It kills me sometimes, how people die.
-The Ancient death
প্রস্তাবনা
চায়ের কাপে ঝড় বলে একটা কথা আছে। আজকের আড্ডায় কেন জানি সেই ঝড়টা উঠছেনা। লোক স্বল্পতা কি কারণ? রহমানের বহুযত্নে বানানো চা অনেক্ষণ হল উষ্ণতা হারিয়ে যার যার কাপের মাঝে পড়ে আছে। এমন বিস্বাদ চা! রহমান নিজেও খেতে পারেনি। অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ইমরান বলে উঠলো- এনাক্সিম্যান্ডারের নাম শুনেছিস?
রাফি কিংবা রহমান কেওই জবাব দিলনা। ইমরান আবার বলল- মহান তিনজন মাইলেসীয় দার্শনিকদের একজন। মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে তার কি মতবাদ ছল জানিস? জন্মেছিলেন ৫৪৬ খৃষ্টপূর্বাব্দে। তবুও কী প্রগতিশীল চিন্তা!
-চিন্তাটা কী?
-যে উপাদান থেকে বস্তু সমুহের সৃষ্টী, সেখানেই আবার তাদের ফিরে যেতে হয়।
রহমান সম্ভবত এই জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় বিরক্ত হয়েছে। এই মহান বানীর সাথে মানুষের আবির্ভাবের সম্পর্ক কী?
-সম্পর্ক মূলত অন্য যায়গায়। আমি আসলে তোদের বোঝাতে চাইছিলাম, এনাক্সিম্যান্ডারের চিন্তা ভাবনা কতটা কালোত্তীর্ণ ছিল!
ইমরানের স্বভাবটাই এমন। কোন কথা নিয়ে অন্যের মনে আগ্রহ তৈরীর জন্য বিষয়টা প্যাঁচাতে থাকে। রহমান কিংবা রাফি দুজনেই ব্যাপারটার সাথে পরিচিত। তারপরও রাফি বলল- আসল কথাটা বল, প্যাঁচাস কেন?
কন্ঠস্বর গম্ভীর করে ইমরান বলল- এনাক্সিম্যান্ডার ভাবতেন, মানুষ সহ জগতের অন্যান্য সব প্রাণীকূলের সৃষ্টি হয়েছে মাছ থেকে! তবে মানুষ উদ্ভূত হয়েছে বিশেষ এক প্রকার মাছ থেকে।
-তার মানে কী বোঝা যাচ্ছে? আমরা আবার মাছ হতে চলেছি? বিরক্ত রহমানের বিরক্তি কেটে গেছে। তার গলায় কৌতুক খেলা করে উঠল। রাফি যোগ করল- সর্বনাশ!
-সর্বনাশ কিসের?
-আজিমপুর গোরস্থানের তলায় নিশ্চয় এতদিনে এমন কোন ব্যাপার ঘটে গেছে? নরকংকালের একেকটা হাড় থেকে একেকটা মাছ! পাপ পূণ্যের বিচারে মাছের প্রকার ভ্যারি করবে। কেও রুই তো কেও প্যাঁকাল মাছ। গোরস্থানের তলদেশে নদী নালার প্রাকৃতিক যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে।
আড্ডা বেশ জমে গেল মাছের ব্যাপারটা নিয়ে। রাফি আর রহমান হেসে খুন হচ্ছে যত, ইমরান ততো বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে- একবিংশ শতাব্দিতে হাসির বিষয় হতে পারে, ৫৪৬ খৃষ্ট পূর্বাব্দে ব্যাপারটা মোটেই হাসির ছিলনা।
রাফি হাসতে হাসতে বলল- আমরা তো আর খৃষ্টজন্মের ৫৪৬ বছর আগে গিয়ে হাসছিনা..
