হিব্রুদের (বনী ইসরাইল) উপর ৪০০ বছরের অত্যাচার, একজন নেতার উত্থান, স্রষ্টার সরাসরি সাহায্য। অতঃপর অত্যাচারি শাষকের পতন। হিব্রুদের মুক্তি।
মোটা দাগে এই হল ২০১৪ তে মুক্তি পাওয়া Exodus: Gods and Kings ছবির থিম।
মুসাকে শুরুতে আমরা পাবো মেমফিসের একজন যুবরাজ ও আর্মি জেনারেল রুপে। যে রামেসিসের সাথে আপন ভাইয়ের মতই বড় হয় রাজপরিবারে। কারণ ফারাও সম্রাট সেটি-১ এর (রামেসিস-১ এর পুত্র) একজন নিঃসন্তান স্ত্রীর পালকপুত্র হিসেবেই সে রাজপরিবারে সসম্মানে গণ্য হচ্ছিল।
একটা যুদ্ধের পূর্বে, রাজ জ্যোতিষি ভবিষ্যৎবাণী করে যুদ্ধটিতে দুই যুবরাজের (মুসা ও রামেসিস) যেকোন একজন আরেকজনের জীবন বাঁচাবে। যে জীবন বাঁচাবে পরবর্তিতে সে হয়ে উঠবে নতুন এক নেতা।
আপাতঃ এথিস্ট মুসা এসবের কিছুতেই বিশ্বাস করেনা। যুদ্ধক্ষেত্রে সে রামেসিসের প্রাণ বাঁচায়। রামেসিসের মনে ঠিক তখন থেকেই ভয়টা প্রবেশ করে। তবে কি মুসা একদিন তার শত্রু হয়ে উঠবে?
সেটি-১ এর মৃত্যুর পর রামেসিস সিংহাসনে বসে, উপাধি ধারণ করে রামেসিস ২। ঘটনাক্রমে রামেসিস আবিষ্কার করে মুসা আসলে হিব্রুদের সন্তান। ভবিষ্যৎবানীর ভয়টা তার মনকে আরও জাঁকিয়ে ধরে।
সে মুসাকে নির্বাসন দেয়। একসময় প্রায় ভাইয়ের মত বেড়ে ওঠা দুজন মানুষের কনফ্লিক্টের শুরুটা হয় এখান থেকেই।
রামেসিস-২ এর মাত্রা ছাড়ানো অত্যাচারের বিপরীতে মুসার ঐশিবাণী লাভ কিংবা তার সংসার ফেলে হিব্রুদের মাঝে ফিরে আসা, সমস্ত কিছুই হয়েছে সমান্তরালভাবে। আমার কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর লেগেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্রায়ন। পাশাপাশি দৃশ্যগুলো জীবন্ত, ভয়ানক এবং কৌতুকময়।
ক্রিশ্চিয়ান বেল মুসার চরিত্রে তার স্বভাবজাত অভিনয়ই করেছেন, এক কথায় অসাধারণ। যদিও সবখানেই ছবিটা সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। বিবিলিকাল একুরেসি নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি বলা হয়েছে, চরিত্র কিংবা গল্পে তেমন গভীরতা ছিলনা Exodus: Gods and Kings'এ।
অভিযোগ এসেছে বর্ণবাদেরও, মূল চরিত্রগুলো সবই শেতাঙ্গরা করেছে!
পর পর দুবার ছবিটা দেখেছি। মুগ্ধ হয়েই দেখেছি। আমার কাছে একুরেসির প্রশ্ন ছিলনা, কারণ আমি Exodusকে একটা নিরেট মুভি হিসেবেই নিয়েছি। অভিনয়, ক্যামেরার কাজ কিংবা গল্পের গতিশীলতা, সব দিক দিয়েই মুভিটি উপভোগ্য লেগেছে।
বক্স অফিসের ফলাফলও আমার এই শেষ কথা প্রমাণ করে। অতিরিক্ত নেতিবাচক সমালোচনা আর বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্তেও মুভিটি বাজেটের প্রায় দ্বিগুন আয় করেছে বিশ্বজুড়ে।
ছবির সবচেয়ে স্মরণীয় দৃশ্য?
মুসা আর রামেসিস দাঁড়িয়ে আছে শুকিয়ে যাওয়া সমুদ্রের মাঝ বরাবর। দুপাশ থেকে তাদের দিকে ধেয়ে আসছে পাহাড় প্রমাণ নীল জলরাশি!
স্বাভাবিকভাবেই কুরআন ও বাইবেলের উপর নির্ভর করে কাহিনী সাজিয়েছেন রাইডলি স্কট। তবে ছবি দেখার সময় মাথায় রাখা ভাল, আপনি একটা ছবিই দেখছেন। যদিও মনে হয়েছে, বাইবেলের চেয়ে স্কট কুরাআন থেকেই বেশি উপাদান নিয়েছেন, অতঃপর গল্পকে সিনেম্যাটিক করতে প্লট এঁকেছেন নিজের মত করেই।
--------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০২