গত ৭ই জুলাই ২০০৭ এ পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে বিশ্বের নতুন সপ্ত আশ্চর্যের নাম ঘোষনার পর বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য মনোনয়নের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভোট গ্রহন করা শুরু হয়। ২০০৮ সালের ৮ই আগষ্ট পর্যন্ত মনোনয়নের জন্য পৃথিবীজুড়ে চলবে ভোটগ্রহন। প্রাপ্ত ভোট থেকে প্রথমে ২১টি প্রাকৃতিক আশ্চর্য মনোনিত করা হবে। এরপর ন্যাচারাল সেভেন ওয়ান্ডারস নির্বাচন কমিটির বিচারক পর্ষদ এই ২১টি মনোনিত প্রাকৃতিক আশ্চর্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সাত বিজয়ী প্রাকৃতিক আশ্চর্যের নাম ঘোষনা করবেন।
সেরা সাত প্রাকৃতিক আশ্চর্যে বাংলাদেশকে জায়গা করে দিতে হলে ভোট দিতে হবে আমার, আপনার - আমাদের সবার। আর সে জন্য চাই জোরালো প্রচারনা। প্রচারনাই পারে আমাদের প্রাকৃতিক আশ্চর্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে। নিয়মমতে প্রত্যেক ভোটার মনোনয়নের জন্য একই সাথে সর্বোচ্চ সাতটি নামে ভোট দিতে পারবেন। বাংলাদেশের সেরা সাতটি প্রাকৃতিক আশ্চর্যের নামেও ভোট দিতে পারেন আপনি। কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে প্রথম ২১, তারপর সেরা সাত। তাই হিমালয়, নায়াগ্রা জলপ্রপাত, আমাজান, সাহারা মরুভুমির মত শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে লড়াইয়ে টিকে থাকার মত প্রাকৃতিক বিস্ময় নিয়েই নামতে হবে ভোটযুদ্ধে। আর সেই কারণেই কক্সবাজার ও সুন্দরবন হবে আমাদের সেরা মনোনয়ন।
বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সুন্দরবনকে প্রথম ২১ প্রার্থীর তালিকায় নিয়ে যাওয়া পুরোটাই নির্ভর করবে ভোটের ওপর। ভারতীয়দের কোটি কোটি ভোট যদি তাজমহলকে নতুন সপ্তাশ্চর্যে স্থান করে দিতে পারে তাহলে আমরা বিশ্বের ৮ম জনবহুল দেশ হয়েও কেন কক্সবাজার ও সুন্দরবনকে প্রথম ২১ প্রার্থীর তালিকায় নিয়ে যেতে পারবো না ? উপরন্তু, আমাদের এই দুই প্রার্থীর যোগ্যতাও কিন্তু অন্যদের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। আমাদের কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও নিরবিচ্ছিন্ন বালুকাময় প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। পৃথিবীর একমাত্র ১২০ কি.মি. দীর্ঘ এমন বালুকাবেলা পর্যটকদের জন্য যে কতটা ঈর্ষনীয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে, আমাদের সুন্দরবন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই সুন্দরবন হল পৃথিবীর সর্ব বৃহত ম্যানগ্রোভ বন যার স্থলভাগের আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. এবং জলভাগের আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি.। সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৬২ শতাংশই পড়েছে বাংলাদেশের মধ্যে।
কক্সবাজার ও সুন্দরবনকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হলে যেভাবে সম্ভব প্রচারনা বাড়িয়ে ভোট সংখ্যা বাড়াতে হবে। ইন্টারনেটে ইয়াহু বা গুগল গ্রুপে প্রচুর বাংলাদেশীরা আছেন। সেসব গ্রুপে এ ব্যাপারে প্রচারনা চালাতে হবে। ইদানিং বাংলা ব্লগিংয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে এবং প্রচুর বাঙ্গালী প্রায় নিয়মিত বাংলা ব্লগিং করছেন। এ ধরনের ব্লগিং সাইটগুলোতে এই ব্যাপারে জোর প্রচারনা চালাতে হবে। মাইস্পেস, ফেইসবুক বা হাই৫ এর মত সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে এই ব্যাপারে গ্রুপ খুলতে হবে। ইতোমধ্যে যদি কোন গ্রুপ থেকে থাকে তাহলে তাতে যোগদান করে অন্যান্য বন্ধুদেরকেও আমন্ত্রন জানাতে হবে। বাংলাদেশে যত সাইবার ক্যাফে আছে সেগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদেরকে এ ব্যাপারে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, যাদের ইন্টারনেট অনেক সহজলভ্য ও দ্রুতগতির তাদের আরও বেশি বেশি ভোট আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সাফল্যের শিখরে।
বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ৮ম। কিন্তু বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক কম। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদেরকে বেশি বেশি ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুলে ভোটের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। ২০০৮ সালের ৮ম আগষ্ট পর্যন্ত চলবে এই মনোনয়ন পর্ব। ততদিনে ভোটে ভোটে সয়লাব করে দিতে হবে। বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে বিশ্বের সেরা সাত প্রাকৃতিক আশ্চর্যের তালিকায়। তাই চলুন ভোট দিই আর অন্যকে বলি কক্সবাজার ও সুন্দরবন কে ভোট দিন। আমারা আমাদের মূল্যবান সময়ের একটু কি দিতে পারি না প্রিয় বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মনোনিত করার জন্য? আসুন, আমরা একে কর্তব্য হিসেবে ধরি, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে যেন থাকে আমার প্রিয় স্বদেশের নাম।
(প্রথম আলো “ঈদসংখ্যা ২০০৭” এ পল্লব মোহাইমেনের লেখার পরিমার্জিত রূপ)
কিভাবে ভোট প্রদান করবেন? জানতে হলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
ফেইসবুক গ্রুপ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে বাংলাদেশ। প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি নিয়ে গঠিত “প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে বাংলাদেশ” বিষয়ক সর্ববৃহৎ গ্রুপ। আজই যোগদান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:২০