প্রথমেই শুরু করি লেখকের শিরোনাম নির্বাচন নিয়ে, আমার জানা মতে লেখক যুক্তিভাই কোনদিন কোরানের প্রতি মোহযুক্ত ছিলেন না - সুতরাং তার মোহমুক্তি ঘটার সম্ভবনা কোনদিনই হয়নি। সুতরাং লেখক এখানে একটু চতুরতার পরিচয় দিয়েছেন।
এই লেখাটি মূলত অন্য একজন নাস্তিক লেখকের অনেকগুলো লেখার একটা আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত সারসংক্ষেপ। নীচের সূত্রের তালিকায় ঐ লেখকের নাম না থাকায় ধরে নিতে পারি উনি নিজে এই নিক নিয়ে লিখছেন - নতুবা এটা একটা চোথাবাজী হিসাবে বিবেচিত হবে।
একজন লেখকের ৫/৬ বছরের লেখাকে এক করে কেন যুক্তিভাই এই পোস্টটা দিলেন? কারন একটাই - ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর একটা প্রচেষ্টা। দেখা যাচ্ছে - এখানে জামাত আর রাজাকারদের বিরুদ্ধে একটা প্রবল হৈ চৈ হচ্ছে - এই সুযোগে একটু ধরে আসি মুসলমানদের।
যাই হোক, যারা লেখাটা পড়ে কষ্ট পেয়েছে বা উল্লসিত হয়েছেন - তাদের দুই দলের প্রতি একটা ম্যাসেজ - এটা নতুন কোন বিষয় না। গত ৫/৬ বছর যাবত ইন্টারনেটে একদল মানুষ তাদের নামধাম লুকিয়ে করে এই ধরনের লেখালেখি করে নিজেদের “মুরতাদ” হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। নীচে যাদের নামে আছে তাদের মধ্যে সাঈদ কামরান মির্যা, আবুল কাসেম, ইবেন ওয়াক্কার এবং আলোচ্য নিকের আড়ালে থাকা লেখক আমাদের বহুল পরিচিত। এরা ৯/১১ এর পর একটা বিশেষ পরিবেশে একটা ধর্মের বিষয়ে বিশেষ ভাবে কাজ শুরু করেন। আলোচ্য লেখক নিজেকে নাস্তিক-মুরতাদ নামের আড়ালে বিভিন্ন ফোরামে লিখে তাসলিমা নাসরিনের পক্ষে প্রচার চালান। এক সময় এরা সবাই মিলে আলী সিনা নামক একজন স্বঘোষিত মুসলিম এবং ইসলাম বিরোধীর সাথে এক ইন্টারনেট ফোরাম তৈরী করে। পরবর্তীতে মতপার্থক্যের কারনে নিজনিজ ওয়েব সাইড তৈরী করে নিজেদের মতো ইসলাম এবং মুসলামনদের ধোলাই করে যাচ্ছেন। তাদের এই বিভক্তি ঘটে মুলত ইরাক যুদ্ধে নিজেদের দৃষ্টিভঙগীর কারনে। যাই হোন - এটা হলো সংক্ষেপে এই গবেষনার ইতিহাস।
আলী সিনার সাথে বিনবনা না হওয়ায় আলোচ্য লেখক বাংলাভাষী কিছু মানুষকে সংগঠিত করে নাস্তিকতা প্রচার শুরু করেন। কারন আলী সিনা মূলত ইরানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্যে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করছেন। যদিও উপরে উল্লেখিত লোকজন এখন তার উনার সাথে একমত না - কিন্তু তাদের লেখা ইসলাম বিরোধী প্রবন্ধগুলো সযত্নে উনি রেখে দিয়েছেন ওয়েব সাইডে।
সুতরাং যারা ভয় পেয়েছে - এই পোস্টটা ডিলিট হলে আপনারা লেখাটা থেকে বঞ্চিত হবেন - তাদের জন্যে পরামর্শ - যুক্তিভাইএর আগের পোষ্টগুলোতে কিছু লিংক দিয়েছেন - সেগুলো ফলো করুন। সেটা বরঞ্চ ভাল হবে - এই লেখাটাই সেখানে পরিষ্কার চলিত ভাষায় পড়তে পারবেন। সাথে সাথে আরো অনেক আকর্ষনীয় লেখা পড়তে পারবেন যাতে আপনি বিশ্বাস করবেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কোরআন আর মুসলমানরা। চেষ্টা করে দেখুন, বিফলে মূল্য ফেরত।
যুক্তিভাইএর প্রথম লেখা পড়ার পর নিশ্চিত ছিলাম উনি এই জিনিসটা নিয়ে আসবেন। যদিও দেখুন উনি জানতেন যে এটার একটা বিতর্কিত দিক আছে - “কোরান ক্যাডা লিখছে কেমনে লিখছে আর কখন লিখছে এই লৈয়া একখান অ্যানালিটিকাল লেখা লিখতে চাইছিলাম(?)। তয় সমস্যা হৈল, এইগুলান লৈয়া কিছু লিখতে গেলেই মোমিন ভক্তদের গায়ে ফোসকা পোইড়া যায়”। গত এক দশক ধরেই উনি এটা করে আসছেন - সুতরাং উনার বিষয়টা ভাল জানা আছে।
এখানে কিছু প্রশ্ন আমার মনে ঘুরে নিয়ত:
