“সেরা খেলোয়াড় চাইবে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী, ভালো সেনাপতি, ঢুকে যাবে শত্রুর মনোভূমিতে”
-প্রাচীন তাও দর্শনের জনক লাও ৎস
১
এখন তাহলে কি করতে চাস?
মিনহাজের প্রশ্নে একবার চোখতুলে তাকালো আনোয়ার। তার নৈঃশব্দটাই মিনহাজকে দ্বিতিয়বার প্রশ্ন করতে বাধ্য করলো। কি ব্যাপার? চুপ করে থাকিস না, প্লিজ!
আনোয়ার বলল- আমি বাসায় ফিরে যাবো।
বজ্রাহত হলে মানুষের চেহারা কেমন হয়ে যায় কে জানে। তবে মুহুর্তে মিনহাজের চেহারাটা আনুমানিক বজ্রাহতের মতই হয়ে গেল। বাসায় ফিরে যাবি মানে? তুই আমার সাথে ফাজলামো করছিস নাকি?
আনোয়ার শান্ত স্বরে বিড়বিড় করলো- আমি ফাজলামি করিনা।
২
সন্ধ্যার দিকে ঘরে বসে থাকাটাই আমার নিত্য নিয়ম। চারপাশের মসজিদগুলো আজানে আজানে পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলবে, আমি এক বেনামাজি হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো আমার দোতলা বারান্দার ব্যালকনিতে।
এত আজান চারিদিক, মুসল্লির দেখা মেলে অল্পই। কিন্তু সবার মাঝেই কিসের এক তাড়া। সবাইকে যেন এসময় অদ্ভুত এক অস্থিরতায় পেয়ে বসে। রাস্তায় কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়না। সকল মানুষেরই কোথাও না কোথাও যাবার তাড়া থাকে!
আমার কি কোথাও যাবার নেই? কিংবা তাড়া?
আজও রোজকার মত ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখছি। সন্ধ্যাটা ঢেকে গিয়ে রাত নামছে। আরেক কাপ চা খেয়ে ফেলা যায়। মিনুকে ডাকি বরং।
মিনু.. এই মিনু..
৩
মিনু কাঁদছিল। যেকোন ধরণের কঠিন পরিস্থিতিই তার চোখে জল আনতে সক্ষম। কখনও বা কঠিন পরিস্থিতিরও দরকার হয়না। অতীতে সিনেমার আবেগঘন কোন দৃশ্য দেখেও সে কেঁদেছে কত!
আজকের কারণ অবশ্য ভয়ানক। একটু আগে ফোন এসেছিল থানা থেকে। আনোয়ারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে নাকি। গত এক সপ্তাহ ধরে সে নিঁখোজ ছিল। নিখোঁজ এখনও। পুলিশ উত্তরা এগারো নম্বর সেক্টর থেকে একটা ডেডবডি পেয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে সেটি আনোয়ারের!
রাহাতের ডাক শুনে বারান্দার দিকে এগুলো মিনু। থানায় যাওয়া দরকার এ মুহুর্তে। এমন হতেই পারেনা যে, তার একমাত্র ছোটভাই আনোয়ার এভাবে আঁৎকা মারা গিয়েছে! সন্দেহ দূর করার জন্য হলেও তাকে উত্তরা থানায় যেতে হবে। মিরপুর থেকে খুব অল্প সময়েই উত্তরা যাওয়া যায় এখন।
৪
আঙুলের ফাঁকে ধরা সিগারেটে লম্বা একটা টান দিল আনোয়ার। বাসার কেউ জানেনা কত বড় বিপদে সে পড়েছে। এদিকে খবর মিলেছে, উত্তরা ১১ থেকে একটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। লাশটা নাকি তার! এতো ভারি মুশকিল হল। গোদের উপর বিষফোঁড়া!
মিনহাজ বলল- মাত্র কটা দিন আর লুকিয়ে থাকা বল? কিন্তু এখন বাইরে বেরুলেই রফা দফা খতম হয়ে যাবে। আমরা নিশ্চিত ধরা খাব! আর তুই বলছিস বাসায় ফিরে যাবি! যে কাজ আমরা করে ফেলেছি, তার একটা পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে থাকা ছাড়া অন্য উপায় নেই!
