সময় নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। আমরা ত্রিমাত্রিক প্রাণী। আমাদের অনুভবে শুধু মাত্র তিনটি মাত্রাই বিদ্দমান। তাই হয়ত এই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে আমাদের যেটুকু জানা আছে, সময় সম্পর্কে সেই ধারণাটুকুও নেই। অন্য তিনটি মাত্রার মত আমরা সময়কেও একটি মাত্রা হিসেবেই নেই। কিন্তু না, সময়কে অন্য মাত্রাদের সাথে তুলনা করা যায় না। অন্য মাত্রায় সময় পরিভ্রমনের মত সপ্ন মানুষ দেখে না। টাইম মেশিনের মত লেন্থ মেশিন বা ওয়াইড মেশিন নিয়ে বিজ্ঞানীগণ সারা জীবন ব্যয় করে না। কিন্তু মাত্রাগুলর সাদৃশ্য সহজেই অনুধাবন করা যায়ঃ
প্রত্যেকটি মাত্রাকেই আমরা শুধু পরিমাপই করতে পারি। দৈর্ঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতা পরিমাপের জন্য স্কেল,স্লাইড ক্যলিপার্স ইত্যাদি, আর সময় পরিমাপের জন্য ঘড়ি,স্টপ ওয়াচ। তবে অন্য মাত্রাগুলোকে আমরা নির্দিষ্ট বস্তুর জন্য নিয়ন্ত্রন বা নির্ধারণ করতে পারি। সময়ের ক্ষেত্রে তা একটু অন্য রকম হয়ে পরে। কিছু কিছু বিজ্ঞানী বা চিন্তাবিদ একটা ধারণা পোষণ করেন এ ব্যপারে। যা অনেকটা এরকমঃ
‘আমরা ত্রিমাত্রিক। আমাদের মাত্রায় সময় নেই। তাই সময়ের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই, কোনোদিন থাকবেও না।‘
কিন্তু আমরা সময় পরিমাপ করতে পারি। অর্থাৎ সময়ের ওপর আমাদের পুরোপুরি কোনো হাত নেই, এটা বলা হয়ত একটু ভুল হবে।
কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে তার উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে হয়। কাজেই সময় সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই সময়ের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রেই সামনে আসে একটি অমিমাংশিত প্রশ্ন।
আমরা সকলেই এখন স্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যং থিওরি সম্পর্কে জানি। থিওরি থেকে অন্তত এইটুকু জানা যায় যে, পৃথিবীর সকল পদার্থ (যেহেতু অপদার্থ বলে কিছু নেই ) এবং শক্তি (যেমন আলো,তাপ,গতি) সেই বৃহৎ বিস্ফরণের ফলে সৃস্টি হয়েছে। কিন্তু মাত্রা?
দৈর্ঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতা কিংবা সময় এগুলোর উৎপত্তির ব্যাখ্যা বিগ ব্যংগ থিওরি দিতে পারে না। তাহলে এই মাত্রাগুলোর উৎপত্তি হলো কোথা থেকে? হয়তবা আমাদের একটু মাল্টিভার্স থিওরির দিকে চোখ বোলাতে হবে। আমি এই থিওরি সম্পর্কে যেটুকু জানি তা বলে, মাত্রা হলো এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের ধ্রুবক। যা চিরন্তন। উক্ত বৃহৎ বিস্ফরণ এর ফলে শুধু মাত্র এর ব্যপ্তি ঘটে। যখন শুধু এই মাত্রারই নয়, যাবতিও পদার্থ এবং শক্তিরও ব্যপ্তি ঘটে এই বিস্ফরণের মাদ্ধমে। মাল্টিভার্স থিওরি এও বলে যে, আমরা যেই মহাবিশ্বের ধারণা পোষণ করি, এমন মহাবিশ্ব আরো বিদ্যমান। আমাদের অগোচরেই আরো বৃহৎ বিস্ফরণ ঘটে চলেছে অথবা ঘটেছে, মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ত থাকাকালেই।।