বিরক্ত হয়ে টিভি অন করল ইমরান। নির্বোধেরাই কেবল অকারণ হাসাহাসি করতে পারে। তার দুই বাল্যবন্ধু নিতান্ত গবেট বই আর কিছু তো নয়। দিগদারি ছাড়া ব্যাবসায়িদের কাছে হয়ত দুনিয়ার সব কিছুই হাস্যকর। অসহ্য! মজার ব্যপার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে একটা প্রোগ্রাম চলছিল। বাঁদর থেকেও আসলে মানুষের বিবর্তন হয়নি, যেহেতু বাঁদর এখনও এক্সিস্ট করছে। নেপথ্য কণ্ঠে বলা হচ্ছে- মূলত বিশেষ এক প্রকার বাঁদর থেকে..
গত মাস চারেক হল তিনরুমের এ ফ্ল্যাটটায় ভাড়া থাকছে ইমরান। সে সরকারি ব্যাংকে চাকরি করে। কিছুদিনের মাঝেই কোয়ার্টার পেয়ে যাবার কথা। যদিও মনে হচ্ছে কিছুদিনের ব্যপারটা আসলে টুবি কন্টিনিউড। আজ সকালে তুমুল ঝগড়া হয়েছে মীরার সাথে। যথারিতী সে তার বাবার বাড়ি সোবহানবাগ চলে গেছে। ইমরান খবর দিয়ে বাসায় এনেছে বন্ধুদের। আজ তার স্বঘোষিত আড্ডা দিবস।
এ বাসার ড্রয়িং রুমটা ছোটখাট। এল এর মত করে রাখা লম্বা দুইটা সোফা। মেঝেতে মেরুন রঙের ইরানী কার্পেট বিছানো। টিউব লাইটটা কতক্ষণ ধরে জ্বলছে সে খেয়াল নেই কারো। সমবয়সী তিন বন্ধুর কেওই সোফায় বসে নেই। তারা কার্পেটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে গল্প করছে। তাদের সামনে বিশাল গামলাভর্তি ঝালমুড়ি। জ্বলন্ত সিগারেটের ধোঁয়ায় কুয়াশাবৃতের মত হয়ে আছে সারা ঘর। পাঠক, ধুমায়িত এ দৃশ্যপটটা আমাদের গল্পের গুরুত্ববহ অনুষঙ্গ বটে। তবে এখান থেকে গল্প শুরু হয়নি। আমাদের আজকের গল্প শুরু হয়েছে সুদুর উর্ধ্বাকাশ থেকে!
****
তার ডানাগুলির পালক ক্রমশ লালচে থেকে ধুসর বর্ণ ধারণ করে গোটা পূর্ব-পশ্চিমাকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থির ভাবে সেগুলো এখন মেলে ধরা বিধায় কোন আলোড়ন নেই তাতে। তার দেহ ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। মণীবিহীন সাদা চোখদুটো অদ্ভুত রকম বড় আর গোলাকৃতির। নিচের দিকে নিবদ্ধ সে চোখের দৃষ্টি। সারা দুনিয়ার কোণায় কোণায় নজর রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ওই চোখ দুটিকে। দিগন্ত বিস্তৃত মহাকালীন শুন্যতাভেদী অবয়ব তার। প্রচন্ড গতীতে নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে সেটি।
এক
খানিক আগের কৃতকর্মটার কথা ভেবে সমস্ত শরীর মনে অদ্ভূত পুলক অনূভব করে বাবর। সিলিং এ ফ্যান ঘুরছে ফুল স্পিডে। তারপরও তার সারা দেহে যেন ঘামের ফোয়ারা ছুটেছে। খাটের পাশে লাগান বড় আয়নাটার সামনে এসে দাঁড়াল সে। মেদহীন দীর্ঘ একহারা শরীর তার। নিজের দিগম্বর দেব মুর্তির দিকে তাকিয়ে থাকতে এত ভাল লাগছে আজ! সব সময়ই অবশ্য লাগে।
বড় বেশি দাপাদাপি করছিল মেয়েটা। বশে আনতে না পেরে তার দুহাত পিছমোড়া করে বেঁধেছিল বাবর। চোখের অঝর জলধারা থামানোর উপায় ছিলনা। বাবর থামাতেও চায়নি। বরং ওটা তাকে আরও উত্তেজিত করে তুলছিল। কিন্তু মেয়েটির কাতর অনুনয় যেন উচ্চস্বরে রুপ না নেয় তার ব্যাবস্থা বাবর করেছিল। ওর মুখে গুঁজে দিয়েছিল ওড়না। বয়স কত হবে মেয়েটার? সতেরো কি আঠারো? অসম্ভব ভরাট আর আকর্ষনীয় শরীর। বাবর ভাবে। দেখতেই যা ফুলো-ফলা! স্ট্যামিনা নেই মোটে। আরে সে কী জোর করে এসব করতে চেয়েছিল? স্বাভাবিকভাবে হলে এত কান্ড তাকে ঘটাতে হত? তাছাড়া এই সামান্য কারণে মরে যাওয়ার কী মানে? এত রক্তক্ষরণ আজন্মে দেখেনি সে!
