আমার বৌ এর সাথে আমার দৈনিক ঝগড়া লাগে। ঝগড়ার বিষয় বস্তু গুলান আবার জন গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ইদানিংকার ঝগড়ার বিষয় হইলো দর্শন।
আমার বৌ ঝাড়ি মাইরা কয়," দর্শনের তুমি বুঝো কি? তুমি কয়টা বই পড়ছো? না জাইনা ফাল পাড়া পাবলিক আমি তুমারেই খালি দেখি!"
: হুনো। আমি মোট আস্ট খান বই পড়ছি। ৫ খান পড়ছিলাম ইন্টারে থাকতে, পড়নের পর বুঝলাম হালার এই বই লেখছে কি করতে! বাকী গুলান পড়ছি ভার্সিটি পাশ দিয়া। পড়নের পর মনে হইলো যার কাছ থিকা বই মাইরা দিছি ওরে গিয়া কই বই মারছি ঠিক আছে সময় নষ্ট করনের টাকা দে!
: চুপ! বেশী কথা বলো। মাত্র আট খানা বই পড়েই কি জ্ঞানী হইছো? আর কিসের বই পড়ছো? আমি তো শত শত বই পড়েও বলতে পারি না আমি সব জানি! আর উনি দুই তিনটা বই পইড়া...
: হুনো, আমি কখনো ২-৩ খান পড়িনাই। ল্যাটেস্ট জর্জ গ্যামো, পল সাত্রে পুরানা লা মিজারেবলের মতো বেসিক পড়ছি! একখান থাপড়া মারলে কইয়া দেওন যায় যে চটকানার চোটে কয়খান দাত ছুটবো আর কত কোনে উষ্টা খাইবো, মাগার দর্শন হেইটার কিছু কইবার পারবো না।
: তুমার ফিজিক্স কি আমারে চটকানা মারলে তারপর তোমার সাথে আমার কোনো রিলেশন থাকবে কি না সেইটা নিয়া কিছু বলছে?
: এইটা কি কইলা? আমি তুমারে চটকানা মারতে চাইলাম কখন? আমি তো উদাহরন দিছি বেনামে!
: দেখো তুমি এখনই ভুইলা গেলেও কিছু কিছু ব্যাপারে আমার কুনো ভুল থাকে না। আর আমারে চটকানা মারতে চাইছো এইটা কোনো ইস্যু না। এইটার ফলে কি হবে সেইটা ইস্যু!
: কিন্তু আমি তো তুমারে চটকানা মারবার চাই নাই!
: দেখো, এক ভাঙ্গা রেকর্ড বারবার বাজাইবা না, তুমার ফিজিক্স কি এই রিলেশন কি বাচাইতে পারবে?
: না পারবো না। আমি দর্শন মাইনা নিছি, তাও চেইতো না!
বৌ এর সাথে যুক্তিতে জিততে হইলে আমারে সুলেমানী জ্ঞানের অধিকারী হইতে হইবে। এমনকি ব্লগে পোস্ট কমেন্ট করলেও!
একদিন কল করতেই," এই মেয়েটা কে?"
: এইটার তার বাবার মেয়ে। তার বাবা বিয়ে করলে এই মাইয়া পয়দা হইছে। নাম কি রাখছে জানি না, কারন তুমি কুন মাইয়ার কথা কইতেছো সেইটা বুঝতেছি না!
: তুমি কি আজকে ব্লগে ঢুকো নাই? আজকা পুরো দিনে তুমি মাত্র একটা কমেন্ট করছো। মনে আছে কার পোস্টে?
: ওহো, হেয় তো ডাক্তার, মানে অখনো পাশ করবার পারে নাই, অন দ্য ওয়ে তে আছে। চট্টগ্রামে পড়ে। মাইয়ার মনে হয় বয় ফ্রেন্ড আছে।
: ও তলে তলে এতো দূর? তো এরকম কয়জন মেয়ের সাথে কথা হয়?
: ওরে মর জ্বালা, ওর পড়ালেখার কথাতো ওর প্রোফাইলের মধ্যেই লেখা। আর পোস্ট আছিলো সুপারলেটিভ ডিগ্রীতে। নিজের অভিজ্ঞতা থিকা লেখছে বইলা মনে হয়, তাই ওয়াইল্ড গেস!
: ও আচ্ছা! এরকম করে চুপে চুপে মেয়েদের পোস্ট পড়া হয়, আর আমার পোস্টে এখন যাওয়াই হয় না। ছিঃ ছিঃ রনি তুমি এতো খারাপ!
: ওরে মোর জ্বালা, চিনলাম না জানলাম না অথচ পোলার বাপ হইয়া গেলাম, কেমনে কি? দুনিয়া কি সব ডিজিটালের ভিত্তিতে পয়দা হইতাছে নাকি?
: (নাক টানতে টানতে) তুমার জন্য আমি সব ছাড়লাম, কত কষ্ট করতেছি, আর এখন তুমি......
বড়ই টেনশন নিয়া তারে ঠান্ডা করি। কাছাকাছি থাকলে কান ধইরা হাতে পায়ে পইড়া বৌ রে ঠান্ডা করন যায় মাগার অনলাইনে কেমনে ঠান্ডা করি! তাও ঠান্ডা করি! কিন্তু ইদানিং সে আমার কথাও শুনতে পারে না!
সেইদিন শুরু করলো," তোমাকে এতো ফোন দিলাম, তুমি কোথায় ছিলা? ল্যাবে?"
