৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ - যে দিন প্রতারিত হয়েছিলো একটা জাতি, একটা দল আর একজন মুক্তিযুদ্ধা তাহের
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাংলাদেশের ভিন্ন পত্রিকায় আজ আজ একটা খবর থাকবে - খবরটা হলো - আজ "আজ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস" বা "আজ ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর"।
এই ঐতিহাসিক দিবসটি কেন বাংলাদেশীদের জন্যে গুরু্ত্বপূর্ন বা প্রকৃত পক্ষে সেইদিন কি পেয়েছিলো বাংলাদেশ, এই প্রশ্ন করাটা কি স্বাভাবিক নয়? ৭ই নভেম্বরের আসলে কি ঘটেছিলো - তার প্রকৃত ইতিহাস জানা কঠিন। কারন যারা সেইদিন ক্ষমতা দখলে স্বক্ষম হয়েছিলো - তারা ইতিহাসটা তাদের মতো করে লেখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যেহেতু সেই ঘটনার প্রকৃত সত্যকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ সুবিধাভোগীরা - তাই যেভাবে ইতিহাসটা লেখা হয়েছে - তা অনেকটা রূপকথার মতো শুনাবে।
রূপকথা বলা সময় যেমন হঠাৎ করে একজন রাজা আসে - এক দেশে এক রাজা ছিলো, তার ছিলো হাতি ঘোড়া ....ইত্যাদি। ৭ই নভেম্বরের ঘটনা বর্ননায় অধিকাংশ লেখককেও তেমনি বায়বীয় কিছু শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেখানে প্রকৃত পক্ষে ইতিহাসকে ধারন করা কঠিন।
বাংলাদেশে প্রকাশিত আজকের কয়েকটা পত্রিকার খবরগুলো একটু নজর দেওয়া যাক -
১) আজ ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এইদিনে সেনাবাহিনী ও জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধভাবে জিয়াউর রহমানকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করেন। পরবর্তীতে সিপাহী জনতার মিলিত বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিশেষ পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। (দৈনিক আমাদের সময়)
২) আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর । জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এইদিনে দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লব আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত করেছিল। তারা জিয়াউর রহমানকে (তৎকালীন মেজর জেনারেল) বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে এনে রাষ্ট্রীয় ৰমতায় অধিষ্ঠিত করেন। (দৈনিক ইত্তেফাক)
প্রায় সকল পত্রিকাই ইতিহাস লেখা শেষ করবে তিন লাইনে। যার সারমর্ম হলো:
১) দিনটি ঐতিহাসিক দিন।
২) সিপাহী- জনতা মিলে বিপ্লব করেছিলো।
৩) জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিলো।
এই তিন লাইনের বাইরে গেলেই প্রকৃত সত্যগুলো বেড়িয়ে আসতে থাকে। সেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশটা জুড়ে থাকবে জাসদ, গনবাহিনী আর কর্নেল তাহের।
মুলত ১৯৭২ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে কর্নেল তাহেরে নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবীরা সংগঠিত হয়। এরা সেনাবাহিনীতেও একটা বিরাট প্রভাব ফেলে। তারপর ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টের হত্যঅআন্ড, সামরিক শাসন আর ৩রা নভেম্বর জের হত্যা - সবই সংগঠিত হয় - কিন্তু জাসদ যদিও এই বিষয়গুলো সমর্থণ করেনি - কিন্তু বাঁধা দেবার মতোও কিছু করেনি। অবশেষে ৩ থেকে ৭ ই নভেম্বর দ্রুত দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। কয়েকজন মেজর আর কর্নেলকে নিয়ে খন্দকার মুশতাক দেশে একটা অরাজকতা চালাচ্ছিলো। এই অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধারা খালেদ মুশাররফের নেতৃত্বে একটা প্রচেষ্টা নেয়। কিন্তু জেনারেল ওসমানীর মধ্যস্থতায় মুশতাক আহমদে বেঁচে যায় - কিন্তু জেলে নিহত হন চার নেতা। অন্যদিকে ওসমানীর মধ্যস্থতা মেনে নিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যটাও পরিশোধ করেন খালেদ মোশাররফ।