যদিও বাবর এসব স্বপক্ষিয় চিন্তায় ডুবে আছে, একটু আগে মেয়েটির ওপর কী পরিমাণ পাশবিকতার প্রয়োগ সে করেছিল, তার নিজের কোন ধারণাও নেই এ সম্পর্কে!
সত্যিই মরল মেয়েটা? বিপদ তো! অপরিচিত হলেও কথাছিল। অপরিচিত তো নয়ই। রাত্রি তার দুঃসম্পর্কের ভাগ্নী। ওদের পরিবারের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার। দুলি আপার একমাত্র মেয়েটা। সপ্তাহে দুদিন তার কাছে এসে ইংরেজি পড়ে যায়। সব দিনের মত আজ সন্ধ্যায়ও পড়তেই এসেছিল মেয়েটা। কী থেকে কী যে হয়ে গেল!
বাবর খাটের দিকে তাকালো। সারা শরীরে কামড় আর আঁচড়ের অসংখ্য ক্ষত নিয়ে নিথর হয়ে বিছানায় পড়ে আছে মেয়েটা। পরনের সালোয়ার কামিজ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ায় শরীরটা অনাবৃত প্রায়। এখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে মৃদু। বাবরের চোখে ব্যাপারটা ধরা পড়েনা। রাত্রির একটা হাত ধরে পালস বুঝবার চেষ্টা করে সে। পালস টের পাওয়া যাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে গেছে তাহলে? মরেনি মেয়েটা..
ব্যাপারটা বুঝতে পারার সাথে সাথেই বাবরের মনের বিপরীত চিন্তা খেলা করতে শুরু করল। রাত্রি বেঁচে থাকলে তো আরও বিপদ। মান সম্মান সমস্ত কিছু জলে যাবে। কারও কাছে মুখ দেখাতে পারবেনা সে। এ এলাকায় থাকা কিংবা প্রাইভেট ভার্সিটির লেকচারারশিপটা? মামলা হবে নির্ঘাৎ। চোখের সামনে চলমান নিরুপদ্রব জীবনটায় অশনি সংকেত টের পায় সে।
আচ্ছা এক করা যাক। মেয়েটাকে মেরে ফেললে কেমন হয়? কাজটা সে এখনই করতে পারে। গলায় ওড়নাটা ভালমত পেঁচিয়ে কষে চাপ দিতে হবে। দু মিনিটেই কাজ শেষ..
নাহ! চিন্তাটা সাথে সাথে বাতিল করে দিল বাবর। খুন করলে ঝামেলা আরও বাড়বে। লাশ গুম করতে হবে ফের! মাথায় জট পাকিয়ে ওঠে তার। সেতো প্ল্যান করে করেনি এসব। মাথার ভিতরে শুধু যে নষ্ট চিন্তাগুলি এতদিন তাকে কুরে কুরে খেয়েছে, হুট করে আজ কেন এত বেপরওয়া হয়ে উঠল তারা? আজীবন সে তার অন্তর্গত জানোয়ারটাকে সভ্য-ভব্যতার মুখোশ পরিয়ে রেখেছে। আজ দুরন্ত লোভের উত্তাপে সে মুখোশ গলে গেল এভাবে!
