শিল্পকে কি সিমানা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত? দাগ টেনে বলা উচিত, ওর ওপাশে গেলে শিল্প নিষিদ্ধ? শিল্পীর পায়ে শেকল পরিয়ে আদতে কি সত্যিকার শিল্পের চর্চা সম্ভব? কেতন মেহতার “রাঙ রাসিয়া” আমাদের নিয়ে যাবে এই প্রশ্নের জবাবের দিকে।
আধুনিক ইন্ডিয়ান পেইন্টিংস এর যুগস্রষ্টা ছিলেন রাজা রবি ভার্মা। আজ সারা ইন্ডিয়াজুড়ে যত দেবদেবির পেইন্টিংস দেখা যায়, ধারণা করা হয় এর অধিকাংশই তার আঁকা। ব্যাপারটা তার সময়ে প্রায় অসম্ভবই ছিল। কারণ, ধর্মের ধ্বজাধারীরা মনে করতেন দেব-দেবতা আর পৌরাণিক চরিত্রেরা ধর্মগ্রন্থে আর মন্দীরের মূর্তির বেশেই শোভা পান। এঁদের ছবি আঁকা ধর্মলঙ্ঘন। রবি ভার্মা ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন। তার মনে হয়েছিলো- পৌরাণিক চরিত্রদের তার ছবিতে জীবন্ত করে তুলবেন তিনি।
এসবের মাঝেই সেলুলয়েডের পর্দায় এগিয়ে গেছে এ মহান শিল্পির শৈশব, যৌবন, বিয়ে। নিয়তির খেলায় গ্রাম থেক মুম্বাইয়ে চলে আসা। আর হঠাৎ খুজে পাওয়া সুগন্ধা নামের এক অদ্ভুত নারীকে। যে নারী দিনকে দিন হয়ে ওঠে তার প্রেম, তার আরাধ্য দেবীতে। তার পেইন্টিংসের দেবিমূর্তিগুলো আঁকতে থাকেন এই নারীর আদলেই।
একদিন রবি ভার্মা সুগন্ধাকে মডেল বানিয়ে এঁকে ফেলেন উর্বসি আর পুরুর্বার ট্র্যাজিক চিত্রটি। যেখানে উর্বসি আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে। আর পুরুর্বা তার শাড়ির আঁচল ধরে টানতেই নগ্ন হয়ে যাচ্ছে স্বর্গের অপ্সরি উর্বশি! সে যুগের ইন্ডিয়ান সমাজের তুলনায় পেইন্টিংটা ছিল একটা বিদ্রোহ!
রাজা রবি ভার্মার বায়োপিক হিসেবে যথেষ্ট গতীময় আর টানটান গল্প ধারণ করেছে ছবিটা। এর সাথে পাওনা দুর্দান্ত সিনেম্যাটোগ্রাফি। অসাধারণ পরিচালনা। মূল চরিত্রে রন্দিপ হুদা ঠিক মাপা অভিনয় করেছন। সুগন্ধার চরিত্রে নন্দনা সেনও। সব মিলিয়ে ছবিটা একটা আবেশ তৈরী করে মনে।
একজন চিত্রকরের বিচিত্র জীবন, তার উত্থান কিংবা পতন, তার অমরত্ব সব মিলিয়েই রাঙ রাসিয়া আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাবে শিল্প কিংবা জীবনের গভীর বোধের দিকে। একটা ছবির কাছ থেকে এর বেশি আশা করা বোকামি।
শেষকথা, খুব অল্প বলিউডি ছবিই আপনাকে এতোটা দিতে পারবে।
----------
শিল্পি রাজা রবি ভার্মার নির্বাচিত চিত্রকর্ম
সিনেমাখোরদের আড্ডা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২১