আমি চিন্তা করছি, বাংলাদেশে তো এতদিনে আরো কয়েকপিস নোবেল প্রাইজ আসার কথা।
কেনো বুঝতে পারছেন না!
কেনো না, আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষিত তো বটেই গণ্ড মূর্খরাও এখন অসাধ্য সাধর করে ফেলছে। যা সারা বিশ্বের নামি দামি ডাক্তার বিজ্ঞানী অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ থেকে পাশ করেও করতে পারছে না।
যেমন দেখুন। এই যে এইডস রোগ। ১৯৮৯ সালের পর থেকে এটি একটি আতঙ্ক। এখন পর্যন্ত যার প্রতিশেধক চিকিৎসাবিজ্ঞান দিতে পারে নি। বরং এইডস আক্রান্ত রোগীদের নানা ছোট ছোট চিকিৎসা ( এন্টিভাইরাল থেরাপি, অপারচুনেটিক ইনফেকশন, ডায়েট এবং অন্যান্য) প্রদান করে সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করা হয়। এই এইডস রোগ সম্পুর্ণ ভাবে নিরাময় (!) করার ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে কিন্তু এই বাংলাদেশেই। জামালপুরের এক কবিরাজ আবিষ্কার করেছেন এইডস এর মহাঔষধ। যা সেবন করে আবার ৩ জন এইডস রোগী পর্যন্ত ভালো হয়ে গেছেন।
এইডস এর প্রতিষেধ আবিষ্কারের নিউজ
তাহলে বলুন, এইডস রোগের প্রতিশেধক যে ব্যক্তি আবিষ্কার করেছে, তার কি নোবেল পাওয়া উচিত নয়?
আবার কিছুদিন আগের ঘটনা। টাঙ্গাইলের শরিফুল ইসলাম নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র নাকি জ্বালানী বিহীন ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। মানে একেবারে শুন্য থেকে শক্তি(!)।
জ্বালানী বিহীন ইঞ্জিন আবিষ্কার সম্পর্কে
এই আবিষ্কার নোবেল কেনো তার থেকেও বড় কোনো পুরষ্কার থাকলে সেইটা পাওয়ার যোগ্য।
আরো দেখুন: পানির উপর দিয়ে হাটা সম্পর্কে নিউজ
এইসব হচ্ছে আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মিডিয়ার অবস্থা। বিশেষ করে ২৪ (টুয়েন্টি ফোর) টাইপের কিছু সংখ্যক অনলাইন নিউজ পোর্টাল শুধুমাত্র নিজেদের প্রচারের জন্য এইসব গাঁজাখুরি নিউজ পাবলিশ করে চলেছে অনবরত। রেপুটেসন এদের কাছে কোনো ব্যাপারই না।
যাই হোক, আমার মেইন টপিকে আসি।
আবরার নূর অর্নব। নাম শুনেই বুঝে গেছেন যে আসলে কি নিয়ে বলতে চাচ্ছি। আসলে তাকে নিয়ে আজকের মাতামাতির পুরোটাই এইসব মাতাল মিডিয়ার বদৌলত। তাই শুরুটা করলাম নিউজ পোর্টালগুলোর সুনামের মাধ্যমেই।
কে এই আবরার নূর অর্নব?
যশোরের ছেলে। পরিবারের সাথে থাকে ঝিনাইদহে। বাবা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী করেন। ওর ফেসবুক প্রোফাইলে জন্মতারিখ হিসেবে দেয়া আছে ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭। অথচ পড়ে ক্লাস সেভেনে (কোনো সমস্যা না, তবে একটু খটকা)। সম্প্রতি দেশীয় সব ভুজুং-ভাজং নিউজ পোর্টাল শুধু নয়, শীর্ষস্থানীয় কিছু সংবাদ মাধ্যমও তাকে নিয়ে ব্যপক প্রচারণা শুরু করেছে। মিডিয়া যেটা তেল মশলা মেখে উপস্থাপন করছে, পাবলিক সেটা গোগ্রাসে গিলছে। প্রথম সারির চ্যানেলগুলোও থেমে নেই। এই মশলা মাখানো নিউজটি অনলাইনের টুয়েন্টি ফোর টাইপ নিউজ পেপার যেমন, Jagonews24.com, দৈনিক মাথাভাঙ্গা ছাড়াও মানবজমিন এর মত পত্রিকাও হুবহু কপি পেস্ট করে প্রচার করছে।
জাগোনিউজ২৪ এর নিউজ
মাথাভাঙ্গার নিউজ
মানবজমিন এর নিউজ
নিজটাতে বলা হয়েছে, ওয়েবসাইটটি তৈরি করার পর কয়েক বার হ্যাক করে পুরোটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারায় মোবাইলে মুহূর্তে মুহূর্তে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে হ্যাকাররা।
এখানে কিছু বিষয় বলার আছে।
একটা ওয়েবসাইট যখন তৈরি করা হয়, সবার আগে ডেভলপার মাথায় রাখেন ওয়েবসাইটটির নিরাপত্তার বিষয়ে। কেননা, হ্যাকাররা সবসময়ই আড়ি পেতে থাকে এমন ওয়েবসাইটের জন্য, যা সে সহজে হ্যাক করতে পারবে। কিন্তু, হ্যাকাররা কেনো হ্যাক করবে?
