somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফটোগ্রাফির অষ্টম পাঠ

২১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিজিটাল ক্যামেরার হাড্ডি গুড্ডি

ফ্লিম ক্যামেরার প‌্যাচালটা যদি বুইঝা থাকেন তাইলে ডিজিটাল ক্যামেরার কথাবার্তি গুলান এক্কেরে পানি ভাত মনে হইবো। সোজা হিসাব... ফ্লিমটার জায়গায় খালি একটা সেনসর চিন্তা করেন, ব্যস হইয়া গেল ডিজিটাল ক্যামেরা। তাইলে সেনসর জিনিষটা কি এইটা আগে বুইঝা লই।

সেনসরের আক্ষরিক অনুবাদ হইলো যা কিসু একটা সেন্স করে। এই "কিসু"টা যে কোন "কিসু" হইতে পারে। যেমন ধরেন মোশন সেনসর নাড়াচাড়া সেন্স করতে পারে, হিট সেনসর গরম না ঠান্ডা হেইডা সেন্স করতে পারে। এইখানে যে সেনসর নিয়া আলাপ হইবো সেইটা হইলো "ইমেজ সেনসর" যেইটা আলো সেন্স করতে পারে। অবশ্য "ইমেজ সেনসর" শুধু আলো সেন্স কেইরা বইয়া থাকেনা, আলোটারে আবার ইলেকট্রিকাল সিগন্যালেও রুপান্তর করতে পারে।

"ইমেজ সেনসর" সাধারনত দুই ধরনের হয়। সি.সি.ডি (CCD = Charged Couple Device) আর সিমোস (CMOS = Complementary Metal Oxide Semiconductor)। নাম,গঠন যেইটাই হোক দুইটারি একই কাম। আলোরে ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল বানানো। এরা ক্যামনে কাজ করে সেইটা বোঝনের চেয়ে কি কাজ করে সেইটার আইডিয়াটা দরকার বেশি । তাই বেশি থিউরিতে গেলাম না।

ধরেন একটা আয়তোক্ষেত্রে বাংলাদেশের সব রাজাকার গুলারে গাদাগাদি কইরা দাড়া করানো হইলো আর আপনে একটা গুলতি লইয়া এক একটারে নিশানা কইরা ঢিলা মারা শুরু করলেন। যার চান্দিতে ঢিলা লাগতাসে হে চিল্লান দিতাসে আর আপনের বন্ধু কেউ একজন ক্যাডায় চিল্লান দিলো হেইডা লিখা রাখতাসে ।

এখানে আপনে হইলেন আলোর উৎস, ঢিলা গুলান হইলো আলোর কনিকা ফটোন,রাজাকারগুলান হইলো ফটো সেনসিটিভ সেল, তাগোর চিল্লানোটা হইলো ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল আর আপনের যেই বন্ধু ক্যাডায় ক্যাডায় চিল্লাইলো লিখ্খা রাখতাসে হে হইলো ইমেজ প্রসেসর।

ইমেজ প্রসেসরের কামের কুনো শেষ নাই। এই হালায় ইলেকট্রিকাল সিগন্যালগুলারে পিক্সেল(বিস্তারিত শেষে আসে) বানায়, মেমরিতে সেভ করে, ক্যামেরার মনিটরে দেহায় এমনকি অনুরোধের ফাপরে পইরা কিসু এফেক্টও দিয়া দেয় মাঝে সাঝে। ইমেজ প্রসেসর কতো শক্তিশালি তার উপর ক্যামেরার দামও অনেক নির্ভর করে। যদি আপনের ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ওয়ালা ফোনের ম্যানুয়ালটা কাসাকাসি থাকে তাইলে এটট্টু কষ্ট কইরা ২টা জিনিষ খুইজা বাইর করেন ওইখানে । এক, "সেনসর টাইপ" এ কি লেখা আসে? সিসিডি না সিমোস? আর দুই, "ইমেজ প্রসেসর টাইপ" এ কি লেখা আসে? যেমন আমি জানি আমার ক্যানন ৪৫০ডি এর সেনসর টাইপ হইলো "সিমোস" আর ইমেজ প্রসেসর টাইপ হইলো "ডিজিক ৩"।