আনোয়ার কর্কশ স্বরে জবাব দিলো -তুই কি বুঝতে পারছিস? আমাকে ফাঁসানোর ষোলকলা প্রস্তুত করেছে ওরা। ভাতে, পানিতে সব যায়গায় মারবে। বাসায় ফিরতে হবে আমাকে! খেলাটার শেষ দেখতে হবে।
আনোয়ার যা করেছিলো
নাহ! তারা খুন করেনি। খুনের একটা পরিকল্পনা করেছিল। মাছের আড়তদার আজিজ মিয়াকে খুন করে ফেলা কখনই চাট্টিখানি কথা ছিলনা। স্থানীয় ড্রাগ র্যা কেটের সে হর্তাকর্তা।
মিনহাজের বড় ভাই শোভন, সে নিজে এবং আনোয়ার। পরিকল্পনার থিংক ট্যাংক ছিল তারা তিনজন। প্রস্তাবটা এসেছিল অনেক উচু থেকে। ওরা অ্যাডভান্স-ই দিয়েছিল পাঁচলাখ। কাজ শেষ হলে মিলে যেত বাকি পাঁচলাখ। মোট দশলাখ টাকার প্রস্তাব!
আনোয়ার তিনলাখ পেত। মিনহাজ তিনলাখ। বাকি চারলাখ শোভনের।
সময়টা ছিল শীতের শুরু। একটা সোমবার। রোজ রাত সোয়া এগারোটায় ডিব্লকের চিপাগলিটা পার হতো আজিজ মিয়া, বাসায় ফেরার পথে। একেবারে মাপা টাইম। সপ্তাহ দুয়েক রেকি করার পর তারা স্বিদ্ধান্তটা নিয়েছিল।
যায়গামতো ওরা বসে ছিল ওঁত পেতে। ঠিক সোয়া এগারোটার দিকেই আজিজ মিয়াকে দেখা গেল। রোজ একলা ফিরলেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেদিন তার সাথে আরও ছ’সাতজন ষন্ডামার্কা লোকজনকে দেখা গিয়েছিল।
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ওরা তিনজন একটা হতাশার দির্ঘশ্বাস ছাড়তে পেরেছিল শুধু! নতুন পরিকল্পনা ছাড়া কাজ উদ্ধার করা যেতনা।
ঠিক এর দুদিন পরের ঘটনা। মুসলিম বাজারের পিছনদিকে যে বড় ড্রেনটা জমাটবদ্ধ হয়ে আছে ময়লা কালো তরল আবর্জনায়, সেখানে শোভনের লাশটাকে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তার পেটটা ফাঁসানো ছিল। চারপাশে নাড়িভুড়ি ছড়িয়ে একাকার অবস্থা!
মিনহাজ আর আনোয়ার ওদিনের পর থেকেই অন্ধকারে আছে। সহজ কথায় যাকে সবাই বলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। শোভনের মত ওদের মাথার উপরেও মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলে গেছে, এটা ওরা বুঝতে পারছিল!
৫
দ্বিতীয় কাপ চা খাওয়া হলোনা। কারণ মিনু কাঁদছে। নিখোঁজ ভাইয়ের দুশ্চিন্তায় বর্তমানে সে দিশেহারা। এখনও প্রচুর সম্ভাবনা আছে, যে লাশটা পুলিশ পেয়েছে তা আনোয়ারের নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি মিনুকে। লাভ হয়নি কোন। অগত্যা ওকে নিয়ে বেরুতে হলো।
এখন গাড়িটা ছুটছে জিল্লুর রহমান ফ্লাই ওভারের উপর দিয়ে। বিরোধীদলীয় অবরোধের আজ দ্বিতীয়দিন। রাস্তাঘাট ফাঁকা। বেশিক্ষণ লাগবেনা উত্তরা থানায় পৌছুতে। জানিনা কেন, হঠাৎ করেই নিজের বুকের ভিতরে চাপা একটা বেদনা টের পেলাম। এ বেদনার উৎস কোথায়? মিনুর মাথায় বাঁ হাতটা রেখে বললাম- মনকে শক্ত করতে হয় বউ। এত ভেঙ্গে পড়লে চলবে কেন?
৬
আনোয়ারের এমন কোন কঠিন কারণ ছিলনা যে তাকে পেশাদার খুনিদের দলে ভিড়ে যেতে হবে। মিনহাজ তার শৈশবের বন্ধু। কলেজ শেষ করে আনোয়ার ভর্তি হল বিশ্ববিদ্যালয়ে। মিনহাজ এতসব গন্ডি পার হতে না পারলেও তাদের অটুট রকম বন্ধুত্ব সম্ভবত নিয়তিও মেনে নিয়েছিল।
দশজন ভাল মানুষের সাথে দুজন মন্দ মানুষ মিশলে তাদের বদল নাও হতে পারে। কিন্তু মানুষের ভিতরের সত্তায় অশুভের দৌরাত্মই বেশি। একজন অশুভ বিপুল ক্ষমতা নিয়ে তার চারপাশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এ কারণেই হয়তো যুগে যুগে অসংখ্য ধর্মপুরুষ জগত আলো করতে আসলেও, সে অসংখ্যের শত্রু মূলত একজনই ছিল। শয়তান!
একসাথে ঘুরতে ঘুরতেই মিনহাজের বড় ভাই শোভনের সকল অপরাধের সাথে তারা জুটে গিয়েছিল। হয়তো বেখেয়ালেই। শয়তানের মহত্ব হাঙরের পা কেটে নিয়ে যাবার মতই বেদনাহীন। হাঙর যখন পা কেটে নিয়ে যায়, বেদনা ঠিক তখনই বুঝতে পারে মানুষ যখন পাটা আর পায়ের যায়গায় থাকেনা!
ড্রাগ চোরাচালানের জন্য মাঝে মাঝে সীমান্তে চলে যাওয়া, কিংবা কোন সফল কিডন্যাপিং। ২৫ বছরের জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করতে না পারা আনোয়ার কম অভিজ্ঞতা তো অর্জন করেনি! খুনও নতুন ব্যাপার ছিলনা। এর আগেও তারা করেছে। মুখ্যত, এখানে দুটি ব্যাপার কাজ করে এসেছে সবসময়। প্রথমটি ছিল সময়ের খেলা। দ্বিতীয়টি অর্থ। আনোয়ারের হাতে টাকা আসছিলো। খুনগুলি করার সময় আনোয়ার আর মিনহাজ শুধু অ্যাসিস্ট করতো। পরিকল্পনায় অংশ নিত। মূল কাজটা বেশির ভাগ সময়েই করেছে শোভন।
এক ধরণের বন্য অর্থহীনতা আছে কাজটায়। মিনহাজের মাঝে ছোটবেলায় কেউ নীতিবোধের বীজ তো বপন করে দেয়নি। কারণ তারা এতিম ছিল। বড় হয়েছিল চাচার বাসায়। এক সময় সে দেখল, তাদের পরিবারটা আসলে চালায় শোভন। বেড়ে ওঠার পর থেকে মিনহাজ নিজেও তার বড় ভাইয়ের পথ ধরলো! কোন ধরণের রাজনৈতিক উত্থান ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু তাদের করা খুনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এজন্যেই বাজার দ্বরে অন্যদের চেয়ে তাদের কাজের মূল্য কিংবদন্তির মতোই!
আর আনোয়ার? তার কোন ধরণের অনুভূতি নেই খুন হওয়া কিংবা হতে চলা মানুষগুলোর জন্যে। কিংবা নূন্যতম গ্লানিবোধও নয় বিগত কোন অপরাধে! অথচ, তার জীবনটা এমন হবার কথা ছিলনা। চিরকাল তার চমৎকার একটা পরিবার ছিল। মা-বাবার বিশাল ছায়ার সাথে মমতাময়ী এক বড় বোনের হাতের স্পর্শ সে পেয়ে এসেছে নিজের মাথায়! তবু সে তার দৈত্বসত্তায় অশুভর মাঝেই মাদকতা পেয়ে এসেছে আজন্ম! কেন সেটা কেউ জানেনা বলেই জগৎ প্রতি মুহুর্তে রহস্যময়! পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত প্রাণী তো মানুষ নিজেই।
৭
মিনুর কান্না থামাবো এমন কোন অলৌকিক শক্তি নিজের ভিতর অনুভব করছিনা। সে নিজের ভাইকে চিনলো কিভাবে তাও আমার জানা নেই। হাসপাতালের মর্গে যে লাশটি সাদা কাপড়ে ঢাকা ছিল, তার মুখ দেখার উপায় ছিলনা। খুনি খুব যত্ন করে লাশটির মুখের উপর এলোমেলো ছুরি চালিয়েছে। তবুও মিনু লাশের ডান হাতের একটা জারুল দেখে চিনতে পেরেছে! ওটা তার ছোটভাই আনোয়ারের-ই লাশ!
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। চায়ের তৃষ্ণাটা তীব্র থেকে তীব্রতরো হচ্ছে।
৮
বাসার সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে চারদিকে একবার তাকালো আনোয়ার। নাহ, কেউ খেয়াল করছেনা তাকে। বেলও বাজাতে হয়নি। তাদের ছতলা দালানের মূল গেইটটা ভাড়াটেদের সুবিধার জন্য খোলাই থাকে। সারাদিন। দ্বিতিয় তলায় পৌছে সে বেল বাজালো।
দরোজা খুলে তার মা ভূতগ্রস্থের মতই চেঁচিয়ে উঠলেন- আনোয়ার.. বলেই তিনি দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরতে চাইলেন ছেলেকে। সেসব ছাড়িয়ে মিনুকে ডাকতে লাগলো আনোয়ার। “তোর ষড়যন্ত্র আমি বুঝিনা? বাবার সম্পত্তি সব একলা ভোগ করবি! সাতটা মাত্র দিন বাসায় ফিরিনি, আর একটা বেওয়ারিশ লাশ দেখিয়ে তুই বলে দিলি ওটা আমি?”
৯
মিনু যা বলতে চায়
সম্পত্তি নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
আনোয়ারের ব্যাপারে পুলিশের কাছে যা শুনেছি বিশ্বাস হতে চায়নি! কিন্তু যখন শুনলাম, ও নিখোঁজ হবার দিন মিনহাজের বড় ভাই শোভন মারা গিয়েছে, যে কিনা একজন পেশাদার খুনি ছিল। আর সেসব খুনের সাথে সরাসরি আনোয়ার নিজেও জড়িত! পলাতক হবার পর শোভন হত্যাকান্ডের দ্বায়ও ওদের ঘাড়ে এসে পড়ে। কেসটা করে পুলিশ!
ওকে বাঁচানোর জন্য পুলিশের একটা পরিকল্পনা ছিল। সে পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া ছাড়া আমার ভাইটাকে বাঁচানোর, ওই মন্দ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার আর কোন উপায় তো ছিলনা। আমি কখনই চাইনি, প্রিয় ছোটভাইয়ের লাশটা ঐ শোভনের মত সুয়্যারেজ ড্রেনের বদ্ধপানিতে পড়ে থাক।
আমার জানা নেই, বুকের ব্যাথাগুলো কার কাছে জমা দিয়ে আসবো। একটা মাত্র ভাই আমার। সে কিভাবে এত অধঃপাতে নেমে গেল চোখের সামনে থেকেও! এ অপরাধবোধ কমানোর কোন পথ নেই। জানা নেই, গত সাত দিনে যতোটা কেঁদেছি, তার পরিমাপ করার কোন উপায়!
