নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি ভাষায়: Atheism; অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। ধার্মিক হতে যেমন স্ট্যাম্প লাগে, নাস্তিক হতেও এখন স্ট্যাম্প লাগে। আরেকটু ক্লিয়ার করি, মুসলমানরা যেমন লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া কেটে তার মুসলমান হওয়ার চিহ্ন রাখে, তেমনি এখনকার নাস্তিকরাও একটা চিহ্ন রাখে যে সে নাস্তিক। উপরের সংগা এখন একদমই বেমানান। প্রথম থেকেই শুরু করি।
কয়েকমাস আগে আমি সাধারণত গ্রুপগুলোতে বেশি সময় দিতাম। ডিবেট করতাম, কমেন্টে ঝড় উঠলে তাতে সামিল হতাম, অনেক মুমিন বান্দার গালাগালি উপেক্ষা করে নানা লেখা পোস্ট করতাম। তখনকার গ্রুপগু্লোর মধ্যে অন্যতম একটি গ্রুপ ছিলো 'Atheist Platform of Bangladesh'.
তো সেখানে একবার এক ব্যক্তি একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি এরকম,
"
নাস্তিক ভাইয়েরা, আপনার নাস্তিকতা দেখলে হাসি পায়। [স্মার্ট নাস্তিক] আপনারা নাস্তিক হওয়ার নিয়মগুলো মেনে চলবেন।
১।________________
২।________________
৩।________________"
এভাবে সে নাস্তিক হওয়ার কিছু নিয়ম লিখে দেয়। ব্রাকেটে লেখা বক্তব্যটি আমার। আমি সেই পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, 'নাস্তিকতাকেও যদি নিয়ম-কানুন দিয়ে বেধে দেন, তাহলে ধর্ম আর নাস্তিকতার মধ্যে পার্থক্য কি থাকলো?'
যদিও সে সময় পোস্টদাতা চুপ থেকেছিলো, কিন্তু আজ বুঝতে পারছি সে সফল হয়েছে। তার চিন্তাধারা আজ জন্ম নিয়েছে সবার মাঝেই। নাস্তিক হতে হলে আজ ট্যাগের প্রয়োজন হয়। আজ উদাহরণও দেবো, Asad Noor, কিছু দিন আগে তার একটি ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ হয়, যেখানে সে বলে যে, সে সকাল- বিকাল কোরআনের ওপর প্রসাব করে ভিডিও আপলোড করবে। কার্যসিদ্ধি সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই। যাই হোক, এর জন্য তাকে বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছে নিশ্চয়। মুফাচ্ছিল ইসলামের কথায় আসাদ ভাই আশ্রয় নেয় Sunnyur Rahman ভাইয়ের কাছে। সেখানে সানিউর ভাই তার থাকার ব্যবস্থা করে এক হিন্দু বাড়িতে। সেখানে আসাদ নুর হয়ত নিজেকে পাকাপোক্ত নাস্তিক প্রমাণ করার জন্যই গোমাংস আর মদের আসর বসায় (যেটা সানিউর ভাই আমাকে ফোনে বলেছিলো, কিন্তু আজ সানিউর ভাই সেটা ভিডিও আকারে প্রকাশ করে এবং আসাদ নুর ভাই আমাকে পরে বলেছে ইনফরমেশনটি মিথ্যা এবং মদের আসরের ব্যবস্থা নাকি সানিউর ভাই নিজেই করে দিয়েছিলেন)।
আসাদ নুর ভাইয়ের যের ধরে বগুড়ার একটি নব-নাস্তিক একই রকম ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকে। যদিও তা পরে ডিলিট করা হয়।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, নাস্তিক ট্যাগের জন্য আজকাল ধর্মগ্রন্থে প্রসাব করতে হয়, হিন্দু বাড়িতে গোমাংস খেতে হয়। আমার জন্য যদিও একটা অপশন ফাকা আছে, মুসলিম বাড়িতে শুকরের মাংস আর মদ খাওয়া। তাহলেই হয়ত আমি পাকাপোক্ত নাস্তিক হিসেবে পরিচিতি পাবো, যেটা এতদিন হয়নি।
এদিকে সানিউর ভাইয়ের একটা ভিডিও আমাকে আপসেট করেছিলো যে, তিনি নাস্তিকতা ছেড়ে দিলেন। আসলে এখানে সবারই বোঝার ভূল আছে। নাস্তিকতাটাকে ট্যাগ হিসেবে নেওয়ার কিছু নাই। যার তথাকথিত কোনো ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস নেই, সেই নাস্তিক।
কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং প্রকৃতিবাদে বিশ্বাস করে।অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যে কোন মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।
এখানে সানিউর ভাই হয়ত হিন্দু ধর্মের দর্শনকে ব্যক্তিগত ভাবে সমর্থন করছেন।
একটা সময়ে নাস্তিক শব্দটা একটা গালি হিসেবে ব্যবহৃত হত, তাও বোধ হয় ভালো ছিলো। আমি যখন সত্যের জন্য লেখালেখি করছি, আন্দোলন করছি, সত্যকে জানা ও জানানোর চেষ্টা করছি, তাহলে কি প্রয়োজন কোনো ধর্মগ্রন্থে প্রাসাব করার। এর মাধ্যমে কি ধর্মের গোড়ামিগুলোকে তুলে ধরা অথবা নষ্ট করা সম্ভব?
আমি বলবো, ধর্মগ্রন্থে প্রসাব করা, আগুন জ্বালানো এগুলো উগ্রবাদী নাস্তিকতা, যা সব নাস্তিকদের সম্মান নষ্ট করছে। নাস্তিকদের মানবতাবাদী নয়, উগ্রবাদী হিসেবে আস্তিক সমাজের কাছে তুলে ধরছে। কোথায়, হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ দা ওরা তো কেউ কোনো ধর্মগ্রন্থে প্রসাব করে নি, আগুন দেই নি। কিন্তু যুক্তির পথে ওদের অবদান অভাবনীয়।
আমি চাইছিলাম, সানিউর ভাই এসবের উত্তর দেবেন, কিন্তু তিনি চুপ ছিলেন।
নাস্তিকতা সবসময় থাকুক মানবতার পক্ষে, উগ্রবাদী ধার্মিকদের ধর্মের মত নাস্তিকতাও যেন কোনো ধর্মে পরিণত না হয়।
**I proud, I am an Atheist...
-Jubair Hossain Jihad
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১০