সাধারণত ব্লাক হ্যাট হ্যাকাররা এই ধরনের কাজ করে থাকে। কারণ তারা এমন ওয়েবসাইট হ্যাক করে এবং কিছু হিডেন স্ক্রিপ্ট ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করায়, এবং নানা অফারও ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশ করে। এর মধ্যে সিপিএ অফার এবং অনলাইন শপিং এর ছাড় সংক্রান্ত অফার বেশি থাকে। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা কারো আইডেন্টিটি বা ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন চুরি করে নিজের কাজে ব্যবহার করে, এবং ডার্ক ওয়েবে বিক্রিও করে দেয়। কাজেই অর্নবের ওয়েবসাইটটি পাবলিশ হওয়ার পর হ্যাক হওয়া কোনো বড় ব্যাপার নয়।
এর পর আসে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয়া। হ্যাকাররা হুমকি দিচ্ছে বুঝলাম, কিন্তু কোন হ্যাকার? পৃথিবীতে শুধু একটা হ্যাকার গ্রুপ নেই, অসংখ্য আছে। যদি বাংলাদেশের কথাই ধরি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশ সাইবার আর্মি, তারপর আছে সাইবার ৭১, বাংলাদেশ ব্লাক হ্যাট হ্যাকার গ্রুপ, এনোনিমাস বাংলাদেশ। কিন্তু এদের মধ্যে কে বা কারা অর্নবকে হত্যার হুমকি দিতে যাবে। তার আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কেন অর্নবকে হত্যার হুমকি দিবে?
হ্যাকারদের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে স্ক্রিপ্ট চুরি করে তৈরি করা একটা ওয়েবসাইটের জন্য ক্লাস সেভেনের একটা বাচ্চা ছেলেকে হত্যার হুমকি দিবে। দেশের মানুষ কি আজকাল তার ব্রেইন খুলে জারে ভরে রাখে নাকি!!!
আর যদি ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে কেউ হুমকি দিয়েও থাকে, প্রশাসন কি করে। ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ কারীকে ধরা হচ্ছে না কেনো? বাংলাদেশের টেকনোলজি অন্তত এতটা দুর্বল নয় যে এটা করতে পারবেনা।
অর্নবের Post touch এর সোর্স কোড যদি একটু মনোযোগ দিয়ে বিশ্লেষন করেন, তাহলে সেখানে আপনি একটা শব্দ বেশ কয়েক যায়গায় খুজে পাবেন। শব্দটা হলো wowonder ।
wowonder একটি PHP স্যোসাল মিডিয়া সাইট স্ক্রিপ্ট। যার মূল্য ৫৯ ডলার। আসলে পোস্ট টাচ তৈরি করা হয়েছে এই wowonder এর সোর্স কোডের মাধ্যমেই। তবে অর্নব এই কোড ৫৯ ডলার খরচ করে কিনে ব্যবহার করছে না। সে ব্যবহার করছে এটার ক্রাক ভার্সন। যখন এই আনঅথরাইজড স্ক্রিপ্ট ব্যবহারের ডাটা wowonder পায়, তখন অর্নবকে তারা একটা অটোমেটেড মেইল পাঠায় বলে অনেক যায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সাইবার ৭১ এর ফেসবুক পেজ। সাইবার ৭১ এর ভাষ্য অনুযায়ী, স্ক্রিপ্টের মালিকপক্ষ অর্নবের ক্রাক ভার্সন ব্যবহারের খবর জানতে পেরে তার সাথে যোগাযোগ করেছে, তাকে মেইলে এরকম কিছু জানিয়েছে "You are using an unauthorized and hacked version of our script. Please note, our copyright policy does not allow anyone to use hacked script. We are requesting you to kill the site immediately." সাধারণ এরকম স্ক্রিপ্ট বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট চুরি করলে মালিকপক্ষ থেকে এটা জানানো হয়। কিন্তু এই ছেলে এটা বুঝে বা না বুঝে "kill" শব্দটাকে "খুনের হুমকি" হিসেবে প্রকাশ করে তুলকালাম কান্ড করেছে।
তাহলে বুঝতে পারলেন, আসলে ব্যাপারটাকে যতটা ঘেটে খিচুড়ি করা হচ্ছিল, এটা তেমন কোনো জটিল ব্যাপারই না। তবে মিডিয়াতে এত হৈ চৈ কেন?