অবশেষে জাসদ গনবাহিনীকে সক্রিয় করে ক্যান্টনমেন্টে একটা বিদ্রোহ করায় এবং সফলও হয়। কিন্তু কর্নেল তাহের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে। তাহেরের নির্দেশে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসানো হয়।
তারপর জিয়াউর রহমান দ্রুতই তার আসল চেহারা খোলশ থেকে বের করে ফেলে। একটা পাতানো আদালত বানিয়ে তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। শত শত জাসদ কর্মীকে জেলের ভেতরে হত্যা করা হয়।
একজন মুক্তিযুদ্ধ হিসাবে কর্নেল তাহের আরেকজন মুক্তিযুদ্ধা জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় বসালেও - সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মক্তুযুদ্ধে অর্জনগুলো। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার শত্রু আর পরাজিত শক্তিকে পূর্নবাসন শুরু করে - অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বর্জণ করে। ফলে ধর্মান্ধ আর ধর্মব্যসায়ীরা চলে আসে দৃশ্যপটে। প্রতিশীলতা বিসর্জিত হয় রাষ্ট্রের মুল নীতি থেকে।
এভাবে জাসদ নামে একটা দল, একজন মুক্তিযুদ্ধা তাহের আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া একটা দেশের জনগন আরেকজন মুক্তিযুদ্ধার হাতে প্রতারিত হয়।
(২)
আরেকটা বিষয় লক্ষ্যনীয় - ৭ই নভেম্বর পালন করে যারা, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিএনপি, জাসদ আর বাজাই( জামাত)।
বিএনপি তিন লাইনের ইতিহাসের উপরে এই দিবসটিকে পালন করে - এর যথেষ্ঠ যুক্তি আছে। প্রকৃত পক্ষে বিএনপির জন্মদিন এই ৭ই নভেম্বর। তবে যদি সৎ ভাবে এরা তিনটি পালন করে - তাহলে তাদের আলোচনায় তাহেরে প্রতি কৃতজ্ঞতার বিষয়টা উল্লেখ করা উচিত। যদি কর্নেল তাহের সেইদিন জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস না করতেন - তাহলে হয়তো ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান মৃত্যু বার্ষিকীর পারিবারিক মিলাদে অনেকে দাওয়াত পেতেন।
জাসদও এই দিবসটি পালন করে। ওরা বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে পালন করলেও - প্রকৃতপক্ষে প্রতারিত ও "জাসদের শেষের শুরু" দিবস হিসাবে পালন করা উচিত বলেই মনে করি। কারন আওয়ামীলীগের বিরোধী বিরাট একটা তারুন্যের দল ছিল জাসদ - বিপ্লব - গনবাহিনীর ইত্যাদি অতিবিপ্লবী কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়ে এরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিগনিত হয় - পরে কর্নেল তাহেরের একটা ঐতিহাসিক ভুলে এই দিনে জিয়াউর রহমান জাসদের মৃত্যর পরোয়ানা জারি করে এইদিনেই।
তৃতীয় যে দলটা এই দিবসে পালন করে তারা হলো জামাত বাজাই। যদিও এরা বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে পালন করে - প্রকৃতপক্ষে না বিপ্লব - না সংহতি - কোনটার সাথেই এদের কোন যোগাযোগ ছিলোনা। বরঞ্চ এরা এই দিনটাকে পুনর্জন্ম দিবস বা "ভাগাড় থেকে প্রত্যবর্তন" দিবস হিসাবে পালন করলে বরঞ্চ সত্যের কাছাকাছি যাবে।
(৩)
আর সাধারন মানুষ?
মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেঈমানী করলো একজন মুক্তিযুদ্ধা, প্রতারিত হলো একটা দল আর বিশেষ করে প্রতারিত হলেন একজন মহান মুক্তিযুদ্ধ তাহের - এই বিষয়গুলো দেখার পর - দিনটি জাতীয় প্রতারনা দিবস হিসাবে পালন করতে পারেন।
(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ জেনোসাইডবাংলাদেশ.অর্গ)
(পূর্বে প্রকাশিত)
২১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন