মনস্তাত্বিক সবকিছুই আমার ভালো লাগে। সম্পর্কিত মনোবিজ্ঞান ও। যদিও আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়গুলোর মধ্যে সাইকোলজি পরে না, তবুও একটা সময় আমার কেটেছে শুধু সাইকোলজি ভিত্তিক বই পড়ে পড়ে। কিছু কিছু সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার আমাকে একদম মুগ্ধ করে রেখেছিলো। অবাক হয়ে ভাবতাম, ‘এও সম্ভব’। একদিন জানতে পারলাম প্যারাসাইকোলজির কথা। তখন থেকে চিন্তা ভাবনা একেবারে চেঞ্জ হয়ে গেল। আসলে প্যারাসাইকোলজির গভীর থেকেই হয়ত আমার যাত্রা শুরু হয়েছিলো। তারপর ধীরে ধীরে বাইরের দর্শন।
যাই হোক, কাজের কথায় আসি। কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে স্পেশাল হেড নামক এক ব্যাক্তির কথা জানতে পারি। যে কিনা মনস্তাত্বিক শক্তি ব্যবহার করে শুণ্যে ভেসে থাকতে পারে। যাকে প্যারাসাইকোলজির ভাষায় বলে লেভিটেশন। বিজ্ঞানের ভাষায় যদি বলেন, তবে লেভিটেশন শুধু লেভিটেশন থাকে না, তার আগে একটা বাড়তি শব্দ যুক্ত হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘ম্যাগনেটিক লেভিটেশন’। আমি যখন প্রথম স্পেশাল হেড এর লেভিটেশন এর ভিডিও দেখি, সত্যি বলতে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কেন তা একটু পরেই বুঝতে পারবেন।
স্পেশাল হেড শুধু আলোচিত ব্যক্তিই নন, সমালোচিতও বটে। তার লেভিটেশন কি সত্যিকারের সেই প্যারাসাইকোলজি বা স্পিরিচুয়াল লেভিটেশন, নাকি এটাও কোনো একধরনের ট্রিক বা ইলুশন, সেটা নিয়ে আছে অনেক তর্ক-বিতর্ক, আছে অনেক প্রশ্ন। তার আগে লেভিটেশন সম্পর্কে একটু জেনে আসি।
১. লেভিটেশন (Levitation):
প্যারাসাইকোলজির চোখ দিয়ে দেখলে লেভিটেশন বা ট্রান্সভেকশক, সাইকোকাইনেসিস বা টেলিকাইনেসিস এর সাথে ব্যাপকভাবে সম্পর্কিত। সাইকোকাইনেসিস বলতে আসলে বোঝায়, অতিইন্দ্রিয় শক্তি ব্যবহার করে কোনো অবজেক্ট বা বস্তুকে সরানো, স্থানচ্যুত করা বা ম্যানুপুলেট করা। এই অবজেক্টটি মানুষও হতে পারে। লেভিটেশন শব্দটার সাথে আমরা অনেক বেশি পরিচিত। এই লেভিটেশন জিনিসটিও বলতে পারেন একধরনের সাইকোকাইনেসিস, যেখানে অবজেক্ট আপনি নিজে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো, প্যারাসাইকোলজি নিজেই বলে যে লেভিটেশনের কোনো বাস্তব বা চাক্ষুস প্রমাণ নেই।
১.১ লেভিটেশনের প্রকারভেদ (Types of Levitation):
লেভিটেশন বলতে আমরা শুধু অতিইন্দ্রিয় বা মনস্তাত্বিক কোনো ক্ষমতার কথাই ভেবে থাকি। চলুন পরিচিত হয়ে আসি আরো কিছু লেভিটেশনের সাথে।
· সাইকিক লেভিটেশন- প্রথমেই আসছে সাইকিক লেভিটেশন। আমার লেখার মূল বিষয়। সেই অতিইন্দ্রিয়।
· ম্যাগনেটিক লেভিটেশন- অনেকেই ম্যাগনেটিক লেভিটেশন সম্পর্কে শুনেছেন। বিশেষ করে জাপানের ম্যাগট্রেন এর রেকর্ড এর পর থেকে, এই ট্রেন ম্যাগনেটিক লেভিটেশন এর মাধ্যমে চলে। ম্যাগনেটিক লেভিটেশন চৌম্বক এর বিকর্ষণ ধর্ম ব্যবহার করে কাজ করে। ৬০৩ কিমি বেগের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ম্যাগট্রেন নামক এই ট্রেন। বিস্তারিত
· ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক লেভিটেশন- ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক লেভিটেশনে ইলেক্ট্রোনিক ফিল্ড ব্যবহার করা হয় গ্রাভিটেশনাল ফোর্সকে কাউন্টারএক্ট করার জন্য।
· এরোডাইনামিক লেভিটেশন- এরোডাইনামিক লেভিটেশন কাজ করে কোনো গ্যাস এর স্ট্রিম ব্যাবহার করে। যেমন, ভ্যাকিউম ক্লিনারকে ব্লো মুড এ করে রেখে কোনো পিং পং বলকে লেভিটেট করা যায়। যদি যথেষ্ঠ সোর্স থাকে, তাহলে যে কোনো বড় অবজেক্টকে এই প্রক্রিয়ায় লেভিটেট করা সম্ভব।
· একোস্টিক লেভিটেশন- একোস্টিক লেভিটেশনে যা ব্যবহার করা হয় তা হলো সাউন্ড ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গ। যার মাধ্যমে লেভিটেশন করার মত ফোর্স বা শক্তি উৎপন্ন করা হয়।
· অপটিক্যাল লেভিটেশন- অপটিক্যাল লেভিটেশন অনেকটা নয় পুরোটাই আমাদের দেখা সায়েন্স ফিকশন মুভির দৃশ্যের মত। ব্যাখ্যা করি, আমরা অনেক সায়েন্স ফিকশন মুভিতে দেখে থাকবো যে কোনো একটি অবজেক্ট কোনো একটি বেস এর উপর ঘুরছে বা শুণ্যে ঝুলে আছে। এই প্রক্রিয়া হলো অপটিক্যাল লেভিটেশন। অপটিক্যাল লেভিটেশনে কোনো একটি উপরিমুখি বল দ্বারা মহাকর্ষ বলকে পরাজিত করা হয়। আর এই কোনো একটি উপরিমুখি বল হলো, ‘ফোটন মোমেনটাম ট্রান্সফার’। (এখানে ফোটন এর রেডিয়েশন প্রেসারকে ব্যবহার করা হয়।)
· বোয়েন্ট লেভিটেশন- যখন কোনো গ্যাস এর প্রেসার এর কারণে এর ঘনত্ব বেড়ে যায় (কোনো কঠিন বস্তুর থেকে বেড়ে যায়), তখন ঐ কঠিন বস্তুকে ঐ গ্যাসের প্রেসার দ্বারা লেভিটেট করা সম্ভব। এটা হয়ে থাকে বোয়েন্সি এর কারণে। এজন্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যেন তার কোনো অবজেক্ট এর সাথে রাসায়নিক ক্রিয়া না করতে পারে। যেমন, জেনন। জেনন ১৫৪ এটিএম প্রেসারে পলিইথিলিন লেভিটেট করতে ব্যবহার করা হয়।
· কাজিমির ফোর্স- সম্প্রতি বিজ্ঞান এই কাজিমির ফোর্স আবিষ্কার করেছে। এটি কোয়ান্টাম মেথড মেনে চলে এবং শুধুমাত্র অতি ক্ষুদ্র কণা লেভিটেট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
বিস্তারিত
১.২ সাইকিক লেভিটেশন:
এবার আসি সাইকিক লেভিটেশনে। এখানে লেভিটেশন বা ট্রান্সভেকশন বলতে কোনো রহস্যময় প্রক্রিয়ায় মানব দেহ বা অন্য যে কোনো অবজেক্ট শুণ্যে ভেসে থাকা বোঝায়। প্যারাসাইকোলজির কিছু পাগলাটে ধরনের ভক্ত এবং ধর্মবিশ্বাসীরা মনে করে থাকে যে এই লেভিটেশন হচ্ছে মনস্তাত্বিক বা স্পিরিচুয়াল কোনো এক অতিপ্রাকৃতিক শক্তির ফল। বিজ্ঞানীমহল বা সায়েন্টিফিক কমুনিটির সদস্যগণ বলেন, এখানে লেভিটেশনের কোনো চাক্ষুস প্রমাণ নেই, অথবা একে বৈজ্ঞানিক থিওরি দ্বারা ব্যাখ্যাও করা যায় না। সাইকিক লেভিটেশন শুধুমাত্র কোনো যাদুর ট্রিক, ইলুশন অথবা হ্যালুজিনেশন।
২.০ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লেভিটেশনের কিছু চমকপ্রদ ঘটনা পাওয়া যায়। সাইকিক লেভিটেশন সম্পর্কে জানতে হলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
· বৌদ্ধ ধর্ম- কথিত আছে গৌতম বৌদ্ধ একবার এক ব্রাক্ষ্মনকে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের দীক্ষা দেয়ার জন্য পানির উপর দিয়ে হেটে (পা পানিতে না ছুইয়ে শুন্যে ভাসমান অবস্থায়, যাকে আমরা লেভিটেশন বলতে পারি) গিয়েছিলো। আরেক বৌদ্ধ গুরু মিলারেপার নাকি এমন মনস্তাত্বিক ক্ষমতা ছিলো যে তিনি লেভিটেশন করা অবস্থায় হাটতে, বিশ্রাম করতে এবং ঘুমাতে পারতেন। এছাড়া বৌদ্ধ পুরাণ আরো বলে, "Sitting crosslegged he flies through the air like a winged bird."
Miracles of Gautama Buddha
Milarepa
· খৃষ্টান ধর্ম- মথি ১৪:২২-২৩ এ বলা আছে যে যীশু খৃস্ট একবার তার শিষ্যদের সাথে সাক্ষাত করতে পানির উপর দিয়ে হেটে গিয়েছিলেন, যারা কিনা নৌকার উপর বসে ছিলো।
St. Bessarion the Great, wonderworker of Egypt (466) এ বলা আছে যে তিনি একবার পানির উপর হেটে নদী পার হয়েছিলেন।
এখানে দেখুন
সেইন্ট তেরেসা (এভিলায় জন্ম) তিনি নাকি ভূমি থেকে ফুটখানেক উপরে উঠে ভেসে থাকতে পারতেন এবং প্রায় আধা ঘন্টা যাবত পারতেন।
Teresa of avila
খৃষ্টান ধর্মে যত গুলো লেভিটেশনের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়, সেটা এখানে লিখতে গেলে আপনাদের যা বিরক্ত করছি তার মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই আগ্রহীদের জন্য ঠিকানা বলে দিলাম, ঢু মেরে আসবেন।
Saints and levitation
Francis of Assisi
Alphonsus Maria de Liguori
Joseph of Cupertino
Martin de Porres
Girolamo Savonarola
Seraphim of Sarov
Diveyevo
Padre Pio
"Demonic" levitation in Christianity
Clara Germana Cele
Magdalena de la Cruz
· সনাতন ধর্ম- সনাতন ধর্মেও খৃষ্টান ধর্মের মত লেভিটেশনের ঘটনা আছে শত শত। সনাতন ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করে সনাতন গুরুরা দীর্ঘদিন সাধনার পর সিদ্ধি লাভ করে। তাদের বলে সিদ্ধ পুরুষ এবং তারা লেভিটেশন করার ক্ষমতা লাভ করে। সংস্কৃততে এই ক্ষমতাকে বলে লাঘুমান অথবা দারদউরা সিদ্ধি। ইয়োগানন্দর লেখা ‘অটোবায়োগ্রাফি অব এ ইয়োগি’ বইয়ে কিছু সিদ্ধ পুরুষের কথা বলা আছে, যারা সিদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে লেভিটেশনের ক্ষমতা অর্জন করেছেন।
Autobiography of a Yogi
Subbayah Pullavar নামের একজন সনাতনী যোগী পুরুষ ৬ জুন ১৯৩৬ সালে ১৫০ জন মানুষের সামনে প্রায় চার মিনিট পর্যন্ত শুন্যে ভেসে ছিলেন। এই সময় সে শুধু তার হাত দিয়ে একটা কাপড়াবৃত লাঠি আলতো ভাবে ধরে ছিলো।
Yogi Pullavar
এছাড়া সিদ্ধি সাই বাবা নামক আরেকজনের খোজ পাওয়া যায় যে ঘুমের সময় লেভিটেশনের একটা বর্ণনা ও সম্ভবত দাবী পেশ করেন। এছাড়াও মহাঋষী মহেষ নামক এক যোগীর Transcendental Meditation movement নামে একটা অর্গানাইজেশন আছে, যেখানে নানা মেডিটেশনাল প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। যোগী উড়ণ বা (Yogic Flying) নামে একটি প্রোগ্রাম হয় সেখানে। তবে লেভিটেশন বা শূণ্যে ভেসে থাকার কোনো রেকর্ড সেখানে আছে কিনা জানা নেই।
· জুডাইজম- এখানে বালাম নামে এক প্রোফেট কথা জানা যায় যার লেভিটেশন করার ক্ষমতা ছিলো। এছাড়া আদি ইজরাইল এর রাজা সোলায়মান (ইসলামের নবী), তার নাকি হাওয়ায় ভর করে ভেসে বা উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিলো। ইসলাম ধর্মেও অনেকটা এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়।
· ইসলাম ধর্ম- ইসলামে লেভিটেশন এর তেমন কোনো বর্ণনা বা ব্যাখ্যা কিছুই পাওয়া যায় না। তবে নবী সোলায়মান যে হাওয়ায় ভেসে ভেসে খুব দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারতেন তা বলা হয় কোরআনের ৩৪ নং সূরা ‘সাবা’ এর ১২ নং আয়াতে।
وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهْرٌ وَرَوَاحُهَا شَهْرٌ وَأَسَلْنَا لَهُ عَيْنَ الْقِطْرِ وَمِنَ الْجِنِّ مَن يَعْمَلُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِإِذْنِ رَبِّهِ وَمَن يَزِغْ مِنْهُمْ عَنْ أَمْرِنَا نُذِقْهُ مِنْ عَذَابِ السَّعِيرِ
আর আমি সোলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।
In qur'an
৩.০ ইতিহাস:
ইতিহাস ঠিকঠাক ভাবে ঘাটলে এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা লেভিটেশন এর দাবীদার বা জনসম্মুখে লেভিটেশন করেছেন। প্রথমেই বলি কলিন এভান (Colin Evans) এর কথা। যিনি একজন আধ্যাত্মবাদী। এবং তিনি ১৯৩৭ সালে লন্ডন এর একটি পাবলিক পার্কে জনসম্মুখে লেভিটেশন করেন। এবং তার কিছুদিন পরেই তার লেভিটেশনের এর সিক্রেট উন্মোচন হয় এবং সে ফ্রড হিসেবে চিহ্নিত হয়। কলিন এভান এর লেভিটেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখান থেকে ঘুরে আসুন।
levitation secret revealed 70 years ago
ড্যনিয়েল ডুঙ্গলাস নামের আরেক আলোচিত লেভিটেটর এর খোজ পাওয়া যায় ইতিহাসে। Les Mystères de la science (বিজ্ঞান রহস্য) নামের একটি ফরাসি ম্যাগাজিন ড্যানিয়েল এর এই লেভিটেশনকে একটি লিথোগ্রাফ হিসেবে ব্যাখ্যা করে। আরো তথ্য:
daniel dunglas home
ইতিহাসে যারাই লেভিটেশন করার দাবি করেছে, লেভিটেশন বা শূন্যে ভেসে থাকার নজির আছে, তাদের প্রায় সবাই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখনো অনেকেই লেভিটেশন করার দাবি করে থাকে। তবে তাদের মাঝে একটা বড় আলোচনার পর্যায়ে পৌঁছেছে স্পেশাল হেড নামের এই ব্যক্তি। আর আজকের ছেলে বুড়োদের অনেকেই আবার এই ব্যাক্তিটিকে দেখে কুসংষ্কারাচ্ছন্ন হচ্ছেন।
৪.০ স্পেশাল হেড:
স্পেশাল হেড একটি ছদ্ম নাম। এই নামটি ব্যবহার করে লেভিটেশনে আলোচিত ব্যক্তিটির আসল নাম ড্যানি ওলভার্টন (Danny Worverton)। ওনার ফেসবুক আইডি:
Facebook ID Wolverton Danny
স্পেশাল হেড ওনার স্টেজ নেম। প্রকৃতপক্ষে সে একজন এন্টার্টেইনার বা স্টেজ পারর্ফমার। তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন আমেরিকা গট ট্যালেন্ট এর সিজন ৮ এ লেভিটেশন স্টেজ পার্ফরমেন্স করে। আসলে ড্যানি ইন্ডিয়ার একটা ক্লাসিক কলা (এই কলা কিন্তু ব্যানানা নয়) আমেরিকাতে খুব শৌল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার এই কলা বা লেভিটেশনটি মূলত একধরনের যাদু কৌশল। সে এমেরিকা গট ট্যালেন্ট ছাড়াও Das Super Talent, Tengo Talento Much Talento, এবং Good Day New York শো তেও তার এই কৌশন প্রদর্শন করেছেন। স্পেশাল হেড আসলে মাল্টি ট্যালেন্টেড একটা লোক। অর্থাৎ সে শুধু লেভিটেশনের যাদু দেখিয়েই বেড়ান না। সে আরো অনেক ম্যাজিক শো করে থাকেন। পাশাপাশি সে একজন মিউজিশিয়ান ও। তার মিউজিক গুলাও তার ম্যাজিক শোতেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া সে ইলেক্ট্রনিক ড্যান্স মিউজিক এর প্রোডিউসার ও। তিনি ২০০৭ সালে আফ্রিকা গিয়েছিলেন কিছু মিউজিক রেকর্ড করার জন্য। এবং আফ্রিকার গ্রামগুলো ঘুড়ে ঘুড়ে মিউজিক রেকর্ড ও করে ফেরেন তিনি। অবশেষে সাউথ আফ্রিকান ও কেনিয়ান গানের এলবামও প্রোডিউস করেন। দুটোই ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়। Detached And Unplugged এবং Off the Map।
তার নিজের দুইটা সোলো এলবামও প্রকাশিত হয়েছে। একটা ২০১১ সালে এবং আরেকটা ২০১৪ সালে। Doing Back Flips on Top of Saguaros Naked এবং Levitation Music নামে।
Itunes aulbum
এই কারণেই তাকে মাল্টিট্যালেন্টেড বলেছিলাম। যাই হোক, এমেরিকা গট ট্যালেন্ট এ পারর্ফম করার পর তার পারর্ফমেন্সের ভিডিও রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। টুইটারের অফিসিয়াল ট্রেন্ডিং স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ি ‘স্পেশাল হেড’ শব্দটা ঐ দিন টুইটারে সবচেয়ে বেশি টুইট হওয়া শব্দগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো। তার ম্যাজিক পারর্ফমেন্সকে সবাই আধ্যাত্মিক বানিয়ে রেখেছিলো। আর ড্যনিও তার ফায়দা লুটছিলো খুব ভালো ভাবেই। স্পেশাল হেড কোয়াটার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন, সে সুবাদে লাস ভেগাস এবং নিউ ইউর্কে এমেরিকা গট ট্যালেন্ট এর স্টেজে পারর্ফম করেছেন। সে কোয়াটার ফাইনালে যে পারর্ফমেন্সটা প্রদর্শন করে, তা ছিলো একটি কৃত্তিম পিরামিডের চূড়ায় বসে লেভিটেশন করা।
আর তার কোয়াটার ফাইনাল এর পারর্ফমেন্সে ঘটে বিড়ম্বনা। ধোয়া এবং অন্ধকারের মাঝেই তার পা এবং মাথা দেখা যায়, যা দ্বারা স্পষ্ট তার ট্রিক সবাই ধরে ফেলে। এবার সে যথেষ্ট ভোট না পাওয়ার কারণে আর সেমিফাইনালে যেতে পারে না। এখানে শেষ হয় এমেরিকা গট ট্যালেন্টে তার লেভিটেশন যাত্রা। এটা ছিলো এমেরিকা গট ট্যালেন্ট এর ৮১০ নম্বর এপিসোড। স্পেশাল হেড এর উদ্দেশ্যে Heidi Klum বলেন, "we could all see your special head."