যাউকগা আগের লেখাটায় বলতেসিলাম ফ্লিমের কি কি সাইজ হয়। একই রকম ভাবে সেনসরেরও কয়েকরম সাইজ হয়। কি টাইপের ক্যামেরা সেইটার উপর নির্ভর করে সেইটাতে কি সেনসর ব্যবহার করা হইসে। মোবাইল ক্যামেরার ছবি বাসার ডিজিটাল ক্যামেরার মতো সুন্দর আসে না ক্যান? শুধু মেগাপিক্সেল কম ওই জন্য না কিন্তু। ছবি সুন্দর হয় কারন মোবাইল ক্যামেরার ইমেজ সেনসর ছোট আর ডিজিটাল ক্যামেরার ইমেজ সেনসর বড়। আবার আইফোনে কিন্ত ইমেজ সেনসর অন্য মোবাইলের চেয়ে বড় তাই এইটাতে ছবি ভাল আসে।

ফ্লিম এস.এল.আরের কথা এর আগের লেখায় বলা হইসে। এইবার সেইটার ফ্লিমের যায়গায় একটা ইমেজ সেনসর কল্পনা করেন। হইয়া গেলো ডিজিটাল এস.এল.আর। ডিজিটাল এস.এল.আরে বেশ কয়েক ধরনের সেনসর ব্যবহার করা হয়। ইমেজ সেনসরের সাইজটা যদি ফিল্মের সাইজের সমান (৩৫ মি.মি. বাই ২৪ মি.মি.)বা কাসাকাসি হয় তাইলে সেইটারে বলা হয় ফুল ফ্রেম সেনসর আর ক্যামেরাটারে বলে ফুল ফ্রেম ডিজিটাল ক্যামেরা।

কিন্তু কোন ক্যামেরার ইমেজ সেনসর যদি ফুল ফ্রেম সেনসর এর চেয়ে ছোট হয় তাইলে কি হইবো? তাইলে ফুল ফ্রেম সেনসরে যে ছবিটা পরতো, ছোট সেনসরে তার সেই একি ছবির চারপাশের বর্ডারের কাছ থেইকা কাইটা মাঝখানে যেট্টুক বাচে ততখানি পরবো। টিফিন বক্স যদি পাইরুটির চেয়ে ছুডু অয় তাইলে চারপাশ ফালাইয়া ঢুকাইতে হয় না? ওইরকম আরকি।

এই কাইটা ফেলনের ঘটনাডারে কয় ক্রপিং আর কোন সেনসর কতখানি কাটবো তারে কয় ক্রপ ফ্যাকটর। যেমন আমার ক্যামেরার (ক্যনন ৪৫০ডি) ক্রপ ফ্যাকটর ১.৬ । এইটার মানে হইলো ফুল ফ্রেম সেনসরের চেয়ে আমার ক্যামেরার সেনসর ১.৬ গুন ছোট।

ক্যামেরার কিননের সময় (অথবা কিন্না ফালাইলে কিননের পরে) ক্যামেরার ক্রপ ফ্যাকটর জানাটা দরকারি। ফুল ফ্রেম ইমেজ সেনসরে ক্রপ সেনসরের তুলনায় কম নয়েজ আর বেশি ডিটেইল ছবি পাওয়া যায়। এই পার্থক্যটা খুব ভাল মতো বোঝা যায় কম আলোয় ছবি তুলতে গেলে। যেহেতু কম আলো সেহেতু আই.এস.ও বাড়াইতে হয়। যেহেতু আই.এস.ও বাড়াইতে হয় সেহেতু নয়েজ আসার প্রবনতা বাড়ে। ইমেজ সেনসর যত বড় হয় সেইটা এই নয়েজকে তত ভালভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে।

যেইকারনে ফুল ফ্রেম ক্যামেরায় অনেক হাই আই.এস.ও যেমন ৬৪০০ এ ফটো তুললেও ছবিতে নয়েজ আসে না। কিন্তু একি কাজটা যদি কোন পয়েন্ট এন্ড শুটে করতে যান তাইলে যতই হাই আই.এস.ও সাপোর্ট করুক মোটামুটি ২০০ এর উপরে গেলেই ছবিতে গ্রেইন আসা শুরু করবো। আমার ক্যামেরায় আমি ৪০০-৮০০ পর্যন্ত মোটামুটি ভাল পারফরমেন্স পাই।