তড়িঘড়ি করে বিছানার এক কোণায় পড়ে থাকা প্যান্টটা উঠিয়ে নিয়ে পরতে শুরু করে বাবর। বিছানার এদিকটা রক্তে ভেসে গেছে। শার্টটা তো ভিজেই গেছে একপাশ। ওটা হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে ওয়ার্ড্রোব হাঁতড়ে আরেকটা শার্ট বের করে সেটা গায়ে চড়ায় সে। আর কী কী করতে হবে? খুব দ্রুত করতে হবে যা করার। পালাতে হবে এই এলাকা ছেড়ে। উপায় নেই অন্য কোন। সামনের দরজা খুলে কখনই বের হওয়া যাবেনা, বিপদ হতে পারে। তাহলে কোনদিক দিয়ে বেরুবে সে?
এমন সময় দরজায় ঘা পড়ল ধামধাম শব্দে! তার ভাবনার সুতাগুলো কেও যেন ছিঁড়ে কুটি কুটি করে দিল।
বাবর সাহেব, ভিতরে আছেন? এনি প্রবলেম? কি হয়েছে? দরজা খুলুন প্লিজ.. দরজায় আবার করাঘাত পড়ছে ধামধাম শব্দে!
মাথার ভিতরটা কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গেল বাবরের। এত লোকজন আসল কোত্থেকে? নাকি তার মনের ভুল?
দুই
দরজার ঠিক ওপাশেই রহমান, রাফি আর ইমরান দাঁড়িয়ে আছে উদ্বিগ্ন মুখে। তাদের আড্ডা ভালই চলছিল। আলোচনা মাইলেটাস থেকে শুরু করে চলে এসেছিল হারানো আটলান্টিসে। রাফি আর ইমরান এক রকম জোর করেই রহমান কে বাইরে যেতে রাজি করাল। বুঝলি রহমান, সোজা করিমের হোটেলে চলে যাবি। তোদের ভাবি তো এদের মোঘলাইয়ে ফিদা হয়ে গেছে একদম.. আর হ্যাঁ, সাথে কোক আনতে ভুলিস না যেন!
মুখ বেজার করে রহমান দরজা খুলল। নিচে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগুতে গিয়ে ধরতে পারল ব্যাপারটা। এদিকের ফ্ল্যাটে দরজার ওপাশ থেকে কারও যেন গোঁঙানীর শব্দ আসছে। টানা কাতর ধ্বনীটার সাথে সূক্ষ কেমন একটা হুটোপুটি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও রহমান ব্যাপারটা তেমন বুঝতে পারলনা। গোঙানিটা যে কোন নারীকণ্ঠের এটা অবশ্য স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আশ্চর্য তো! হচ্ছেটা কি ভিতরে?
রাফি আর ইমরানকে যখন ডেকে এনেছে রহমান, তখন আর শব্দটা আসছিলনা। রহমান জিজ্ঞেস করল- কে থাকে রে এই ফ্ল্যাটে? শব্দটা আমার কাছে বিশেষ ভাল ঠেকেনি। সুস্থ কেও থাকেনা তো?
ইমরান বলল- আরে নাহ। ভার্সিটির এক অল্পবয়সী টিচার। বিয়ে করেনি এখনও। অসম্ভব ভদ্র একজন মানুষ। পড়াশোনা নিয়েই থাকেন সবসময়। রহমান তুই ঠিক শুনেছিস তো? অন্যের ব্যপারে ইন্টারফিয়ার করাটাও ঠিক হচ্ছে কিনা কে জানে! এ কথা বলে সে আবার দরজায় ধাক্কা দিল। বাবর সাহেব, এনি প্রব্লেম? দরজা খুলুন প্লিজ..
শব্দ মানুষ কে সবসময়ই কাছে টানে। সুমধুর সঙ্গিতের ধ্বনির কথা বাদ। চরম বিরক্তিকর কোন শব্দ কানে এলেও আমরা সেটির দিকে ছুটে যাই। জানতে চাওয়া হয় শব্দ কিসের এত? বন্ধ করা যায়না? আমাদের গল্পের তিন অনুষঙ্গ চরিত্র বেশ ভাল মতই হল্লা শুরু করেছে। ওপর নিচের ফ্ল্যাটের আরও দশবারোজন বাসিন্দা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে গেল। কি হয়েছে ভাই, সমস্যা কী?
