে বলা আছে হিজড়া যারা মেয়েদের প্রতি আকর্ষন বোধ করে না তারা মেয়েদের সাথে মিশতে পারে। আরেকটা হিজড়া যে মেয়েদের কাপড় পড়ে ঘুরতো তাকে এক সাহাবী এনে মারতে চাইলে নবিজী সাঃ তাকে মদিনা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া হিজড়াদের ব্যাপারে খুব বেশী কিছু না বলা থাকায় মুসলিম সমাজে তারা ঘৃন্য কেচোর মতো রাখা হয়। এজন্য মুসলিম সমাজে তাদের অধিকার না থাকায় তাদের জীবন বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হয়। এমন যে তারা মানুষ না। অথচ হিজড়া হয়ে জন্ম নেয়া তাদের নিজেদের দোষ নয়।
ক্রিশ্চিয়ানিটিতে ক্যাথোলিকরা একে ভয়বাহ গুনাহের চোখে দেখলেও এতটা করাকড়ি নয়। অন্যান্য গ্রুপের সবাই একে স্বাগতই জানায়।
তবে প্রতিটা ধর্মেই একে ভয়াবহ গুনাহের কাজ বলে উল্লেখ করে।
আমাদের সমাজ কি বলে?
বাঙ্গালী সমাজ নিয়ে খুব একটা উচ্চাশা নেই যেখানে আমাদের ক্রিকেটার নাসির হোসেন তার বোনকে নিয়ে একটা ছবি পোস্ট দিলে আল্লাহর সৈনিকেরা ঝাপিয়ে পড়ে অনলাইন ধর্ষনে অথবা যেখানে সরকার কেনো বাল্যবিবাহ বৈধ করলো না অথবা ১৬ বছর কেন ব হাল রাখলো এই জন্য মোল্লা আর মুসলিম পার্টি যেমনে ফেসবুকে হা হুতাশ করে সেহেতু এই সমাজ নিয়ে কোনো আশা নেই। তবে একটা গল্প বলি।
আমি যখন জন্ম নিয়েছিলাম তখন বাসায় নাকি অনেক হিজড়া এসেছিলো বাসায়। আমার বাবা চাচা মহা বিরক্ত হয়ে যায় কিন্তু আমার মা তাদের কোলে আমাকে তুলে দেয়। তারা কোলে নিয়ে গান গায়। আম্মা তাদেরকে খেতে দেয়, কিছু টাকাও গুজে দেয়। তারা এমন আচরন পেয়ে কেদে ফেলেছিলো।
বড় হয়ে যখন এ গল্প শুনেছিলাম তখন মা বলেছিলো,"ওরাও মানুষ। মেয়ে মানুষের যেমন কষ্ট আছে এই সমাজে এই সমাজে ওদের কষ্ট অনেক। তাই যখন ওরা দোয়া করে মন থেকে করে।" আমি মায়ের চোখে শূন্যতা দেখেছিলাম।
আমাদের সমাজ পাল্টাচ্ছে। আমরা পুরোনো অনেক কিছু ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি, নতুন সাদরে গ্রহন করছি। অস্থিরতা সবজায়গায়। আমরা যেমন কিছু ইতিহাসের সাক্ষ্য হচ্ছি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আবার সেই সাথে দেখছি রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস, রাজনৈতিক নৃশংসতা, নৈতিক অবক্ষয়। কিছু দিন তখনকার পরারাস্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সমকামীদের অধিকারের সমর্থন জানিয়েছিলেন, কিন্তু দেশে এসে প্রচন্ড সমালোচনার শিকার হলেন বিরোধী পক্ষের। নোবেল বিজয়ী ইউনূস সমকামী অধিকারের ব্যাপারে উচ্চকন্ঠ কিন্তু এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাব হার করলো সরকার পন্থি লোকেরা।
আমি চুপচাপ দেখি আর দেখি কিছু নির্যাতিত মুখ। জন্ম নেয়াটা হলো তাদের দোষ এমনকি ঈশ্বরও তাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে মাথার ওপর থেকে রহমতের ছাতা তুলে নিলেন। হিজড়া হয়ে জন্মালে তার কোনো শিক্ষা নেই, সমাজে মিশতে পারে না, কোনো চাকুরী নেই, এমনকি তার বাবা মা পারলে তাকে পেটেই মেরে ফেলে।
এসব অন্যায়! কিন্তু কেউ কিছু বলছি না।
আর কি বলবো আমি?
আমি নিজে স্ট্রেইট, কিন্তু আমি এই LGBT movement মনে প্রানে সমর্থন করি। আমি সুইডেনে দেখি একটা হিজড়া শিশু নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে তার বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরছে ফিরছে সাধারন মানুষের মতো। বড় হয়ে বিশাল কোনো চাকুরী করছে, মেধার অসামান্য অবদান রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর এরা প্রাইড মার্চ করে যেখানে তারা হেসে খেলে পৃথিবীকে জানান দেয় তারাও মানুষ, আছে সুখ দুঃখ হাসি কান্নার অনুভূতি। তারা পৃথিবীটাকে সাজাতে পারে।
এতদিন আমেরিকা সমকামী বিয়েকে সমর্থন করেনি। কিন্তু গেলো সপ্তাহে তাদের সুপ্রিম কোর্ট সেই যুগান্তকারী কাজ করলো। এখন দুনিয়ার সব সমকামীরা বুক ফুলিয়ে হাটতে পারবে, নিজের অধিকারের কথা বলতে পারবে। তারা তো ধর্ষন বা মানুষ খুন করছে না। তারা শুধু নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে সম লিঙ্গের কাউকে চাইছে। কাউকে হত্যা, কতল ধর্ষন গুম বা চুরি ডাকাতি করছে না। আমরা তো দিব্যি লীগ-বিএনপি-জামাতের মতো চোর বাটপার খুনিদের সমর্থন দিয়ে যাই এতে কি পাপের বোঝা কমে?
অথচ আমরা? এমনকি লোকাল বাসে যদি জানতে পারি পোলায় হোমো আর কারো গায়ে হাত দিছে তার লাশ ছিড়ে ফেলবে পাবলিক। সবাই ভাবে এটা তার ভং, মানসিক বা যৌন বিকৃতি। কিন্তু কেউ একটু পড়ালেখা করে বলে না আসলে সে এমন কেন?
এত গুনাহের ভাগীদার হয়ে যখন দেখি আমাদের ওপর গজব নাযিল হচ্ছে আর আমরা তাতে কাস্ট পাচ্ছি তখনও বুঝতে পারি না নিজেদের কষ্টগুলো।
কেউ কি একটু ভেবে দেখবেন?