কয়েকটা ইমেজ সেনসরের নাম জাইনা রাখা ভাল। তাইলে পরে মিলায়া দেখতে পারবেন ম্যানুয়ালের সাথে (এইখানে বইলা রাখি ক্যামেরার ম্যানুয়াল পরাটা একটা ফরজ কাজ ) । ফুল ফ্রেম ইমেজ সেনসরের আলাদা কোন নাম নাই, এই নামেই পরিচিত। ক্রপ সেনসরের মধ্যে ক্যাননের প্রো লেভেলের গুলায় ব্যবহার হয় APS-H সেনসর ( ২৮.৭ মি.মি. বাই ১৯ মি.মি.) যেইটার ক্রপ ফ্যাকটর ১.৩। নাইকনের ক্রপ সেনসর ক্যামেরা গুলা শুরু হয় ক্রপ ফ্যাকটর ১.৫ থেইকা। সেনসরের নাম DX । ক্যাননের ক্রপ ফেকটর ১.৫ এর সেনসরের নাম APS-C। সনি আলফা সিরিজের কিসু ক্যামেরায় ১.৫ ক্রপ ফ্যাকটরের সেনসর ব্যবহার হয়। এই APS-C সেনসরের মধ্যে আরেকটা আসে যেগুলা ক্যাননের এন্ট্রি লেভেল ডি এস এল আরে ব্যবহার হয় । এইগুলার ক্রপ ফ্যাকটর ১.৬।

ডিজিটাল কমপ‌্যাকট ক্যামেরা যাকে আমরা বলি পয়েন্ট এন্ড শুট, এ ক্রপ ফ্যাকটর শুরু হয় ৩ থেইকা, যেইটা ৭ পর্যন্ত যাইতে পারে। মোবাইলের ক্যামেরার ক্রপ ফ্যাকটর সাধারনত ১৪ থেইকা শুরু হয়।

ইমেজ সেনসর আর ক্রপ ফ্যাকটর নিয়া এতো কচকচানির উদ্দেশ্যটা যখন ক্যামেরার লেন্স নিয়া কথা কমু তখন বুঝা যাইবো। একই লেন্স, ক্রপ ফ্যাকটরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরায় ভিন্ন ভিন্ন আচরন করে।

উফফফফফ কাহিল লাগসে।

এই তো গেল ৩৫ মি.মি ফরমেটের ডিজিটাল ক্যামেরার কথা। এ ছাড়া মিডিয়াম ফরমেটের ডিজিটাল ক্যামেরাও আসে যেইটার সেনসরের সাইজ ৩৬ বাই ৪৮ মি.মি এর মতো।

পিক্সেল আর মেগাপিক্সেল

ডিজিটাল ক্যামেরায় আরেকটা টার্ম খুব বেশি ব্যবহার করা হয় যেইটা হইলো পিক্সেল। পিকচার এলিমেন্ট বা সংক্ষেপে পিক্সেল হইলো ছবি বানানির ইট। ইমেজ সেনসর আলোরে ইলেকট্রনিক সিগন্যালে রুপান্তরের পর ইমেজ প্রসেসর পিক্সেলের পরে পিক্সেল সাজায়া ছবি টা বানায়। তয় ম্যাক্সিমাম কয়টা পিক্সেল ব্যবহার করতে পারবো সেইটা নির্ভর করবো সেনসরের সাইজের উপর । এখন আপনের ক্যামেরা যদি প্রসেসর রে কয় আব্বে ওই ! একটা ১০ মেগা পিক্সেলের ছবি বানা তো । তাইলে প্রসেসর মামায় সেনসরের সাহায্য লইয়া দৈর্ঘ্য বরাবর বসাইবো ৩৮৭২টা পিক্সেল আর প্রস্থ বরাবর বসাইবো প্রতি কলামে ২৫৯২টা পিক্সেল। তাইলে টোটাল পিক্সেল হইবো ৩৮৭২ গুন ২৫৯২ = ১০০৩৬২২৪টা পিক্সেল বা ১০ মেগাপিক্সেল।

তাইলে বুঝতেই পারতাসেন আপনের যেই ক্যামেরাই হোক চেষ্টা করবেন যদি মেমরি থাকে তাইলে অবশ্যই সবচেয়ে ম্যাক্সিমাম পসিবল মেগাপিক্সেলে ছবি তুলতে।

আইজকা মনে হয় থামি এইখানে। বেশি হইয়া যাইতাসে :) । কিসু না বুঝলে আওয়াজ দিয়েন। নেক্ট পাঠে লেন্স নিয়া কথা কওনের ইচ্ছা রাখি।

হ্যাপি ফটোগ্রাফি

আগের পর্ব গুলার লিংক:

১) Click This Link

২) Click This Link

৩) Click This Link

৪) Click This Link

৫) Click This Link

৬) Click This Link

৭) Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৮
৩২টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×