সঠিক কি কারণে মিডিয়া এত হৈ চৈ করছে সেটা পরিষ্কার না। হয়ত পাঠক আকর্ষণের জন্য। ক্লাস সেভেনের একটা বাচ্চা একটা ওয়েবসাইট বানিয়েছে, তাও আবার ফেসবুকের সামিল(!)। হ্যাকাররা তাকে খুনের হুমকি দিচ্ছে, বাজারে খুব চলবে নিউজটা, এইসব ভেবে। অথবা, অর্নব বা তার পরিবার মিডিয়াকে ঘোল খাইয়েছে।
ঘোল খাওয়ানোর ব্যাপারটা খুব কঠিন কিছু না। কারণ অর্নব এর আপন চাচা আনোয়ার পার্ভেজ দৈনিক কল্যাণ নামক একটা পত্রিকার সাংবাদিক। আর অনলাইনে দেখলাম অর্নবের চাচা অর্নবকে মারাত্মক ভাবে আস্কারা দিচ্ছে।
অর্নবের চাচার ফেসবুক আইডি
অর্নব কি জেনে শুনে এইগুলো করছে?
এটা অর্নবের ফেসবুক আইডি একটু ঘুরে আসলে আপনি এমনিতেই বুঝতে পারবেন। অর্নবের টাইমলাইনের একটি শেয়ার পোস্টের কমেন্টে অর্নব নিজে স্বীকার করেছে যে সে একবারও বলে নাই যে, সাইটটা তার নিজের তৈরি করা। একই পোস্টের কমেন্টে অর্নব এও বলেছে যে মিডিয়া তাকে নিয়ে যা প্রচার করছে তা সে কখনো মিডিয়াকে বলে নাই, এবং মিডিয়ার এই প্রচারে অর্নবের কোনো সমর্থন নেই।
কিন্তু অর্নবের টাইমলাইনে ঘুরে আসলে দেখবেন, ওকে নিয়ে যে কয়টা নিউজ পোর্টালে মিথ্যা প্রচার চলছে তার প্রত্যেকটা সে খুব যত্ন সহকারে শেয়ার করেছে। তাহলে এটা কিভাবে মেনে নেয়া যায় যে মিডিয়ার এসব প্রচারণায় তার কোনো ভূমিকা নাই।
অর্নবের ফেসবুক আইডি
ঐ একই পোস্টের কমেন্টে অর্নবের বন্ধু মুরতাহিল ইসলাম অর্প অর্নবকে উদ্দেশ্য করে বলেছে যে, “দোস্ত, তুই তোর সাইট নিয়ে একটু বেশি অহংকারী হয়ে গেছিস।”
যার প্রতিবাদও অর্নব খুব অহংকারের সাথেই কমেন্টে করেছে।
অর্নবের বন্ধু মুরতাহিল ইসলাম অর্পর ফেসবুক আইডি
অর্নবের এই পোস্ট টাচ ছাড়াও আরো একটা ওয়েবসাইট আছে। Paypal from bd
এখানে অর্নব বলেছে যে, বাংলাদেশ থেকে পেপাল একাউন্ট নেয়ার জন্য সে একটা কার্যকর, সিক্রেট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এবং এর মূল্য সে দিয়েছে ২০০০ টাকা।
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে বাকি নেই সে একটা ধান্দাবাজ ছেলে। ওর বিরুদ্ধে বরং প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:১৮