৫.০ যাদু ব্যাখ্যা:
শুণ্যে ভেসে থাকা বা লেভিটেশন এর ম্যাজিক প্রদর্শন এর জন্য যে বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় ম্যাজিক ট্রিক্স ব্যবহার করা হয়, তার নাম এরিয়েল সাসপেনশন।
Aerial suspension
অনেক প্রসিদ্ধ যাদুর মত এই যাদুরও উদ্ভব ভারতবর্ষে। টমাস ফ্রস্ট নামের এক ব্রিটিশ লেখককে এক ভারতীয় ব্রাহ্মণ ১৮২৮ সালে এই জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরে মাদ্রাজেও ওই একই জাদু দেখতে পান টমাস। কোনো ক্ষেত্রেই অবশ্য তাঁকে জাদুর রহস্য বলতে রাজি হননি জাদুকররা। ইউরোপে প্রথম এই জাদু দেখান রহস্যময় জাদুকর চিং লাও। পরবর্তীকালে রবার্ট হুডিনি এ রকম একই জাদু দেখিয়ে বেশ নাম কামান। অবশ্য রবার্টের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম ছিল। তিনি মাটির সমান্তরালে একটি লাঠি স্পর্শ করে শুয়ে থাকতেন। ভারতের জাদুকর পিসি সরকারও এই অ্যারিয়াল সাসপেনশন দেখিয়ে বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বাস্তবে এই শূন্যে ভেসে থাকার পেছনের রহস্যটি অতি মামুলি। যে বাঁশ বা লাঠিটা ধরে জাদুকর ভেসে থাকেন, সেটি সাধারণত হয় লোহা বা ইস্পাতে নির্মিত অত্যন্ত মজবুত একটি রড। এর নিচের অংশ স্টেজের সঙ্গে শক্ত করে আটকানো থাকে। আর ওপরের অংশে থাকে জাদুকরের বসার মতো প্রশস্ত একটি পাটাতন। জাদুকর স্রেফ পাটাতনের ওপর বসে লাঠিটা স্পর্শ করে থাকেন। জাদুকরের পরনে থাকা লম্বা আলখাল্লা বা পোশাক পাটাতনটিকে পুরোপুরি ঢেকে রাখে। তাই খালি চোখে মনে হয়, শূন্যে ভেসে রয়েছেন।
তবে শূন্যে ভাসার এই জাদুর সঙ্গে লেভিটেশনকে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। লেভিটেশন জাদুর ক্ষেত্রে জাদুকর কোনো লাঠি বা অনুরূপ বস্তু ছাড়াই মাটির কয়েক ইঞ্চি ওপরে উঠে ভাসতে পারেন, তবে সীমিত সময়ের জন্য। আদতে এই লেভিটেশন পায়ের কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। দর্শকের দৃষ্টির সঙ্গে একটি বিশেষ কোণ সৃষ্টি করে জাদুকররা এমনভাবে দাঁড়ান, যাতে মনে হয় তিনি শূন্যে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমাদের বাংলাদেশেও স্পেশাল হেড এর মত দু একজন লেভিটেশনবাজ আছে।
ময়মনসিংহের যাদু শিবলি নামক একজন ফেসবুকে তার লেভিটেশন এর ছবি আপলোড করে ব্যাপক সারা ফেলে দিয়েছিলেন। সে লেভিটেশন করতো বিলের ওপর, তবে সে তার ট্রিক এ ব্যবহার করতো বাঁশ। যা তার ফেসবুকের আপলোডকৃত ছবিগুলোতে খুব কারসাজির সাথে ফটোশপ করা হয়েছে।
খোলা বিলের তুলনায় কোনো বদ্ধ ঘরে এই ম্যাজিকটা দেখালে সেটা বেশি এফেক্টিভ হবে ।পীর ফকির সাধু সন্যাসীরা এই কাজ বেশি করেন । তারা কোনো একটা দেয়ালের কাছাকাছি বসেন ।দেয়ালে কয়েক ফুট উচুতে একটা কাঠ/স্টিলের সিট কিংবা রড বসানো থাকে ।পীর সাহেব সেই সিটের উপরে বসে থাকেন ।
সাধারনত রুমের আলো কম থাকে ।ব্যাকগ্রাউন্ড দেওয়ালের সাথে সিটের রঙ একই রকম থাকে, এমনকি পীরের গায়ের কাপড়ের রঙ ও একই রকম হয়ে থাকে। এর ফলে পিছনের সিট কিংবা রড চোখে পড়েনা । ভক্তরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখেন যে কিভাবে পীর সাহেব শূন্যে ভেসে আছেন
ফেসবুকে শাকিল নামের এক ছেলে এইভাবে নিজের ছবি আপলোড করেছেন । অবশ্য ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে এটা জাস্ট ফটোশপ ও হতে পারে ।
Photos of Shakil
আর ফেমাস কোনো যাদুকরদের আমরা যখন দেখি কোনো সুন্দরী মেয়েকে একটা স্ট্রেচার এ শুইয়ে তাকে ধীরে ধীরে শুণ্যে ভেসে তুলছেন যাদুকর, তখন আসলেই অবাক হতে হয়। কিন্তু এটি পিউর বিজ্ঞান। চুম্বকের বিকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে এটি করা হয়। যাকে আমরা ম্যাগনেটিক লেভিটেশন বলে উপরে জেনেছি।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
কপিরাইট ক্রেডিট: কালের কণ্ঠ এবং রহস্যের সন্ধানে ফেসবুক পেজ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৭:০৩