: আবার জিগস! মোল্লার দৌড় মসজিদ আমার দৌড় ল্যাব!
: কি বললা, আবার বলতো!
: মানে আমার দৌড় তো ঐ ল্যাব পর্যন্তই, মসজিদ তো আরও দূরে!
: না তার আগে?
: তার আগে....উমমমম.....আবার জিগস!
: ছিঃ রনি, এইসব কি? তোমার এমন বস্তির ভাষা কেন? তুমি এতো পড়ালেখা করো কিন্তু কথাবার্তা এত খারাপ কেন?
: ঐ মিয়া, আমি কি তুমারে গালি দিছি?
: রনি, আবার জিগস, হালা, মিয়া এইসব কি? কালকে তোমার ছেলে এইসব শুনলে সেও তো বলবে। দেখা গেলো বাসায় মেহমান আসলে সেই যদি তোমার মতো হালা বলে বসবে তোমার মান সম্মানটা কোথায় থাকবে?
: কিন্তু আমি তো এই ডালগ পুচকী কাল থিকাই পাড়ি। জিপিতে কামলা দিবার সময়ও এই ডায়লগ দিতাম। অখন কি সমস্যা? আর আমার পোলারে তো এইটা শিখামু না। ঐ হালার সামনে আমি ভদ্রভাষায় কথা কমু! (বইলাই জিহ্বায় কামড় দিছি!)
: কি বললা? কি বললা? নিজের ছেলেকে তুমি কি বললা?
: সরি, সরি, ভুল হইয়া গেছে! আর কমু না। ওর সামনে পুরা ইংলিশে টক মারুম! আর কমু না!
: রনি....ইউ আর ইম্পসিবল! আমি ফোন রাখতেছি। তুমি যতদিন কথা ভালো করে বলবা না ততদিন আমি কথা বলবো না!
: আরে করো কি! আমি অখন থিকা ট্রাই লইতাছি। এই যে শুরু করলাম, তুমি কি ভাত খেয়েছো?
: হ্যা খেয়েছি!
: তুমি আজকে কি কি করেছো?
: রনি, স্বাভাবিক ভাবে বাংলাভাষায় কথা বলো!
: আবার জিগস! (আবারও জিহ্বায় কামড়)
ঐ পাশ থিকা ফোন রাখনের শব্দ!
আমার বৌ দর্শনের ভক্ত, আমি দর্শন দেখবার পারি না। সে ভালো গান গায়ন, ক্লাসিক্যাল গানের ভক্ত। আমি ক্লাসিক্যাল ছুটোকালে শুইনা রাখছি। অখন মেটাল, ক্রশওভার, গ্লীচ না শুনলে পেট ভরে না। আমার বৌ ঝাল খায় না, আমি বোম্বাই মরিচ পাইলে আর কিছু চোখে দেখি না। আমার বৌ শান্তিপুরী ভাষা আর সাহিত্যের ফ্যান, আর আমার রুচীতো মাশাল্লাহ, অখনও উল্টা পাল্টা!
গতকাইল আমি তারে কল না দিয়াই দুপুরে ঘুম দিছিলাম। ঘুম থিকা উইঠা দেখি দুইটা ফোনে প্লাস ফেসবুক প্লাস এসমএস তার ভরা। ফোন করতেই শুনি তার কান্না। আমাকে ফোন দিয়ে পায় নাই বলে সে টেনশন করছে, পায়ের উপর পুরা গরম ভাতের জাউ ফেলায় দিছে। পা পুড়ে ফেলছে!
আরেকদিন আমার পেট খারাপ হইছিলো, শরীরটাও খারাপ ছিলো। সে পুরা শহর প্লাস শহরে যে কয়জন পরিচিত ছিলো সবাইকে ফোন করছে। আমার খবর নিছে। ঘর থিকা বাইর হইতেই সবার এক প্রশ্ন,"ঐ মিয়া, ফোন ধরেন না কেন?"
ওরে ফোন দিতেই শুনি ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো!
একজন মানুষ যে কেমনে এমন ধারাবাহিকভাবে আমার মতো একটা পাগলারে ভালোবাসলো মাথায় ঢুকতেছে না! আমার তো কিছুই না, যা আছে সব মাইনাস পয়েন্ট, তারপরেও এমন ভালোবাসা!
এই পোস্ট টা আমি লেখতাম না, কিন্তু আজকে ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, ও নাকি ফিজিক্স পড়া শুরু করছে ওর নিজের পড়ালেখা রাইখা। কারন ও আমার পোস্টে কমেন্ট করতে চায়, আমার মনটাকে বুঝতে চায়, আমার মতো হতে চায়!
কেন যেনো মনে হয় ওর জন্যও কিছু লেখা দরকার! আমার ফিজিক্স বা এই সব টেকি পড়ালেখা নিয়ে পোস্ট দেয়া বন্ধ করা দরকার! যে মানুষটা আমার জন্য তার নিজের সত্বাকে বিসর্জন দিতে রাজী তাকে আমি এতটুকু স্পেস দিবো না, তা কেমনে হয়?
সব দোষ ম্যাভেরিক আর রমিত ভাইজানের! তারাই দর্শন দর্শন কইরা আমার বৌ রে আমার বিরুদ্ধে খেপাইছে! আমি এর বিচার চাই!
উৎসর্গ: টু মাই ফাট্টু!