১০
পরিকল্পনা সাদামাটা ছিল। আনোয়ার যে মৃত, এটা রটিয়ে দেওয়াই ছিল ওকে খুজে বের করার একমাত্র রাস্তা। আদালত থেকে মৃতঘোষিত ব্যাক্তি পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার হারায়। এমন ব্যাপার কখনই হতে দেবেনা আনোয়ার, আমি নিশ্চিত ছিলাম। যদি ও বেঁচেই থাকে, এ সংবাদ কানে পৌছানো মাত্রই সে ফিরে আসবে। বাপের সকল সম্পত্তি মিনু একলা ভোগ করবে, জীবিত থেকেও এটা মেনে নেওয়া আনোয়ার কেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই অসম্ভব!
আনোয়ারের নামে প্রমাণহীন অজস্র মার্ডার কেস আমার অফিসের গোপন ফাইলের ওজন বাড়িয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু ওদের কাজগুলো এতই সূক্ষ্য ছিল যে, হাতে নাতে ধরার উপায় মেলেনি কখনও।
এবার মোক্ষম ব্যাপারই ঘটে গেল। দলের একজন খুন হবার পরেই ও আর মিনহাজ লাপাত্তা! সরকারি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতে পারি, কিন্তু আমার আইডিয়া নেহাৎ কম বুদ্ধিদীপ্ত ছিলনা।
মিনু আমাকে প্রতিটা মুহুর্তে সাহায্য করেছে। কারণ, আমি ওকে কথা দিয়েছি, নির্দোষ হলে ওর ভাই বিন্দুমাত্র সাজা পাবেনা। তবে হাসপাতালের মর্গে ওর কান্নাটা ভয়াবহ পর্যায়েরই ছিল। আর আমার শাশুড়ি হাসপাতালের মর্গে আসার মতো অবস্থায় ছিলেন না। পুত্রের লাশপ্রাপ্তির সংবাদ শুনেই তাকে যায়গা নিতে হয়েছিল নিকটস্থ এক ক্লিনিকের বেড এ। পরদিন যখন তিনি সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছেন, সাজানো আনোয়ারের মরোদেহটিকে একটি সাজানো ময়নাতদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থাও করে ফেলা হয়েছিল!
১১
আনোয়ার আটক হবার পর, মিনহাজের সন্ধানও খুব দ্রুত পেয়ে যাবার কথা। কিন্তু সে ফেরারী হতে সক্ষম হয়েছে।
চারটি খুনের পূর্ন সহযোগিতার অপরাধে আনোয়ার আর পলাতক মিনহাজকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। যে রহস্যময় কারণে প্রতিটা খুনের পর পূলক অনুভব করতো আনোয়ার, পুলিশের কাছে সেসব খুনের দ্বায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেবার সময়েও একই রকম আনন্দ পেয়েছিল সে!
আনোয়ারের কেসটি দীর্ঘদিন চলে। দীর্ঘ সময় লেগে যায় তার মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর হতে।
শেষ
ছোটভাইয়ের সন্ধানে দ্বিতীয়বার থানায় এসেছে মিনু। এবার অবশ্য কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে আর তার মা। রাহাত আসেনি। হয়তো ব্যাস্ত আছে নতুন কোন অপরাধীকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা কষতে!
আনোয়ারের লাশটি যথাসময়ে তাদের নিকট হস্তান্তর করা হল। তোলা হল অ্যাম্বুলেন্সে।
অ্যাম্বুলেন্সটি খুব দ্রুত ছুটতে শুরু করলো ভোরের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে। মৃত আনোয়ার তার জীবিত স্বজনদের নিয়ে প্রথমবারের মত যাচ্ছে তাদের গ্রামে। যে গ্রামে তার আদি পুরুষদের শিকড় খুব গভীর ভাবে বোনা ছিল কোন এককালে।
ফাঁসি হওয়া মৃতদেহের মুখ নাকি দেখতে নেই। তারপরেও মিনু আনোয়ারের মুখের উপর থেকে মোটা সাদা কাপড়টি সরিয়ে নেয়। সে দেখতে পায়- ছোটভাই আনোয়ার জগতের সকল বিস্ময় নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে!
———————–
অতঃপর এনামুল রেজা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৬