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধ্যান ধারণার শুরু সেই প্রাচীনকাল থেকেই। গ্রহ,নক্ষত্র আর পৃথিবী নিয়ে যত সাধনা করা হয়েছে তার ইতিহাস বলে শেষ করা যাবে না। তবে মাত্রা সম্পর্কিত জ্ঞান সাধনা করা হয়েছে সম্ভবত আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের পর। তার আগে যদিও বা হয়ে থাকে তা কতটা অগ্রগতি লাভ করেছিলো তা সন্দেহজনক। তবে সময় পরিভ্রমণকে মাত্রা পরিভ্রমণও বলা যায়। মাত্রা বা মাত্রিক পরিভ্রমণের ব্যপারটা শুধু যে গোলমেলে তাই নয়, মাত্রিক পরিভ্রমণের চিন্তা করতে হলে আমাদের চিন্তা কম পরবে। মাত্রিক পরিভ্রমণের ওপর একটা ফিকশন পরেছিলাম। যার নাম সম্ভবত “মাত্রাহীন যাত্রা”।
এই ফিকশনে মাত্রিক পরিভ্রমণের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা অনেকটা ফিকশন থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে মাত্রা বা ডাইমেনশন এর ব্যাখ্যা করা খুব সহজ কাজ নয়। আমরা ত্রিমাত্রিক, চতুর্মাত্রা সম্পর্কে আমরা অনেকটা অবুঝ প্রাণী। কারন আমরা কখনো চতুর্মাত্রা সম্পর্কিত কোনো অনুভব লাভ করি নি। সময় নামক মাত্রাকে আমরা কেবল পরিমাপই করতে পারি, সময়ের সংগাকেও ঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি না।
মাত্রার সাথে শক্তির কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এটাও একটা প্যারাদায়ক প্রশ্ন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শক্তিকে স্বাধীন বলেই মনে হয়। কিন্তু কোনো কোনো সময় শক্তির ওপর আধিপত্ত করে মাত্রা। এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে মাত্রা ছাড়া শক্তিকে কল্পনাও করা যায় না। খুব সাধারণ ভাবেই প্রশ্ন করা যায়, যেখানে সময় নেই সেখানে গতিশক্তি বা অন্যান্য শক্তির অস্তিত্ত্ব কিকরে থাকতে পারে?
-এর ব্যাখ্যা আমি এখনো পাই নি।
এবারে আসি বস্তু বা পদার্থের ক্ষেত্রে।
বস্তু কি মাত্রার অধীন? উত্তর-হ্যাঁ। যেখানে শক্তি মাত্রার অধীন, সেখানে বস্তুর প্রশ্ন তুলতে হবে বলে আমার মনে হয় না। একবার ভাবুন তো, যদি সময় না থাকত তাহলে মহাবিশ্বটা কেমন হত? আমি যখনি এই নিয়ে ভাবি, তখোনি সায়েন্স ফিকশনের মত একটা উত্তর মাথায় আসে। তা হল ‘পৃথিবী থেমে থাকবে’। কিন্তু তাহলে আমাদের অস্তিত্তই থাকত না। এই কয়েকশ মিলিয়ন বছরের বিবর্তনের মাদ্ধমে যে মানুষের উদ্ভব হয়েছে, তা কি করে হত? আচ্ছা, সময়ের কথা বাদ দিলাম। খুব সাধারণ একটা মাত্রা দিয়েই উদাহরণ দেয়া যায়। দৈর্ঘ্যের অস্তিত্ত না থাকলে কি হত? বস্তু কি দৈর্ঘ্য বিহীন হত? কেমন হত সেই বস্তু?
আমাদের অতি পরিচিত মাত্রা দৈর্ঘ্যই আমাদের আটকে দিলো, তাহলে চতুর্থ মাত্রা সময় নিয়ে এমন প্রশ্ন করার আগে we better have to prepare ourselves…
মাঝে মাঝে নিজেকেই মাত্রাহীন মনে হয়। সবকটি মাত্রা জেনো আমাদের নিয়ে খেলা করছে। আমরা এই মহাবিশ্বে খেলনা মাত্র। আমাদের নিয়ে খেলছে মহাকাল,প্রকৃতি আর মাত্রা।
মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে হয়, সময়ের পরের মাত্রা কি? তারপরের? তারপরের?...............
_____________________________________________________________
By #Enigmatic_Jihad
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