আবারো সেই চিত্র – পুলিশের গুলিতে নিহতের লাশের ছবিগুলো রঙ্গিন ছবিগুলো পত্রিকার প্রথম পাতায় জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু এমনতর হওয়ার কথা ছিলো না – ৯০ দশকের অনেক রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলেও – বারবার হোঁচট খেয়েছে বড় দুইদলের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে।
বর্তমানে চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন – একই আন্দোলন দেখেছি ৯৪-৯৬ সালে। সরকারের ছিলো বিএনপি – কোনভাবেই বিরোধীদলের কথা শুনেনি – মাগুরার উপনির্বাচনে ভোট ডাকাতির প্রেক্ষাপট আর আজকের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের চিত্র ভিন্ন। নির্বাচনের দুই বছর বাকী আছে – বিএনপি বলেই দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন করবে না – তাইলে সরকার কি একা নির্বাচন করবে? মনে হয় না। বিএনপির আরও অপেক্ষা করা উচিত আর সংসদে গিয়ে একটা মধ্যবর্তী সরকারে রূপরেখা দেওয়া উচিত - কিন্তু তা করছে না – কারণ সরকার যা করবে তারই বিরোধী করার একটা সুযোগ রাখতে চাচ্ছে। তাতে বুঝা যাচ্ছে – তত্ত্বাবধায়ক নয় – সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যেই এই আন্দোলন।
এই বিষয়টা সবাই বুঝে যে - কোনভাবেই আগের ফরম্যাটে তত্ত্বাবধায়ক বহাল করা যাবে – নতুন ফরম্যাটে আসতে পারে – সেই জন্যে চাই সমজটা। আর সমজোতার জায়গা হলো সংসদ। বিরোধী দল সংসদে যাবে তাদের সদস্যপদ বহাল রাখতে – আর রাস্তায় আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাবে। কিন্তু গত তিনটা সংসদের ইতিহাস বলে আন্দোলন করে সংসদের পতন হয়নি। তবে কেন বিএনপি জামায়াত জোটের এই আন্দোলনের চেষ্টা।
বিষয়টা পরিষ্কার করে বলা যায় – টাইম ইজ রঙিন আউট ফাস্ট ফর খালেদা জিয়া। ২১ এ আগস্টের বোমা হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, কিবরিয়া হত্যা মামলা ইত্যাদি খালেদা জিয়ার স্বপ্নের উপর বড় একটা আঘাত হানতে যাচ্ছে। আর বছর খানেকের মধ্যেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় হয়ে যাবে – ফলে বিএনপির নেতা হিসাবে তারেকে বসানোর স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
আর খালেদার চেয়ে তাড়াহুড়া জামায়াতের বেশী। অবশেষে ওরা বুঝতে পেরেছে যে – সত্যই গোলাম আযম গ্রেফতার হয়েছে – জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আগামী নির্বাচনে আসতে পারবে না। এমনকি জামায়াতের মধ্যম সারির নেতারও নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে যাবে বিভিন্ন মামলায়। তাই বিচার বন্ধ করার জন্যে দ্রুত সরকার পতন ছাড়া আর কোন পথ নেই।
সাম্প্রতিক বিরোধী দলের কর্মসূচীগুলো ছিলো শান্তিপূর্ণ – কিন্তু গত ১৮ই ডিসেম্বরের ঘটনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে – জামায়াতের বদৌলতে বিষয়গুলো আর শান্তিপূর্ণ থাকছে না। অবশ্য জামায়াত এককভাবে ঢাকায় একটা ধ্বংসের মহড়া দিয়েছে। এরপর সিলেটের জনসভায় খালেদা জিয়ার প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীর প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে জামায়াতকে একটা লাইসেন্স দিয়েছে – যার কিছু নমুনা দেখলাম গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায়। যদিও দেখানো হচ্ছে মিছিলগুলো বিএনপির – কিন্তু তাতের হাতে লাঠি থাকার কথা নয়। লাঠি বহন করার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই বিএনপির পক্ষ থেকে আসেনি।
জামায়াত শেষ সুযোগ হিসাবে বিএনপির আন্দোলনের সুযোগে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করছে। আর বিএনপি আপাতত জামায়াতের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে ব্যবহার করে সরকারকে অগণতান্ত্রিক পথে হাঁটতে বাধ্য করছে – কিন্তু অগণতান্ত্রিক ধ্বংসাত্মক কাজকর্মগুলির দায়ও কিন্তু বিএনপি এড়াতে পারবে না।
দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত খালেদা জিয়া জামায়াত শিবির ধ্বংসাত্মক কাজগুলো আর লাশের ছবি দেখে সাময়িক বিজয়ানন্দ পেতে পারেন – তা হবে সাপের ল্যাজ দিয়ে কান চুলকানোর আনন্দের মতো। জামায়াত শিবিরে মতো কাল সাপ কখনই কোন গণতান্ত্রিক দলের বন্ধু হতে পারে না। জামায়াতের মতো সাপের ল্যাজ দিয়ে কান চুলকানোর মতো বিপজ্জনক কাজ করার আগে খালেদা জিয়াকে শতবার ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
(একই সাথ সদালাপ ও ফেসবুকে প্রকাশিত)