রাফি বলল- না খুললে, দরজা ভাঙতে হবে। ভিতরে মামলা বড় গড়বড় লাগছে আমার। ভিষণ গড়বড় লাগছে। ইমরান আয় হেল্প কর।
এ সময় কেউ একজন বলল- আরে ভাই, আপনারা পাগল নাকি? বাড়িওয়ালার কাছে স্পেয়ার চাবি আছে তো। বাড়িওয়ালাকে খবর দিতে হলনা। খানিক বাদে ভারিক্কি শরীরের কেয়ারটেকার আসল নড়েচড়ে। তার হাতে একগোছা চাবি।
দরজা আনলক করেও খুললোনা। বায়রে থেকে ধাক্কা মেরে ছিটকিনি ভাঙতে হল। ভিতরে ঢুকে অবাক হল সবাই। চোখে পড়ার মত অস্বাভাবিক কিছুই নেই। সাজানো গোছানো ছিমছাম ড্রয়িংরুম। কোন অবিবাহিত পুরুষ এখানে বসবাস করে, সেটি বোঝার উপায় নেই। এদেশীয় পুরুষরা আজন্ম অগোছালো স্বভাবের। আর অবিবাহিত পুরুষ? তরফদারি করারও কেউ তো থাকা চাই! তিনরুমের ফ্ল্যাটের একটা কে সম্ভবত রিডিংরুম হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। দুটো বড় বড় স্টিলের শেলফভর্তি বই। টেবিল চেয়ার। টেবিলের ওপর খুলে রাখা একটা ল্যাপটপ। তার ডিসপ্লেতে সুর্যাস্তের বালুকাবেলা.. সবাই মিলে বাবরের বেডরুমে ঢুকে যে দৃশ্য দেখল তার জন্য প্রস্তুত ছিলনা কেও!
খাটের মাঝামাঝি নিথর হয়ে পড়ে আছে ক্ষত-বিক্ষত প্রায় বিবস্ত্র একটি নারীদেহ..
রহমান তড়িঘড়ি করে বিছানার চাদর টেনে মেয়েটিকে ঢেকে দিল। মেয়েটার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে এখনও। খুব সুক্ষভাবে ওঠানামা করছে বুক। চেঁচিয়ে উঠে সে বলল- বেঁচে আছে। মেয়েটা মনে হয় বেঁচে আছে। জলদি হাসপাতালে নিতে হবে। ভাইয়েরা জলদি করেন..
পরিশিষ্ট
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হয়ে আসছে পৃথীবির এ প্রান্তে। উর্ধ্বাকাশে উঠতে উঠতে নিচের দিকে একবার তাকালেন মৃত্যুদূত। স্রষ্টার হুকুমে তার সংশয় ছিলনা বিন্দুমাত্র। হুকুম ছিল জীবন নিতে হবে ছেলেটার। অথচ দৃশ্যপট তো ভিন্ন ছিল। মেয়েটি পার করছিল চরম মৃত্যুবৎ অবস্থা। কিন্তু অনিবার্য নিয়তি এড়ানোর ক্ষমতা কার বা আছে? হুট করে এলোমেলো দ্রুত পদক্ষেপে সাততলার পেছনের বারান্দা থেকে নিচে লাফ দিল ছেলেটা? অদ্ভূত মানবজাতির মনঃস্তত্বও বড় অদ্ভূত! সেটি বোঝার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়নি।
রাস্তায় থেতলে পড়ে আছে বাবরের লাশটা।
আশপাশ ভেসে গেছে রক্তে। মৃতদেহটার উপর চাঁদের আলো পড়েছে। সেই চাঁদের আলোতে কালো পিচের উপর জমে থাকা রক্তধারাকেও কালো দেখায়। লাশটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন বুঝতে পারেনা, চাঁদটা এমন বারবার আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে কেন। খানিক আগেও তো আকাশ পরিষ্কার আর ঝকঝকে ছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কৌতুহলি মানুষগুলোর সেটি বুঝতে পারার কথাও নয়। মূলত চাঁদটাকে বারবার ঢেকে দিচ্ছিল উর্ধ্বমুখি আজ্রাইলের লালচে আর ধুসর ডানা!
---------------
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৫৫