somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর্নীতিকে রাজনীতিকরন করা আরেকটা দূর্নীতি - যার কবলে আজ বাংলাদেশ

১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুতেই একটা ধন্যবাদ দিয়ে নিচ্ছি বিএনপির এমপি রেহানা আক্তার রানুকে। একটা গনতান্ত্রিক পদ্ধতির ভিতরে যেভাবে দূর্নীতি এবং অনিয়মের বিষয়টিকে যেভাবে মোকাবেলা করার নিয়ম - উনি তা করেছেন। সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রীকে জেরা করেছেন এবং সংবাদ সন্মেলন করে তা জনগনকে জানিয়েছেন। সেখানে একটা উপকমিটিও তৈরী করা হয়েছে - আশা করি উনি কমিটিতে নিয়মিত ভাবে সক্রিয় থেকে ঘটনার মুল রহস্য জনসাধারনের জন্যে উন্মুক্ত করবেন। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই - যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নামে অভিযোগ উঠে না। তারা সংসদীয় কমিটিগুলোতে তার শুনানী করে - যা জনসাধারনের জন্যে উন্মুক্ত থাকে এবং জনগন আসল সত্যটা সেখান থেকে জানতে পারে। যদি এমপি রানুর এই ভুমিকা বিএনপির ভুমিকা হয় - তা আসলেই অভিনন্দন যোগ্য - বলতে হবে বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত গনতান্ত্রিক শাসনে মুল ভিত্তি - জবাবদীহিতা - তা দেখতে পাবে।

(২)

বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দূর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। ড. আসিফ নজরুল এক টকশোতে বলছিলেন - তারেকের দূর্নীতি প্রমানিত না - কিন্তু পাবলিক পারশেপশান হলো তারেক দূর্নীতিবাজ। ব্যস, হয়ে গেলো আমাদের রাজনীতিবিদদের দূর্নীতির কাহিনীর সমাপ্তি। রাজনীতির ডামাডোলে তদন্তের আগেই দুই দল সমর্থক দুই পক্ষে জিন্দাবাদ দিয়ে যার যার সুবিধামতো অবস্থান নিয়ে নেবে। ফলাফল - পাবলিক পারশেপশান হয়েই থাকবে সকল অভিযোগ - দূর্নীতিবাজরা আবারো পদে পদায়িত হবে - সাথে থাকবে একদল উঠতি দূনীতিবাজ - যার পুনপৌনিকতায় দেশের সকল স্থরে সুশাসন দূর্নীতির কালো ছায়া ঢেকে কুশাসনে পরিনত হবে। যার নমুনা বাংলাদেশে দড়দগে ঘায়ের মতো দৃশ্যমান।

ঘটনার প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে সুরঞ্জিত বাবুর ঘটনা রাজনীতির দিকে মোড় নেবে। এখন যে নেয়নি তার কিছু কারন আছে - সবাই জানি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১/১১ এর সংস্কারপন্থী ছিলেন এবং অতিকষ্টে মনজিলে মকসুদে ফিরেছেন। তাই সরকারের ভিতরে উনার বন্ধু অনেক কম। সেই কারনে এখন আওয়ামীলীগ উলংগ হয়ে উনার পক্ষে নামেনি। তবে সমীকরনের বিপরীত দিকে চাপে ঘটনা যে দ্রুতই ঘটবে তার আভাস ইংগিত দেখা যাচ্ছে। সোজা কথা বিএনপি থেকে লাগামহীন ভাবে এই ঘটনার জন্যে আওয়ামীলীগকে যত দ্রুত টিনটেট করতে যাবে - আওয়ামীলীগও বাংলাদেশের নিয়ম অনুসারে সবকিছু অস্বীকার করে তা রাজনৈতিক রং চড়াবে এবং পরষ্পরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ির আড়ালে দূর্নীতির তদন্ত আর বিচার হারিয়ে যাবে।

(৩)


এইটা হলো বাংলাদেশের মানুষের জন্যে দুর্ভাগ্য। দূর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত জনপ্রশাসনকে চালানোর জন্যে যখন বসানো হয় নীতিহীন আদর্শহীন রাজনীতিবিদদে - তারা প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার পাকে পড়ে অতিদ্রুতই দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রীদের দূর্নীতির রক্ষক হয় প্রশাসনের আমলা আর কর্তারা। কদাচিত দুই একটা ঘটনা বের হয়ে আসে - তা নিয়ে হৈ চৈ করে সংবাদ মাধ্যম। তখন সংবাদের কাটতি বাড়ানোর এবং দলীয় দৃষ্টিভংগী প্রতিফলনের জন্যে তারারও রং চং লাগিয়ে আসল ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিয়ে যায়।

এর সাথে যোগ হয় রাজনীতিবিদদের লাগামহীন গেজ গেমই। অনেকের কথা শুনে মনে হবে ঘটনার সময় সুরঞ্জিতের সাথেই ছিলেন উনি - অবশ্য প্রায় সকল রাজনীতিবিদের একই রকম অভিজ্ঞতা থাকায় শুধু মাত্র পাত্র পরিবর্তন করে নিজের ঘটনাটাই বলে দিলে জনগন মজা পায় - বিনোদিত হয়। কিন্তু ঘটনাকে রাজনীতিকরনের ফলে দূর্নীতির রহস্য উদ্ঘাটন বা বিচার কোনটাই হয়ে উঠে না। কারন একই ঘটনার হরেক রকমের ভার্সান বাজারে থাকে - আর যে যার সুবিধামতো ভার্সান বাজিয়ে আনন্দিত হয়।

