মিডিয়া জগত নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি- সালমান শাহ বাংলার একজন জনপ্রিয় তারকা ছিলেন, তার জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ । মৃত্যু ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন। অভিযোগ উঠে যে, তাকে হত্যা করা হয়; কিন্তু তার সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে হত্যাকান্ডের কোনো আইনী সুরাহা শেষ পর্যন্ত হয়নি।১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। এর কোন একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফ সংকেতের স্বকন্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। একজন সম্ভাবনাময় সদ্য তরুন তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারনে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। আরও কয়েক বছর পর অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৫শে মার্চ। ঈদুল ফিতর। হিন্দি কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবির কপিরাইট বৈধভাবে কিনে আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে দিয়ে তৈরী করে কেয়ামত থেকে কেয়ামত। সেসময়কার জনপ্রিয় মডেল আনন্দবিচিত্রা সুন্দরী মৌসুমীর সাথে অভিনয় করেন অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত ইমন। প্রযোজকগোষ্ঠি অবশ্য ততদিনে পারিবারিক নামকে একটু কাটছাট করে তার পর্দা নাম ঠিক করেছেন সালমান শাহ। খলনায়ক ডন (সাম্প্রতিক ছবি) নায়ক-নায়িকা ছাড়াও এই ছবিতে ডন নামের এক তরুন খলনায়কের অভিষেক ঘটে। বেশিরভাগ ছবিতে যেহেতু তরুন নায়কের কাউন্টার পার্ট হিসেবে একজন তরুন খলনায়কের প্রয়োজন হয়, সালমানের সাথে সাথে ডনের ক্যারিয়ারও দাঁড়িয়ে যায়। সালমান নিজেও ডনকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে উপরে ওঠার সুযোগ করে দেন এবং তার প্রায় সব ছবিতেই ডনের উপস্থিতি ছিল। একসাথে প্রচুর কাজ করতে করতে ডন সালমানের পারিবারিক বন্ধু হয়ে ওঠে। কাকে বেশি সুদর্শন, স্মার্ট লাগছে? কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির ব্যবসা বা সালমানের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। সালমান সম্বন্ধে শুধু এটুকু বলা যায়, বাংলাদেশি বাংলা ছবির প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে সেই প্রাচীন আমলে রহমান এবং নায়করাজ রাজ্জাকের পর সালমানই একমাত্র নায়ক যিনি সর্বমহলে তার গ্রহনযোগ্যতা তৈরী করতে এবং তরুনদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। বাংলা ছবির নায়কদের মধ্যে সালমান ছাড়া অন্য কারো ফ্যাশন, স্টাইল লোকে তার আগে বা পরে কখনোই অনুসরন করেনি। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনী হয়ত অনভ্যাস, সিনেমা হলের পরিবেশ এবং তার অভিনীত ছবিগুলির মানের কারনে হলে যায়নি, কিন্তু নায়ক হিসেবে সালমানকে বরণ করে নিয়েছিল। (সালমান শাহ, শমী কায়সার, তমালিকা কর্মকার অভিনীত নাটক নয়ন (১৯৯৫) জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাবস্থায় তিনি বিটিভির নিজস্ব প্রডাকশন মামুনুর রশীদের ধারাবাহিক ইতিকথা এবং আরও কিছু প্যাকেজ নাটকেও অভিনয় করেন। বিটিভির নিজের নাটক, এমনকি প্যাকেজ নাটকের শিল্পীদেরও যে সামান্য পারিশ্রমিক সেটা সালমান কোন ছবির এক শিফটের কাজ করেও এর চেয়ে বেশি পেতেন। কিন্তু নিজের তারকা ইমেজকে তিনি বাংলা ছবির তথাকথিত নিয়মিত দর্শকদের মধ্যে সীমিত না রেখে সার্বজনীন জনপ্রিয়তা পেতে চেয়েছিলেন এবং একাজে তিনি দুর্দান্তভাবে সফল।
বাংলা মিডিয়াতে হয়ত এমন কোন নায়ক আর কোন দিন আসবে না। যার ১৯৯৫ সালের স্টাইল আজ আমরা অনুসরন করি।
আমার লেখাগুলো যদি কারো খারাপ লাগে তবে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি ভালো কিছু লিখতে পারি না। তবে ব্লগে লেখার খুব ইচ্ছা তাই লিখি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২৮