১)যুক্তিভাই বিশ্বাস করেন ঈশ্বর নেই - যুক্তি দিয়ে সেটা প্রতিষ্টিত করার দিবানিশি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি উনি বিশ্বাসই করেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্বই নেই - তবে ঈশ্বরের নামে যা হয় সবই ভুয়া - মিথ্যা। এই অবস্খায় ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে একটা বই নিয়ে আছড়াপাছড়ি করাটাকি উনার জন্য একটা পরাজয় না? এখন ঈশ্বরবাদীদের জন্য কাজটা অনেক সোজা হয়ে গেল না। শুধু বলতে হবে - এই বি বুঝতে হলে আপনাকে আগে "বিশ্বাস" করতে হবে - সেটা হলো কুরান বুঝার প্রি-রিকুইজিট। সেটাই কুরানের শুরুতে লেখা আছে।
২) যুক্তিভাইকে দেখা যায় মুলমানদের বিশ্বাসটাকে আঘাত করে উনার মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা চেষ্টা করতে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে একটা পরিকল্পিত পথ ধরে কোরানের বিশেষ বিশেষ অংশকে উনি নিজের মতো ব্যাখ্যা করেছেন। এর বিপরীতে এক সমুদ্র কথা বলার সুযোগও আছে।যদি নাস্তিকতা প্রতিষ্টার জন্যে মুসলমানই একমাত্র টার্গেট হয় - তাহলে আর যারা অন্য ধর্ম বিশ্বাস করেন তাদের বিষয়ে কি হবে? আমার জানা মতে যুক্তি ভাইএর রেফারেন্সের মানুষগুলো কোন দিন অন্য ধর্ম নিয়ে কোন কথা বলেন নি, এমন কি যুক্তি ভাইয়ের আড়ালের মানুষটিও একটা বিশেষ ধর্ম সম্পর্কে টু শব্দ করেন নি। কারন এই ধর্মকে নিয়ে কোন কথা বললে - এন্টিসেমেটিক আইনে জেলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিষয়ে অনেক কথা বলা যায়। অনেকে ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ হিসাবে দেখাতে চান। দয়া করে এটা করবেন না। কারন ৭১ এ পাকি এবং তাদের দোসররা যা করেছে তা কোন ভাবেই কোরআন সমর্থন করে না - বরঞ্চ এর বিপরীত অবস্থান নেয়। আমাদের এই ধরনের বক্তব্য বরঞ্চ সাধারন মানুষ থেকে আপনাদের দূরে ঠেলে দেবে। সেটাই জামাত রাজাকাররা চায়।
বলাই বাহুল্য যে, বাক স্বাধীনতা আর অনূভূতিতে আঘাত বিষয়টা বেশ জটিল। একটা কথা আমাদের ভুললে চলবে না যে - স্বাধীনতা মানেই অবাধ লাইসেন্স নয়। স্বাধীনতা যেমন আমাদের মুক্ত ভাবে ভাবার এবং কথা বলার সুযোগ দেয় তেমনি দায়িত্ব দেয় যেন অন্যরাও সেই অধিকার ভোগ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার। স্বাধীনতা মানে অন্যের পায়ে পাড়া দিয়ে রাস্তায় চলা নয়। অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত করে - আর যাই হোক কোন মতবাদ প্রতিষ্টিত হতে পারে না - শুধু ঘৃণারই প্রসার ঘটায়।
শেষ করার আগে একটা বিষয় বলা দরকার। বিশ্বে এখন সবচেয়ে আলোচিত মতবাদ হলো “ইসলাম"”। কারো কারো মতে ইসলাম একটা বর্বর মতবাদ। সেটার পক্ষে অনেকে ঐতিহাসিক তথ্য উপস্থাপন করে বিজয়ী হবার চেষ্টা করেন। দেখুন কমিউনিজম প্রতিষ্টার জন্যে মানুষের উপর যে ভয়াবহ নির্মম অবস্থা নেমে এসেছিল তা কিন্তু ভুললে চলবে না এবং এখন গনতন্ত্র প্রতিষ্টার নামে ইরাক আর আফগানিস্থানে যা হচ্ছে তার জন্যে কিন্তু আমরা গনতন্ত্রকে একটা ব্রুটাল সিস্টেম বলছি না।
তবে বিতর্ক তৈরী করে যার আনন্দ - সেই যুক্তিভাই সফল হয়েছেন এই পোস্টের মাধ্যমে। উনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে বিতর্কের ভিতর দিয়ে সুকৌশলে উনার মতবাদটাকে প্রবেশ করাতে পেরেছেন এবং পরিস্থিতির কারনে অনেকে বাধ্য হয়ে সেটাকে ডিফেন্ড করেছেন। যারা বাংলাদেশের ইতিহাসের গতি প্রকৃতি জানেন - তাদের জন্যে অনুরোধ - নাস্তিক ভাইদের সকল অন্ধ ভাবে সমর্থন করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনকে কমিউনিজমের আন্দোলনের পরিনতির দিকে ঠেলে দেবেন না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না নিউটন সাহেব প্রকৃত একটা নিয়মকে একটা সূত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছেন - প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া আছে - এবং শেষ প্রতিক্রিয়াটাকে মাথায় রেখেই ক্রিয়াটাকে নিয়ন্ত্রন করা দরকার।