(৪)

আজকে সবচেয়ে বেশী বিনোদন পেয়েছে বহুরুপী মওদুদ সাহেবের কথা শুনে। উনি মুখ না খুললেই ভাল হতো - কারন মওদুদের মতো মানুষ যখন কোন বিষয়ে কথা বলে তার কোন সুরাহা করার চেয়ে তার পিছনের রাজনীতিটা কি তাই বিপক্ষ দল খুজতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। স্বাধীনতার পর থেকে যে লোক সবচেয়ে বেশী বার দূর্নীতির দায়ে মন্ত্রীত্ব হারিয়েছে এবং জেলে গেছে - তিনি হলেন মওদুদ। কিন্তু সব সময়ই উনি রাজনীতির ছত্র ছায়ায় উনার দূর্নীতির অভিযোগকে আড়াল করেছে সাফল্যজনক ভাবেই। আরেকটা মজার বিষয় ছিলো - উনি যার ছবি মাথার উপরে টাংগিয়ে অন্যের দূর্নীতির বিষয়ে বয়ান দিচ্ছিলেন - সেই তারেক হলো বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে সবচেয়ে বেশী দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং তারেকের দূর্নীতির প্রমান শুধু দেশেই না - দেশের বাইরেও রয়েছে। মওদুদ সেই নেতার জন্যে রাজনীতি করেন - যিনি দূর্নীতির বরপুত্র হিসাবে পরিচিত এবং নিশ্চিত ভাবে পরবর্তী নেতা। নিজের নেতার দূর্নীতিকে রাজনীতির আড়ালে ঢেকে দিয়ে যখন কেউ অন্যের দূর্নীতি নিয়ে উপদেশ দেয় - তা সাধারন মানুষের জন্যে একটি জটিল বিষয় হয়ে যায়। তাদের সামনে আর কোন উপায় থাকে না। যদি মওদুদ দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত তারেককে দল থেকে পদত্যাগের দাবী করে আজ সুরঞ্জিতের দূর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবী করতেন - তা হতো সত্যিকারে দেশের জন্যে রাজনীতি - রাজনীতিকদের হিপোক্রসীটা মানুষ বুঝে - এর থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন।


আর দেশের দূর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি কর্মকর্তা কর্মচারী দূর্নীতিতে জড়িত - এরা যখন মওদুদ সাহেবের দূর্নীতি বিরোধী বয়ান শুনে - তারা স্বস্থি বোধ করে - কারন তারা জানে দূর্নীতি যখন রাজনীতির উপাদান হয়ে যাচ্ছে - জনগনের নজর তাদের উপর আর আসবে না।

(৫)


স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের নামে যত দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে - তার সঠিক তদন্ত বা বিচার হয়নি - কারন একটাই রাজনীতির আড়ালে তাকে ঢেকে দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া। আজ যখন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই থেকে এসে তারেকের দূর্নীতির স্বাক্ষী হচ্ছে - জাতি সংঘের এন্টি মানিলন্ডারিং ম্যানুয়ালে তাদের নাম উঠছে দোষী হিসাবে - তখন তারেকের ছবি তার পিতা মাতার থেকে আরো বড় হয়ে উঠছে দলীয় ব্যানারে। ম্যাসেজটা কি - যে যাই বলুক - তারেকের রাইট আছে দূর্নীতি করার আর তার বিচার করার ক্ষমতা নেই কারোই - তাইতো। একই পথ ধরে যদি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রংগিন ছবিওয়ালা ব্যানার দেখি ঢাকা কোন একটা মানব বন্ধনে - তাহলে কি অবাক হবো?

যারা দেশের মানুষের জন্যে দয়া মায়া অনুভব করে তাদের উচিত দলমতের উদ্ধে উঠে নির্বিশেষে সবাই দূর্নীতি বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া - দূর্নীতিবাজদের প্রথমত রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কারের দাবী করা। তা সুরঞ্জিতই হোক আর পিন্টুই হোক - তাদের যে দল রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে তাদের ধিক্কার জানানো - তাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা। দূর্নীতিকে রাজনীতিকিকরন করলে হয়তো কোন একটা রাজনৈতিক দলে সাময়িক লাভ হয় বটে- কিন্তু তার ফলাফল হয় ভয়াবহ। যা বাংলাদেশে দেখছি - ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই দূর্নীতিবাজদের আধিক্য দেখা যায়। কারন দূর্নীতিবাজরা তাদের অর্থ দিয়ে দল চালায় আর দলের পদ ব্যবহার করে সম্পদ বানায়। এই চক্র ভাংগা জরুরী এবং দেশের তরুন সমাজ যারা এখনও সেই চক্রের অংশ হয়ে যাননি - তারাই পারেন এই চক্র থেকে দেশকে বাঁচাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:০০
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×